জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের একটি প্রস্তাব বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ
Published: 7th, February 2025 GMT
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের একটি প্রস্তাব বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় স্পষ্টত হস্তক্ষেপ বলে মনে করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। এই প্রস্তাব জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনে বাধা সৃষ্টি করবে বলে মনে করছে তারা। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ওই প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এমন কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায় বলে মনে করে অ্যাসোসিয়েশন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জেলা কমিশনারকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সিআর মামলা [নালিশি মামলা] প্রকৃতির অভিযোগগুলো গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করা হলো। তিনি অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য উপজেলার কোনো কর্মকর্তাকে বা সমাজের স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমে সালিশি বা তদন্ত করার নির্দেশ দিতে পারবেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হলে থানাকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবেন। পরবর্তীতে মামলাটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় আদালতে চলে যাবে। এর ফলে সাধারণ নাগরিকেরা সহজে মামলা করার সুযোগ পাবেন। অপর দিকে, সমাজের ছোটখাটো বিরোধ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হয়ে গেলে আদালতের ওপর অযৌক্তিক মামলার চাপ কমে যাবে।’
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের উপরিউক্ত প্রস্তাব সাংবিধানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় স্পষ্টত হস্তক্ষেপ, আধুনিক জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র চেতনার পরিপন্থী, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নীতিবিরুদ্ধ এবং বিখ্যাত মাসদার হোসেন মামলার রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, সংবিধান রাষ্ট্রের সার্বভৌম বিচারিক ক্ষমতা বিচার বিভাগের ওপর অর্পণ করেছে। রাষ্ট্রব্যবস্থার আধুনিকায়নের অন্যতম অনুষঙ্গ ক্ষমতার পৃথক্করণ এবং স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা। অপরাধ আমলে গ্রহণ একটি বিচারিক কাজ, যা কোনোভাবেই নির্বাহী বিভাগের কাছে থাকা সমীচীন নয়; ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন।
অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এরূপ প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে মীমাংসিত একটি বিষয়কে নতুনভাবে বিতর্কিত করেছে। বৈপ্লবিক পটপরিবর্তনের পর বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার নিমিত্তে যখন বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান, তখন ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’-এর এরূপ প্রস্তাব নিশ্চিতভাবে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনে বাধা সৃষ্টি করবে বলে অ্যাসোসিয়েশন মনে করে।
আরও পড়ুনজনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বাংলাদেশে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার যাত্রাটি অনেক কণ্টকাকীর্ণ ছিল উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা এখনো অর্জিত হয়নি। তাই বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। বিচার বিভাগের পৃথক্করণ ও স্বাধীনতাপরিপন্থী যেকোনো কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের উক্ত সাংঘর্ষিক ও বিতর্কিত প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারল না ১৩ শিক্ষার্থী
কক্সবাজারের উখিয়ায় প্রবেশপত্র না পাওয়ায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি হলদিয়া পালং আদর্শ বিদ্যা নিকেতন বিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) পরীক্ষার দিন সকালে তারা প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে বিদ্যালয়ের গেটে তালা ঝুলতে দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও ভাঙচুর চালায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সময়মতো রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণের টাকা দিলেও বোর্ডে তাদের ফরম জমা দেওয়া হয়নি।
পরীক্ষার্থী মাসুমা আক্তারের অভিভাবক নুরুল আলম বলেন, “সব টাকা দিয়েছি, মেয়েটা সারাদিন কান্নাকাটি করেছে। স্কুলে গেলে দেখি তালাবদ্ধ, কেউ নেই।”
উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার বদরুল আলম বলেন, “১৩ জন শিক্ষার্থীর কারোই বোর্ডে ফরম পূরণ হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, “বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার ৩০ মিনিট আগে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমরা বোর্ডে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, তাদের ফরম পূরণই হয়নি। ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভুক্তভোগী অভিভাবকরা লিখিত অভিযোগ দিলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/তারেকুর/এস