মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মনজুরুল ইসলাম। কিছুটা টানাটানির সংসারে এসএসসি পাসের পর ভাগ্য ফেরাতে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেক চেষ্টা করে এবং অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করেও কোনো কাজ হয়নি। পরে শুরু করেন চাকরি খোঁজা, তা–ও মেলেনি। শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর সোনার অলংকার বিক্রি করে দুটি বকনা বাছুর কিনে লালনপালন শুরু করেন।

ধীরে ধীরে তাঁর দিন বদলে যেতে থাকে। বর্তমানে তাঁর খামারে গাভির সংখ্যা ৩০টি। ৫০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করা মনজুরুল এখন প্রতিদিন দুধ বিক্রি করে খরচ বাদে আয় করেন ২ হাজার টাকা। ভাগ্য বদলে গেছে তাঁর। সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। তাঁকে দেখে উৎসাহিত হয়ে অনেকেই গাভির খামার করেছেন।

মনজুরুলের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বকশিপাড়া গ্রামে। উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে কাঁচা-পাকা পথ ধরে তাঁর বাড়িতে যাওয়ার পথে গ্রামে ঢুকতেই বিভিন্ন মাঠজুড়ে অসংখ্য গাভি ও বাছুর চরে বেড়াতে দেখা যায়।

সম্প্রতি মনজুরুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি গাভিগুলোকে গোসল করাতে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর খামার থেকে বের হয়ে বাড়ির সামনে কাঁঠালগাছের তলায় এ প্রতিনিধিকে বসতে দিলেন। শোনালেন তাঁর সংগ্রামী জীবনের গল্প। মনজুরুলের ভাষ্য, ১৯৭৮ সালে মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। কৃষক বাবার তিন একর জমি চাষ করে যা আয় হতো, তা দিয়ে চলত তাঁদের সংসার। ছোটবেলা থেকে তিনি দেখেছেন, আশপাশের অনেকে বিদেশে গিয়ে কাজ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন। তাঁরও ইচ্ছা ছিল বিদেশে যাওয়ার। ১৯৯৪ সালে এসএসসি পাসের পর বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। এর কাছে যান, ওর কাছে যান। কিন্তু কয়েক বছরের চেষ্টায়ও বিদেশ যাওয়া হয়নি। এরই মধ্যে পড়াশোনায় ছেদ পড়ে। শুরু করেন চাকরির চেষ্টা, যাতে নিজে অন্তত চলা যায়। কিন্তু চাকরিও জোটে না।

২০০৭ সালে পার্বতীপুর উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামের রহিম বকসের মেয়ে ইফতে আরাকে বিয়ে করেন মনজুরুল। দেড় বছরের মাথায় তাঁদের সংসারে আসে ছেলে জিল্লুর রহমান। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে স্ত্রীর সোনার অলংকার ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার শাহবাজ গ্রাম থেকে এই টাকায় দুটি বকনা বাছুর কিনে আনেন। বছর দুয়েক পর বাছুর দুটি গাভিতে পরিণত হয়, বাচ্চা দেয়। প্রতিদিন ৩৫ লিটার দুধ দিতে শুরু করে। এই দুধ বিক্রি করে দিনে আয় হতো প্রায় ৭০০ টাকা। এভাবে তিন বছরে শংকর জাতের আরও দুটি গাভি কেনেন। হয়ে যায় ছোটখাটো একটি খামার। সব মিলিয়ে বর্তমানে মনজুরুলের খামারে ৩০টি গাভি আছে। প্রতিদিন খামার থেকে গড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ লিটার দুধ পান। প্রতি লিটার দুধ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করে খরচ বাদে দৈনিক ২ হাজার টাকা লাভ থাকে তাঁর। বছরে দুই লাখ টাকার গাভিও বিক্রি করেন তিনি।

এই আয়ের টাকায় মনজুরুল পাকা বাড়ি করেছেন, কিনেছেন আবাদি জমি। মাছ চাষের জন্য খনন করেছেন পুকুর। গাভির খামারও করেছেন আধা পাকা। দামি কাঠের আসবাবে সাজিয়েছেন ঘর। বাড়ির চারদিকে আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারার গাছ এবং শাকসবজি লাগিয়েছেন।

মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘গাভি আমার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। স্ত্রী–সন্তান নিয়ে দুধে–ভাতে দিন কাটছে। গ্রামের অনেকেই আমার কাছে পরামর্শ নিয়ে গাভির খামার করছে। আমার ইচ্ছা আছে ২০০ গাভির খামার করার।’

মনজুরুলের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে গাভি পালন করে গ্রামের অনেকেই আর্থিকভাবে সচ্ছলতা পেয়েছেন। আজমাল হোসেন, মোহাম্মাদ আলী, সাইফুল ইসলাম, একাব্বর হোসেন, জান্নাতুল ইসলামসহ ২০-২৫টি পরিবার ৭-৮ বছর ধরে গাভি পালন করে এখন অনেকেই গরুর খামারের মালিক। গ্রামের সিরাজুল ইসলাম এখন সাতটি গাভির মালিক। নিজের বাড়ি, আবাদি জমি হয়েছে। গাছপালাঘেরা বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও গাভি পালন করে এখন সুখের সংসার তাঁর। সিরাজুলের স্ত্রী জোহরা খাতুন বলেন, এসব পরিশ্রমের ফল। গ্রামের অন্যদেরও তা–ই। আগের মতো গ্রামে বেকার কেউ নেই।

গ্রামের মশিয়ার রহমান আগে গাড়ি চালাতেন। মনজুরুলকে দেখে পাঁচ বছর আগে গাভি পালন শুরু করেন। এখন তাঁর মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা। মশিয়ার বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার কারণে গাড়ি চালানো বাদ দেন। কিন্তু কী করে খাবেন, সেই চিন্তায় মাথা ঘুরছিল। পরে মনজুরুলে পরামর্শে চারটি বিদেশি জাতের গাভি কিনে লালনপালন শুরু করেন।

তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম ইফতেখারুল বলেন, খামারিদের মডেল মনজুরুল। তিনি এলাকায় গাভির খামার করে নিজেকে যেমন প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তেমনি এলাকার অন্যদেরও খামার গড়তে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এখন বকশিপাড়া গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গাভি পালন করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ভ র খ ম র কর মনজ র ল র ল ইসল ম কর ছ ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

এসএসসি পরীক্ষা: কুমিল্লায় ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী বেশি ২৯ হাজার

এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ছাত্রদের চেয়ে ২৯ হাজার ৩৮০ জন বেশি ছাত্রী অংশ নিচ্ছেন। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) থেকে সারা দেশে শুরু হচ্ছে ২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবছর এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৮০ জন। যা গত বছরের তুলনায় ১৩ হাজার ৭৪৮ জন বেশি। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর নিয়ে গঠিত এই শিক্ষা বোর্ড। 

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবারের পরীক্ষায় ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯৯ হাজার ৫৩০ জন ছাত্রী। ৭০ হাজার ১৫০ জন ছাত্র। অর্থাৎ, ২৯ হাজার ৩৮০ জন বেশি ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা এই তিনটি বিভাগেই শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ রয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগে ৫৯ হাজার ৩৬৬ জন, মানবিক বিভাগে ৫৫ হাজার ৬৫২ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫৪ হাজার ৬৬২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসবে।

আরো পড়ুন:

ইউএনওকে প্রত্যাহারে ডিসির কাছে শিক্ষার্থীদের আবেদন

হামাস যোদ্ধাদের বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, ক্ষমা চাইলেন শিক্ষিকা

অন্যদিকে, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এবার ২৩ হাজার ৩৫১ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে না। গত বছর ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩২ জন, যেখানে নিবন্ধন করেছিল ২ লাখ ৯ হাজার ৩৩৭ জন এবং অনুপস্থিত ছিল ৫৩ হাজার ৪০৫ জন।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. শামছুল ইসলাম বলেন, “আমরা একটি নকলমুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠু, সুন্দর ও শৃঙ্খলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং কেন্দ্র সচিবদের সাথে সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, ‍“আইনশৃঙ্খলাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ। বৃহস্পতিবার থেকে সুন্দর পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।”

কুমিল্লা জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী আরিয়ান আব্দুল্লাহ বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মাঝে কিছুদিন বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ থাকলেও শিক্ষকদের সহায়তায় ভালোভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পেরেছি।” 

একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল হাফিজ বলেন, “দেশের পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে, আমরা সবাই মিলে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি। আশা করি, পরীক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করবে।”

এদিকে, পরীক্ষা চলাকালীন কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলা প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রগুলোর ২০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে এবং সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ঢাকা/রুবেল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কক্সবাজারে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারল না ১৩ শিক্ষার্থী
  • এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে পারলেন না বাবা, অসুস্থ হয়ে পথেই মৃত্যু
  • এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ‘বাড়তি চাপ’ না দেওয়ার অনুরোধ শিক্ষা উপদেষ্
  • পরীক্ষা শুরু আগে এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা
  • এসএসসি পরীক্ষা শুরু
  • আজ এসএসসিতে বসছেন সোয়া ১৯ লাখ পরীক্ষার্থী
  • বিটিসিএলে নবম–দশম গ্রেডে নিয়োগ, ১৩১ পদের পুনরায় বিজ্ঞপ্তি
  • পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পরীক্ষার্থী এবার
  • আজ শুরু এসএসসি পরীক্ষা, এক লাখ পরীক্ষার্থী কমেছে, মানতে হবে ১৪ নির্দেশনা
  • এসএসসি পরীক্ষা: কুমিল্লায় ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী বেশি ২৯ হাজার