আবাসন ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মানিকদী এলাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। তিন বছর আগের এক মামলায় পাল্টে যায় তাঁর জীবন। পরিবার-পরিজন ছেড়ে নাজিম ঘুরতে থাকেন পথে পথে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পরও দিন ফেরেনি তাঁর।

২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারির মতো গত বছরের ১৮ জুলাই নাজিমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বিএনপিকে সন্ত্রাসী অর্থদাতা হিসেবে। শুধু তাই নয়, ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবেও তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় নাজিম ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি রাজনৈতিক এবং হত্যা মামলা হয়েছে।

নাজিমের দাবি, একটি ঘটনার সঙ্গেও তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। পতিত আওয়ামী লীগের এক নেতার রোষানলে তাদের জীবন তছনছ হয়ে গেছে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটেও তাঁর ইন্ধনে একের পর এক মামলা হচ্ছে। ভুয়া মামলা থেকে বাঁচতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘থানা পুলিশ ও ডিবির ওপর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের ছায়া রয়েই গেছে। এ জন্য অভিযোগ দেওয়ার পরও সত্যতা যাচাই না করে বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছি আমরা পাঁচ ভাই।’

সমকালের হাতে আসা এজাহারগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় পুলিশের মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে আসামি হয়েছেন নাজিম উদ্দিন। এর পর ২০২২ সালে ক্যান্টনমেন্ট, বনানী ও শেরেবাংলা নগর থানায় ৫টি, ২০২৩ সালে এসব থানায় আরও ৫ এবং ২০২৪ সালে ক্যান্টনমেন্ট, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, পল্টন ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে হয়েছে ৯ মামলা। এর মধ্যে গত বছর ৫ আগস্টের পর হয়েছে ৬টি। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত চারবার গ্রেপ্তার হয়েছেন নাজিম।

জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে মিরপুর থানার মামলায় নাজিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, নাজিমকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন ডিবি সদস্যরা। এর পর সন্তানদের নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন তাঁর স্ত্রী। বর্তমানে তাদের পড়ালেখা বন্ধের উপক্রম।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব তামিম (১৯) হত্যার অভিযোগে গত ৩ সেপ্টেম্বর মিরপুর থানায় মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা আব্বাস আলী। এতে ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিনকে ৮৪ নম্বর আসামি করা হয়। একই বাদী ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় আরেকটি হত্যা মামলা করেন। তাতে আসামি করা হয়েছে নাজিমের ভাইদের।

তামিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি করতেন বলে জানিয়েছেন তাঁর বাবা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘গত বছর ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় আন্দোলন দেখতে বের হলে তামিম গুলিতে মারা যায়।’ অথচ আব্বাসের মামলায় তামিমকে প্রতিবেশী উল্লেখ করে এক মাস পরে তাঁর মৃত্যু ১৯ আগস্ট মিরপুরে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী রাজু আহমদ (২৪) হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার সঙ্গে নাজিমকেও আসামি করা হয়। ২৭ আগস্ট রাজুর বাবা কালাম মোল্লা মামলাটি করেন। একই দিন বিকেল ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলায় নাজিমকে ৩৪ নম্বর আসামি করা হয়। আধা ঘণ্টা ব্যবধানে একই ব্যক্তি দুটি হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে।

অভ্যুত্থানের আগে সন্ত্রাসী, পরে দোসর

জুলাই বিপ্লবের আগে ১৪ মামলায় ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসী এবং অর্থদাতা বলা হয়েছে। এমনকি আন্দোলন চলাকালে ২৬ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট থানার 

মামলাতেও নাজিম, তাঁর ভাই সাইফুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন ভূঁইয়া, শামীম ভূঁইয়া ও রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ক্যান্টনমেন্ট ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় চার মামলায় নাজিম এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে আন্দোলনে হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলায় ব্যবসায়ী নাজিমকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবে এ পদে আছেন মিনহাজুল ইসলাম মিজু।

আসামিদের চেনেন না বেশির ভাগ বাদী
একটি মামলার বাদী কালাম মোল্লা সমকালকে বলেন, ‘মাগুরার স্থানীয় বিএনপি নেতা দাউদ ও মোহাম্মদপুরের দোলন মিলে আমাকে দিয়ে মামলা করিয়েছে। আসামিদের কাউকে চিনি না, জানিও না। আমাকে ঢাকায় এনে শুধু কাগজে সই করতে বলেছেন। ছেলে হত্যার জন্য নিরপরাধ ব্যবসায়ীকে কেন আসামি করব?’

আরেক মামলার বাদী ছাত্রদলের সাবেক নেতা আব্বাস আলী বলেন, ‘মামলায় এত এত আসামি, সবাইকে তো চেনা যাবে না। মামলা করতে গেলে উকিলরা কিছু নাম দেন; ভাই-বন্ধুরাও কয়েকজনকে ঢোকাতে বলেন। এভাবেই হয়তো ভুলে কারও নাম রয়ে গেছে। বড় মামলায় ১০-১৫ নাম ভুল হতেই পারে। বিষয়টি বুঝতে পেরে নিরীহদের নাম বাদ দিতে আইও এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আমি বৈঠক করেছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিনের নাম আগে শুনেছি। মামলায় আমি তাঁর নাম দিইনি। কে দিয়েছে তা বলা যাবে না। নির্দোষ হলে তদন্তে তাঁর নাম বাদ যাবে।’

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) এস এন নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা রয়েছে। মামলা হলেই কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পেলেই কেবল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশ নিরীহ কাউকে হয়রানি করছে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় ক য ন টনম ন ট ন র য়ণগঞ জ র ম হ ম মদপ র ব যবস য় পর ব র আগস ট ব এনপ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা উপেক্ষিত

মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজেনারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা উপেক্ষিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাঠানো  লিখিত নির্দেশ মানছেন না মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নুসরত রেবেকা। সরকারি প্রজ্ঞাপনে আদেশ থাকা সত্ত্বেও সহকারী প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তারের সরকারি বেতন-ভাতা প্রদান করছে না।

ফলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিন শতাধিক শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। 

জানাগেছে, গত ২৩ এপ্রিল বুধবার তিন শতাধিক শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা মহোদয়ের সাথে দেখা করে মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের বিভিন্ন অনিয়ম ও বেআইনি কর্মকান্ড তুলে ধরেন। 

এসময়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় সকল শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং বলেন কি কি অনিয়ম ও বেআইনি কর্মকান্ড হচ্ছে আপনারা লিখিতভাবে আমাকে দেন। আমি সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 

তিনি আরও বলেন, কারো বেতন ভাতা বন্ধ করা আমার কাজ নয়, যেহেতু সরকারি প্রজ্ঞাপন রয়েছে বেতন ভাতা প্রদানের জন্য এবং তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে তাহলে অবশ্যই  লায়লা আক্তারসহ সকলের বেতন ভাতা প্রদান করা হবে।

এবিষয়ে শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ বলেন, মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তার বিদ্যালয়ে না থাকায় বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খল ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তার অনুপস্থিতিতে বিদ্যালয়ে পাঠদানে ব্যাপক বেগার্ড করছে। এমনকি শিক্ষকরাও দলাদলি এবং বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। 

তারা আরও বলেন, যেহেতু সরকারি প্রজ্ঞাপন রয়েছে বেতন ভাতা চালু ও স্বপদে বহাল করার এবং জেলা প্রশাসক মহোদয় দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে তদন্ত করিয়েছেন । তদন্ত কমিটি সম্পূর্ন নির্দোষ ও বেতন ভাতা প্রদানের সুপারিশ করেছেন। 

জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যালয় হতে জেলা প্রশাসক মহোদয় বেতন ভাতা প্রদানের লিখিত নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অদ্যবধি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুসরত রেবেকা এখন পর্যন্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তারের বেতন-ভাতা প্রদান করছেন না। তাই লায়লা আক্তারকে অবিলম্বে স্বপদে বহাল ও বেতন ভাতা চালু করতে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অনুরোধ করেন। 

তবে এবিষয়ে জানতে মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নুসরত রেবেকা বলেন, সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন বলা হয়েছে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন ভাতা দেওয়ার জন্য।

সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কোন কিছু লেখা নাই। আর জেলা প্রশাসকের প্রজ্ঞাপনে তো আমি তার বেতন দিতে পারি না। সরকারিভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিষয় প্রজ্ঞাপন আসতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তিনি তো পদত্যাগ করেছে। আর আমার তো বেতন দেয়ার কোন এখতিয়ার নাই। আমাদের সভাপতিসহ কমিটি লোকজন আছে তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে তারপরে তার বেতন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

অফিস আওয়ারে স্কুলে আসবেন আপনার সাথে কথা বলবো। ফোনে আপনার সাথে বেশি কথা বলব না।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জের কদম রসুল সেতুর সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখ পুনর্নির্ধারণের দাবিতে স্মারকলিপি
  • জেলা প্রশাসককে ২৪’র শহীদদের স্মারক দিল জামায়াত
  • কমিউনিষ্ট পার্টির হাফিজের বিরুদ্ধে ইসমাইলের সংবাদ সম্মেলন
  • কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
  • আদালত চত্বরে সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হ‌ককে থাপ্পড়
  •  সোনারগাঁয়ে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে কৃষকদের নিয়ে কর্মশালা
  • নারায়ণগঞ্জ মেকানিক ওয়ার্কশপ ইউনিয়ন’র দোয়া অনুষ্ঠিত
  • জাকির খানের ছবি দিয়ে শ্রমিক লীগ নেতা পলাশের পোষ্টার, তীব্র ক্ষোভ
  • বন্দর থানা (জেলা) জাসাস’র পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন
  • মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা উপেক্ষিত