আমাদের দেশের নারীরা আর্থসামাজিক ও শিক্ষাগত ক্ষেত্রে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মেয়েদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া ও বাল্যবিবাহের মতো সমস্যাগুলো নারীদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই ধরনের সমস্যাগুলোর সমাধানে এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালে নারীদের জন্য সংসদে সংরক্ষিত আসনের প্রথা চালু করা হয়।

প্রথমে সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ছিল ১৫, যা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে ৫০টিতে উন্নীত করা হয়। তবে এই উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়ন বা তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে কতটা কার্যকর হয়েছে, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে।

সংরক্ষিত আসন চালুর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, নারী সংসদ সদস্যরা নারীদের ক্ষমতায়ন ও নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। বাস্তবে দেখা যায়, অন্যান্য সংসদ সদস্যের মতো তাঁরাও মূলত দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে বেশি মনোযোগী হয়ে যান। এর ফলে নারীবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তাঁদের ভূমিকা সীমিত থেকে যায়।

নির্বাচন সংস্কার কমিশন সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনসংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে। আগের মতো দলীয় মনোনয়নের পরিবর্তে এবার নারীদের ‘ঘূর্ণায়মান’পদ্ধতিতে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে আসতে হবে।

আগে ধারণা করা হতো, অনির্বাচিত হওয়ায় নারী সংসদ সদস্যরা তাঁদের ভূমিকা পালনে সীমাবদ্ধ ছিলেন। তবে নতুন এই ব্যবস্থা তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে শক্তিশালী করবে এবং সংসদে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করবে বলে মনে করছে সংস্কার কমিশন।

তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকেই যায়, তা হলো: যেখানে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো পুরোপুরি নারীবান্ধব নয়, সেখানে নারীদের জন্য নতুন ঘূর্ণমান নির্বাচনপদ্ধতি কতটা কার্যকর হবে?

নারীদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য নীতিগত পরিবর্তন একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও রাজনৈতিক বাস্তবতা নারীদের পথকে এখনো কঠিন করে রেখেছে।

নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে তুলনামূলকভাবে সীমিত। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো নারীরা সরাসরি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেবার মাত্র দুটি আসনে তাঁরা জয়ী হতে পেরেছিলেন।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ১৫টি আসনে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২১টি আসন ছাড়া অন্য কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনে নারীরা ‘ডাবল ডিজিট’সংখ্যক আসনে জয়ী হতে পারেননি।

এটি নির্দেশ করে যে নারীদের রাজনৈতিক সফলতা এখনো সীমিত এবং তা কেবল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তন দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়।

২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬৭ জন নারী প্রার্থী ৬৮টি নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে মাত্র ২৩ জন বিজয়ী হন। এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে সংখ্যাটি এখনো অনেক সীমিত।

বর্তমান নির্বাচন সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার আলোকে নারীদের জন্য ১০০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে অন্তত ২০০ নারী প্রার্থীর প্রয়োজন হবে। যেহেতু এতসংখ্যক নারী প্রার্থী দেশের ইতিহাসে কখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি, তাই এটি আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং সামাজিক কাঠামোর প্রেক্ষাপটে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

আশঙ্কার বিষয় হলো, রাজনৈতিক দলগুলো এখনো নারীদের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন নয়। ২০০৮ সালের আগে বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নারী নেতৃত্বের হার ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের কম। পরবর্তী সময় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও-২০০৮) সংশোধনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

এই লক্ষ্যমাত্রা ২০২০ সালের মধ্যে অর্জনের কথা থাকলেও কোনো দলই আজ পর্যন্ত তা পূরণ করতে পারেনি। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সহযোগিতা ছাড়া নারীদের জন্য রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বে আসা অত্যন্ত কঠিন।

অপর দিকে নারীদের জন্য নির্বাচনী ব্যয় একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, একজন প্রার্থী ভোটারপ্রতি ১০ টাকা খরচ করতে পারবেন। বাংলাদেশে প্রতি আসনে গড়ে প্রায় ৪ লাখ ১২ হাজার ভোটার রয়েছেন। এই হিসাবে, একজন প্রার্থীর জন্য প্রায় ৪১ লাখ টাকা ব্যয় প্রয়োজন। এত বড় অঙ্কের খরচ বহন করা অধিকাংশ নারী প্রার্থীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।

সরাসরি নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ভোটারদের মানসিক প্রস্তুতিও বিবেচনা করা জরুরি। যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো পুরোপুরি নারীবান্ধব নয়, সেহেতু ভোটারদের একটি বড় অংশ এখনো নারী নেতৃত্বকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।

ফলে রাতারাতি কোনো পরিবর্তনের প্রত্যাশা না করে ধীরে ধীরে ও কার্যকর পদ্ধতিতে নারীদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাঁদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা হতে পারে সরকার, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা।

বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ, বিশেষত স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো ‘ক্রিটিক্যাল মাস থিওরি’ অনুসরণ করে সংসদে নারীদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। তারা ধাপে ধাপে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়িয়ে ক্রমে একটি টেকসই ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা তাদের রাজনৈতিক কাঠামোকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর করেছে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক দলগুলো যদি তাদের মোট প্রার্থীর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়, তবে এটি নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে এ ক্ষেত্রে দলগুলোর কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের এমন আসনগুলোয় মনোনয়ন দেওয়া উচিত, যেখানে দলের অবস্থান শক্তিশালী ও বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি।

অন্যদিকে যদি দলগুলো কেবল এমন আসনগুলোতে নারীদের মনোনয়ন দেয় যেখানে জয়ের সম্ভাবনা কম, তবে এটি নারীদের রাজনৈতিক অবহেলার শিকারে পরিণত করবে এবং তাঁরা রাজনীতিতে সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হতে পারেন। তাই নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তাঁদের প্রতি সমান গুরুত্ব ও মর্যাদা প্রদর্শন করা এবং জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এমন আসনে তাঁদের মনোনয়ন নিশ্চিত করা।

এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারী নেতৃত্ব বিকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এসব নারী নেতৃত্ব এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাঁরা সংসদে নারীদের প্রকৃত সমস্যা, বিশেষ করে গ্রামীণ নারীসমাজের চাহিদা ও সংকট যথাযথভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হবেন। শুধু শহরকেন্দ্রিক নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিলে তাঁদের পক্ষে গ্রামীণ নারীদের বাস্তব সমস্যাগুলো গভীরভাবে অনুধাবন ও তা যথাযথভাবে উপস্থাপন করা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থেকে যায়।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, নারীদের সংসদে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য শুধু সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা নয়, বরং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কার্যকর আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা। রাজনৈতিক দলগুলো যদি তাদের ৩০০ আসনের অন্তত ১০ ভাগ আসনে নারীদের মনোনয়ন দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন যেন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে, এমন বিধান প্রণয়ন করা জরুরি।

এর পাশাপাশি আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও মৌলিক পরিবর্তন আনা অত্যন্ত প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের রাজনীতি এখনো পুরুষতান্ত্রিক, যেখানে সাধারণ ধারণা হলো, রাজনীতি শুধু পুরুষদের কাজ। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, আন্দোলন কিংবা অভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণ ছাড়া সফলতা সম্ভব নয়। এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান, যেখানে নারীদের অবদান পুরুষদের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।

ফলে নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে রাজনীতিকে স্বচ্ছ, পরিষ্কার ও জনসেবার উপযুক্ত একটি ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের দেশের দীর্ঘদিন ধরে চর্চিত নোংরা ও আক্রমণাত্মক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে একটি সমতাভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্যরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন না। তাঁদের মতামত প্রায়ই গুরুত্ব পায় না বা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয় না। অনেক সময় তাঁরা পুরুষ সদস্যদের প্রভাবের অধীনে থেকে যান এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উপেক্ষিত থাকেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ নারী সদস্য তাঁদের কাজের পরিধি সম্পর্কে খুব স্বল্প ধারণা রাখেন এবং ইউনিয়ন পরিষদের ম্যানুয়েল সম্পর্কেও তাঁদের জ্ঞান সীমিত। যদি একই পরিস্থিতি নারী সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রেও ঘটে, তবে শুধু তাঁদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বা নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না।

নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন কেবল তাঁদের নির্বাচিত হওয়া বা সংরক্ষিত আসনে উপস্থিত থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, বরং এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে তাঁরা নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারেন এবং তাঁদের নেতৃত্বের সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারেন।

এ লক্ষ্যে নারীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, নেতৃত্ব উন্নয়ন উদ্যোগ ও রাজনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি। একই সঙ্গে, সাধারণ মানুষের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্ব এবং সমাজের উন্নয়নে নারীর ভূমিকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য শিক্ষামূলক প্রচারণা ও কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে।

যেসব দেশ নারীদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পেরেছে, সেসব দেশে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি হ্রাস, গণতন্ত্রের অগ্রগতি এবং সার্বিক সুখ-সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। ফলে আমাদের দেশেও এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শুধু নারীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানো নয়; বরং তাঁদের প্রতি বিদ্যমান সামাজিক বৈষম্য দূর করা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এটি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা যায়।

সৈয়দা লাসনা কবীর অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র জন ত ক স স ক ত ন র দ র র জন ত ক ন র র ক ষমত য ন দ র র জন ত ক স য ন ন শ চ ত কর ক র যকর ভ ম ক ন র দ র জন য ন শ চ ত করত আম দ র দ শ ও ক র যকর র জন ত ত ব যবস থ গ রহণ র ত কর র সমস য আসন র

এছাড়াও পড়ুন:

সংসদে আসনসংখ্যা বাড়ালেই কি নারীর ক্ষমতায়ন হবে

আমাদের দেশের নারীরা আর্থসামাজিক ও শিক্ষাগত ক্ষেত্রে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মেয়েদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া ও বাল্যবিবাহের মতো সমস্যাগুলো নারীদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই ধরনের সমস্যাগুলোর সমাধানে এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালে নারীদের জন্য সংসদে সংরক্ষিত আসনের প্রথা চালু করা হয়।

প্রথমে সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ছিল ১৫, যা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে ৫০টিতে উন্নীত করা হয়। তবে এই উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়ন বা তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে কতটা কার্যকর হয়েছে, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে।

সংরক্ষিত আসন চালুর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, নারী সংসদ সদস্যরা নারীদের ক্ষমতায়ন ও নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। বাস্তবে দেখা যায়, অন্যান্য সংসদ সদস্যের মতো তাঁরাও মূলত দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে বেশি মনোযোগী হয়ে যান। এর ফলে নারীবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তাঁদের ভূমিকা সীমিত থেকে যায়।

নির্বাচন সংস্কার কমিশন সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনসংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে। আগের মতো দলীয় মনোনয়নের পরিবর্তে এবার নারীদের ‘ঘূর্ণায়মান’পদ্ধতিতে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে আসতে হবে।

আগে ধারণা করা হতো, অনির্বাচিত হওয়ায় নারী সংসদ সদস্যরা তাঁদের ভূমিকা পালনে সীমাবদ্ধ ছিলেন। তবে নতুন এই ব্যবস্থা তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে শক্তিশালী করবে এবং সংসদে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করবে বলে মনে করছে সংস্কার কমিশন।

তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকেই যায়, তা হলো: যেখানে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো পুরোপুরি নারীবান্ধব নয়, সেখানে নারীদের জন্য নতুন ঘূর্ণমান নির্বাচনপদ্ধতি কতটা কার্যকর হবে?

নারীদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য নীতিগত পরিবর্তন একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও রাজনৈতিক বাস্তবতা নারীদের পথকে এখনো কঠিন করে রেখেছে।

নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে তুলনামূলকভাবে সীমিত। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো নারীরা সরাসরি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেবার মাত্র দুটি আসনে তাঁরা জয়ী হতে পেরেছিলেন।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ১৫টি আসনে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২১টি আসন ছাড়া অন্য কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনে নারীরা ‘ডাবল ডিজিট’সংখ্যক আসনে জয়ী হতে পারেননি।

এটি নির্দেশ করে যে নারীদের রাজনৈতিক সফলতা এখনো সীমিত এবং তা কেবল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তন দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়।

২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬৭ জন নারী প্রার্থী ৬৮টি নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে মাত্র ২৩ জন বিজয়ী হন। এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে সংখ্যাটি এখনো অনেক সীমিত।

বর্তমান নির্বাচন সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার আলোকে নারীদের জন্য ১০০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে অন্তত ২০০ নারী প্রার্থীর প্রয়োজন হবে। যেহেতু এতসংখ্যক নারী প্রার্থী দেশের ইতিহাসে কখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি, তাই এটি আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং সামাজিক কাঠামোর প্রেক্ষাপটে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

আশঙ্কার বিষয় হলো, রাজনৈতিক দলগুলো এখনো নারীদের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন নয়। ২০০৮ সালের আগে বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নারী নেতৃত্বের হার ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের কম। পরবর্তী সময় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও-২০০৮) সংশোধনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

এই লক্ষ্যমাত্রা ২০২০ সালের মধ্যে অর্জনের কথা থাকলেও কোনো দলই আজ পর্যন্ত তা পূরণ করতে পারেনি। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সহযোগিতা ছাড়া নারীদের জন্য রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বে আসা অত্যন্ত কঠিন।

অপর দিকে নারীদের জন্য নির্বাচনী ব্যয় একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, একজন প্রার্থী ভোটারপ্রতি ১০ টাকা খরচ করতে পারবেন। বাংলাদেশে প্রতি আসনে গড়ে প্রায় ৪ লাখ ১২ হাজার ভোটার রয়েছেন। এই হিসাবে, একজন প্রার্থীর জন্য প্রায় ৪১ লাখ টাকা ব্যয় প্রয়োজন। এত বড় অঙ্কের খরচ বহন করা অধিকাংশ নারী প্রার্থীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।

সরাসরি নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ভোটারদের মানসিক প্রস্তুতিও বিবেচনা করা জরুরি। যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো পুরোপুরি নারীবান্ধব নয়, সেহেতু ভোটারদের একটি বড় অংশ এখনো নারী নেতৃত্বকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।

ফলে রাতারাতি কোনো পরিবর্তনের প্রত্যাশা না করে ধীরে ধীরে ও কার্যকর পদ্ধতিতে নারীদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাঁদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা হতে পারে সরকার, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা।

বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ, বিশেষত স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো ‘ক্রিটিক্যাল মাস থিওরি’ অনুসরণ করে সংসদে নারীদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। তারা ধাপে ধাপে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়িয়ে ক্রমে একটি টেকসই ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা তাদের রাজনৈতিক কাঠামোকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর করেছে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক দলগুলো যদি তাদের মোট প্রার্থীর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়, তবে এটি নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে এ ক্ষেত্রে দলগুলোর কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের এমন আসনগুলোয় মনোনয়ন দেওয়া উচিত, যেখানে দলের অবস্থান শক্তিশালী ও বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি।

অন্যদিকে যদি দলগুলো কেবল এমন আসনগুলোতে নারীদের মনোনয়ন দেয় যেখানে জয়ের সম্ভাবনা কম, তবে এটি নারীদের রাজনৈতিক অবহেলার শিকারে পরিণত করবে এবং তাঁরা রাজনীতিতে সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হতে পারেন। তাই নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তাঁদের প্রতি সমান গুরুত্ব ও মর্যাদা প্রদর্শন করা এবং জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এমন আসনে তাঁদের মনোনয়ন নিশ্চিত করা।

এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারী নেতৃত্ব বিকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এসব নারী নেতৃত্ব এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাঁরা সংসদে নারীদের প্রকৃত সমস্যা, বিশেষ করে গ্রামীণ নারীসমাজের চাহিদা ও সংকট যথাযথভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হবেন। শুধু শহরকেন্দ্রিক নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিলে তাঁদের পক্ষে গ্রামীণ নারীদের বাস্তব সমস্যাগুলো গভীরভাবে অনুধাবন ও তা যথাযথভাবে উপস্থাপন করা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থেকে যায়।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, নারীদের সংসদে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য শুধু সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা নয়, বরং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কার্যকর আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা। রাজনৈতিক দলগুলো যদি তাদের ৩০০ আসনের অন্তত ১০ ভাগ আসনে নারীদের মনোনয়ন দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন যেন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে, এমন বিধান প্রণয়ন করা জরুরি।

এর পাশাপাশি আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও মৌলিক পরিবর্তন আনা অত্যন্ত প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের রাজনীতি এখনো পুরুষতান্ত্রিক, যেখানে সাধারণ ধারণা হলো, রাজনীতি শুধু পুরুষদের কাজ। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, আন্দোলন কিংবা অভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণ ছাড়া সফলতা সম্ভব নয়। এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান, যেখানে নারীদের অবদান পুরুষদের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।

ফলে নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে রাজনীতিকে স্বচ্ছ, পরিষ্কার ও জনসেবার উপযুক্ত একটি ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের দেশের দীর্ঘদিন ধরে চর্চিত নোংরা ও আক্রমণাত্মক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে একটি সমতাভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্যরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন না। তাঁদের মতামত প্রায়ই গুরুত্ব পায় না বা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয় না। অনেক সময় তাঁরা পুরুষ সদস্যদের প্রভাবের অধীনে থেকে যান এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উপেক্ষিত থাকেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ নারী সদস্য তাঁদের কাজের পরিধি সম্পর্কে খুব স্বল্প ধারণা রাখেন এবং ইউনিয়ন পরিষদের ম্যানুয়েল সম্পর্কেও তাঁদের জ্ঞান সীমিত। যদি একই পরিস্থিতি নারী সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রেও ঘটে, তবে শুধু তাঁদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বা নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না।

নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন কেবল তাঁদের নির্বাচিত হওয়া বা সংরক্ষিত আসনে উপস্থিত থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, বরং এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে তাঁরা নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারেন এবং তাঁদের নেতৃত্বের সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারেন।

এ লক্ষ্যে নারীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, নেতৃত্ব উন্নয়ন উদ্যোগ ও রাজনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি। একই সঙ্গে, সাধারণ মানুষের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্ব এবং সমাজের উন্নয়নে নারীর ভূমিকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য শিক্ষামূলক প্রচারণা ও কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে।

যেসব দেশ নারীদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পেরেছে, সেসব দেশে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি হ্রাস, গণতন্ত্রের অগ্রগতি এবং সার্বিক সুখ-সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। ফলে আমাদের দেশেও এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শুধু নারীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানো নয়; বরং তাঁদের প্রতি বিদ্যমান সামাজিক বৈষম্য দূর করা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এটি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা যায়।

সৈয়দা লাসনা কবীর অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ