বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যের পাল্টাপাল্টি নোটিশ জারি, নানা আলোচনা
Published: 7th, February 2025 GMT
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের একাডেমিক অগ্রগতি জানতে চেয়ারম্যানদের সঙ্গে একটি সভার আহ্বান জানিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার নোটিশ জারি করেন সহ–উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম রাব্বানি। সহ–উপাচার্যের নোটিশকে বিধিবহির্ভূত উল্লেখ করে সব বিভাগের চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে সাড়া না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একই দিনে পাল্টা আরেকটি নোটিশ জারি করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শরমিন।
উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যের পাল্টাপাল্টি দুটি প্রশাসনিক নোটিশ জারি করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা আলোচনা চলছে। পাল্টাপাল্টি দুটি নোটিশের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাজনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ ঘটনাকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত চারজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য প্রশাসনিক ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ—এই তিন পদের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। কিন্তু এ ঘটনা প্রশাসনিক বিভাজনকেই স্পষ্ট করছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকালে সহ–উপাচার্যের নির্দেশে সহকারী রেজিস্ট্রার মো.
এই নোটিশের পরপরই উপাচার্যের নির্দেশে রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নোটিশে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী প্রশাসনিক নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন উপাচার্য। তাঁর অনুমোদন ছাড়া অন্য কোনো পত্র কোনো দপ্তরপ্রধান, কর্মকর্তা বা অন্য কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে পাঠাতে পারেন না। সংগত কারণে সহ–উপাচার্যের নির্দেশক্রমে নোটিশটি বিধিবহির্ভূত এবং কোনো শিক্ষককে তা আমলে না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়ই সহ–উপাচার্যের পদ সৃষ্টি করা হলেও পদটি শূন্য ছিল। এবারই প্রথমবারের মতো সহ–উপাচার্য (প্রো ভিসি) হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানি। গত বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি তাঁকে এই পদে নিয়োগ দেন। আর গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক শুচিতা শরমিনকে। তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য।
প্রথমবারের মতো সহ–উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার পর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে গতি আসবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু সহ–উপাচার্যের যোগদানের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা প্রশাসনিক জটিলতা ও বিভাজন শুরু হয়। এত দিন চাপা থাকলেও এবার পাল্টাপাল্টি নোটিশ জারির পর তা প্রকাশ্যে এল।
পাল্টাপাল্টি নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার দুপুরে সহ–উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী একাডেমিক দায়িত্ব পালন করবেন প্রো ভিসি। আমি প্রো ভিসি পদে যোগদানের পর তিন মাসের মধ্যে মৌখিক ও লিখিতভাবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য উপাচার্যকে বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে উপাচার্য আমাকে একাডেমিক দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম দেখভাল ও দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে একাডেমিক কার্যক্রমের অগ্রগতি ও সার্বিক অবস্থা জানার জন্য আমি বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে একটি মত বিনিময় সভার আহ্বান করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এক্সিলেন্সি আনাই এ সভার উদ্দেশ্য। প্রো ভিসি হিসেবে এটি আমার দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। সেখানে আমার অফিস থেকে বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠানো চিঠির বিপরীতে রেজিস্ট্রার প্রেরিত চিঠি যথাযথ ও বিধিসম্মত হয়নি বলে আমি মনে করি।’
এ বিষয়ে উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বক্তব্য জানতে শুক্রবার সকালে তাঁর মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। তবে উপাচার্যের পক্ষে পাল্টা নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান। তাঁর নির্দেশক্রমে আমি এই চিঠি বা নোটিশ দিয়েছি। আমি উপাচার্যের সচিব, তাই উপাচার্য যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবেই আমি চিঠি দিয়েছি। উপাচার্যের আদেশ-নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা আমার দায়িত্ব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত সাতজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৪ বছর পার হলেও এখানে অবকাঠামোগত, আবাসিক, পরিবহন, গ্রন্থাগারে বইসংকটসহ নানা সংকটে এখনো শিক্ষার পরিপূর্ণ বিকাশ হয়নি। শ্রেণিকক্ষের অভাবে এখনো শিক্ষার্থীদের মাঠে পাঠদান হচ্ছে। শিক্ষকসংকটের কারণে বাড়ছে সেশন জট। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গবেষণা কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ দুই পদে মতবিরোধ এ সমস্যার নিরসনের চেয়ে আরও বেশি ঘনীভূত করবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য র ন উপ চ র য র প র এক ড ম ক র জন য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
আর্জেন্টিনার নদীতে লাল স্রোত
আর দশটি স্বাভাবিক রাতের মতো বুধবার ঘুমাতে গিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসের ১০ কিলোমিটার দূরবর্তী শহর আভেলানেদার বাসিন্দারা। কিন্তু ভোরে তাদের ঘুম ভাঙে অন্যরকম গন্ধে। বাসিন্দারা গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখেন, শহরের বুক চিড়ে বয়ে চলা ছোট্ট নদী ‘সারান্দি’র পানির রঙ হয়ে গেছে লাল। বাসিন্দাদের কেউ কেউ বলেন, মনে হয়েছে রক্তে ঢেকে আছে নদীটি।
একরাতের ব্যবধানে নদীর পানির টকটকে এই লাল রঙ আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে বাসিন্দাদের। এর জন্য আপাতত দূষণকে দোষ দিচ্ছেন তাঁরা। প্রকৃত কারণ জানতে নদী থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করেছে বুয়েনস এইরেসের আবহাওয়া বিভাগ। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, সম্ভবত শিল্পখাতে ব্যবহৃত রঙ নদীতে ফেলায় পানি এমন বর্ণ ধারণ করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মারিয়া ডুকমলস বলেন, ‘গন্ধে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। দিনের আলোতে নদীর দিকে তাকিয়ে দেখি, এটি পুরো লাল হয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছিল, রক্তে নদী ঢেকে আছে। এটা ভয়াবহ।’
হুট করে নদীর পানির এমন রঙ পরিবর্তনের সঠিক কারণ জানা না গেলেও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো দাবি করেছে, তীরবর্তী শিল্প কারখানা, বিশেষ করে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলায় সৃষ্টি হয়েছে এমন পরিস্থিতি। সূত্র বিবিসি, স্কাই নিউজ ও এএফপি।