বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের কারণে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। এই ব্যাপক মৃত্যুর দায়ভার তামাক কোম্পানি কখনই স্বীকার করেনা। তামাকজনিত মৃত্যু আড়াল করতে এবং ব্যবসা বাড়াতে নানাধরনের কূট-কৌশল অবলম্বন করে তারা। তামাক কোম্পানির প্রকৃত উদ্দেশ্য উন্মোচন করতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

রাজধানীর বিএমএ ভবনে ৪ ফেব্রুয়ারি এবং ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘তামাক কোম্পানির কূট-কৌশল: গণমাধ্যমের করণীয়’ শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন আলোচকরা।

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ২টি কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত মোট ৫১জন সাংবাদিক অংশ নেন।

কর্মশালায় জানানো হয়, সম্প্রতি আইন সংশোধনকে বাধাগ্রস্ত করতে তামাক কোম্পানিগুলো অর্থ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরারর চিঠি দিয়েছে। আইন সংশোধন হলে সরকারের রাজস্ব হারানোসহ বেশকিছু ভিত্তিহীন তথ্য তুলে ধরেছে কোম্পানি দুটি। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হওয়ার পর পরবর্তী দুই অর্থবছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে যথাক্রমে ১৭.

৯৭ শতাংশ এবং ৩৭.৫২ শতাংশ। একইভাবে, ২০১৩ সালে সংশোধনীর পর পরবর্তী দুই অর্থবছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে যথাক্রমে ২৫.৫১ শতাংশ এবং ৪৬.৫২ শতাংশ।

কর্মশালায় জানানো হয়, আইন সংশোধনের সাথে খুচরা বিক্রেতাদের কর্মসংস্থান হারানোর তেমন কোন সম্পর্ক নাই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় জরিপ প্রতিবেদন ২০২১ অনুযায়ী, দেশে সবধরনের খুচরা ব্যবসায়ে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৫ লক্ষ ৩৯ হাজার। তবে খাদ্য, পানীয় এবং তামাকপণ্য বিক্রি করে এরকম খুচরা দোকানের সংখ্যা মাত্র ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪১, যারা অন্যান্য পণ্যের সাথেই তামাকপণ্য বিক্রি করে থাকে।

কর্মশালায় আরো জানানো হয়, ডব্লিওএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য ২০২১ সালে আইন শক্তিশালীকরণের উদ্যেগ গ্রহণ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আইন প্রণয়নে তামাক কোম্পানি ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো গোষ্ঠির পরামর্শ বা মতামত গ্রহণ এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ এর সুস্পষ্ট লংঘন। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ১ম দেশ হিসেবে ২০০৩ সালে এফসিটিসি-তে স্বাক্ষর করে।

কর্মশালায় জানানো হয়, প্রতি বছর জাতীয় বাজেটকে প্রভাবিত করতে সিগারেট কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনকে ব্যবহার করে থাকে। মালিকদের অর্থায়নে বিড়ি শ্রমিকরা মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে বিড়ির মূল্য না বাড়ানোর আন্দোলন করে। এছাড়া সুবিধাভোগীদের দিয়ে কলাম ও নিবন্ধ প্রকাশ, ডিও লেটার প্রদান ইত্যাদি কূট-কৌশল অবলম্বন করে কোম্পানিগুলো।

বাংলাদেশে ১৫ বছর তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩৫.৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একই সময়ে তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা) চেয়ে অনেক বেশি।

কর্মশালাগুলোতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিআইসি-এর সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা ট্রিবিউন এর নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি দৌলত আকতার মালা, আত্মা’র কনভেনর লিটন হায়দার, কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী, এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের, মো. হাসান শাহরিয়ার প্রমুখ।

ঢাকা/হাসান/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৩.৯% থাকবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়বে, যা দক্ষিণ এশিয়ার গড় আনুমানিক প্রবৃদ্ধির তুলনায় কম। এর আগে এডিবির পূর্বাভাস ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ কমে যাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শ্রম অসন্তোষ ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রভাব রাখতে পারে।

গতকাল বুধবার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন ঢাকায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিংগ। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির বাংলাদেশ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থার কান্ট্রি ইকোনমিস্ট চন্দন সাপকতা।
প্রতিবেদনে এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতির চলতি প্রবণতা এবং আগামীর ঝুঁকি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর আলাদা উপস্থাপনা ছিল। এতে বলা হয়, সরকারের প্রাক্কলন হলো, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। এদিকে আগামী অর্থবছরে (২০২৫-২৬) জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৫ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে এডিবি।

প্রসঙ্গত, এশিয়ার প্রবৃদ্ধি নিয়ে এডিবির পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক শুল্ক বৃদ্ধিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি এশিয়ার ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তার ওপর আলাদা পর্যালোচনা রয়েছে প্রতিবেদনে। সংবাদ সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণার আগে। যদিও গতকাল রাতে পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আগামী দুই অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপি কত হতে পারে সে ব্যাপারে হো ইউন জিংগ বলেন, এখনই তা বলা ‘অতি আগাম’ হয়ে যাবে। এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, আগামী প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন তারা। শুল্কহার শেষ পর্যন্ত কেমন থাকে এবং কীভাবে তা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে– এমন বিষয়ের প্রতি নজর রাখছেন তারা।

এডিবির প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার ২০২৫ সালে গড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। সংস্থাটির মতে, ভারতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে মালদ্বীপে ৬ শতাংশ, ভুটানে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়।

মূল্যস্ফীতি কেমন থাকবে

এডিবি বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছতে পারে। যদিও সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমান বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এডিবি বলেছে, নিয়ন্ত্রণ কাঠামোয় ঘাটতি, পাইকারি বাজারে প্রতিযোগিতা কম থাকা, বাজারের বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ার কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। অর্থবছরের বাকি কয়েক মাসে হয়তো কিছুটা কমতে পারে, তবে মূল্যস্ফীতির গড় হার দুই অঙ্কে থাকবে। অবশ্য আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কমে ৮ শতাংশে নামতে পারে। 

ঝুঁকি কোথায় 

বাংলাদেশ নিয়ে এডিবির প্রাক্কলনের সঙ্গে কিছু নিম্নমুখী ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে। এসব ঝুঁকি যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক উচ্চ ব্যয় এবং সরকারের ভর্তুকি মূল্যস্ফীতি এবং বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে দিতে পারে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি, দীর্ঘ সময়ের জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি এবং টাকার মান পতন হলে তা অর্থনীতিকে আঘাত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক এবং অন্যান্য রপ্তানি গন্তব্যে অর্থনৈতিক ধীরগতি অর্থনীতির জন্য অন্যতম ঝুঁকি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, পরীক্ষা ১২ এপ্রিল
  • সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি পেল ১৩৩ প্রতিষ্ঠান, মানতে হবে ৯ শর্ত
  • প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৩.৯% থাকবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি
  • তিন মাস পর কিছুটা বাড়ল মূল্যস্ফীতি
  • সাঁওতালদের বাহা পরব উদযাপন
  • এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়ালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
  • এসএসসি পরীক্ষা–২০২৫, প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়ালে আইনি ব্যবস্থা
  • অর্থনীতিতে গতি বেড়েছে, অক্টোবর–ডিসেম্বর প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ
  • রপ্তানি বেড়েছে ১১ শতাংশ
  • যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের