নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কুয়াশা উৎসব শুরু
Published: 7th, February 2025 GMT
শিশিরের মতো নির্মল হও প্রাণ, কুয়াশায় ভিজে মুক্ত অনির্বাণ এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ২ দিনব্যাপী কুয়াশা উৎসব-১৪৩১।
শুক্রবার সকালে রাগ সংগীত ও পিঠা পুলির আসরের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চতুর্থবারের মতো শুরু হয় এ উৎসব।
উৎসব আয়োজকরা জানান, ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিলে কুয়াশা উৎসবের পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন পড়ে অনেক টাকার। আয়োজনে সহযোগিতা করতে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত, চারুকলা, নাট্যকলা, ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগসহ সব বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আলাদা আলাদা টিম গঠন করে ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন হাটবাজারে সাধারণ মানুষকে গান শুনিয়ে সংগ্রহ করেন টাকা। সেই টাকায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কেনেন তারা।
মাসভর শ্রম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশালাকার খেলার মাঠজুড়ে কুঁড়েঘর, গরুর গাড়িসহ একটি মনোরম গ্রামীণ পরিবেশ গড়ে তোলেন শিক্ষার্থীরা। সফল হয় তাদের শ্রম। অসাধারণ গ্রামীণ চিত্রে সজ্জিত কুয়াশা উৎসবের আয়োজন মন কাড়ে দর্শনার্থীদের। ব্যাপক সাড়া ও প্রশংসা কুড়ায় ওই আয়োজন। মাঝের দুই বছর করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বন্ধ থাকে কুয়াশা উৎসবের আয়োজন। গত বছরও বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে জাঁকজমকপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের নিরলস পরিশ্রমের সফল হয় দুই দিনব্যাপী কুয়াশা উৎসব।
এবারের দুই দিনব্যাপী কুয়াশা উৎসব আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। তাই চুরুলিয়া মঞ্চ, নজরুল বেদি, জয়ধ্বনি মঞ্চ ও ক্যাম্পাসের কয়েকটি সড়ক ব্যবহার করেন আয়োজকরা। তবে এ উৎসব ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে। প্রতিবারের মতো এবারও কুয়াশা উৎসবে থাকছে চিত্রকলা, চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, রাগ সঙ্গীত, লোকনৃত্য, সাহিত্য আলোচনা, অভিক নৃ, ঘাটু গানসহ রস উৎসব, পিঠা পার্বণ ও নানা আয়োজন। উৎসব বন্ধুদের অর্থায়নে আয়োজন হয়েছে এই উৎসবের।
শুক্রবার বিকেলে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, প্রাণের স্পন্দনে হাতের ছোঁয়ায় নানারূপে সেজেছে চুরুলিয়া মঞ্চ, নজরুল বেদি, জয়ধ্বনি মঞ্চ ও ক্যাম্পাস সড়কের গাছগুলোও। উপজাতি সম্প্রদায়ের কুঁড়েঘর। বসেছে বাহারি পিঠা ও বইয়ের স্টল। চুরুলিয়া মঞ্চে চলছিল সাহিত্য আড্ডা “ভয়” তাতে অংশ নেন গায়ক ও লেখক অরুপ রাহী, লেখক ও শিক্ষক উম্মে ফারহানা ও রবীন্দ্র কুমার রায়। নজরুল বেদিতে বসে গানের আসর।
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অন্যন্যা বলেন, প্রতি বছর আমরা এ উৎসবটির জন্য অপেক্ষা করে থাকি। প্রতি বছর পালিত হোক এ উৎসব।
সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা জানান, শুরু থেকেই উৎসব বন্ধুদের আর্থিক সহযোগিতায় চার বছর ধরে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কুয়াশা উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এ উৎসব আমাদের প্রাণের উৎসব।
কুয়াশা উৎসবের উপদেষ্টা ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে ফারহানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ আয়োজনটি ভিন্নধর্মী ও ভিন্ন আমেজের।
কুয়াশা উৎসবের আরেক উপদেষ্টা ফিল্ম অ্যান্ড স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনোজ কুমার প্রামাণিক জানান, কোনোপ্রকার স্পন্সর ছাড়াই শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এবং আমাদের উৎসাহ ও সহযোগিতায় এ উৎসব চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিভিন্নস্থান থেকে এসেছে দর্শনার্থীরা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ত র আম জ নজর ল ব এ উৎসব উৎসব র
এছাড়াও পড়ুন:
ফের নিজের তৈরি বিমানে উড়লেন জুলহাস, যমুনাপাড়ে উৎসবের আমেজ
ফের নিজের তৈরি বিমানে আকাশে উড়েছেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি জুলহাস মোল্লা (২৮)। রবিবার (৯ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার জাফরগঞ্জে যমুনার পাড়ে নিজের তৈরি বিমানে আকাশে উড়েন তিনি।
এ সময় বাংলাদেশ বিমানের অবসরপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুকসহ সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, গত সোমবার (৩ মার্চ) পরীক্ষামূলক প্রথম ওড়েন তিনি।
জুলহাসের তৈরি বিমানে আকাশে উড়া দেখতে রবিবার সকাল থেকে হাজারো মানুষ যমুনার পাড়ে ভিড় করেন। লোকে লোকারণ্য যমুনাপাড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে লোকমান রহমান ছেলে রোরহানকে নিয়ে এসেছেন জুলহাসের বিমান দেখতে। তিনি বলেন, ‘‘জুলহাসের তৈরি বিমান টিভিতে দেখার পর ছেলে সামনে থেকে দেখার বায়না ধরেছে। ছেলের আবদার পূরণে আজ সকালে যমুনার পাড়ে ছুটে আসি। বিমানটি সামনে থেকে দেখতে পেরে বোরহান খুবই খুশি।’’
মানিকগঞ্জ শহরের উত্তর সেওতা থেকে এসেছেন জুয়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘‘ইচ্ছা এবং চেষ্টা থাকলে অনেক কঠিন কাজও সম্ভব। সেটাই প্রমাণ করেছেন মানিকগঞ্জের এক তরুণ। তিনি নিজের চেষ্টা ও পরিশ্রমে বিমান তৈরি করেছেন। শুধু তাই নয়, নিজেই সেটি সফলভাবে আকাশে উড়িয়েছেন।’’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুলহাস মোল্লার বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের ষাইটঘর তেওতা গ্রামে। জুলহাসের বাবা জলিল মোল্লার গ্রামের বাড়ি ছিল জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায়।
নদীভাঙনের কারণে বর্তমানে তারা শিবালয় উপজেলার ষাইটঘর তেওতা এলাকায় পরিবারসহ বসবাস করেন। ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জুলহাস পঞ্চম। তিনি জিয়নপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। পরে অর্থাভাবে আর পড়তে পারেননি। পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি জুলহাস ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। ছুটিতে বাড়িতে এসে তৈরি করেছেন বিমানটি।
জুলহাস মোল্লা জানান, তিন বছর গবেষণা এবং এক বছর সময় লেগেছে বিমানটি তৈরি করতে। অ্যালুমিনিয়াম ও লোহা দিয়ে বিমানটির অবকাঠামো তৈরি। পানির পাম্পের ‘সেভেন হর্স পাওয়ারের’ ইঞ্জিন ব্যবহার করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘বিমানটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। তবে, সরকারি অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা যেতে পারে। বিমানটি ৫০ ফুট ওপরে উড়তে পারে।’’
বাংলাদেশ বিমানের অবসরপ্রাপ্ত পাইলট ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘‘জুলহাসের বিমানটি তৈরিতে যে গবেষণা হয়েছে, তা কীভাবে আরো উন্নয়ন ঘটানো যায় সে বিষয়ে সবাই কাজ করব। সেই সঙ্গে তার একাডেমিক রিসোর্স ও কারিগরি যেসব সহযোগিতা প্রয়োজন, সে বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করব।’’
ঢাকা/চন্দন/রাজীব