কৈশোরেই জড়িয়ে পড়েছিলেন তৎকালীন নিষিদ্ধ ‘ফাতাহ আন্দোলনে’। ২৮ বছর বয়সে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যান। সকলেই ভেবেছিলেন মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছিল সবাই। আয়োজন করা হয়েছিল শোকসভাও। এর মাস ছয়েক পর পরিবার জানতে পারে, তাদের ছেলে মরেনি। ইসরায়েলি বিমান হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে গেছে বটে, তবে আটক রাখা হয়েছে ইসরায়েলি কারাগারে। এ খবর শুনে তার পরিবারের সদস্যরা একইসঙ্গে হতবাক ও উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন। পরিবার ও অন্যান্য ফিলিস্তিনিদের কাছে ‘জীবন্ত শহীদ’ উপাধি পান আল-তুস। এরপর কেটেছে বন্দী জীবনের ৪০ বছর। বলছি ফিলিস্তিনি নাগরিক মোহাম্মদ আল-তুসের কথা। 

এখন তাঁর বয়স ৬৯ বছর। চার দশক বন্দী থাকার পর ছাড়া পেলেও প্রকৃত ‘মুক্তি’ মেলেনি আল-তুসের। যে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য জীবনবাজি রেখেছিলেন সেই নিজভূমে থাকার সুযোগ থেকেও এখন তিনি বঞ্চিত। বন্দী বিনিময়ের শর্ত অনুসারে জীবনের বাকি দিনগুলো থাকতে হবে পরভূমে।

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে তিন-ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে ইসরায়েল তাকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেয়। এই বন্দী বিনিময় কার্যকর হয়েছিল ১৯ জানুয়ারি। ২৫ জানুয়ারি ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দীর মধ্যে ছিলেন আল-তুসও। এছাড়া ১২১ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৭৯ জন দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে গাজায় হামাস কর্তৃক জিম্মি চার ইসরায়েলি নারীর মুক্তির বিনিময়ে তারা মুক্তি পান। মুক্ত অন্য ফিলিস্তিনিরা পশ্চিমতীরে নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরে গেলেও তাদের মধ্যে ৭০ জনকে মিসর, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, তুরস্কে পাঠানো হবে। আল-তৌসের নির্বাসন মিসরে।

১৯৮৫ সালে ২৮ বছর বয়সে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন আল-তুস। ওই বছরের অক্টোবরে জর্ডান সীমান্তের কাছে দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি কমান্ডো ইউনিটের মধ্যে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। ওই সময় তাকে বন্দি করা হয়েছিল। একটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান তাদের কমান্ডো ইউনিট বহনকারী গাড়িকে আঘাত করে। এতে কমান্ডো ইউনিটের সব যোদ্ধা নিহত হন। গুরুতর আহত হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। 

প্রাণে বাঁচলেও দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মেলেনি পরিত্রাণ। দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে জড়িত এবং তৎকালীন নিষিদ্ধ ফাতাহ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য ইসরায়েলি একটি আদালত আল-তুসকে একাধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটির (পিপিএস) তথ্য অনুসারে, ১৪ বছর বয়সে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ফাতাহ আন্দোলনে।  

২০১১ ও ২০১৪ সালের বড় কয়েকটি বন্দি বিনিময় চুক্তি এবং কয়েক দশক ধরে চালিয়ে যাওয়া নানা চেষ্টাও ইসরায়েল আল-তুসকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে তিনিই ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্দী হিসেবে রেকর্ড গড়েন। এজন্য কারাগারে ‘ফিলিস্তিনি বন্দীদের ডিন’ উপাধিও পেয়েছেন তিনি। 

আল-তুসের মুক্তির সঙ্গে ২১ জন ফিলিস্তিনি বন্দিরও মুক্তি মেলে যারা ১৯৯৩ সালের অসলো শান্তি চুক্তির আগে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ছিলেন। ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা সংস্থা প্যালেস্টাইন প্রিভেনটিভ সিকিউরিটি জানিয়েছে- আল-তুস তার দীর্ঘ কারাবাসের সময় ব্যক্তিগতভাবে নানা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। জেলে থাকাকালীন নানা সময় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বেথলেহেমের কাছে আল-জাবা গ্রামে তার পারিবারিক বাড়িটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। 

স্বামীর শোকে দীর্ঘ অসুস্থতার পর তার স্ত্রী আমনা ২০১৫ সালে মারা যান। ফিলিস্তিনের পার্লামেন্টের সদস্য আল-তুসের ছেলে শাদি বলেন, ‘বাবাকে ছাড়া কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে আমাদের পরিবারকে পার হতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার মা স্ট্রোকে মারা যাওয়ার পর আমাদের অবস্থা খারাপ থেকে খারাপ হয়ে গেছে। তখন থেকে আমি ও আমার ভাইয়েরা এতিম হিসেবে বসবাস করতাম।’

মুক্তির পরপরই আল-তৌসের তিন ছেলের একজন থায়ের স্থানীয় একটি টেলিভিশনকে বলেন, মিশর ও অন্যান্য ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলোর প্রচেষ্টায় বন্দী বিনিময় চুক্তিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছে হামাস। এর প্রেক্ষিতে আমাদের বাবার মুক্তি নিশ্চিত হয়।  

তিনি বলেন, ‌‘গাজার যুদ্ধের আগে আমরা মাসে একবার বাবার সঙ্গে দেখা করতে পেরেছিলাম। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমাদের এবং অন্যান্য বন্দীদের পরিবারকে তাদের (বন্দীদের) সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয়নি ইসরায়েল। আমরা এখন আমাদের বাবার সঙ্গে দেখা করতে পারি তবে তার নির্বাসিত দেশে’ বলছিলেন থায়ের।

তিনি বলেন, ‘আমি দখলদার ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি সকল বন্দীর মুক্তির দাবি করছি। গাজার পুনর্গঠন শুরু করার জন্য এই চুক্তির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন কামনা করছি।’ 

প্রসঙ্গত, যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলেও গাজাকে কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে ইসরায়েল। তারা ফিলিস্তিনিদের উত্তরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মধ্যে হামাস আরও ১০ থেকে ১৫ হাজার যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে। গত ১৫ মাসে যুদ্ধে একই সংখ্যক নিহতও হয়েছেন। গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার জরিপে এসব তথ্য উঠে আসে। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশই নবীন ও অপ্রশিক্ষিত। এ প্রসঙ্গে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, যতবার ইসরায়েল তাদের অভিযান শেষ করে, ততবারই হামাস আবার পুনর্গঠিত হয় এবং শূন্যস্থান পূরণ করে। খবর-আহরাম অনলাইন

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল আল ত স র বন দ দ র র পর ব র ইসর য় ল আম দ র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে পুলিশের ওপর হামলা করে আসামি ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৩

ফরিদপুরের সালথায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শনিবার বিকেলে উপজেলার সোনারপুর ইউনিয়নের ফুকরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে গতকাল রোববার দুপুরে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা গ্রামের আওয়াল শিকদার (৬০), ফরিদ শিকদার (৩৩) ও সাকিব মাতুব্বার (২৩)।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, ফুকরা গ্রামে অভিযান চালিয়ে পরোয়ানাভুক্ত আসামি বাবুল শিকদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাঁর স্বজনেরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে বাবুলকে ছিনিয়ে নেন। বাবুল দ্রুত বিচার আইনের এক মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামি।

এ বিষয়ে গতকাল রাতে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, গত শনিবার বিকেলে ফুকরা গ্রামে গিয়ে পরোয়ানাভুক্ত আসামি বাবুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে তাঁকে ছিনিয়ে নেন পরিবারের সদস্যেরা। হামলায় একজন এসআই, একজন এএসআইসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ওসি আতাউর রহমান বলেন, আসামি ছিনতাই ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। পরে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ