সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের আকর্ষণ আদিকাল থেকে। বর্তমান বিশ্বে উন্নত প্রযুক্তি ও ভোক্তা সমাজের চাপে এ আকর্ষণ বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোয় নকল প্রসাধনী এবং অদক্ষতাপূর্ণ সৌন্দর্য বৃদ্ধির সার্জারি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এ সমস্যা শুধু ব্যক্তিপর্যায়েই সীমাবদ্ধ নয়, এটি পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ঝুঁকি।

বাংলাদেশের প্রসাধনী বাজারে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ পণ্য নকল বা ভেজাল, যা বিভিন্ন সংস্থা ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনের সমীক্ষায় প্রমাণিত। অল্প খরচে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি এই পণ্যগুলোয় নামীদামি ব্র্যান্ডের লেবেল ব্যবহার করা হয়। দেশে কিছু অসাধু চক্রের সমন্বয়ে নকল, ভেজাল, মানহীন প্রসাধনী উৎপাদন করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার চকবাজার, মৌলভীবাজার, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে নকল প্রসাধনী তৈরির কারখানা। গোপনীয়তার সঙ্গে এসব কারখানায় চলে নকল পণ্য উৎপাদনের মহোৎসব। এরপর তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় ঢাকাসহ সারা দেশে। ভোক্তা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রায়ই এসব স্থানে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানাও করা হয়। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক ডিজি বলেন, বাংলাদেশে এমন কোনো প্রসাধনী নেই, যা নকল হয় না।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের প্রসাধনী বাজারের ৪৫ শতাংশ পণ্য মানহীন। বেশির ভাগ নকল পণ্য ব্রাজিল, ভারত ও চীন থেকে আসে, যা পাইকারি বাজার, ফুটপাত এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, নিম্নমানের প্রসাধনীতে ব্যবহৃত রাসায়নিক যেমন লেড, পারদ, ফরমালডিহাইড, আর্সেনিক ও স্টেরয়েড ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, যা অ্যালার্জি, ব্রণ, অ্যাকজিমা, ত্বকের ক্যানসারের কারণ। নকল প্রসাধনীর রাসায়নিক স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন নকল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে নারীদের ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রজনন সমস্যা তৈরি হয়। গর্ভবতী নারীদের প্রসাধনীতে থাকা পারদ ও লেড সরাসরি গর্ভের শিশুর স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুসারে, নকল পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রসাধনীর উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, ক্রয়–বিক্রয়, মজুত, সংরক্ষণ, প্রদর্শন, বিতরণ ও মান নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ২০২৩ সালে কসমেটিকস আইন পাস হয়। এ আইনের পঞ্চম অধ্যায়ে কসমেটিকসের লাইসেন্স সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স আরোপিত শর্তবহির্ভূতভাবে কসমেটিকস উৎপাদন, বিতরণ, আমদানি, রপ্তানি করতে পারবে না। আইনের মাধ্যমে কসমেটিকসের মান নির্ধারণ, নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োগ, পরীক্ষাগার ইত্যাদি বিষয় বাংলাদেশের মান ইইউ, ইউএসএফডিএ, এএসইএএনসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ কর্তৃক নির্ধারিত মান অনুসরণ করতে হবে।

আইনে আরও বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্স আরোপিত শর্তের বাইরে পণ্য উৎপাদন ও বিপণন করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড  বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। বিধি লঙ্ঘন করে কোনো বিউটি পারলারে কসমেটিকস ব্যবহার করা হলে তিন মাসের জেলসহ অর্থদণ্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া কোনো বিজ্ঞাপনে কসমেটিকসের ব্যবহারজনিত ফলাফল অসত্য প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা ও পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এতগুলো আইন থাকার পরও এখনো আলোচনার বিষয়, নকল প্রসাধনীর স্বাস্থ্যঝুঁকি। সরকারের উচিত সব আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ জোরদার করা।

মোছা.

ফায়জুন্নাহার শান্তা
আইন ও বিচার বিভাগ (প্রথম বর্ষ)
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

ডাম্পিং গ্রাউন্ড নেই, পৌর মিনিবাস টার্মিনালে ভাগাড়

দুই যুগ আগে সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতোমধ্যে পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হলেও ময়লা ফেলার জন্য নিজস্ব ডাম্পিং স্টেশন নেই। এতে পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এমনকি বিয়ানীবাজার পৌর মিনিবাস টার্মিনালেও দীর্ঘদিন ধরে ময়লা ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি টার্মিনালটি ব্যবহারকারী যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভার প্রতিবছরের বাজেটে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণে জমি কিনতে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। গত কয়েকটি বাজেটে ধারাবাহিকভাবে এ খাতে ৪ থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বাজেটে বরাদ্দ রেখেই তাদের দায় সারছে। কাজের কাজ কিছুই করছে না। পৌর মিনিবাস টার্মিনালসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ময়লা ফেলে পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে। 

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, গত ৪-৫ বছর ধরে মিনিবাস টার্মিনাল এলাকায় ময়লা ফেলছে পৌরসভা। সম্প্রতি মিনিবাস টার্মিনাল এলাকার পাশাপাশি খাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ও কটুখালীপাড় এলাকার লোলাখাদেও ময়লা ফেলা হচ্ছে। নিজস্ব ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় পৌরসভার বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। 

বেসরকারি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন আলী হোসেন। তিনি বলেন, পৌর শহরে আসতে বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়ক ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু পৌর মিনিবাস টার্মিনাল এলাকায় ফেলা ময়লার গন্ধে যাত্রী ও চালকদের এ সড়ক দিয়ে চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। 

লাসাইতলা ও কদুগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন, রহিম উদ্দিনসহ স্থানীয়দের ভাষ্য, অন্যত্র বসবাসের মতো পরিস্থিতি থাকলে পুরো গ্রামের মানুষ এ ময়লার কারণে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতেন। তাদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর থেকে পৌরসভাকে বারবার প্রতিবাদ জানানোর পরও তারা মিনিবাস টার্মিনালে ময়লা ফেলা বন্ধ করেনি। এতে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মিনিবাস টার্মিনালটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। 

ডাম্পিং গ্রাউন্ড না থাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি নজরে আসায় বিকল্প পন্থা হিসেবে সিলেট সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে সপ্তাহে দুইবার ট্রাকে করে ময়লা নিয়ে যাওয়া হবে। ইতোমধ্যে সেখানে পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা নেওয়া হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ বেশি হচ্ছে, যা পৌরসভার আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ