নৈরাজ্য করলে কঠোর ব্যবস্থা: প্রধান উপদেষ্টা
Published: 8th, February 2025 GMT
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির নেতা এবং অন্য কারোর সম্পত্তিতে হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত সম্পত্তি এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আর কোনো হামলা হবে না– তা নিশ্চিত করতে হবে। যেসব ব্যক্তি সম্পত্তির ওপর হামলা চালিয়েছে,
তাদের ক্ষোভ বোঝা যায়, কারণ তারা এবং তাদের স্বজন শেখ হাসিনার শাসনামলে বছরের পর বছর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো অন্তর্বর্তী সরকারের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। খবর বাসসের।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এগুলো তাদের এতদিনের ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ। সরকার তাদের এই অনুভূতি বুঝতে পারছে। এমনকি ভারতে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সংস্কারে বাধা দিচ্ছেন, সেটাও মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলছে। শেখ হাসিনার এসব কার্যকলাপের কারণেই জনগণের মনে ক্ষোভ বাড়ছে এবং এমন হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
সরকার এই ক্ষোভের বিষয়টি উপলব্ধি করছে, কারণ নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নিয়েও হাসিনা তাঁর উগ্র কর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে তাঁর শাসনের নিপীড়ন থেকে বাংলাদেশ পুনরুদ্ধার হতে না পারে।
তবে এই পরিস্থিতি বোঝার পরও সরকার দেশবাসীকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা নতুন বাংলাদেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যেখানে অন্তর্বর্তী সরকার দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসনের পুরোনো বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কাজ করছে।
এতে আরও বলা হয়, আসুন, বাংলাদেশের জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে না ফেলি; আইনের প্রতি যে কোনো অবহেলা নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনা সরকারকে উৎখাত করেছে এবং স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনের পথে এগিয়ে গেছে, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে দেশের মানুষ ও বিশ্বের বন্ধুদের সামনে প্রমাণ করতে হবে আমার একে অন্যের নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, অটল ও অবিচল।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশের নাগরিকরা কখনও এমন কাজ করতে পারেন না, যে কারণে উৎখাত হওয়া স্বৈরশাসকের আচরণের সঙ্গে তাদের তুলনা করার সুযোগ পায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, দেশকে অস্থিতিশীল করতে কেউ যদি উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চালায়, তাঁর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। যদি কেউ বিশৃঙ্খলা বা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়, বিশেষ করে সম্পত্তি ধ্বংসের মাধ্যমে; তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সরকার দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করবে বলে দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। স্বৈরশাসকের সহযোগী নেতারা দেশকে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, যতদিন দেশের মানুষ সতর্ক থাকবে এবং নিজেদের নৈতিকতা বজায় রাখবে, ততদিন তাদের ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই।
এতে বলা হয়, ফ্যাসিবাদীদের সম্পত্তির ওপর যে কোনো হামলা তাদের জন্য একটি অজুহাত হয়ে দাঁড়ায়, যা তারা আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং তাদের মিথ্যা গল্প প্রচার করতে ব্যবহার করবে। আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছি। সমগ্র বিশ্ব আমাদের পাশে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে বিশ্ববাসীর কাছে ভুল বার্তা যাবে। এর আগে আরেক বিবৃতিতে সারা দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের চেষ্টা শক্তভাবে প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জাপার ইফতার মাহফিল পণ্ড, গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে গেলেন জি এম কাদের
রাজধানীর পল্লবীতে বাধার মুখে জাতীয় পার্টির (জাপা) ইফতার মাহফিল ভন্ডুল হয়ে গেছে। আজ শনিবার পল্লবী থানাসংলগ্ন দুই নম্বর কমিউনিটি সেন্টারে এই ইফতার মাহফিল হওয়ার কথা ছিল। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্লোগান দিয়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক ইফতার মাহফিল বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় পার্টি। ওই ইফতারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে পুলিশ এসে কমিউনিটি সেন্টারের তত্ত্বাবধায়ককে নিয়ে যায়। কিছু সময় পর তত্ত্বাবধায়ক ফিরে আসেন। তখন পুলিশ কমিউনিটি সেন্টারের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর ২০-২৫ জন ছেলে এসে অশালীন স্লোগান দিয়ে ইফতার মাহফিলের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। উপস্থিত নেতা-কর্মীদের গালাগাল দিয়ে সেন্টার থেকে বের করে দেয়।’
জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, যখন কমিউনিটি সেন্টারে গোলযোগ চলছিল, তখন জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের পথে ছিলেন। খবর শুনে তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে ফিরে যান।
অন্তর্বর্তী সরকার পক্ষপাতদুষ্টএ ঘটনার তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জি এম কাদের। বিবৃতিতে তিনি বলেন,‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা মাঠে ছিলাম। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে জাতীয় পার্টির দুজন নেতা শহীদ হয়েছেন। অনেকেই মামলা ও হামলার শিকার হয়ে কারাবাস করেছেন। এ ছাড়া বিগত সরকারের সব দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার ছিলাম। অথচ বর্তমান সরকার আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।’
জাতীয় পার্টিকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে আমাদের পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রায় ক্ষেত্রেই পুলিশের সহযোগিতা চাওয়ার পরও পাওয়া যায়নি। এমনকি পরে থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করতে গেলেও দায়িত্বরত ব্যক্তিরা তা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আটক ব্যক্তিদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না।’
জাপার চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অনেক আগেই নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। এই সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় একটি নতুন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের আনুকূল্যে নতুন দলটি ক্ষমতার জন্য ভোটের মাঠে লড়াই করতে চাইবে। এমন বাস্তবতায় পক্ষপাতদুষ্ট অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই বোকামি। তা ছাড়া বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দৃষ্টে এ কথা বলা যায়, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে যে শক্তি ও সামর্থ্য দরকার, তা এই সরকারের নেই।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, এভাবে বেশি দিন চলতে থাকলে দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা হয়।