হাসিনার উসকানিতে জড়িয়ে পড়লে গণ-অভ্যুত্থানের অর্জন হাতছাড়া হতে পারে: বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
Published: 7th, February 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উসকানিতে জড়িয়ে পড়লে গণ–অভ্যুত্থানের অর্জন হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বলে মনে করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটি বলছে, শেখ হাসিনার উসকানির ফাঁদে জড়িয়ে পড়লে অনভিপ্রেত অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে একদিকে বহুমুখী ষড়যন্ত্র শক্তিশালী হবে, অন্যদিকে গণ–অভ্যুত্থানের অর্জন হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাবে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংহতি মিলনায়তনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধি সভায় এ কথা বলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে জনআস্থার মর্যাদা দিতে হবে। সরকার হিসেবে তারা দুর্বল ও অকার্যকর—এ রকম ধারণা বাড়তে থাকলে তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। অরাজকতা ও সামাজিক নৈরাজ্য প্রতিরোধে তারা যদি দৃঢ়তার পরিচয় দিতে না পারে, তাহলে রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও তারা গণতান্ত্রিক উত্তরণে নেতৃত্ব প্রদানে ব্যর্থ হবে। গত দুই দিনে ঢাকাসহ দেশব্যাপী সংঘটিত অরাজক পরিস্থিতিতে এ ধারণা আরও প্রবল হয়েছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই নেতা বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যে ছাত্র–শ্রমিক–জনতার গণহত্যা এবং তাঁর ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের আমলে সংঘটিত অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা দূরের কথা, কোনো ধরনের অনুশোচনা পর্যন্ত নেই; বরং তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি প্রকারান্তরে উসকানি সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।
সাইফুল হক বলেন, পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তির উসকানি ও নাশকতা সৃষ্টির অপতৎপরতা মোকাবিলায় ছাত্র–জনতা ফ্যাসিস্টদের পথ অনুসরণ করতে পারেন না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড একদিকে সামাজিক নৈরাজ্যেরই বিস্তার ঘটাবে, অন্যদিকে গণ–অভ্যুত্থানের অংশীজন এবং জনগণের মধ্যে ঐক্যের পরিবর্তে আরও বিভক্তি ও বিভাজন তৈরি করবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাকের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র উসক ন
এছাড়াও পড়ুন:
বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের গুণাবলিকে কাজে লাগাতে হবে: শারমীন মুরশিদ
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, “দেশের বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর মৌলিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, তাদের উন্নয়ন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে এ দেশের মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। তাদের গুণাবলি লালন করে ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি সম্ভাবনা, প্রতিটি কাজের মধ্যে দিয়ে তাদেরকে জাগ্রত করতে হবে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) আগারগাঁও জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে ‘বাংলা ইশারা ভাষা দিবস ২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা সরকারি বধির স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র শামীম, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী হিমু আক্তার উপযোগী কর্মমুখী প্রতিষ্ঠানের দাবি জানান এবং তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ও বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিরা, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর দরিদ্রতা নিরসন ও জীবনমান উন্নয়নে নতুনভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগী চিকিৎসা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে লক্ষ্যভিত্তিক পরিকল্পিত কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি। এখন পর্যন্ত এ দেশে ৩৫ লাখের বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে বাক-প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ১ লাখ ৮১ হাজার ৮৪৮ জন এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ৬২৬ জন।”
তিনি বলেন, “বাচ্চাদের একটি সুন্দর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের জন্য সারা দেশের ৭টি সরকারি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “সামাজিকভাবে অবহেলিত প্রতিবন্ধী মেয়েদের পুনর্বাসন ও স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য বর্তমানে সরকারিভাবে দেশের ৬টি বিভাগে ৬টি সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু রয়েছে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে সামাজিকভাবে নিগৃহীত বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মেয়েদেরকেও সামাজিক সুরক্ষা বেস্টনীর আওতায় আনা হচ্ছে। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এ দেশের বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী জনগণের জন্য চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা কার্যক্রম, অনুদান প্রদান, কর্মসংস্থান সহায়ক উপকরণ বিতরণ, প্রশিক্ষণ, আবাসন সুবিধা, উন্নয়ন মেলা ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে করে প্রতিবন্ধী জনগণ নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজেদেরকে উৎপাদনশীল কাজে সম্পৃক্ত করে আত্মনির্ভরশীলতার মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন করছেন। তাদের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের জনগণ ও দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এছাড়া বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সব আর্থসামাজিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। সবার সম্মিলিত কর্মপ্রয়াসে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্ষম হবো।”
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মহিউদ্দিন বলেন, “৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শহীদ এবং জুলাই আগস্ট ২৪ গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া হাজারো ছাত্র-জনতার বিদেহী আত্মার বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, “বাংলা ইশারা ভাষা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘এক ভুবন এক ভাষা, চাই সার্বজনীন ইশারা ভাষা’। প্রতিপাদ্যটি এ দেশের বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সমঅধিকার নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।”
অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য করেন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসডিএসএল এর সদস্য মো. মামুনুর রশিদ ইফতি ।
ঢাকা/এএএম/এসবি