লেফটব্যাক এবং মার্সেলো ভিয়েরা, এই যেন সমার্থক ফুটবল বিশ্বে। ইতিহাসের অন্যতম সফল এই লেফটব্যাক তার ক্যারিয়ারের সেরাটা ফেলে এসেছিলেন আগেই। এবার তিনি ইতি টানলেন তার খেলোয়াড়ি জীবনের। সব ধরনের ফুটবলকে বিদায় বলে দিলেন ব্রাজিল ও রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি এই ডিফেন্ডার। বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে অবসর ঘোষণা করেছেন ৩৬ বছর বয়সী এই তারকা ফুটবলার। মার্সেলোর বিদায়ে আবেগী এক বার্তা দিয়েছেন তার বন্ধু এবং এক সময়ের সতীর্থ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

মার্সেলো খ্যাতি অর্জন করেন মূলত রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার পর। এই ব্রাজিলিয়ান ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে মাত্র ১৮ বছর বয়সে ফ্লুমিনেন্স থেকে রিয়ালে যোগ দেন। মাদ্রিদে সাড়ে ১৫ বছর কাটিয়ে ক্লাবটির ইতিহাসে সর্বাধিক ট্রফি জেতা খেলোয়াড় হিসেবে বিদায় নেন তিনি। মার্সেলো লস ব্ল্যাঙ্কসদের হয়ে ৫৪৬টি ম্যাচ খেলে করেন ৩৮টি গোল; করিয়েছেন ১০৩টি। অন্যদিকে রিয়ালের হয়ে ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ৬টি লা লিগা শিরোপা জিতেছেন তিনি। মার্সেলো ক্যারিয়ারে সর্বমোট ৭২১ ম্যাচে করেছেন ৫৮টি গোল এবং অ্যাসিস্ট পেয়েছেন ১১৭টি।

আরো পড়ুন:

শেষ মুহূর্তের গোলে সেমিফাইনালে রিয়াল

ম্যানসিটির সামনে রিয়াল: চ্যাম্পিয়নস লিগ প্লে-অফ

 

বিদায়ী ভিডিওতে মার্সেলো বলেন, “একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমার গল্প এখানেই শেষ। কিন্তু ফুটবলকে দেওয়ার মতো আমার অনেক কিছু এখনও বাকি।”

রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার পর ২০২৩ সালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের হয়ে কোপা লিবার্তাদোরেস জয় অর্জন ছিল ম্যার্সেলোর ক্যারিয়ারের একটি বড় সাফল্য। তবে, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে গ্রেমিওর বিপক্ষে একটি ম্যাচ চলাকালীন কোচ মানো মেনেজেসের সঙ্গে বিতর্কের পর ফ্লুমিনেন্সের সাথে তিনি চুক্তি বাতিল করেন।

মার্সেলো যোগ দেওয়ার ২ বছর পর রিয়ালে যান রোনালদো। এরপর এই দুইনের সম্পর্কটা সতীর্থ থেকে ধীরে ধীরে বন্ধুত্বে গড়ায় আর সেখানে থেকে ভ্রাতৃত্বে। ম্যাচে বাঁ প্রান্ত থেকে রোনালদোকে বেশিরভাগ বলের যোগান দিতেন মার্সেলো। গোলের পর ব্রাজিলের সাবেক এই লেফটব্যাকের সঙ্গে ‘সিআর৭’এর আইকনিক উদযাপনটি স্থান করে নিয়েছিল সমর্থকদের হৃদয়ে। বন্ধু অবসর তাই আবেগী করেছে পর্তুগিজ মহাতারকাকে।

মার্সেলো ফুটবল থেকে অবসর ঘোষণার পর রোনালদো তার এক্স হ্যান্ডল থেকে লিখেন, “আমার ভাই, কী অবিশ্বাস্য ক্যারিয়ার! আমরা একসঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি, বছরের পর বছর অর্জন করেছি, জিতেছি এবং অবিস্মরণীয় সব মুহূর্ত আছে। তুমি সতীর্থের চেয়েও বেশি কিছু, আমার জীবনের সঙ্গী। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ বন্ধু। জীবনের নতুন মঞ্চে তোমার সব রকম ভালো কামনা করছি।”

মার্সেলো ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে ৫৮টি ম্যাচ খেলেছেন মার্সেলো। গোল করেছেন ৬টি। জাতীয় দলের হয়ে ২০১৩ সালে ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ এই তারকা। 

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণে দীর্ঘসূত্রতা!

কলেজ ও মাধ্যমিক স্কুল মিলে ২০১৬ সাল থেকে উপজেলা স্তরের অন্তত সাড়ে ৬০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ প্রক্রিয়ায় আনা হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান ‘কাঠখড় পুড়িয়ে’ দীর্ঘদিনে শিক্ষক-কর্মচারীদের পদায়নসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হলেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নানা কারণ ও অজুহাতে এখনও অনেক পিছে পড়ে রয়েছে।   

মন্ত্রণালয়-দপ্তর-বিভাগ; এ টেবিল-ও টেবিল; বড় কর্তা-মাঝারি কর্তা-ছোট কর্তা– সবার মন রক্ষা করা কঠিন হলেও তা করার জন্য সাধ্যানুসারে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রক্রিয়াটি ৮-৯ বছরেও সম্পন্ন করা গেল না! তাহলে কী লাভ হলো এমন সরকারীকরণে? এ দীর্ঘ সময়ে সরকারীকরণের কোনো সুবিধা না পেয়েই অনেকে অবসরে চলে গেছেন। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। 

অনেক প্রতিষ্ঠানে এক বা দেড়-দুই বছর আগে অর্ধেক সংখ্যক (প্রতিষ্ঠানভেদে কম-বেশি হতে পারে) শিক্ষক-কর্মচারীর পদায়ন হয়েছে, বাকিগুলো ঝুলন্ত। 
না সরকারি-না বেসরকারি অবস্থায় তাদের রীতিমতো গলদ্ঘর্ম হতে হচ্ছে।
পদায়নকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্টদের মাঝে ভিন্ন রকমের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। জীবনপ্রদীপ নিভে যাওয়া কিংবা অবসরে গিয়েও শিক্ষক-কর্মচারীরা ‘ম্যানেজ সংস্কৃতি’ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এ যেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সঙ্গে বসবাস! তা ছাড়া এটি যে কতটা মানসিক পীড়ার কারণ, তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কারও পক্ষে অনুমান করা কঠিন। 
সেই ২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে কতবার যে মূল সনদপত্র এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও নথিপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এর কোনো হিসাব নেই। শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত; আমার মতো অনেকে অবসরে গেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কারও রেহাই নেই। ফটোকপি আর ফটোকপি। চরম অস্বস্তিকর এক ব্যাপার।
একটি দপ্তরে (তা না হলে দুই জায়গায়) মূল সনদ ও নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হলে বাকিগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী কিংবা প্রতিষ্ঠানকে না ডেকে ‘আন্তঃদাপ্তরিক যোগাযোগ’-এর মাধ্যমে তা সম্পন্ন করা উচিত ছিল।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে বলতে গেলে ভেঙে পড়ার উপক্রম, এর একটি বড় কারণ অপরিকল্পিতভাবে এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের সরকারীকরণ।
সরকারি হওয়া তিন-সাড়ে তিনশ কলেজের মধ্যে কমপক্ষে দুইশ কলেজে নিয়মিত অধ্যক্ষ নেই। কোনোটি তিন বছর, কোনোটি আবার পাঁচ-সাত বছর, এমনকি আট-দশ বছর ধরে অধ্যক্ষশূন্য। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ভারে কলেজগুলো বলতে গেলে ন্যুব্জ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে কলেজগুলোয় চলা ভিন্ন রকমের খেলা এখনও শেষ হয়নি। অবসরে গেছেন কিংবা মৃত্যু হয়েছে, এমন শিক্ষকের স্থলে গত সাত-আট বছরে বিষয়ভিত্তিক কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
দীর্ঘদিন অধ্যক্ষহীন সরকারি হওয়া কোনো কোনো কলেজে শিক্ষা ক্যাডার থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিলেও মাত্র দুই-চার মাস কিংবা বড়জোর এক বছরের মধ্যেই তিনি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন– এমন উদাহরণ এক-দুটি নয়, অনেক। এক কথায়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা লাটে উঠতে বড় বেশি বাকি বলে মনে হয় না। 
সবচেয়ে ভয়াবহ ও দুর্ভাবনার বিষয় হলো, সংশ্লিষ্টদের উপেক্ষা ও অবহেলা। এভাবেই পার হয়েছে অন্তত আটটি বছর। এ নিয়ে ভালো কোনো আলোচনা নেই। দেশে এখন রাজনীতি, নির্বাচন আর গদি ছাড়া যেন আর কোনো বিষয়ই নেই আলোচনার।
মেঘে মেঘে বেলা অনেক হয়ে গেছে। শুধু হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী নন, তাদের পরিবার ও নিকটজনও এ নিয়ে স্বস্তিতে নেই। দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও বিড়ম্বনার নিরসন না হলে এমন সরকারীকরণের সার্থকতা কোথায়?   

বিমল সরকার: কলাম লেখক, অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণে দীর্ঘসূত্রতা!
  • কনকাশন সমস্যায় মাত্র ২৭ বছর বয়সে অবসরে পুকোভস্কি
  • বারবার মাথায় আঘাত, ২৭ বছরেই ক্রিকেট ছাড়লেন সেই পুকোভস্কি
  • কনকাশনের কাছে হার মেনে ২৭ বছরেই ক্রিকেট ছাড়লেন সেই পুকোভস্কি