ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ার না হোক
Published: 8th, February 2025 GMT
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছে, যা কেবল বিচার বিভাগ নয়, রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যান্য ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে আশা করা যায়।
গত বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান প্রতিবেদন জমা দেন। এই প্রতিবেদনের যে বিষয়টি আমাদের বাড়তি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, সেটি হলো রাষ্ট্রপতির ক্ষমার এখতিয়ার নিয়ন্ত্রণ করার সুপারিশ।
আমাদের সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’ এই বিধান আরও অনেক দেশে আছে। কিন্তু এই বিধানের সুযোগ নিয়ে অতীতের সরকারগুলো যেভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার যথেচ্ছ প্রয়োগ করেছে, তা কেবল উদ্বেগজনক নয়; আইনের শাসনেরও পরিপন্থী।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিধানটি রাখা হয়েছিল বিশেষ ক্ষেত্রে। কিন্তু ক্ষমতাসীনেরা এটাকে দলীয় অপরাধীদের বেকসুর খালাস দেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিধান থাকলেও এটি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী বা নির্বাহী প্রধানের এখতিয়ার হয়ে পড়ে। নির্বাহী বিভাগ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়, তিনি সেখানে সই দেন মাত্র। অনেক ক্ষেত্রে যাঁর দণ্ড মওকুফের জন্য সুপারিশ করা হয়, রাষ্ট্রপতি হয়তো তাঁকে চেনেনও না।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিধানের অপব্যবহার করা হয়েছে সব সরকারের আমলেই। বিরোধী দলে থাকতে যাঁরা এই ক্ষমার বিরোধিতা করেন, ক্ষমতায় গিয়ে তাঁরা নিজ দলের দণ্ডিত কর্মীদের মুক্তি দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এই প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার এখতিয়ার নিয়ন্ত্রণ করার যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে কমিশন একটি নিয়ন্ত্রণ বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করেছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার যেকোনো আবেদন এলে তিনি এই বোর্ডের কাছে পাঠাবেন। বোর্ড যদি মনে করে আবেদনকারী ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য, তাহলে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবেন, যদি মনে করে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নন, নাকচ করে দেবে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
এ প্রসঙ্গে গত ২০ জানুয়ারি হাইকোর্টে করা একটি রিটের কথা উল্লেখ করা যায়। ওই রিটে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। আবেদনকারী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাশান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন ঘটনাদৃষ্টে সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের অপব্যবহার হয়, যেখানে রাজনৈতিক আদর্শ বিবেচনায় দণ্ডিতকে ক্ষমা করতেও দেখা যায়। এটি সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সে জন্য ক্ষমা করার এই ক্ষমতা প্রয়োগে নীতিমালা প্রণয়ন আবশ্যক।
হাইকোর্টে আবেদনকারী ও বিচার সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। বোর্ড গঠিত হলেও নীতিমালার ভিত্তিতে তাদের কাজ করতে হবে। অতএব, আমরা মনে করি, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব আমলে নিয়ে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রপতির ক্ষমার সুযোগ নিয়ে প্রতিটি সরকারের আমলে একের পর এক দণ্ডিত অপরাধী খালাস পেয়ে যাবেন, এটা হতে পারে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প র শ কর সরক র র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
হারানো, চুরি ও ছিনতাই হওয়া ১০৬ মুঠোফোন মালিকদের ফিরিয়ে দিল ডিএমপি
হারানো, চুরি ও ছিনতাই হওয়া ১০৬টি মুঠোফোন উদ্ধার করে মালিকদের বুঝিয়ে দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
আজ বৃহস্পতিবার ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুঠোফোন হারানো, চুরি ও ছিনতাই হওয়ার বিভিন্ন ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মালিকদের করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ধানমন্ডি থানার পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত এক মাসে ২৮টি মুঠোফোন উদ্ধার করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, একই সময় হাজারীবাগ থানার পুলিশ হারিয়ে যাওয়া, চুরি ও ছিনতাই হওয়া ৭৮টি মুঠোফোন উদ্ধার করে মালিকদের ফিরিয়ে দেয়।
হারিয়ে যাওয়া মুঠোফোনগুলো দ্রুততম সময়ে ফিরে পেয়ে আনন্দিত মালিকেরা পুলিশের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। মুঠোফোন ফিরে পেয়ে অনেকে এ সময় আবেগপ্রবণও হয়ে পড়েন।