বাংলাদেশকে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বাসসকে বলেছেন, ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অবশ্যই আমাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করে এই তিন দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখব।

ছয় মাসে বৈদেশিক সম্পর্ক সম্পর্কিত সরকারের অর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা সেই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি ও বিশ্বব্যাপী বিপুল সমর্থন পেয়েছি। অর্থনীতি হোক বা রাজনীতি, দেশ সঠিক পথে এগিয়ে চলেছে এবং আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে সফলভাবে বোঝাতে পেরেছি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস গত ছয় মাসে বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল আন্তর্জাতিক সমাবেশে যোগ দিয়েছেন এবং যথাযথ সম্মান অর্জন করেছেন। আমাদের কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে আমরা ড.

ইউনূসের বিশ্বব্যাপী ভাবমর্যাদাকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছি।

পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরিতার সম্পর্ক বজায় রাখার কোনো কারণ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক টানাপোড়েনে রাখার একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রয়াস ছিল। আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করেছি। পাকিস্তানও সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনা অনুসারে দক্ষিণ এশীয় দুটি দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে দুই দেশের মধ্যে সমুদ্র যোগাযোগ ফের চালু করা উভয়ের জন্যই লাভজনক। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও দুই দেশের মধ্যে কিছু সমস্যা অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আমরা এই বিষয়গুলোতে স্থির থাকলে কোনো পক্ষই লাভবান হবে না। আমরা অবশ্যই আমাদের স্বার্থ রক্ষা ও পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করব। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে অন্য যে কোনো দেশের মতোই দেখতে চাই।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে অস্বস্তির অনুভূতি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে আমরা নয়াদিল্লির সঙ্গে এই অস্বস্তি দূর করার চেষ্টা করেছি। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের সঙ্গে এমন একটি সম্পর্ক স্থাপন করা, যা পারস্পরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে এবং উভয় দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের টেলিফোনে কথোপকথন এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎসহ দ্বিপক্ষীয় আলাপচারিতা উন্নত সম্পর্কের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। কিছু বাধা আসতে পারে, এটা স্বাভাবিক। উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এলে বাধা আসে। আমরা উভয় পক্ষের সুবিধার জন্য এই বাধাগুলো কাটিয়ে একটি ভালো কার্যকর সম্পর্ক তৈরির  ব্যাপারে লক্ষ্য রাখি।

চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রতিক পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বেইজিং সফরে দ্বিপক্ষীয় বিষয়, উন্নয়ন প্রকল্প ও বাণিজ্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। চীনকে তার নীতিগত অবস্থান সম্পর্কে আশ্বস্ত করতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং আমরা আশাবাদী, সম্পর্ক সঠিক পথে এগোবে ও অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেইজিংয়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। চীন দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। বেইজিংকে ঋণের সুদের হার কমাতে এবং ঋণ পরিশোধের সময়কাল ২০ থেকে ৩০ বছর বাড়ানোর অনুরোধ করেছি। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঋণ পরিশোধের সময়কাল বাড়ানোর বিষয়ে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন এবং সুদের হার কমানোর অনুরোধটি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে ঢাকা মনে করে না। ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকবে।

ট্রাম্পের সাহায্য হ্রাসের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলতে গিয়ে উপদেষ্টা এটিকে ‘প্রত্যাশিত’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ইউএসএইডের অস্থায়ী সাহায্য স্থগিতাদেশ কোনো নির্দিষ্ট দেশকে লক্ষ্য করে নয়। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট পরর ষ ট র উপদ ষ ট সরক র র কর ছ ন আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ফার্গি টাইম’ নয়, ইউনাইটেডে এবার ‘অফসাইড টাইম’

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ রুবেন আমোরিমের দাবি, তাঁর দলের জয়ের সঙ্গে ‘ফার্গি টাইমের কোনো সম্পর্ক নেই।’ লেস্টার সিটির কোচ রুদ ফন নিস্টলরয়ের মূল কথাও অবশ্য এমনই, ‘আমরা ফার্গি টাইমে হারিনি’। তবে পরের কথাটাই আসল, ‘অফসাইড টাইমে হেরেছি।’

স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ইউনাইটেডের কোচ থাকতে ‘ফার্গি টাইম’ কথাটার জন্ম হয়েছিল সমর্থকদের মুখে। ম্যাচের একদম শেষ দিকে করা গোলে জয় তুলে নেওয়াটা ফার্গির সময়ে প্রায় অভ্যাসে পরিণত করেছিল ইউনাইটেড। নিস্টলরয় সেই সময়ের ভেতর দিয়ে উঠে আসাদের একজন। এই ডাচ ফুটবলার ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত খেলেছেন ইউনাইটেডে। আর ইউনাইটেডের বর্তমান কোচ আমোরিম তখন পর্তুগালের বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়।

কাল রাতে এফএ কাপের চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে লেস্টারকে ২–১ গোলে হারিয়েছে ইউনাইটেড। ম্যাচে ইউনাইটেডের জয়সূচক গোলটি এসেছে ৯৩তম মিনিটে। এরপর দলটির কোচের দাবি, ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও জয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল দল, তাই জিতেছে। এর সঙ্গে ফার্গি টাইম এর সম্পর্ক নেই।

আরও পড়ুন‘জীবনের সঙ্গী’কে বিদায়ী বার্তা রোনালদোর২১ ঘণ্টা আগে

কিন্তু প্রতিপক্ষ দলের কোচ নিস্টলরয় ইউনাইটেডের জয়টাই মানতে পারছেন না। তাঁর কাছে যুক্তিও আছে। অফসাইড হয়েও ইউনাইটেডের গোলটি বৈধতা পেয়েছে, আর সেই গোলে হেরেই বাদ পড়েছে তাঁর দল লেস্টার। শুধু তা–ই নয়, কোচ হিসেবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে পণ্ড হয়েছে তাঁর ফেরাও। ডাচ এই কোচ কেন ছেড়ে কথা বলবেন? সে কারণেই ‘অফসাইড টাইম’ এর কৌতুক।

অবশ্য কৌতুক চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। কেউ কেউ বলছেন, ‘ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ অফসাইড’ থেকে গোল করেছেন হ্যারি ম্যাগুয়ার।

পঞ্চম রাউন্ডে ওঠার ম্যাচটিতে লেস্টারই এগিয়ে ছিল। ৪২ মিনিটে ইউনাইটেড গোলকিপার আন্দ্রে ওনানার সেভের পর ফিরতি বলে হেডে গোল করেন লেস্টারের ফরোয়ার্ড ববি দে কর্ডোভা–রেইড। ৬৮ মিনিটে ইউনাইটেডও সমতাসূচক গোল করে ফিরতি বলে। রাসমুস হয়লুন্দের শট লেস্টারের গোলকিপার ম্যাডস হারমানসেন রুখে দেওয়ার পর ফিরতি বল গোল করেন ইউনাইটেড ফরোয়ার্ড জির্কজে।

যোগ করা সময়ে ফ্রি কিক পেয়েছিল ইউনাইটেড। ব্রুনো ফার্নান্দেজের ফ্রি কিক থেকে হেডে গোল করার সময় অফসাইড ছিলেন ম্যাগুয়ার। কিন্তু লাইন্সম্যানের চোখ এড়িয়ে যায় তা। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তিও এফএ কাপের এ পর্যায়ে ব্যবহার করা হয় না। গত ডিসেম্বরে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) জানিয়েছিল, এফএ কাপে পঞ্চম রাউন্ডের আগপর্যন্ত ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে না।

আরও পড়ুনদাপুটে জয়ে ফাইনালে উঠেও খুশি নন লিভারপুল অধিনায়ক০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সিদ্ধান্তটি তাই মাঠের অফিশিয়ালদের নিতে হতো। অবিশ্বাস্য বিষয়, শুধু ম্যাগুয়ার নয়, ইউনাইটেডের মোট চারজন তখন অফসাইড ছিলেন, যেটার ছবি পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এসেছে। কিন্তু মাঠে অফিশিয়ালদের কেউ অফসাইডের বাঁশি বাজাননি। যদিও ইউনাইটেডের সাবেক মিডফিল্ডার ও স্কাই স্পোর্টসের ফুটবল–পণ্ডিত রয় কিনের দাবি, লাইন্সম্যানের না দেখার কোনো কারণই থাকতে পারে না। আইটিভিকে বলেছেন, ‘লাইন্সম্যানকে এটা দেখতেই হবে। ইউনাইটেড যেন জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে!’

ইউনাইটেড কোচ আমোরিমও ম্যাচ শেষে স্বীকার করেছেন, ভিএআর প্রযুক্তি থাকলে গোলটি হতো না, ‘ভিএআরে এটা গোল নয়। খেলায় ন্যায্যতার জন্যই ভিএআর থাকা গুরুত্বপূর্ণ। অফসাইড খেলায় হার মেনে নেওয়া কঠিন। তবে কিছুটা সৌভাগ্য আমাদেরও প্রাপ্য।’

খটকাটা হলো, আমোরিম খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার কথাও বলেছেন। সেটা থাকলে অবশ্য কেউ সৌভাগ্যের পরশ পাওয়ার কথা ভাবে না। সে যা–ই হোক, আইটিভিকে আমোরিম বলেছেন, ‘আমাদের শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস রাখতে হয়েছে, তবে এই ম্যাচের সঙ্গে ফার্গি টাইমের কোনো সম্পর্ক নেই।’

প্রথমার্ধে আমোরিমের দল লেস্টারের পোস্টে কোনো শট রাখতে পারেনি। এ মৌসুমে যা তৃতীয়বার দেখা গেল। শিষ্যদের খেলায় অসন্তোষের কথাও অবশ্য বলেছেন আমোরিম।

লেস্টার কোচ নিস্টলরয় হারের পর কোনো রাখঢাক রেখে সরাসরি বলেছেন, ‘ফার্গি টাইম নয়, আমরা অফসাইড টাইমে হেরেছি। এটা পরিষ্কার যে একটি ভুল ম্যাচের ফল ঠিক করে দিয়েছে। এটার দরকার ছিল না। ভিএআরে কয়েক সেন্টিমিটার, কয়েক ইঞ্চিতেও অফসাইড হয়। আর এটায় আধমিটার, পরিষ্কার। অতিরিক্ত সময়ে যাওয়াটা আমাদের প্রাপ্য ছিল। তারপর হয়তো পেনাল্টি। এই পর্যায়ে এমন সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া কঠিন।’

এফএ কাপের পঞ্চম রাউন্ডে এবারই প্রথমবারের মতো ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এ নিয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর দেওয়া বিবৃতিতে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) জানিয়েছিল, ‘অবকাঠামো, খরচ ও কর্মব্যাপ্তি বিচারে এফএ কাপে এর আগে ভিএআর শুধু ওয়েম্বলি ও প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচগুলোয় ব্যবহার করা হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ