খুলনায় মাদক ও জাল টাকার চালান জব্দ, রোহিঙ্গাসহ গ্রেপ্তার ২
Published: 7th, February 2025 GMT
খুলনায় ৯ হাজার পিচ ইয়াবা এবং জাল টাকাসহ দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন রোহিঙ্গা।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন আউটার পাস থেকে তাদের আটক করা হয় বলে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
আটককৃতরা হলেন- কক্সবাজার জেলার কুতুপালং ক্যাম্প ১ ইস্ট এ ১৬ ব্লকের মোজার মিয়ার ছেলে তৌহিদুল করিম এবং যশোরের কেশবপুর উপজেলার শ্রীফলা গ্রামের মো.
আরো পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গে ৪ রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার
সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারের সময় ২ বাংলাদেশিসহ ১৯ রোহিঙ্গা উদ্ধার
কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. কুতুব উদ্দিন বলেন, “গোপন সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, কক্সবাজার থেকে খুলনায় বিপুল পরিমাণ মাদকের চালান আসছে। চালানটি ধরার জন্য পুলিশের একটি দল সোনাডাঙ্গা আউটার বাইপাস সড়কে তল্লাশি অভিযান চালায়। কক্সবাজার থেকে খুলনা হয়ে বলেশ্বর পরিবহন নামে একটি বাস যশোরে যায়। সকাল সোয়া ৯ টার দিকে বাসটি আউটার বাইপাস সড়কে প্রবেশ করে। তখন গাড়ির মধ্যে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় দুই ব্যক্তির আচারণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাদের তল্লাশি করা হয়। পুলিশ তাদের কাছে থাকা একটি স্কুলের ব্যাগ থেকে ৯ হাজার পিচ ইয়াবা, চার হাজার জাল টাকা ও দুইটি মোবাইল ফোন জব্দ করে। এসময়ে পুলিশ একজনের কাছ থেকে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্ড জব্দ করে।”
তিনি আরো বলেন, “মাদকের চালনটি নিয়ে আটককৃতরা খুলনা হয়ে যশোর যাচ্ছিল। তাদের বিরুদ্ধে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।”
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কেএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মনিরুজ্জামান মিঠু, অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মোহ. আহসান হবীব ও সোনাডঙ্গা থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাঘায় আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ভাঙচুর, আগুন
রাজশাহীর বাঘায় এক আওয়ামী লীগের নেতার বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। হামলাকারীরা বাড়ির এসিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার কিশোরপুর গ্রামের হাজামপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এরপরই গ্রামের হিন্দুপাড়ায় এক শিক্ষকের বাসায় তারা হামলা করে লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের ওই নেতার নাম আবদুর রহমান। তিনি বাঘার পাকুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। দ্বিতীয় বাড়ির মালিক একজন স্কুলশিক্ষক। তাঁর নাম প্রদীপ কুমার সরকার। তিনি হরিরামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। এ ছাড়া হামলাকারীরা হিন্দুপাড়ার গৌরচন্দ্র ও চিন্ময় সরকারের বাড়িতেও হামলার চেষ্টা করে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আবদুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। ততক্ষণে বাড়ির টিনের চালা পুড়ে যায়। তিন ঘরের সব আসবাব পুড়ে গেছে। জমির কাগজসহ মজুত করা কয়েক মণ মসুর, শর্ষে, কলাই ও গম পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়িতে ৩০০ কবুতর ছিল। আগুনে কিছু কবুতর পুড়ে গেছে। কিছু উড়ে যেতে পেরেছে আর দামি কবুতরগুলো লুট করা হয়েছে বলে পরিবারের লোকজন দাবি করছেন। হামলাকারীরা বাড়ির এসি, কীটনাশক ছিটানো মেশিন, ১৫ হাজার টাকার কীটনাশকসহ আরও কিছু জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।
আব্দুর রহমানের ছেলে রাজশাহী শহরের একটি মাদ্রাসায় পড়ে। ছেলের পড়াশোনার কারণে মা–বাবাও সেখানে থাকেন। এই বাড়িতে আবদার আলী নামের একজন তত্ত্বাবধায়ক থাকেন। তিনি রাত নয়টার দিকে বাসায় আসেন। বৃহস্পতিবার তাঁর আসার আগেই ঘটনা ঘটে গেছে। বাড়িটি দোতলা। ছাদের একাংশ টিন দিয়ে ছাওয়া। সন্ধ্যা সাতটার পরে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
আব্দুর রহমানের স্ত্রী লাভলী বেগম রাজশাহীতে ছেলের কাছেই ছিলেন। গতকাল রাতে তাঁর ননদের ফোন পেয়ে সকালে বাড়িতে আসেন। তিনি বলেন, ‘বাড়িত আইসি দেখছি আমার সবকিছু পুইড়ি শেষ হয়্যা গিচে। জমির কাগজপত্র পর্যন্ত পুইড়ি গিচে। সবচাইতে দুঃখের বিষয়, আমার ছেলির শখের ৩০০ কবুতর ছিল। দামি দামি কবুতর। একটার দামই ৫ হাজার টাকা। ছেলি এত ভালোবাসে কোনো দিন একটা জবাই করতে দেয় না। সেই কবুতর কিছু পুইড়ি গিছে। দামিগুলো লুট কইরি লিয়া গিচে। কিছু উইড়ি ইদিকউদিক চইলি গিছে। বাড়িত আর ব্যবহার করার মতো কিচ্ছু নাই।’
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বললেন, ‘১৫ থেকে ২০ জন হামলাকারী ছিল। তারা সবাই হেলমেট পরে ছিল। সবার মুখ ঢাকা ছিল। লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র লিয়া মোটরসাইকেলে করে আসে। ওরা এলাকার কোনো মানুষেক ঢুকতে দেয়নি। মুখ খারাপ কইরি গালাগাল করতে থাকে। কেউ কাছে ভিড়তে পারেনি। আসার চেষ্টা করলেও সবাইকে ওরা খেদাই দিচে। ভাঙচুর লুটপাট করার পরে পেট্রল দিয়ে সারা বাড়িতে আগুন জ্বালাইয়ে দিয়ে তারা চলে গেল।’
শুক্রবার দুপুরে এই বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, সব জিনিসপত্র পুড়ে কালো হয়ে গেছে। মেঝেতে শুধু ছাই পড়ে আছে। হিন্দুপাড়ার প্রদীপ কুমার সরকারের বাড়িতে শুধু তাঁর বোন প্রমিলা সরকার ছিলেন। প্রদীপর সরকার তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ভারতে রয়েছেন। প্রমিলা সরকার বললেন, গেট ভাঙার চেষ্টা করে পারেনি। ব্যালকনিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন বেশি ছড়ায়নি। একপর্যায়ে তারা ব্যালকনির দরজা ভেঙে বাড়ির ভেতরে ঢোকে। তাদের বাড়িতে সমাজের অনুষ্ঠানের যত জিনিসপত্র ছিল, সব হামলাকারীরা লুট করে নিয়ে যায়।
গৌচন্দ্র ও চিন্ময় সরকারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, হামলাকারীরা গেট ভাঙার চেষ্টা করেছে। স্টিলে পাতের গেটে হামলার চিহ্ন রয়েছে।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। ততক্ষণে আব্দুর রহমানের বাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। আর প্রদীপ মাস্টারের বাড়ির বারান্দার আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিল। সেটা সেভাবে জ্বলেনি। তাঁরা নিজেদের মতো করে তদন্ত করছেন।