কলকাতার টালিগঞ্জ স্টুডিওপাড়ায় টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে পরিচালকদের দ্বন্দ্ব তুঙ্গে। অসহযোগিতার অভিযোগে শুটিং ফ্লোরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিরেক্টরস গিল্ড। 

পরিচালক শ্রীজিৎ রায়ের সেট অসমাপ্ত রাখাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। এরপর পরিচালকরা শুটিং ফ্লোরে গেলেও আংশিক কর্মবিরতি পালন করছিলেন টেকনিশিয়ানরা। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে পরিচালকরা ঘোষণা দেন, শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে আর কাজ করবেন না তারা। যতদিন দ্বন্দ্বের অবসান না ঘটে, ততদিন ফ্লোরে যাবেন না। যার ফলে আজ সকাল থেকে টলিপাড়ায় শুটিং থমকে আছে। লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন— পুরোপুরি বন্ধ।

ডিরেক্টরস গিল্ডের শুটিং বন্ধের সিদ্ধান্তের পরও বেশ কজন পরিচালক শুটিং করছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন— সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়, তথাগত মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার থেকে শুটিং শুরু হয়েছে সৃজিতের ‘কিলবিল সোসাইটি’-এর। এ নির্মাতার দাবি, পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায় যদি ‘রাস’-এর শুটিং করতে পারেন, তাহলে তার ফ্লোরে যেতে বাধা কই! অন্যদিকে, ছোটপর্দার পরিচালক সুমন দাসও সিরিয়ালের শুটিং করছেন।

আরো পড়ুন:

অভিনয়ে ফিরছেন শতাব্দী

আমি বোধহয় অদৃশ্য গণ্ডি ভাঙতে পেরেছি: ইধিকা

কয়েকজন পরিচালক শুটিং করায় গিল্ডের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। টলিপাড়ার সূত্রের খবর, বহু পরিচালক, প্রযোজক শুটিংয়ের পক্ষে।

ডিরেক্টরস গিল্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তথাগত ও সুমন শহরের বাইরে শুটিং করছেন। তাই তাদের কাজ বন্ধ করা হচ্ছে না। শহরে ফিরে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য আর ফ্লোরে যাবেন না। তাহলে কি স্টুডিওপাড়ায় তালা পড়বে? জবাবে ডিরেক্টরস গিল্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিচালক ছাড়া যদি শুটিং সম্ভব হয়, তাহলে কাজ চলবে।

গতকাল সন্ধ্যায় ফেডারেশনকে বৈঠকে আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো উত্তর মেলেনি। তারপর রাতে ডিরেক্টরস গিল্ড মিটিং করে। ওই বৈঠকের পরই গিল্ডের সম্পাদক সুদেষ্ণা রায় শুটিং বন্ধের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি ফেডারেশনের উদ্দেশে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে সংগঠনটি।

শর্তগুলো জেনে নিন:
**সব দাবির লিখিত উত্তর দিতে হবে।
**তিন পরিচালক যাতে নির্দ্বিধায় কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
**লিখিত বা মৌখিক নির্দেশে কাউকে ব্ল্যাকলিস্ট করা হবে না।
**লিখিত বা মৌখিক নির্দেশে কারো কাজ বন্ধ করা যাবে না।
**কোনো ব্যক্তি বিশেষ নিয়ে সমস্যা থাকলে তার সংশ্লিষ্ট গিল্ডকে জানাতে হবে।
**পরিচালক, প্রযোজকদের তরফে টেকনিশিয়ানদের লিস্ট ফেডারেশনকে অবশ্যই দেওয়া হবে। তবে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে কোনো পারমিশন আসার প্রশ্ন থাকবে না।

ঢাকা/সুচরিতা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড র ক টরস গ ল ড দ বন দ ব

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যের পাল্টাপাল্টি নোটিশ জারি, নানা আলোচনা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের একাডেমিক অগ্রগতি জানতে চেয়ারম্যানদের সঙ্গে একটি সভার আহ্বান জানিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার নোটিশ জারি করেন সহ–উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম রাব্বানি। সহ–উপাচার্যের নোটিশকে বিধিবহির্ভূত উল্লেখ করে সব বিভাগের চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে সাড়া না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একই দিনে পাল্টা আরেকটি নোটিশ জারি করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শরমিন।

উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যের পাল্টাপাল্টি দুটি প্রশাসনিক নোটিশ জারি করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা আলোচনা চলছে। পাল্টাপাল্টি দুটি নোটিশের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাজনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ ঘটনাকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত চারজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য প্রশাসনিক ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ—এই তিন পদের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। কিন্তু এ ঘটনা প্রশাসনিক বিভাজনকেই স্পষ্ট করছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকালে সহ–উপাচার্যের নির্দেশে সহকারী রেজিস্ট্রার মো. সাফিজ উদ্দিন স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, আগামী রোববার বেলা ১১টায় সহ–উপাচার্যের কার্যালয়ে একাডেমিক অগ্রগতি নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সব বিভাগের চেয়ারম্যানদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানানো হলো।

এই নোটিশের পরপরই উপাচার্যের নির্দেশে রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নোটিশে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী প্রশাসনিক নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন উপাচার্য। তাঁর অনুমোদন ছাড়া অন্য কোনো পত্র কোনো দপ্তরপ্রধান, কর্মকর্তা বা অন্য কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে পাঠাতে পারেন না। সংগত কারণে সহ–উপাচার্যের নির্দেশক্রমে নোটিশটি বিধিবহির্ভূত এবং কোনো শিক্ষককে তা আমলে না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়ই সহ–উপাচার্যের পদ সৃষ্টি করা হলেও পদটি শূন্য ছিল। এবারই প্রথমবারের মতো সহ–উপাচার্য (প্রো ভিসি) হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানি। গত বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি তাঁকে এই পদে নিয়োগ দেন। আর গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক শুচিতা শরমিনকে। তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য।

প্রথমবারের মতো সহ–উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার পর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে গতি আসবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু সহ–উপাচার্যের যোগদানের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা প্রশাসনিক জটিলতা ও বিভাজন শুরু হয়। এত দিন চাপা থাকলেও এবার পাল্টাপাল্টি নোটিশ জারির পর তা প্রকাশ্যে এল।

পাল্টাপাল্টি নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার দুপুরে সহ–উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‌‘ব‌রিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী একা‌ডেমিক দায়িত্ব পালন কর‌বেন প্রো‌ ভি‌সি। আমি ‌প্রো‌ ভি‌সি প‌দে যোগদানের পর তিন মা‌সের ম‌ধ্যে মৌ‌খিক ও লি‌খিতভা‌বে দায়িত্ব বু‌ঝি‌য়ে দেওয়ার জন্য উপাচার্যকে বারবার অনুরোধ ক‌রে‌ছি। কিন্তু দুঃখজনক হ‌লেও স‌ত্য যে উপাচার্য আমা‌কে একাডেমিক দায়িত্ব বু‌ঝি‌য়ে দেওয়ার পদ‌ক্ষেপ গ্রহণ করেননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম দেখভাল ও দা‌য়ি‌ত্ব পাল‌নের অংশ হি‌সে‌বে একাডেমিক কার্যক্রমের অগ্রগতি ও সা‌র্বিক অবস্থা জানার জন্য আমি বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে এক‌টি মত বিনিময় সভার আহ্বান ক‌রে‌ছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এক্সি‌লেন্সি আনাই এ সভার উদ্দেশ্য। প্রো‌ ভি‌সি হিসেবে এটি আমার দায়িত্ব ব‌লে আমি ম‌নে ক‌রি। সেখানে আমার অফিস থেকে বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠানো চিঠির বিপরীতে রেজিস্ট্রার প্রেরিত চিঠি যথাযথ ও বিধিসম্মত হয়নি ব‌লে আমি ম‌নে ক‌রি।’

এ বিষয়ে উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বক্তব্য জানতে শুক্রবার সকালে তাঁর মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। তবে উপাচার্যের পক্ষে পাল্টা নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান। তাঁর নির্দেশক্রমে আমি এই চিঠি বা নোটিশ দিয়েছি। আমি উপাচার্যের সচিব, তাই উপাচার্য যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবেই আমি চিঠি দিয়েছি। উপাচার্যের আদেশ-নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা আমার দায়িত্ব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত সাতজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৪ বছর পার হলেও এখানে অবকাঠামোগত, আবাসিক, পরিবহন, গ্রন্থাগারে বইসংকটসহ নানা সংকটে এখনো শিক্ষার পরিপূর্ণ বিকাশ হয়নি। শ্রেণিকক্ষের অভাবে এখনো শিক্ষার্থীদের মাঠে পাঠদান হচ্ছে। শিক্ষকসংকটের কারণে বাড়ছে সেশন জট। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গবেষণা কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ দুই পদে মতবিরোধ এ সমস্যার নিরসনের চেয়ে আরও বেশি ঘনীভূত করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ