সংহতির অভাব সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, বিভক্তির কারণে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ঐক্যের ক্ষেত্রে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষে বাসসকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘স্থিতিশীলতা ও ঐক্য বজায় রাখা এবং চাপ মোকাবিলায় নিরন্তর প্রচেষ্টার পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সর্বদা বিকশিত জাতীয় দৃশ্যপটের মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।’

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী নাহিদ বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠে দেশের জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে এমন একটি ভবিষ্যৎ গঠনে অবিচল রয়েছি।’

রাজনৈতিক বিষয়ে গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মধ্যে যে বিভেদ দেখা দিয়েছে, সেসব নিয়ে কথা বলেছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যদিও অভ্যুত্থান সংস্কারের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একত্রিত করেছিল, তবে অনেকেই জাতীয় কল্যাণের পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থের পেছনে ছুটতে শুরু করেছিল।’ হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এই বিভক্তির কারণে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ঐক্যের ক্ষেত্রে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, একসময় যে ঐক্য ছিল, তা ক্ষীণ হয়ে গেছে। এই সংহতির অভাব সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যা-ই হোক, নাহিদ ইসলাম আশাবাদী যে এই বিভাজনগুলো অপ্রতিরোধ্য নয়। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে ঐক্য সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে। আমরা মতবিরোধ নিরসনে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং অতীতের বিভাজনমূলক অভ্যাসগুলোতে ফিরে আসা এড়াচ্ছি।’

উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, গত ছয় মাসে সরকারের পথচলা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা, শতাধিক আন্দোলন, অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি ক্রমাগত রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হওয়াসহ বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও অব্যাহত সংলাপ, সহযোগিতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে গত বছরের ৮ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকার, জাতি যে পরিবর্তন চেয়েছিল তা অর্জন করতে পারবে। তিনি বলেন, সামনের রাস্তাটি এত মসৃণ হবে না। তবে সঠিক সমর্থনসহ অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জন্য আরও স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপনের আশা করে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারের ওপর দেশের মানুষ বিপুল প্রত্যাশা রাখায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, খুনিদের বিচার নিশ্চিত করা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির মতো অর্থনৈতিক বিষয়গুলো সরকার পরিচালনায় জনসাধারণের উদ্বেগের প্রধান ক্ষেত্র।

সরকার ব্যাপক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে বলে স্বীকার করে নাহিদ বলেন, ‘আমরা যখন প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন বিশৃঙ্খলা ছিল। আমলাতন্ত্র ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল এবং আমাদের সেখান থেকে তাদের পুনর্গঠন করতে হয়েছিল। এটা সহজ কাজ ছিল না।’ তিনি বলেন, আগের প্রশাসনের চর্চা, বিশেষ করে ব্যাপক চাঁদাবাজি এবং দুর্নীতি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তৈরি করেছিল, যা রাতারাতি দূর করা যাবে না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সংস্কারের ইস্যুতে আমরা কতটা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। আগামী মাসগুলো দেখাবে আমরা কতটা অগ্রগতি করতে পারি।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, যেকোনো অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দল এবং জনগণ উভয়ই পদ্ধতিগত সমস্যাগুলো দূর করতে একসঙ্গে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এমন কিছু উপাদান আছে, যারা এখনো চাঁদাবাজিতে জড়িত এবং কিছু ব্যক্তি যারা গণজাগরণে অংশ নিয়েছিল, তারা এখন এ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। সহযোগিতা ছাড়া জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা কঠিন হবে।

সংস্কার বনাম নির্বাচনের ইস্যুটিও একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে; বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে বলে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, সরকার সংস্কার ও নির্বাচনকে পারস্পরিক একচেটিয়া হিসেবে দেখে না; বরং পরিপূরক উদ্দেশ্য হিসেবে দেখে। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশন নির্বাচনী ও শাসনব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে কাজ করছে। নির্বাচনের আগে এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে.

..অন্যথায় অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে নাহিদ ইসলাম স্পষ্টভাবে বলেন, সরকার স্বাধীনভাবে তার নীতির সমালোচনা করার গণমাধ্যমের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেনি। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের সমালোচনা করার জন্য গণমাধ্যমের ওপর কোনো চাপ দেওয়া হয়নি।

তথ্য উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, সরকার যখন মুক্ত গণমাধ্যমের ধারণাকে সমর্থন করে, তখন এটি নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে রিপোর্ট করার সময় সতর্ক হতে বলেছে।

নাহিদ স্বীকার করেন যে কিছু মিডিয়া আউটলেট সামাজিক চাপ এবং প্রতিবাদের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সরকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হস্তক্ষেপ করেছে।

এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নাহিদ ইসলাম অবাধ ও মুক্ত গণমাধ্যম পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘সরকার গঠনমূলক সমালোচনাকে উৎসাহিত করে এবং ইতিমধ্যে মিডিয়া প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়ন করেছে। আমরা যৌক্তিক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই এবং আমরা আমাদের নীতিতে সামঞ্জস্য বজায় রাখব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম ন হ দ বল ন র জন ত ক ব শ ষ কর উপদ ষ ট সরক র র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

১৫ বছরে আ.লীগ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে: সালাউদ্দিন টুকু

সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে টাঙ্গাইলের পৌর উদ্যানে শাহীন শিক্ষা পরিবারের পিঠা উৎসব ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, দেশে যখন জনগণের মূল্য থাকেনা, তখন সরকার স্বৈরাচার হয়ে যায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তবে তাদের প্রেতাত্মারা এখনও দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।

তিনি বলেন, এ দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। তাই জনগণের অধিকার হরণ করবে, মানুষের ওপর জুলুম করবে আগামীতে এ ধরনের শাসন ব্যবস্থা আমরা চাইনা।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন। ৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে শাহীন শিক্ষা পরিবারের চেয়ারম্যান মাছুদুল আমীন শাহীন, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু, জেলা যুবদলের আহবায়ক খন্দকার রাশেদুল আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বিএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সংস্কার ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া
  • আমার সঙ্গে রাজনীতি করতে হলে, জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে : মামুন মাহমুদ
  • আজহারীর মাহফিলকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি চলছে: হারুনুর রশিদ
  • গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের মোকাবিলা করতে হবে
  • সত্য বলার সাহসিকতাই সাংবাদিকতার মূলমন্ত্র: কাদের গনি চৌধুরী
  • বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের গুণাবলিকে কাজে লাগাতে হবে: শারমীন মুরশিদ 
  • পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন, সরকারকে বলল বিএনপি
  • আওয়ামী লীগও নিষিদ্ধ হবে: লক্ষ্মীপুরে এ্যানি
  • ১৫ বছরে আ.লীগ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে: সালাউদ্দিন টুকু