দেশজুড়ে চলমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সমর্থন করছে না বিএনপি। তাদের দৃষ্টিতে গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস পর এই ধরনের ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই। এটা নির্বাচন প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র। বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তার দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরই বর্তায়। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। এখন সরকারকেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। নইলে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি আরও বাড়বে। 

গতকাল শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে এসব কথা বলা হয়েছে। রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের উদ্বেগ ও দলের অবস্থান তুলে ধরবেন বিএনপি নেতারা। তবে ‘নৈরাজ্যকর’ পরিস্থিতির জন্য কাউকে সরাসরি দোষারোপ করবে না। বিএনপি এই ইস্যুতে কোনো কর্মসূচি দেবে না। এই ঘটনাকে যে বিএনপি সমর্থন করে না, সেটা সভা-সেমিনারের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। 

জানা গেছে, গতকালের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারাদেশে ভাঙচুর ও সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনসহ সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নেতারা মনে করছেন, দেশজুড়ে সংঘটিত ভাঙচুরের ঘটনাগুলো আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র। তা ছাড়া এটা এক ধরনের ফাঁদ। তাই নেতাকর্মীকে বিশৃঙ্খলা ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে জরুরি নির্দেশনা পাঠিয়ে বলা হয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে 

বিরোধী পক্ষের বাড়িঘরে আগুন ও ম্যুরাল ভাঙচুরসহ হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়ানো যাবে না। দেশ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে এই নির্দেশ প্রতিটি নেতাকর্মী অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন বলে দলীয়ভাবে প্রত্যাশা করা হয়েছে।

দলটির এক শীর্ষ নেতা বৈঠকে বলেছেন, বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের পরপরই নানা ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এতদিন পরে এসে কেন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটবে? তাহলে দেশ কি স্থিতিশীল হবে না?

এ বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা বলেছেন, এসব অরাজকতার মূল টার্গেট বিএনপি ও নির্বাচন। একটি রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে ছাত্ররা শক্তি প্রদর্শন করছে। নির্বাচনকে প্রলম্বিত করা এর উদ্দেশ্য, যাতে দ্রুত সময়ে রোডম্যাপ ঘোষণা না করা হয়। কারণ, ছাত্ররা নতুন দল গঠন করে সারাদেশে সংগঠনকে সুসংহত করতে যথেষ্ট সময় চায়। অন্যদিকে বিএনপির দাবি, দ্রুত নির্বাচন। 

আবার নির্বাচনের জন্য দেশি-বিদেশি চাপও বাড়ছে। এমন অবস্থায় নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। 

সেই সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য পূরণ হবে না বলেও স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নেতারা বলেছেন, ন্যূনতম সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাই সরকারের লক্ষ্য। বৈঠকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ ও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে রমজান মাস শুরুর আগেই বিভাগ এবং জেলা পর্যায়ে সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। আগামী সোমবার কর্মসূচি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। 

বৈঠকে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালে ডামি প্রার্থীর নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আর দ্রুতই জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। 

বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা দৃশ্যমান করুন
দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। গত বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এর ব্যত্যয় হলে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। তাই কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করাটাই এখন সময়ের দাবি।

উদ্বেগ প্রকাশ করে এতে বলা হয়, সরকার চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। উগ্র নৈরাজ্যবাদী গণতন্ত্রবিরোধী দেশি-বিদেশি অপশক্তির পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে, যার উপসর্গ ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এখনও প্রশাসনকে পতিত ফ্যাসিস্ট শাসকের দোসরমুক্ত করা হয়নি। বিচার বিভাগে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বিদ্যমান। গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনও পুলিশ প্রশাসনে কর্মরত। এ অবস্থায় সরকার জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে সফলতা অর্জন করতে পারবে কিনা, তা যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে।

বর্তমান সরকার গত ছয় মাসেও পলাতক স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনগণের মনে হয়েছে। ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায়, জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে, দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে। অথচ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল– আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। তা ছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানা ধরনের দাবি নিয়ে যখন-তখন সড়কে ‘মব কালচারের’ মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, যা নিয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুনশিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ গণঅভ য ত থ ন র পর স থ ত পর স থ ত র সরক র র ন সরক র কম ট র ব ত কর র জন ত র জন য অবস থ ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের জবাবদিহির দাবিতে চট্টগ্রামে থানা ঘেরাও

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানা ঘেরাও করেছেন স্থানীয় ছাত্র-জনতা। আজ রোববার বেলা তিনটার দিকে খুলশী থানা সাধারণ জনগণ ও ছাত্রসমাজের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়৷

এদিন ব্যানার হাতে খুলশী থানার প্রবেশ ফটকের সামনে অবস্থান নেন ছাত্র-জনতা। এ সময় ছিনতাই, হত্যা, ধর্ষণের মতো ঘটনায় প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপের দাবি জানান তাঁরা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করা হয়। এর আগে তাঁরা থানা অভিমুখে পদযাত্রা করেন।

এতে বক্তব্য দেন মো. মুসা, আবু জাফর, তানভীর খান, নবাব সলিম উল্যাহসহ আরও অনেকে। তানভীর খান বলেন, দেশে যখন সব থানায় হামলা হয়েছে, তখন জনগণ এই থানা পাহারা দিয়েছে। তার বিনিময়ে পুলিশ কিছুই দেয়নি। বরং নীরব ভূমিকা পালন করেছে। চাঁদাবাজি, হামলা এসব বিষয়ে পুলিশ এখনো নীরব।

বক্তারা বলেন, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে পুলিশ কেন কথা বলছে না? পুলিশ কেন নীরব, তার জবাবদিহি করতে হবে। ছাত্র-জনতা থানার নিরাপত্তা দিতে পেরেছে। তাহলে পুলিশ কেন জনগণের নিরাপত্তা দিতে পারছে না? পুলিশকে জবাবদিহি করতে হবে। সবার সামনেই জবাব দিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রসমাজ বিভিন্ন দাবিতে থানার সামনে অবস্থান নিয়েছিল। আধা ঘণ্টার মতো তাঁরা সেখানে ছিলেন। আলোচনার পর তাঁরা চলে গেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি ছাত্র ফ্রন্টের
  • ট্যাগিং রাজনীতি যে সর্বনাশ ডেকে আনবে
  • গণঅভ্যুত্থানের পরে সমাজে কোনো পরিবর্তন আসেনি
  • পুলিশের জবাবদিহির দাবিতে চট্টগ্রামে থানা ঘেরাও
  • ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং কমিশন গঠনের আহ্বান বিশিষ্টজনদের
  • নতুন রাজনৈতিক দলের কাছে তরুণদের প্রত্যাশা
  • আশা করি আমরা এই নির্বাচনে জিতব: এএফপিকে নাহিদ
  • ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে নারীর বীরত্ব অসামান্য’
  • ‌‘জুলাই কমিউনিটি এলায়েন্স মিরপুর’র আত্মপ্রকাশ
  • জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স মিরপুর’র আত্মপ্রকাশ