উত্তরায় র্যাব-১ কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান
Published: 8th, February 2025 GMT
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের ‘গোপন বন্দিশালা’ উন্মোচন এবং জড়িতদের বিচার দাবিতে রাজধানীর উত্তরায় র্যাব-১ কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে কাউন্সিল অ্যাগেইনস্ট ইনজাস্টিস (সিএআই) নামে একটি সংগঠন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে তারা এ কর্মসূচি পালন করে।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সিএআইর আহ্বায়ক শের মুহাম্মদ সাঈদ তামিম বলেন, র্যাবের দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। গুমের শিকার ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারকে যথাযথ পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
যুগ্ম আহ্বায়ক রিজওয়ান বলেন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধসংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য অবিলম্বে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
র্যাব-১-এর একজন কর্মকর্তা জানান, কিছু লোক শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। এখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের মাসিক খাবারের বরাদ্দ অর্ধেক কমানোর পরিকল্পনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি বলেছে, বরাদ্দ অর্ধেক কমলে রোহিঙ্গাদের ওপর এর প্রভাব হবে ভয়াবহ। এই পরিস্থিতি এড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি এ আহ্বান জানায়। চার দিনের সফরে গতকাল বাংলাদেশে এসেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তাঁর এ সফরের প্রাক্কালে এ আহ্বান জানাল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ৫ মার্চ লিখিতভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য খাবারের বরাদ্দ অর্ধেকের বেশি কমানোর পরিকল্পনার কথা বাংলাদেশকে জানায়। সংস্থাটি বলেছে, জরুরি নতুন তহবিল পাওয়া না গেলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাবারের বরাদ্দ আগামী এপ্রিল থেকে সাড়ে ১২ ডলার থেকে ৬ ডলারে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে তারা।
গতকাল নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করেন। এপ্রিল থেকে তাঁদের জন্য ডব্লিউএফপির মাসিক বরাদ্দ ব্যাপক হারে কমতে পারে। এটা তাঁদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। বিষয়টি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা কীভাবে দেখছেন, তা নিয়ে সম্প্রতি কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে তারা।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্যমতে, প্রায় ৯৫ শতাংশ রোহিঙ্গা পরিবার মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ডব্লিউএফপি তাঁদের মাসিক খাবারের বরাদ্দ অর্ধেক করার পরিকল্পনা করছে। এমন সময়ে এই ঘোষণা এল, যখন তহবিল স্বল্পতায় রোহিঙ্গাদের জীবনে টানাপোড়েন চলছে। তাই এই পরিস্থিতিতে বরাদ্দ কমলে তাঁদের জীবন ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী ডব্লিউএফপি বলেছে, দাতাদের পক্ষ থেকে সার্বিক তহবিল বরাদ্দ কমায় রোহিঙ্গাদের মাসিক খাবারের বরাদ্দ কাটছাঁট করার পরিকল্পনা করতে হচ্ছে তাদের। এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) অর্থ অবরুদ্ধের নির্দেশ দেন তা সরাসরি যুক্ত নয়।
এ বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক স্মৃতি সিং বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও পরিষেবায় এরই মধ্যে যে ভয়াবহ স্বল্পতা চলছে, তহবিল ঘাটতি সেই সংকটে আরও বাড়িয়ে তুলবে। শরণার্থীদের মধ্যে যাঁরা বৈষম্যের শিকার ও যাঁরা আরও প্রান্তিক হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন, তাঁরা আরও ঝুঁকির মুখে পড়বেন। বিশেষ করে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও প্রবীণ ব্যক্তিদের আরও ঝুঁকিতে ফেলবে।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান আরও, ‘কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ডব্লিউএফপির (সহায়তার) ওপর নির্ভর করা ছাড়া তেমন কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ সরকার তাদের চাকরি করার বিষয়টি কঠোরভাবে সীমিত করে রেখেছে। আশ্রয়শিবিরের বাইরে তাঁরা চলাচলও করতে পারেন না।’
‘আমাদের খাওয়া কমাতে হবে’
ডব্লিউএফপি খাবারের বরাদ্দ অর্ধেক কমানোর পরিকল্পনার কথা জানানোর পর কক্সবাজারের ছয় রোহিঙ্গা তরুণের সঙ্গে কথা বলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তাঁদের একজন ১৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ আয়েস। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতার মুখে ২০১৭ সালে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে একজন তিনি। এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বরাদ্দ কমিয়ে যে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা দৈনিক তিনবেলা খাবারের জন্য অপর্যাপ্ত। এমনটা হলে কিছু মানুষকে দৈনিক খাবার খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।’
আরও পড়ুনতহবিল না পেলে রোহিঙ্গাদের রেশন অর্ধেকের বেশি কমাতে হবে: ডব্লিউএফপি০৭ মার্চ ২০২৫আশ্রয়শিবিরের ২৩ বছর বয়সী স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মির্জার মতে, যে মূল্যস্ফীতি চলছে, তাতে মাসে ৬ ডলারের বরাদ্দ দিয়ে শুধু সর্বোচ্চ চাল, ডাল ও লবণের মতো নিত্যপণ্য কেনা সম্ভব। ফলে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে দুধ, ডিম, ফল ও সবজির মতো অন্য কিছু কেনার মতো অর্থ থাকবে না। মুহাম্মদ মির্জা বলেন, ‘এটা আমাদের ভয়াবহ ক্ষতির মুখে ফেলবে।’
আমারাহ (ছদ্মনাম) নামের ২১ বছর বয়সী আরেক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, বর্তমান বরাদ্দে একটি পরিবারের প্রত্যেক সদস্য মাসে ১৩ কেজি চাল পান। বরাদ্দ কমলে তা ১০ কেজিতে নেমে আসবে। প্রতিদিন খেয়েপরে বাঁচার জন্য এটা যথেষ্ট নয়।
আরও পড়ুনকক্সবাজারে এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা১২ মার্চ ২০২৫