‘দেশ স্বাধীনের পর থিকা এই মেলা যত দিন করছনো নিয়ম কারণ (কানুন) সব ঠিক আছলো। এইবার কেনবা দেখেছো আরেক মতন। হারা মেলাত ঘোড়া আনছি সাতটা। গাঢ়াক (ক্রেতা) নাই, মাল আনছি নেওয়াইও (ক্রেতা) নাই। হারা আছি রোববার থাকি। আইজ বিশুতবার (বৃহস্পতিবার)। কাহো নওছে না, কাক দেইম। এইটা (একটা ঘোড়া দেখিয়ে) কিনছো মুই সোহাত্তর (সত্তর হাজার)। এখন দাম কহচে ত্রিশ-বত্রিশ। তে কেংকা করি টিকিমো আর কেংকা করি বাঁচিমো।’

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী চেরাডাঙ্গী পশু মেলায় এভাবেই কথা বলছিলেন ঘোড়া ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ওরফে দুলু (৬০)। তিন পুরুষ ধরে ঘোড়ার ব্যবসা করেন তিনি। ৭৮ বছর বয়সী এই মেলায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিবার ঘোড়া বিক্রি করতে আসেন। তবে কয়েক বছর ধরে ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। এইবার ব্যবসার অবস্থা আরও নাজুক।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মাসব্যাপী এই পশু মেলার উদ্বোধন করা হয়। যদিও উদ্বোধনের দুই দিন আগে থেকেই উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘোড়া নিয়ে মেলায় আসছেন ব্যবসায়ীরা। বাঁশের খুঁটিতে ঘোড়া বেঁধে রেখে মেলায় তাঁবু করেছেন তাঁরা। ভালোবেসে ঘোড়াগুলোর নামও দিয়েছেন পিয়া রানী, পপি, বিজলী, রাস্তার রাজা, সুইটি, পারলে ঠেকাও, কিরণমালা। ক্রেতা-বিক্রেতার পাশাপাশি ঘোড়া দেখতে এসেছেন বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থী। শাহি মেজাজে দাঁড়িয়ে থাকা ঘোড়াগুলোও যেন দর্শনার্থীদের চোখে চোখ রেখে কথা বলছে।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, আকারভেদে একেকটি ছোট ঘোড়ার দাম ডাকা হচ্ছে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা। মাঝারি ঘোড়া ৩০ থেকে ৫০ হাজার এবং অপেক্ষাকৃত বড় ঘোড়ার দাম ডাকা হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। ঘোড়দৌড় খেলার ঘোড়ার দাম এক লাখ থেকে দুই লাখ। আবার হালচাষের জন্য প্রতি জোড়া ঘোড়ার দাম এক থেকে দেড় লাখ টাকা। কেউ প্রয়োজনে কিনতে এসেছেন, কেউ শখ করে আবার কেউবা বদল করবেন বলে ঘোড়া নিয়ে মেলায় এসেছেন। ঘোড়ার পিঠে চড়ার শখ মিটিয়ে নিচ্ছেন কেউ। তবে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।

উদ্বোধনের দিনেই শিশু-কিশোরদের ভিড়। নাগরদোলায় চড়তে হইহুল্লোড়। বৃহস্পতিবার দিনাজপুর সদর উপজেলায় ঐতিহাসিক চেরাডাঙ্গী মেলায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

গাছ থেকে বরই পাড়ার প্রতিবাদ করায় সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধার শরীরে গরম পানি নিক্ষেপ

কুমিল্লার মুরাদনগরে গাছ থেকে বরই পাড়ার প্রতিবাদ করায় সত্তরোর্ধ্ব মানসিক প্রতিবন্ধী এক বৃদ্ধার শরীরে গরম পানি নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। আজ শুক্রবার দুপুরে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে ওই বৃদ্ধার শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ ঝলসে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

ওই বৃদ্ধের নাম জাহানারা বেগম (৭১)। তিনি ডুমুরিয়া গ্রামের প্রয়াত মনসুর আলীর মেয়ে। ওই গ্রামেই তিনি বাবার বাড়িতে থাকেন। তাঁর বিয়ে হয়েছিল, তবে কোনো সন্তান নেই। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় বিয়ের পরপরই স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়েছিল।

পলি আক্তার নামে এক তরুণীর বিরুদ্ধে এ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পলি পাশের বাড়ির মোশারফ হোসেনের মেয়ে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃদ্ধ জাহানারা বেগম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক প্রতিবন্ধী। আজ দুপুরে তাঁদের গাছ থেকে বরই পেড়ে নিয়ে যান পাশের বাড়ির পলি আক্তার ও তাঁর ছোট ভাই। বিষয়টি জানতে পেরে ওই বৃদ্ধা পলি আক্তারকে গালমন্দ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পলি আক্তার ও তাঁর ছোট ভাই ফুটন্ত গরম পানি এনে জাহানারা বেগমের মুখসহ শরীরে নিক্ষেপ করেন। এতে বৃদ্ধার মুখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থান ঝলসে যায়। ঘটনা জানাজানি হলে জড়িত দুজন দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পালিয়ে যান। পরে ওই বৃদ্ধার ভাইয়ের পরিবারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহানারা বেগমকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। তবে পরিবারের লোকজন কুমিল্লা না গিয়ে ওই বৃদ্ধাকে ঢাকায় নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফারজানা আক্তার বলেন, ‘গরম পানি নিক্ষেপের কারণে ওই বৃদ্ধার মুখের এক পাশসহ শরীরের কয়েকটি স্থানে ঝলসে গেছে। সব মিলিয়ে শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ ঝলসে গেছে। আমরা তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত পলি আক্তারের বাবা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ে না বুঝে এমন ঘটনা করে ফেলেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা মর্মাহত। জাহানারা বেগমকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। আমি নিজেও সঙ্গে আছি।’

জানতে চাইলে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি। তবে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ