ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারা দেশে গত দুই দিনে ভাঙচুরের ঘটনায় উদ্বেগ জা‌নি‌য়ে‌ছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এসব ঘটনাকে "অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত’ দায়সারা বিবৃতি দিয়ে নয়, যেকোনো পরিস্থিতি আইনসিদ্ধভাবে মোকাবিলায় সরকারকে দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জা‌নি‌য়ে‌ছে সংস্থা‌টি।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানি‌য়েছে টিআইবি।

ধ্বংসাত্মক তৎপরতার পথ পরিহার করে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানি‌য়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে দলীয়করণ ও পরিবারতন্ত্রের সীমাহীন লালসা-তাড়িত কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবচেয়ে বেশি অপূরণীয় ক্ষতি করেছে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দোসররা। বহুমাত্রিক অধিকার হরণের শিকার আপামর দেশবাসীর ক্ষোভের মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে পলাতক শেখ হাসিনা ও তার দেশি-বিদেশি সহযোগীদের নির্লজ্জ ও ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণার পরিপ্রেক্ষিতে। তাই বলে আইনসিদ্ধ প্রতিক্রিয়ার পথ অনুসরণ না করে দেশব্যাপী যে প্রতিশোধপ্রবণ ভাঙচুর ও সহিংসতা চলেছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটি জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ সম্পর্কে দেশ-বিদেশে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেবে না।”

আরো পড়ুন:

দুর্নীতি প্রতিরোধে ১৪ দফা
শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে দুদককে ঢেলে সাজাতে হ‌বে: টিআইবি

টিআইবির কার্টুন শেয়ার
আপনার বাবাকে দুর্নীতিবিরোধী টিকা দিন

তি‌নি বলেন, “আগে থেকে সহিংস কর্মসূচির ঘোষণা থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও তার সঙ্গে সহায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনরত সেনাবাহিনী তথা সরকার কার্যকর নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আশঙ্কাজনকভাবে নির্লিপ্ততার পরিচয় দিয়েছে। পরবর্তী সময়ে ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত এমন বিবৃতি দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টাও লক্ষণীয়। কর্তৃত্ববাদের দীর্ঘ ১৬ বছরের পুঞ্জীভূত বিশাল জঞ্জাল অপসারণ করে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদিচ্ছা হয়তো বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তবে তার প্রয়োগে সুচিন্তিত ঝুঁকি নিরসন কৌশলের ওপর ভিত্তি করে যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা সক্রিয়, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারণে এই প্রশ্ন যৌক্তিকভাবে উত্থাপিত হতে পারে। তাই শুধু দায়সারা বিবৃতি দিয়ে নয়, যেকোনো পরিস্থিতি আইনসিদ্ধভাবে মোকাবিলায় সরকারকে দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”

উদ্ভূত পরিস্থিতি বাস্তবে পতিত আওয়ামী কর্তৃত্ববাদের পুনরুত্থানকামী মহলকেই অধিকতর সুযোগ করে দেওয়ার শঙ্কা তৈরি করছে বলে মনে করেন টিআইবির এই নির্বাহী পরিচালক।

তিনি বলেন, “এমনটি অব্যাহত থাকলে নজিরবিহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে সূচিত ‘নতুন বাংলাদেশের’ অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক উত্তরণ, সুশাসন এবং বিশেষ করে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার সম্ভাবনাকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হবে। মনে রাখা দরকার, শেখ হাসিনাসহ কর্তৃত্ববাদের সব দোসরকে সুনির্দিষ্ট অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণের সর্বোচ্চ প্রাধান্যপ্রাপ্ত করণীয়। তবে এজন্য প্রতিশোধপ্রবণ ও আত্মঘাতী মব জাস্টিস নয়, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের পথ অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।”

ভিন্নমত পোষণকারীদের মামলা দিয়ে হয়রানির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সবার গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্র ও সরকার‌কে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জা‌নি‌য়ে‌ছেন তি‌নি।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট আইব আওয় ম ল গ পর স থ ত ক র যকর ট আইব র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ হোক

আমরা এ কোন সমাজে বাস করছি! এখানে ঘরে–বাইরে কোথাও  কন্যাশিশু ও নারীরা নিরাপদ নয়। সাম্প্রতিক কালে এমন কিছু নারী ও শিশু নিগ্রহ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যা পুরো সমাজকে ভীষণ ধাক্কা দিয়েছে।

সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই তরুণীকে পিটিয়ে আহত করা, পোশাক নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীর হেনস্তা হওয়া, অশালীন আচরণের প্রতিবাদ করায় বাকেরগঞ্জে এক নারীকে প্রকাশ্যে মারধর করার ঘটনাগুলো খুবই উদ্বেগজনক। অথচ এসব ঘটনায় রাষ্ট্র ও সরকারের দিক থেকে যে রকম কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল, সেটা দৃশ্যমান হচ্ছে না।

গত সপ্তাহে মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে আট বছরের শিশুটি যেভাবে ধর্ষণের শিকার হলো, তা সমাজের মুখে চুনকালি মেখে দিয়েছে বললেও কম বলা হবে। একটি শিশু বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে আর এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন বোনেরই শ্বশুর নামের এক পাষণ্ড।

মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৪)–এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন এবং ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

শিশুটি এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, বর্তমানে ঢাকার সিএমএইচে  চিকিৎসাধীন। এর আগে মাগুরা সাধারণ হাসপাতাল, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সিএমএইচে নিয়ে আসা হয়েছে।

নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমে এসেছেন; যেমনটি এসেছিলেন গত বছর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে নারী ও শিশু নিগ্রহের বেশির ভাগ ঘটনা ঘটে পরিবারের সদস্য ও স্বজনের মাধ্যমে।

এই যে দেশে একের পর এক নারী নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে, সরকার কী করছে? কী করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা? কোথাও অপরাধ ঘটলে তাঁরা হয়তো মামলা নেন। কিন্তু এসব দুষ্কর্ম যারা করে, তাদের বেশির ভাগই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। সম্প্রতি দিনাজপুরে শিশুধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাড়ে আট বছর যেতে না যেতেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। ভুক্তভোগী শিশু ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। 

দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনবিরোধী বহু আইন আছে, কিন্তু এগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নেই। মামলা হলেও যথাযথ তদন্ত হয় না। বেশ কয়েক বছর আগে প্রথম আলোর এক গবেষণায় দেখা যায়, শিশু ও নারী নির্যাতন মামলার মাত্র ৩ শতাংশ অভিযুক্ত শাস্তি পান। এ অবস্থায় নারী ও শিশু নিগ্রহের ঘটনা কমার কোনো কারণ নেই।

মাগুরার ঘটনায় ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটির (শিশুটি ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগে মামলা) তদন্ত ও অভিযোগ আমলে নেওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আইন নিজস্ব গতিতে চললে উচ্চ আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয় না। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত ও বিচারকাজ সম্পন্ন করবেন।

নারী ও শিশুদের সুরক্ষা দিতে হলে প্রথমত আমাদের বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি ঘটনায় অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে অপরাধীদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ। ধর্ষণসহ সব ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনকে ‘না’ বলুন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ