ভারত চীন আমেরিকার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক
Published: 8th, February 2025 GMT
বাংলাদেশকে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বাসসকে বলেছেন, ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অবশ্যই আমাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করে এই তিন দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখব।
ছয় মাসে বৈদেশিক সম্পর্ক সম্পর্কিত সরকারের অর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা সেই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি ও বিশ্বব্যাপী বিপুল সমর্থন পেয়েছি। অর্থনীতি হোক বা রাজনীতি, দেশ সঠিক পথে এগিয়ে চলেছে এবং আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে সফলভাবে বোঝাতে পেরেছি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস গত ছয় মাসে বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল আন্তর্জাতিক সমাবেশে যোগ দিয়েছেন এবং যথাযথ সম্মান অর্জন করেছেন। আমাদের কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে আমরা ড.
পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরিতার সম্পর্ক বজায় রাখার কোনো কারণ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক টানাপোড়েনে রাখার একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রয়াস ছিল। আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করেছি। পাকিস্তানও সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনা অনুসারে দক্ষিণ এশীয় দুটি দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে দুই দেশের মধ্যে সমুদ্র যোগাযোগ ফের চালু করা উভয়ের জন্যই লাভজনক। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও দুই দেশের মধ্যে কিছু সমস্যা অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আমরা এই বিষয়গুলোতে স্থির থাকলে কোনো পক্ষই লাভবান হবে না। আমরা অবশ্যই আমাদের স্বার্থ রক্ষা ও পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করব। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে অন্য যে কোনো দেশের মতোই দেখতে চাই।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে অস্বস্তির অনুভূতি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে আমরা নয়াদিল্লির সঙ্গে এই অস্বস্তি দূর করার চেষ্টা করেছি। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের সঙ্গে এমন একটি সম্পর্ক স্থাপন করা, যা পারস্পরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে এবং উভয় দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের টেলিফোনে কথোপকথন এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎসহ দ্বিপক্ষীয় আলাপচারিতা উন্নত সম্পর্কের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। কিছু বাধা আসতে পারে, এটা স্বাভাবিক। উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এলে বাধা আসে। আমরা উভয় পক্ষের সুবিধার জন্য এই বাধাগুলো কাটিয়ে একটি ভালো কার্যকর সম্পর্ক তৈরির ব্যাপারে লক্ষ্য রাখি।
চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রতিক পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বেইজিং সফরে দ্বিপক্ষীয় বিষয়, উন্নয়ন প্রকল্প ও বাণিজ্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। চীনকে তার নীতিগত অবস্থান সম্পর্কে আশ্বস্ত করতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং আমরা আশাবাদী, সম্পর্ক সঠিক পথে এগোবে ও অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেইজিংয়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। চীন দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। বেইজিংকে ঋণের সুদের হার কমাতে এবং ঋণ পরিশোধের সময়কাল ২০ থেকে ৩০ বছর বাড়ানোর অনুরোধ করেছি। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঋণ পরিশোধের সময়কাল বাড়ানোর বিষয়ে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন এবং সুদের হার কমানোর অনুরোধটি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে ঢাকা মনে করে না। ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকবে।
ট্রাম্পের সাহায্য হ্রাসের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলতে গিয়ে উপদেষ্টা এটিকে ‘প্রত্যাশিত’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ইউএসএইডের অস্থায়ী সাহায্য স্থগিতাদেশ কোনো নির্দিষ্ট দেশকে লক্ষ্য করে নয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট পরর ষ ট র উপদ ষ ট সরক র র কর ছ ন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সমাজে নারীদের করুণ দশার পেছনে দায়ী ‘পুরুষতন্ত্র’
সমাজে নারীদের করুণ দশার পেছনে দায়ী একটি শব্দের নাম ‘পুরুষতন্ত্র’, যা শুধু পুরুষদের মধ্যেই নয়, সমাজের নারীদের মধ্যেও প্রবল। এ ধরনের সমাজব্যবস্থার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে লড়াই করতে হবে। সংখ্যায় বেশি হলেও গুণগত দিক থেকে নারীরা এখনো পিছিয়ে রয়েছেন। বর্তমান নতুন এই সময় ও সুযোগ কাজে লাগিয়ে সব স্তরে নারীদের অধিকার এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার সকালে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম (এনজিসিএএফ) আয়োজিত আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এ সভা হয়।
অনুষ্ঠানে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশ, রাজনীতি, সমাজে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পরিবার, প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে গণপরিবহন এবং সড়কে নারী এবং কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই হবে। নারীর অবস্থা ও অবস্থানের উন্নতির ওপর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে।
অধ্যাপক বদিউল আলম আরও বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে জুলাইয়ের আন্দোলনে নারীদের এত গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং অবদানের পর আমরা নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। তাই দ্রুত নারীদের সঙ্গে হওয়া সব অন্যায়-নিপীড়ন রুখে দিতে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বক্তব্য দিচ্ছেন অধ্যাপক সামিনা লুৎফা