রংপুরের পীরগঞ্জে মরিচখেত থেকে উদ্ধার নারীর মাথাবিহীন লাশের পরিচয় মিলেছে। তবে আজ শুক্রবার রাত নয়টা পর্যন্ত ওই নারীর কেটে নিয়ে যাওয়া মাথা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। কেন তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা–ও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার হতভাগ্য ওই নারীর নাম দেলোয়ারা বেগম (৩০), বাবার নাম রবিউল ইসলাম। তাঁর বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা গ্রামের পশ্চিম গোলমুন্ডা গ্রামে। তাঁর বিয়ে হয়েছিল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার গুমানিগঞ্জ গ্রামে।

পীরগঞ্জ থানা–পুলিশের দেওয়া ওই তথ্য যাচাই করতে গোবিন্দগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হাবিবুর রহমান আজ সন্ধ্যার আগে গুমানিগঞ্জ গ্রামে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ঘুরে এসে রাতে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোর এ প্রতিনিধিকে জানান, হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই নারীকে গ্রামের লোকজন কেউই চেনেন না। কিন্তু গ্রামের ভোটার তালিকায় ওই নারীর নাম রয়েছে। হয়তো ওই নারী গ্রামে থাকতেন না।

আরও পড়ুনমরিচখেতে পড়ে ছিল নারীর মাথাবিহীন লাশ, পরিচয় জানা যায়নি৩ ঘণ্টা আগে

থানা–পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ওই নারী গানবাজনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন জলঢাকা উপজেলার এক ব্যক্তি। লাশ উদ্ধারের পর থেকে ওই ব্যক্তি গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে জলঢাকা থানার পুলিশ মাঠে রয়েছে। পুলিশের ধারণা, ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হবে।

জলঢাকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন আজ রাতে মুঠোফোনে হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই নারীর নাম–ঠিকানা নিশ্চিত করে বলেন, ‘দেলোয়ারা বেগমের বাড়ি জলঢাকা হলেও তিনি ১০ বছর ধরে বাবার বাড়িতে আসেননি। তাঁর বিয়ে হয়েছিল গাইবান্ধায়। শুনেছি সেখানেও তিনি থাকতেন না, থাকতেন ঢাকায়। তাঁর স্বামীর নাম জানা যায়নি। আমরা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করছি।’

আজ রাত আটটার দিকে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক মুঠোফোনে জানান, হতভাগ্য নারীর গলা থেকে কেটে নিয়ে যাওয়া মাথা উদ্ধারে ঘটনাস্থলের আশপাশের ঝোপজঙ্গল ও পুকুরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনসহ মাথা উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

রংপুরের পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের বড় বদনাপাড়া গ্রামের মরিচখেত থেকে আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই নারীর মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, হয়তো ওই নারীর দেহ থেকে গলা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করা হয়েছে অথবা হত্যার পরে গলা থেকে কেটে নিয়ে মাথা কোথাও পুঁতে রেখেছে বা ফেলে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

‘তামিমিয়ান, সাকিবিয়ান, মাশরাফিয়ান বলে কিছু নেই, সবাই বাংলাদেশি’—তামিমের বিদায়ী বার্তা

উদ্‌যাপনের দৃশ্যটা সবার চেনা। গত বছরেও লেখা হয়েছে এই গল্প। সময় বদলেছে, বদলে গেছে আরও অনেক কিছুই। কিন্তু বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন থেকে গেছে একই—ফরচুন বরিশাল। শিরোপা উঁচিয়ে ধরা অধিনায়কের নামটাও অভিন্ন—তামিম ইকবাল।

তবে তামিমের চোখ আজ ছলছল। জয়ের আনন্দের দিনে তাঁকে ছুঁয়ে গেছে বিদায়ের বেদনাও। ফাইনালের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বড় পর্দায় ভেসে এল তামিমকে নিয়ে স্মৃতিচারণা।

জাকের আলী, জাকির হাসান, তানজিম হাসান কিংবা ইয়াসির আলী জানালেন তাঁকে ঘিরে নিজেদের স্মৃতি। কারও কণ্ঠে তামিমের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করতে না পারার আক্ষেপ, কেউ বললেন তামিমকে কাছ থেকে দেখতে পাওয়ার অনুভূতি।

বড় পর্দায় ওই দৃশ্য, তামিমের বড় কোনো ইনিংসের গল্প যখন বলা হচ্ছে; তিনি তখন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার পাশে দাঁড়িয়ে শুনছেন সেসব। তাঁর চোখেমুখে বিদায়ের বেদনা, চোখ দুটোতে হয়তো পুরোনো অনেক স্মৃতির নতুন দৃশ্যায়ন। প্রিয় বন্ধু মুশফিকুর রহিম ও দীর্ঘদিনের সতীর্থ মাহমুদউল্লাহও মঞ্চে ওঠেন এরপর।

মাহমুদউল্লাহ তামিমকে ব্যাখ্যা করেন এক শব্দে—ক্যারিশম্যাটিক। মুশফিক জানান, তাঁর চোখে তামিমই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান। এসব গল্পের পেছনের কারণটা এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়া তামিমকে বিপিএল ফাইনালের পরই আনুষ্ঠানিক ‘বিদায়’ বলেছে বিসিবি।

অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে নিজের দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে মঞ্চে আসেন তামিমও। ১৭ বছরের বর্ণিল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে আরও একবার বলেন নিজের শুরুর গল্প। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জেতা বাংলাদেশের উদ্‌যাপন দেখে ছোট্ট বয়সেই ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, সেটাই জানান, ‘বাংলাদেশ যখন শিরোপা জিতল। পুরো বাংলাদেশের উপভোগটা ছিল অসাধারণ। ওই দিনই ঠিক করলাম, আমি ক্রিকেটার হব।’

তামিমের ক্রিকেটার হওয়ার গল্পের পেছনে বাবা ইকবাল খানের কথা শোনা গেছে অনেকবারই। বাবার কথা তামিম স্মরণ করেন আরও একবার, ‘আমার বাবার ইচ্ছে ছিল, একদিন আমি দেশের হয়ে খেলব। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি আমাদের সঙ্গে নেই।’

তামিমের ১৭ বছরের ক্যারিয়ারজুড়ে জড়িয়ে ছিলেন চাচা আকরাম খান। তাঁদের নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে অনেকবার। এসব সহ্য করায় আকরামের প্রতি আলাদা করে কৃতজ্ঞতা জানান তামিম। ছেলে আরহাম ইকবাল কীভাবে তাঁর সমর্থক হয়ে গেছে, তা–ও শোনান তামিম।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না ফেরার সিদ্ধান্ত যে চট্টগ্রামে নেওয়া, সেটাও জানান তামিম। এরপর সমর্থকদের জন্য শেষ বার্তা হিসেবে তিনি বলেন, ‘তামিমিয়ান, সাকিবিয়ান, মাশরাফিয়ান বলে কিছু নেই। সবাই বাংলাদেশের সমর্থক। এটা (নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের ভক্ত হওয়া) বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করেছে। দয়া করে এটা থামান। আমরা যে কারও সমর্থক হতে পারি, কিন্তু সবাই বাংলাদেশি। এটাই আমার শেষ বার্তা।’

তামিমের সঙ্গে মঞ্চে আসা স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকীও কথা বলেন। তামিম এখন পরিবারকে অনেক সময় দিতে পারবেন, এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।

তামিমের সময়জুড়ে এখন হয়তো অনেক কিছুই থাকবে। কিন্তু ২০০৭ বিশ্বকাপে জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারা ছক্কা, লর্ডস টেস্টে সেঞ্চুরি কিংবা ভাঙা আঙুল নিয়ে বাংলাদেশের জন্য এক হাতে ব্যাটিংয়ে নেমে পড়া থেকে যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অমলিন স্মৃতিতে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ