স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, “রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে।”

আসিফ মাহমুদ শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।

আসিফ মাহমুদ বলেন, “প্রথমত এটা অত্যন্ত ইতিবাচক যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও একধরনের ‘ঐকমত্য’ তৈরি হচ্ছে। দেশের মানুষ তৎকালীন ক্ষমতাসীন ওই দলের অগণতান্ত্রিক এবং একগুঁয়েমি মনোভাব ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি বলেই ৫ আগস্টের আগে ও পরে তাদের মধ্যে দলটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য তৈরি হলে সরকারের জন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।”

আরো পড়ুন:

১৫ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করেই নির্বাচন হতে হবে: গোলাম পরওয়ার

নিবন্ধন পেল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, প্রতীক ফুলকপি

রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকার শিগগিরই কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ কিংবা রাজনৈতিক দল; যে বা যারাই হই না কেন, আমরা এ দেশের জনগণকে ‘রিপ্রেজেন্ট’ করি। ফলে ৫ আগস্টের পরে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ও চাওয়ার জায়গা আছে, সেগুলোকে প্রাধান্য দেওয়াটাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। সে জায়গা থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে দাবি উঠেছে, আমি বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাতে চাই।”

অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, “বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াও চারটি আইন রয়েছে, যেখানে সরকার নির্বাহী আদেশে যেকোনো দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে এটার লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কটা (আইনি কাঠামো) কী হবে, এ বিষয়ে সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।”

তিনি বলেন, “বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিকভাবেই জুলাই–আগস্টের গণহত্যার সঙ্গে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে দলীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন বাতিল করাসহ যেকোনো ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করতে পারে। তবে বিষয়টি যেহেতু আইনের বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত, সেক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে।”

আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমি আশ্বস্ত করতে চাই, বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া প্রতিফলন ঘটাতে সরকার এ ব্যাপারে দ্রুতই পদক্ষেপ নেবে।”

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্টের পরিবর্তনের পরে আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছি। একটি গণ-অভ্যুত্থান যারা ঘটায়, পরবর্তী প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে আমরা অতীতে দেখেছি যে অভ্যুত্থানের অর্জনগুলো সব নষ্ট হয়ে যায়।”

তিনি বলেন, “নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরেও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করেই যারা স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলনে অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা একটি দল গঠনের চিন্তা করেছেন। তাছাড়া ৫ আগস্টের পর গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে যাননি।”

আসিফ মাহমুদ বলেন, “বর্তমানে তাদের ভেতরেও রাষ্ট্র গঠনের স্পৃহা তৈরি হয়েছে। এই শক্তিটাকে সংহত করার জন্য একটা রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন। দল গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও এ দলের কোনো নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে নতুন দলটির আত্মপ্রকাশের বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে বলে এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি।”

ছাত্রদের নতুন দলে সরকারের কোনো প্রতিনিধি থাকবেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, “এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমাদের নীতিগত অবস্থান হলো, বর্তমান সরকারে ছাত্র প্রতিনিধি যারা আছেন, তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন, সে ক্ষেত্রে তাদের সরকারে থাকাটা ঠিক হবে না। কেউ যদি সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যান তো অবশ্যই সরকার থেকে পদত্যাগ করে তবেই সেখানে যাবেন। কারণ, এ সরকার একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করার দায়িত্ব নিয়েছে। পাশাপাশি দেশের সংস্কার এবং ফ্যাসিস্টদের বিচারকাজ শেষ করার দায়িত্বও তাদের ওপর অর্পিত রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনো ধরনের ‘কনফ্লিক্ট’ যেন তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দলে নিজে যাবেন কি না-এমন প্রশ্নের উত্তরে আসিফ মাহমুদ বলেন, “এ বিষয়ে আমি ভাবিনি। কিছু বিষয় পর্যালোচনা করছি। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে সবাই জানতে পারবে।”

সরকার চায় সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলো চায় নির্বাচন। এ ক্ষেত্রে বিষয় দুটি সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “না, মোটেই সাংঘর্ষিক নয়। এ বিষয়গুলোর পুরোটাই আমাদের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে।”

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই সরকার স্পষ্টই একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ৫ আগস্টের পরে মানুষের মধ্যে এই মনোভাবই ছিল যে যেকোনো একটি রাজনৈতিক দলকে যদি ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়া হয়, তবে সে-ও ওই একই গতানুগতিক ধারায় কাজ করবে। তবে এসব বিষয়ে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ এই সরকারও ফেস করছে। কারণ, সমাজের প্রতিটি কাঠামোতেই স্বৈরাচারের দোসররা রয়ে গেছে।”

ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, “এই প্রতিবেদনগুলো যথাযথ অংশীদারদের (স্টেকহোল্ডার) সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাঠ তৈরি হতে পারে।”

তিনি আরো বলেন, “যে রাজনৈতিক দলগুলো শেখ হাসিনার সময় বলে আসছিল, বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচন সম্ভব নয়, তারা এখন আবার একই বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচনের কথা কোন গ্রাউন্ড (যুক্তি) থেকে বলছে, এটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। সেটাও তাদের স্পষ্ট করতে হবে। একই সংবিধান, আইন-কানুন রেখে নির্বাচন করলে সেটা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলের নির্বাচন থেকে কতটা আলাদা হবে, সেটা আমার বোধগম্য নয়।”

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমরা যদি সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করে কোনো দলের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিই, তাদের জন্য সরকার চালানো কঠিন হবে। এ কারণেই ছয়টা সংস্কার কমিশনকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এগুলো শাসনতান্ত্রিক। বাকি সংস্কারগুলো জনস্বার্থমূলক। সেগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আমরা মনে করি, এখানে মিনিংফুল (অর্থপূর্ণ) সংস্কারের মাধ্যমেই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হতে পারে এবং সংস্কার কার্যক্রম ও আওয়ামী লীগের দৃশ্যমান বিচারের মাধ্যমেই নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে।”

সূত্র: বাসস

ঢাকা/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট আওয় ম ল গ ন ষ দ ধ কর র ব য প র ৫ আগস ট র পর পদক ষ প ন উপদ ষ ট সরক র র ক ষমত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে সমস্যা বোধ করছি না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলছেন, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের কারণে আমরা কোনো সমস্যা বোধ করছি না।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা ট্রান্সশিপমেন্ট গতকাল মঙ্গলবার বাতিল করেছে ভারত।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, “এটা (ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল) আমাদের ওপর হঠাৎ করে আরোপিত হয়েছে। সাথে সাথেই আমাদের সব অংশীজন নিয়ে গতকাল আমি মিটিং করেছি। এটাতে আমরা কোনো সমস্যা বোধ করছি না। আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা, প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় যাতে কোনো ঘাটতি না হয় এবং আমাদের রপ্তানির ক্ষেত্রে যাতে যোগাযোগের কোনো ঘাটতি না পড়ে, সেক্ষেত্রে আমরা সব ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমি আশা করি, এটা আমরা উতরে যাব।”

কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “আমি এই মুহূর্তে আপনার সঙ্গে শেয়ার করব না। প্রতিযোগিতায় আমাদের যে প্রতিবন্ধকতাগুলো আছে, সেগুলো কিছু কাঠামোগত, কিছু খরচের দিক থেকে—সব জিনিস সমন্বয় করে আমরা সক্ষমতা বৃদ্ধি করব। আমি এখানে কোনো সমস্যা দেখছি না।”

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল বিষয়ে আপনারা ভারতকে কোনো চিঠি দেবেন কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা এই মুহূর্তে বিবেচনা করছি না।”

ভারতের দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় কী পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়, জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “আমাদের এখান থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টনের মতো ম্যাটেরিয়াল সড়ক পথে এখান থেকে ভারতের বিভিন্ন বন্দর বিশেষ করে দিল্লি, কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি হতো। আমরা আশা করি, এই ম্যাটেরিয়ালগুলো বহনের জন্য নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ সমস্যা অতিদ্রুত সমাধান করব। সাধারণত ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে পণ্যগুলো যেত।”

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক স্থগিতের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, ভেরি গুড। আমাদের বাণিজ্যের মধ্যে স্থিরতা দেখা দেবে। গতকাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়েছে অনলাইনে। আমরা আমাদের কর্মসমষ্টিগুলো নিয়ে কাজ করছি। আমরা দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরব।”

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “স্থগিতাদেশ তো সাময়িক সময়ের জন্য। এ বিষয়ে আমাদের দীর্ঘ মেয়াদে করণীয় আছে। তাদের আকাঙ্ক্ষা তো শেষ হয়ে যায়নি। সেই আকাঙ্ক্ষাগুলোকে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ওপর ভিত্তি করে কতটুকু করতে পারব, সেই বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করছি এবং সেই অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”

তিনি বলেন, “মূল লক্ষ্য হচ্ছে—বাণিজ্য ঘাটতি কীভাবে সমন্বয় করা যায়। আমরা সে লক্ষ্য অর্জনেই কাজ করছি।”

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ