সাবেক রাষ্ট্রপতির ভাতিজার রিসোর্টে অগ্নিসংযোগ
Published: 7th, February 2025 GMT
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভাতিজা অ্যাডভোকেট শরীফ কামালের মালিকানাধীন ‘হাওর রিসোর্ট’ ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মিঠামেইন সদর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
এদিকে, একইদিন বিকেলে মিঠামইন বাজার থেকে ছাত্র-জনতা লাঠি নিয়ে উপজেলার কালীপুর গ্রামে শরীফ কামালের বাড়ি এবং সাবেক রাষ্ট্রপতির ছোট ভাইয়ের আবদুল হকের কামালপুর গ্রামের বাড়ির ধানের গোলায় আগুন ধরিয়ে দেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।
আরো পড়ুন:
পিরোজপুরে সাবেক মন্ত্রী, নেতাদের বাড়িতে ও আ.
সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের প্রয়াত এমপির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ
ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ কামাল মিঠামইন সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়। এরপর থেকেই তিনি পালাতক।
মিঠামইন থানার ওসি মো. শফিউল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “বিকেলে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কয়েকটি জায়গায় ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুরের পর আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এসময় আশেপাশের কয়েকটি দোকান আগুনে পুড়ে যায়।
ঢাকা/রুমন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত র জনত ম ঠ মইন
এছাড়াও পড়ুন:
খাদের কিনার থেকে যেভাবে শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাল সিটি ব্যাংক
আমার আগের প্রজন্মের সময় ব্যবসা নয়, মানুষ দেখে ঋণ দেওয়া হতো। ফলে অনেক ঋণ খারাপ হয়ে পড়ে। ব্যাংকটি সমস্যাগ্রস্ত তালিকায় পড়ে যায়। সেখান থেকে ব্যাংকটিকে সঠিক পথে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে দিতে একরকম চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি দায়িত্ব নিই– আজিজ আল কায়সার, চেয়ারম্যান, সিটি ব্যাংক
ব্যাংকটির শুরুর উদ্যোক্তা ছিলেন ১২ জন তরুণ ব্যবসায়ী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আনোয়ার গ্রুপ, ফিনিক্স গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, আজিজ গ্রুপ, হোসাইন গ্রুপ ও নূরানী অ্যাগ্রোর উদ্যোক্তারা। ব্যাংকটির প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন ফিনিক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান দীন মোহাম্মদ। ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন, এম এ হাশেম, ইব্রাহিম মিয়া, আবুল বারিক চৌধুরী ও দীন মোহাম্মদ। ১৯৯৩-৯৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি ছিল লোকসানি ব্যাংক। পরিস্থিতি এতই খারাপ হয়ে পড়ে যে নিয়ন্ত্রণমূলক মূলধনেও ঘাটতি দেখা দেয়। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এটিকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে উদ্যোক্তারা কোনোভাবেই ব্যাংকটিকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে বের করে আনতে পারছিলেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন ব্যাংকটির সব ধরনের কেনাকাটা, ঋণ প্রদানসহ সব ক্ষেত্রে আগাম অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। সরকারি-বেসরকারি খাতের অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের এনে ব্যাংকের কিছুটা উন্নতি হলেও পুরো সংকট থেকে বের হতে পারেনি। ২০০৫ সালের নভেম্বরে সমস্যাগ্রস্ত তালিকা থেকে বের হলেও ‘আর্লি ওয়ার্নিং’ তালিকায় ছিল ব্যাংকটি। ২০০৭ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন আজিজ আল কায়সার। তিনি দেশি-বিদেশি ব্যাংকে অভিজ্ঞদের ব্যাংকটিকে ঘুরে দাঁড় করানোর দায়িত্ব দেন। তাঁদের নানা উদ্যোগের ফলে ব্যাংকটি সংকট কাটিয়ে শক্তিশালী ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
আজিজ আল কায়সার বলেন, ‘সিটি ব্যাংক সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের তালিকা থেকে বের হলেও আমার অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষক বহাল রাখে। আমি চেয়েছিলাম ব্যাংকটি উন্নতি করতে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে, তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিবিড় তদারকি থাকুক। এতে অন্যরা সতর্ক থাকবে। যার সুফল আমরা পেয়েছি।’
গেম চেঞ্জারসিটি ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার আগে থেকে পরিচালনা পর্ষদে থাকলেও ২০০৭ সালের জুনে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। পরের মাসেই ইস্টার্ণ ব্যাংককে সফল রূপান্তরে নেতৃত্ব দেওয়া কাজী মাহমুদ সাত্তারকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির এমডি ছিলেন। তাঁর সঙ্গে তখন যোগ দেন বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ব্যাংকে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আরও ৪ ব্যাংকার। এর মধ্যে তখন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে যোগ দেন সোহেল আর কে হুসেইন, খুচরা ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন মাসরুর আরেফিন, ট্রেজারি বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন শেখ মোহাম্মদ মারুফ ও করপোরেট ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন ইউসুফ সাঈদ। কাজী মাহমুদ সাত্তারের পর সোহেল আর কে হুসেইন ছয় বছর সিটি ব্যাংকের এমডি ছিলেন। বর্তমানে তিনি ব্যাংক এশিয়ার এমডি। মাসরুর আরেফিন ২০১৯ সাল থেকে সিটি ব্যাংকের এমডি ও শেখ মোহাম্মদ মারুফ গত বছর ঢাকা ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দিয়েছেন। ইউসুফ সাঈদ সিটি ব্যাংকে যোগ দেওয়ার এক বছর পর কাতার ন্যাশনাল ব্যাংকে চলে যান। এখন তিনি কাতারের রিচমন্ড কনসালট্যান্ট অ্যান্ড সার্ভিসেসের কো-এমডি। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও দেশি-বিদেশি ব্যাংকের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা। পাশাপাশি তরুণ মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া শুরু করে ব্যাংকটি।
কাজী মাহমুদ সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যখন সিটি ব্যাংকে যোগ দিই, তখন ব্যাংকটি সবে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে বেরিয়ে এসেছে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৭টি সূচকের উন্নতির শর্ত বেঁধে দেয়। আমার ছয় বছরে এসব সূচকের লক্ষ্য পূরণ করে অনেক ওপরে উঠে যায়। এসব অর্জনের প্রধান কারণ ছিল সুশাসন নিশ্চিত করে সঠিক পথে এগোনো। পেশাদারত্বের সঙ্গে ঋণ বিতরণ ও পরিচালনা করা। ওই সময়ে ব্যাংকের লোগো পরিবর্তন করা হয়, অ্যামেক্সের সঙ্গে যুক্ত হয় সিটি ব্যাংক। কার্ড, ভোক্তা ঋণ—সব মিলিয়ে ব্যাংকটি আমার সময়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায়। পরবর্তী নেতৃত্ব ব্যাংকটিকে আরও শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।’
কাজী মাহমুদ সাত্তার