এবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
Published: 8th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
ঢাকায় নিযু্ক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে তলবের পরের দিন শুক্রবার বিকাল ৫টায় বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মো. নুরাল ইসলামকে তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিষয়টি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক টুইট বার্তায় জানানো হয়।
এই টুইট বার্তায় বলা হয়, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ইতিবাচক, গঠৃনমূলক এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী সম্পর্ক চায়, যা সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বেশ কয়েকবার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। যাইহোক, এটা দুঃখজনক যে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের নিয়মিত বিবৃতি ভারতকে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য আমাদের দায়ী করছে। বাংলাদেশের দেওয়া এসব বক্তব্য আসলে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্রমাগত নেতিবাচকতার জন্য দায়ী।
সেখানে আরও বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করা মন্তব্যগুলো তার ব্যক্তিগত, যাতে ভারতের কোনও ভূমিকা নেই। এটিকে ভারত সরকারের অবস্থানের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচকতা যোগ করতে সাহায্য করবে না।
টুইটের শেষাংশে বলা হয়, ভারত সরকার একটি পারস্পরিক কল্যাণকর সম্পর্কের জন্য প্রচেষ্টা চালাবে এবং আমরা আশা করি, বাংলাদেশ পরিবেশকে খারাপ না করে একইভাবে চেষ্টা চালাবে।
এনজে
.উৎস: SunBD 24
এছাড়াও পড়ুন:
বাড়ছে শিশুশ্রম, সম্ভাবনা নেই এসডিজির লক্ষ্য পূরণের
রাজধানীর ধোলাইখালে ভারী ইঞ্জিন তৈরির এক দোকানে দৈনিক ২০০ টাকা হাজিরায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে তিন কিশোর। তাদের একজন ১৩ বছর বয়সী রাইসুল জানায়, সকাল ৯টায় কাজ শুরু করতে হয়; শেষ হয় রাত ৯টায়। কাজের চাপ থাকলে রাত ১২টা পর্যন্তও থাকতে হয়। ১২ ঘণ্টার শ্রমের বিনিময়ে দৈনিক ২০০ টাকা মজুরি পায়। রাইসুলের বাবা মারা গেছেন। ছোট আরও দুই ভাইবোন রয়েছে। মা অসুস্থ। কোনো কাজ করতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়েই স্কুলে যাওয়ার এই বয়সে রাইসুলকে কাজ করতে হচ্ছে ওয়ার্কশপে।
কলতাবাজারের মহসীন ইঞ্জিনিয়ারিং নামে এক দোকানে পুরোনো গাড়ির যন্ত্রাংশ মেরামত করাসহ নতুন যন্ত্রাংশ তৈরির কাজ করে ১২ বছর বয়সী সাইফুল। সে জানায়, দিনমজুর বাবার আয় কম। মা পরের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। তাই বাড়তি আয়ের জন্য তাকে এই ওয়ার্কশপে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কাজ শিখলেও সপ্তাহে ৩০০ টাকা পায়। শুধু রাইসুল বা সাইফুল নয়, ধোলাইখাল, কলতাবাজারসহ আশপাশের এলাকাগুলোর নানা দোকানে এমন বহু শিশু শ্রমিকের দেখা মেলে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) টার্গেট ৮ দশমিক ৭-এর অধীনে ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রথাগত শিশুশ্রম নির্মূলের পাশাপাশি জোরপূর্বক শ্রম, আধুনিক দাসপ্রথা ও মানব পাচার, শিশুদের সৈনিক হিসেবে ব্যবহারসহ ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিষিদ্ধ ও নির্মূলে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারও সব ধরনের শিশুশ্রম নির্মূল করতে ‘জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি, ২০১০’ ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২১-২০২৫ প্রণয়ন করেছে। জাতীয় থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত চার স্তরবিশিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোও প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। উল্টো দেশে শিশুশ্রম ক্রমেই বাড়ছে।
বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই শিশুশ্রম সমস্যা প্রকট ছিল। গবেষণা বলছে, ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতি সংকটে পড়া এবং পরবর্তী সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে বহু পরিবার শিশু-কিশোরদের শ্রমে নিযুক্ত করতে বাধ্য হয়। অথচ জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় চলতি বছরের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম দূর করার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ বলছে, বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকরা সপ্তাহে গড়ে ২৭ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় কাজ করে। বেশির ভাগ শিশুর মাসিক আয় আড়াই থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকার মধ্যে। শিশুদের কাজে নিযুক্ত করলে স্বল্প মজুরি দেওয়া সম্ভব; খাটানো যায় বেশি। তাই তাদের নিয়োগে আগ্রহী থাকেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ছোট কারখানার মালিকরাও। সর্বশেষ জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় ২০২৩ সালের মার্চে।
তাতে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে দেশে শিশুশ্রমিক বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৮৬ হাজার। বর্তমানে দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু। যেসব কাজে শিশুদের শারীরিক ও অন্যান্য ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, সেগুলোকে সরকার ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকাভুক্ত করে। ২০২২ সালে ৪৩ ধরনের কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ফেলা হয়।
শিশুশ্রম প্রতিরোধে গত ১২ বছরে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে নানা প্রকল্প নেওয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে শিশুদের ফিরিয়ে কাজের মাধ্যমে আয়ের পথ করে দিতে ২০১৮ সালে ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন (চতুর্থ পর্যায়)’ নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ শিশুকে ৯টি বিষয়ের ওপর ছয় মাসের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং চার মাসের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ প্রকল্পে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। ফলে এসব শিশুকে ঝুঁকিমুক্ত কাজ থেকে ফেরানো যায়নি।
এডুকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক (চাইল্ড লেবার ইলিমিনেশন) আফজাল কবির খান বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ তিনবার (২০০২, ২০১৩ ও সর্বশেষ ২০২২ সালে) হয়েছে। প্রতিবারের প্রতিবেদনেই শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। শিশুশ্রম নিরসনের কথা মুখে বললেও সব সরকারই প্রায়োরিটি কনসেপ্টের মধ্যে শিশুশ্রমকে রাখেনি। গত দশকেও কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে; কিন্তু শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কার্যত বেড়েছে। তাই শিশুশ্রম নিরসনের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো সরকারের পরিকল্পনায় এ বিষয়টি প্রাধান্য না পাওয়া। শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ২৩ জন সচিব সংযুক্ত থাকলেও সভায় দুই থেকে তিনজনের উপস্থিতি দেখা যায়। তাই শিশুশ্রম নিরসন করতে চাইলে আমাদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন খুব প্রয়োজন।
সম্প্রতি ‘জাতীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদ’র ১২তম সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শিশুশ্রম কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি পুরো বিশ্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও সংগঠনের আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকার সব খাতে শিশুশ্রম নিরসনে বদ্ধপরিকর।