হাসিনার পরিবারের সম্পত্তি ধ্বংস বা কোনো নাগরিকের ওপর আক্রমণ থেকে বিরত থাকুন
Published: 7th, February 2025 GMT
অবিলম্বে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশের সকল নাগরিককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। শেখ হাসিনার পরিবারের সম্পত্তি ধ্বংস থেকে বিরত থাকা এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি হওয়ায় কিংবা অন্য কোনো অজুহাতে দেশের কোনো নাগরিকের ওপর আক্রমণ না করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ-এ দেওয়া বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনা বছরের পর বছর জনগণের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। সংগত কারণেই এটি বোধগম্য যে, বিক্ষোভকারী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা বছরের পর বছর ধরে শেখ হাসিনার নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, ফলে তাদের মনে ক্ষোভ রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নিয়েও তার দলীয় সন্ত্রাসীদের একত্রিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। বছরের পর বছর বাংলাদেশে নিপীড়নের শাসন কায়েম করা শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের পুনর্নির্মাণকে ক্রমাগত বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে।’
এর ফলে দেশের মানুষের মনে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে সেটি বোধগম্য জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তা সত্ত্বেও সরকার দেশের সকল নাগরিককে আইন মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছে। এতে করে আমরা নিজেদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। ফ্যাসিবাদী শাসনের অধীনে পুরোনো বাংলাদেশ থেকে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে একসাথে কাজ করছি, আইন মেনে চলার মধ্য দিয়েই সেটি আলাদা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার অনুভূতি ক্ষুণ্ন না করি; আইনের প্রতি যেকোনো অবজ্ঞা নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।’
গত জুলাই ও আগস্টে শেখ হাসিনার শাসনকে উৎখাত করে দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যে সকল নাগরিক জেগে উঠেছিলেন, তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের নিজেদের এবং বিশ্বজুড়ে আমাদের বন্ধুদের কাছে প্রমাণ করা অপরিহার্য যে আমরা একে অপরের নাগরিক ও মানবাধিকারকে সম্মান করব এবং আইন মেনে চলব। এই নীতির প্রতি আমাদের অঙ্গীকার অটল।’
আরও পড়ুনশেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যে ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ৩২ নম্বরে ভাঙচুর০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের বিজয়ীদের নিশ্চয়ই এমন কিছু করা উচিত হবে না যা দেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং স্বৈরাচারী হাসিনার আমলের সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এই গুরুতর পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সকল বাংলাদেশির জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য সরকার দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে কাজ করছে। সম্পত্তি ধ্বংস, ব্যক্তির ওপর আক্রমণ কিংবা কোনো ধরনের উসকানিমূলক কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অবিলম্বে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী যে কারও বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সরকার বিচারের আওতায় আনবে।’
ফ্যাসিবাদী শাসনের নেতারা দেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে ফেলে গেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ আমরা সতর্ক থাকব এবং নিজেদের নীতি-নৈতিকতা বজায় রাখব, ততক্ষণ তাদের ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ নেই। তাদের সম্পত্তিতে যেকোনো আক্রমণকে তারা আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করার এবং তাদের বানোয়াট গল্প প্রচার করার সুযোগ হিসেবে নেবে।’
মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার প্রক্রিয়াধীন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সমগ্র বিশ্ব আমাদের সঙ্গে আছে। এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলার যেকোনো অবনতি বিশ্বকে ভুল বার্তা দেবে।’
প্রধান উপদেষ্টা সকল নাগরিককে এমন একটি দেশ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আহ্বান জানান, যেখানে সকল বাংলাদেশি নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবেন, আত্ম-নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং নিজেদের শক্তি সৃজনশীল, শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করে দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবেন।
আরও পড়ুনভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের চেষ্টা শক্তভাবে প্রতিহত করা হবে১৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত র জন য আম দ র র পর ব র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে ১৯ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার
অবৈধভাবে ভারতে বসবাসের অভিযোগে ১৯ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিন মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাসিকে একটি কন্সট্রাকশন সাইট থেকে আট বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কেউই ভারতে বসবাসের বৈধ নথি দেখাতে পারেনি। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ভারতীয় আধার কার্ড, প্যান কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় ১২ বছর আগে সুমন কালাম গাজী নামে এক বাংলাদেশি দালাল অবৈধভাবে ভারতের প্রবেশ করেন। এরপর তার হাত ধরেই একে একে অন্যরা সেখানে বসবাস গড়ে তোলে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে।
নাসিক পুলিশ কমিশনার সন্দীপ কার্নিক বলেন, একটি কন্সট্রাকশন সাইটে প্রায় ৮ শতাধিক শ্রমিক কাজ করছিলেন। আমাদের কাছে খবর ছিল সেখানে বেশকিছু বাংলাদেশিও রয়েছেন। এরপরই গোপনে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে, ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময়ে ৭ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে বিএসএফ। এছাড়া তাদের সহযোগিতা করা অভিযোগে তিন ভারতীয় দালালকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে বিএসএফ জানায়, বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা সংলগ্ন জলঙ্গী সীমান্ত এলাকা থেকে ৭ বাংলাদেশিসহ ৩ ভারতীয় দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুই অনুপ্রবেশকারীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা সবাই ভারতের সীমান্তবর্তী গ্রাম মধুবানার তিন দালালের সহায়তা নিয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সীমান্ত অতিক্রম করার আগেই বিএসএফ জওয়ানদের হাতে ধরা পড়েন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ কয়েক মাস আগে ভারতে কাজের সন্ধানে প্রবেশ করেছিলেন ওই ৭ বাংলাদেশি। এরপর কাজকর্ম শেষে দালালের হাত ধরে ফের ভারত থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এজন্য মাথাপিছু ৭ হাজার রুপি করে ভারতীয় দালালকে দিয়েছিল। বৃহস্পতিবার ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময়ে তিন দালালসহ ৭ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হন।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় ধনতলা সীমান্ত এলাকা থেকে দুই বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ধানতলা থানার বহিরগাছি বাজার এলাকায় দুই বাংলাদেশি যুবককে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে পুলিশ।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, কয়েক মাস আগে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে তারা ভারতে প্রবেশ করেন। আবার বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
গ্রেপ্তার দুই বাংলাদেশি হলেন- হাসিফ শেখ (৩২) ও আমিনুর শেখ (২৫)। তাদের বাড়ি বাংলাদেশের মহেশপুর থানার নল পাতুয়া এলাকায়।
এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগারা এলাকা থেকেও অবৈধ দুই বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কুরবান মণ্ডল ও ইমরান হোসেন নামে ওই দুই যুবক রাজমিস্ত্রি পরিচয় দিয়ে এগরার প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করছিলেন। তাদের কাছ থেকে একাধিক ভুয়া ভারতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে।