ভাঙচুরের দায় সরকারের ওপরেই অনেকাংশে বর্তায়
Published: 8th, February 2025 GMT
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ২৬ নাগরিক। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে বাড়িটি ধ্বংস করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনা-পরবর্তী একটি বিবৃতি দিয়ে এ দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরই অনেকাংশে বর্তায়। এসব ঘটনার বিচার দাবি করেন তারা।
গতকাল শুক্রবার দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৫ ফেব্রুয়ারি যেভাবে ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িটি ক্রেন, বুলডোজার ব্যবহার করে ধূলিসাৎ করা হয়েছে এবং তার সঙ্গে অন্য যেসব স্থাপনা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে ধ্বংস করা হয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা দেখে
একটি সভ্য দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত, স্তম্ভিত ও লজ্জিত। এ ঘটনার আমরা বিচার চাই।
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘এমন লজ্জাজনক ঘটনার নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর উপযুক্ত ভাষা আমাদের জানা নেই। ঘটনাটির আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এর সম্পূর্ণ সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানাতে চাই; কিন্তু কার কাছে জানাব? আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো হয় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, কিংবা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিল; কিন্তু কেন? তাদের জনগণের কর ও অর্থে লালন-পালন করা হয় কি নীরব দর্শক হয়ে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করার জন্য? যখন তাদেরই নাকের ডগায় প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়, তখন তারা নীরব-নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা পালনের অর্থ কী? অপরাধের সহযোগী হওয়ার সমার্থক নয়?’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘কোনো ধরনের গণউত্তেজক সহিংসতা বা মব ভায়োলেন্স কেবল ফ্যাসিবাদের কর্মী-সমর্থক এবং তাদের আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকদের নাশকতা সৃষ্টির প্রচেষ্টাকেই উৎসাহিত করবে। বিগত পতিত সরকার ও তার সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে নানা নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। পাশাপাশি তারা দেশে এখন আইনের শাসন নেই বলে দেশ-বিদেশে যে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, তার হাতও এতে শক্তিশালী হবে। তাই পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কোনো অসত্য ভাষণ বা উস্কানিমূলক উক্তিকে উসিলা করে এমন কোনো কাজ করা বা তাকে সমর্থন করা চলবে না, যাতে আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ইতোমধ্যে যা ঘটানো হয়েছে, সেসব ঘটনাকে আইনের আওতায় এনে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার করতে হবে।’
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরেই অনেকাংশে বর্তায়। সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনা-পরবর্তী একটি বিবৃতি দিয়ে এ দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। যে কোনো দেশের ঐতিহাসিক নিদর্শন, স্থান কিংবা স্থাপনা সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সেই দেশের রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের। ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান, বাড়ি বা অন্য কোনো স্থাপনা– ওই স্থানে কারা কোন সময় বসবাস করেছেন বা কাদের নাম জড়িত, সেই নিরিখে বিচার্য নয়। মূল্যায়ন যে যেভাবেই করুক, তার ওপরে তার সুরক্ষার প্রশ্নটি নির্ভর করে না। এটা সভ্য সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।’
তারা আরও বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই এভাবে ঐতিহাসিক স্থান ও কীর্তিগুলো যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে সুরক্ষা করা হয়। অনেক নির্মম নির্দয় শাসকের বাসভবনও দর্শকরা তাই দেখতে পান। তাদের কীর্তি-অপকীর্তি সম্পর্কেও বহু বছর পরও মানুষ জানতে পারেন। আমরা তাই ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সবিস্তার ব্যাখ্যা দাবি করছি এবং এর সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবহেলাসহ যারা দায়ী, তাদের জবাবদিহি ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘৩২ নম্বর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বাড়ি ভাঙার সঙ্গে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের শক্তি প্রদর্শনের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এটা এক ধরনের গণউত্তেজক সন্ত্রাসের প্রদর্শন বলেই জনগণের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, যা ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ভাবমূর্তিকেই ম্লান করে দেয়। এটা আমাদের গভীর উদ্বেগের বিষয় যে, তারুণ্য আমাদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের মূল শক্তি হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, সেই তরুণদের একাংশকে কোনো দেশি বা বিদেশি অপশক্তি বিপথে পরিচালিত করতে নেপথ্যে সক্রিয় রয়েছে কিনা– এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেটিও আজ খতিয়ে দেখা খুবই জরুরি।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী, আনু মুহাম্মদ, খুশী কবির, পারভীন হাসান, ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র ব স কর ধ নমন র ঘটন আহম দ ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে
ডলারের দামে অস্থিরতা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, ভ্যাট প্রদানে হয়রানি, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও উচ্চ ফি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং অসহনীয় যানজটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি ক্রমশই অবনতি হচ্ছে। গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় রাজধানীর গুলশান এলাকার তৃণমূল ব্যবসায়ীরা এমন তথ্য দিয়েছেন।
ঢাকা চেম্বারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিসিসিআই গুলশান সেন্টারে অনুষ্ঠিত সভায় যেখানে গুলশান, মহাখালী, বনানী এবং বাড্ডা অঞ্চলের ১৪টি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা এবং বেশ কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক সাইয়েদুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (গুলশান বিভাগ) তারেক মাহমুদ বিশেষ অতিথি ছিলেন।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির কারণে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের ক্রমশই কঠিনতর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর সঙ্গে কর ও ভ্যাট ব্যবস্থার জটিলতা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত কর ও ভ্যাটের পরিবর্তন, অগ্রিম আয়কর ও রেগুলেটরি ডিউটির অতিরিক্ত বোঝা এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতার কারণে বেসরকারি খাতের ওপর অতিরিক্ত অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং যানজট পরিস্থিতির অবনতির কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ঋণপত্র খোলার জটিলতা, এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তিতে পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতা এবং উচ্চ সুদহার স্থানীয় শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত করছে।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে গুলশান ১ নম্বর ডিএনসিসি দক্ষিণ পাকা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, এলসি খোলা হতে সমন্বয় পর্যন্ত প্রায় তিন মাস সময় লেগে যায়। দীর্ঘ সময়ের জন্য টাকা আটকে থাকার কারণে ব্যবসায়ীদের মূলধন স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি ডলারের মূল্যের অস্থিরতার কারণেও ব্যবসায়ীরা এলসির মূল্য পরিশোধে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
মহাখালী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফিরোজ আলম স্বপন জানান, ভ্যাটের হার বৃদ্ধি, ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের উচ্চ ফি এবং দীর্ঘসূত্রতার কারণে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। আমিন হোসেন অ্যান্ড কোং-এর পার্টনার মোহাম্মদ আল আমিন জানান, আয়কর আইনের ১৬৩ ধারা এবং অগ্রিম আয়কর সমন্বয়ের দীর্ঘসূত্রতার জন্য ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের মূলধন থেকে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
হাসান হার্ডওয়্যারের স্বত্বাধিকারী মাহফিজুল হক বলেন, অসহনীয় যানজট, অটোরিকশার দৌরাত্ম্য এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দোকানে ক্রেতার আগমন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। মেট্রোপলিটন শপিং প্লাজা মার্কেট সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি আলমগীর হোসেন বলেন, সম্প্রতি বেশ কিছু দোকান মালিক দুর্বৃত্তদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং থানায় এ ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়া হলে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করেন। মওলা ট্রেডার্সের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চহার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, এলসি পেমেন্টে দূীর্ঘসূত্রতা, ভ্যাট প্রদানে হয়রানি প্রভৃতি কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, কভিড মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে মার্কিন ডলারের মূল্যের অস্বাভাবিক ওঠানামার কারণে আমাদের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা অনায়নে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।
এনবিআরের প্রথম সচিব (মূসক বাস্তবায়ন) মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বেশ চ্যালেঞ্জিং। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তিনি ব্যবসায়ীসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং প্রান্তিক পর্যায়ে করজাল বিস্তারের লক্ষ্যে এনবিআর কাজ করছে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে একটি অটোমেটেড এবং স্বচ্ছ রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই।
ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার তারেক মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জনগণের আস্থা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বাংলাদেশ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি চাঁদাবাজি, হয়রানি ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের জনগণকে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তার আহ্বান জানান এবং সবার সম্মিলিত উদ্যোগে বিদ্যমান অচলাবস্থা নিরসন হবে বলে আশা করেন।