প্রথম আলো :
লিংকিন পার্কের প্রতি ভালোবাসা কবে থেকে?
সাবিলা নূর : একদম ছোটবেলা থেকে, বলতে পারেন গান বোঝার বয়স থেকেই লিনকিন পার্ক আমার প্রিয়। লিনকিন পার্কের ‘রানওয়ে’, ‘পয়েন্টস অব অথরিটি’, ‘সামহয়ার আই বিলং’, ‘পেপারকাট’, ‘লায়িং ফ্রম ইউ’, ‘ব্লেড ইট আউট’, ‘লস্ট ইন দ্য ইকো’, ‘লিভ আউট অল দ্য রেস্ট’—এই গানগুলো প্রিয়, গুনগুন করে গাই। টেক্সাসে যে লিংকিন পার্কের কনসার্ট, এটা আমার মাথায় ছিল না। বড় বোন নাবিলা কনসার্টের ঠিক দুই দিন টিকিট দিয়ে চমকে দেয়। গ্লোব লাইফ ফিল্ডে লিনকিন পার্কের কনসার্ট সামনাসামনি দেখব, এটা একটা স্বপ্নের মতো, তাই সুযোগটা হারাতে চাইনি আরকি। আমার বড় ভাইয়া প্রথম লিনকিন পার্কের গানের খোঁজ দেন, তখন ছিল এম্পিথ্রির যুগ। এবার যখন কনসার্টে যাচ্ছিলাম, তখন খুব রোমাঞ্চ লাগছিল। পুরো কনসার্টে অনেক এনজয় করছি। আমার কয়েকজন বন্ধু ছিল, তাদের সঙ্গে গেছি। ওরা ওখানেই থাকে। তবে চেস্টারকে (ব্যান্ডের প্রয়াত গায়ক) খুব মিস করছি।
প্রথম আলো:সুযোগ পেলেই কনসার্ট উপভোগ করেন?
সাবিলা নূর : সময়–সুযোগ হলে দেখি। এবার তো দেশের বাইরে বাংলাদেশের ব্যান্ড আর্টসেল ও ওয়ারফেজের কনসার্টও দেখেছি।
প্রথম আলো :
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো লাগার কনসার্ট কোনটি?
সাবিলা নূর : আমি অনেক কনসার্ট দেখেছি। তবে এখন পর্যন্ত আয়রন মেইডেনের কনসার্ট সবচেয়ে ভালো লেগেছে। ওই কনসার্টও দেখেছি টেক্সাসে, ২০১৭ সালে। এবার লিংকিন পার্কের কনসার্টে বন্ধুবান্ধব মিলে গিয়েছি, ওরা আমার বড় বোনের খুব ঘনিষ্ঠ। আমি খুব কাছের একজনকে পেয়েছি। উনি চিত্রলেখা গুহর (অভিনয়শিল্পী) মেয়ে আর্নিলা গুহ। তিনিও টেক্সাসে থাকেন, আমার বড় বোনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ। ওই সূত্রে আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। লিনকিন পার্কের কনসার্ট সরাসরি দেখা জীবনের স্মরণীয় একটা অভিজ্ঞতা।
সাবিলা নূর। ছবি: অভিনেত্রীর সৌজন্যে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ন প র ক র কনস র ট প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
রপ্তানি খাতে আপাতত স্বস্তি
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক স্থগিতের ঘোষণায় স্বস্তি ফিরেছে দেশের রপ্তানি খাতে। কয়েক দিন ধরে রপ্তানি আদেশ স্থগিত হওয়ায় রপ্তানিকারকদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। সেই আতঙ্ক আপাতত কেটেছে। তবে তারা বলেছেন, আপাতত তিন মাসের জন্য একটা স্বস্তি পাওয়া গেলেও ট্রাম্প প্রশাসন যাতে বাংলাদেশের ওপর আবার বাড়তি শুল্ক আরোপ না করে, সে জন্য সরকারকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে।
এদিকে চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ১২৫ শতাংশ শুল্ক বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্য রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্র তৈরি করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীনের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কেননা, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো পণ্যের দাম আগের চেয়ে দ্বিগুণ। ফলে চীন থেকে রপ্তানি এখন আর লাভজনক হবে না। ভিয়েতনামে আগেই চীনা উদ্যোক্তারা বড় বিনিয়োগ করে ফেলেছেন। সেখানে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ কম। ফলে চীনের বিনিয়োগ টানার সুযোগ বাংলাদেশের সামনে।
রপ্তানিকারক উদ্যোক্তা এবং বাণিজ্য বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কহার স্থায়ীভাবে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে তিন মাস সময়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। এ ছাড়া বর্তমানের বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ককে কীভাবে শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনা যায়, তার কৌশল নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। শুল্ক-অশুল্ক বাধার অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে এসব দূর করতে হবে।
জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মোটেক্স ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ কবির সমকালকে বলেন, গত ২ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণায় ক্রেতারা রপ্তানি আদেশ প্রত্যাহার, স্থগিত এবং চুক্তির দরের চেয়ে কম দর দেওয়ার কথা জানাচ্ছিলেন। ওই পরিস্থিতি তাদের আতঙ্কিত করে তুলেছিল। এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। অন্তত তিন মাসের জন্য একটা সুযোগ পাওয়া গেল। তিনি সুপারিশ করেন, তিন মাসের মধ্যে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে যাতে সবচেয়ে বড় বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক সহনীয় এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হয়।
মাসুদ কবির মনে করেন, চীনা পণ্যে বাড়তি শুল্ক দুই দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য সুবিধা তৈরি করেছে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যের চেয়ে বাংলাদেশের পণ্যের দর অনেক কম হবে।
যা প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পণ্যকে সুবিধা দেবে। অন্যদিকে কম দামের সুবিধা নেওয়ার জন্য চীনা উদ্যোক্তারা কারখানা স্থানান্তর করে বাংলাদেশে আসবেন। আগামী মাসে ২০০ চীনা উদ্যোক্তা বিনিয়োগ সুযোগ খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশে আসছেন। কারণ চীনে পণ্য উৎপাদন এখন আর লাভজনক হবে না। ভিয়েতনাম আগেই চীনা উদ্যোক্তারা বড় বিনিয়োগ করে ফেলেছেন। সেখানে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ কম।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আরেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হান্নান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম শামসুদ্দিন সমকালকে বলেন, নিঃসন্দেহে ট্রাম্পের নতুন ঘোষণা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য বড় স্বস্তি এনে দিয়েছে। অতিউচ্চ শুল্কহারের ওই ঘোষণা বিশ্ব বাণিজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উদ্যোক্তাদের নাভিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে একটি বিষয়ে দেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন যে, ন্যায্য দরের বাইরে কেউ কম পয়সায় কাজ নেওয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করবে না। নিজেদের অবস্থান মজবুত না হলে এ রকম যে কোনো ঝাঁকুনিতে নাজুক অবস্থা তৈরি হবে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে প্রধান উপদেষ্টার চিঠির ভাষা বেশ অর্থবহ। শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূর করার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছিল চিঠিতে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এসব প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পরিপালন করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে। যাতে মার্কিন প্রশাসন বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ককে শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনতে রাজি হয়। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। আলাদা যোগাযোগ করতে হবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে। তিনিও মনে করেন, চীনা উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ আসারও অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে প্রায় ৬০টি দেশের পণ্যে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশসহ বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ৯ এপ্রিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প কার্যকরের দিনে তিন মাসের জন্য দেশভিত্তিক বাড়তি শুল্ক আরোপ স্থগিত করেন। তবে ২ এপ্রিলের ঘোষণায় কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সব পণ্যের ওপর সব দেশের জন্য ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়, যা ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ যে ধরনের পণ্য বেশ রপ্তানি করে থাকে সেগুলোর গড় শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ। এর সঙ্গে ১০ শতাংশ যোগ হয়ে আপাতত শুল্কহার ২৫ শতাংশ হবে। দেশভিত্তিক ৩৭ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যে মোট শুল্কভার ৫২ শতাংশে দাঁড়াত। ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। মার্কিন ভোক্তারাও প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ বাড়তি শুল্ক স্থগিত রাখার অনুরোধ জানায়। বাংলাদেশ সময় চেয়েছিল তিন মাস।
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির হালনাগাদ তথ্য
গত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। এ হার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারলে–ওটেক্সার তথ্য বলছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে প্রধান রপ্তানিকারক দেশ চীনের রপ্তানি বেড়েছে ৯ শতাংশেরও কম। ভিয়েতনামের বেড়েছে ১১ শতাংশ। ভারতের বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। পাকিস্তানের পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ হারে। তবে রপ্তানি আয়ের অঙ্কে চীন ও ভিয়েতনামের চেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। চীনের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৭৭ কোটি ডলার। ভিয়েতনামের ২৬৩ কোটি ডলারের মতো। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১৫০ কোটি ডলার। ভারত ও পাকিস্তানের রপ্তানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৯৬ কোটি ডলার ও ৩৬ কোটি ডলার। গত কয়েক মাসের রপ্তানি প্রবণতা বলছে, চীন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে রপ্তানি পরিমাণের ব্যবধান কমছে। এই পরিসংখ্যান ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রপ্তানিকারকরা