যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় ১০ যাত্রী নিয়ে ছোট একটি সেসনা উড়োজাহাজ নিখোঁজ হয়েছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে উড়োজাহাজটি নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। খবর সিএনএনের

আলাস্কার রাজ্য পুলিশ স্টেট ট্রুপার্স জানিয়েছে, বেরিং এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি উনালাক্লিট থেকে নোমের দিকে যাচ্ছিল। পশ্চিম আলাস্কার শহর দুটিকে পৃথক করেছে নর্টন সাউন্ড উপসাগর।

বার্তা সংস্থা সিএনএন জানিয়েছে, ৯ যাত্রী ও এক পাইলট নিয়ে উড়োজাহাজ নিখোঁজের তথ্য এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

নোম ভলান্টিয়ার ফায়ার ডিপার্টমেন্ট ফেসবুকে জানিয়েছে, তারা নোম ও হোয়াইট মাউন্টেন থেকে স্থল তল্লাশি চালাচ্ছে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও কম দৃশ্যমানতার কারণে আকাশপথে তল্লাশি চলছে সীমিত আকারে। 

মার্কিন কোস্টগার্ড ও মার্কিন বিমান বাহিনী সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছে এবং নিখোঁজ উড়োজাহাজটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে দমকল বিভাগ। তারা বলছে, ‘উড়োজাহাজটির সঠিক অবস্থান এখনও জানা যায়নি। সেটি শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’

বেরিং এয়ারের পরিচালক (অপারেশন্স) ডেভিড ওলসন বলেন, ‘বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ, জরুরি সহায়তা, তল্লাশি ও উদ্ধার কাজে বেরিং এয়ারের কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করছেন।’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নোম বিমানবন্দরের চারপাশে হালকা তুষারপাত এবং গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। এক পর্যায়ে দৃশ্যমানতা মাত্র আধা মাইলে নেমে আসে; সেই সঙ্গে রাতে ঘণ্টায় ৩৫ মাইল বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস ছিল।

ফ্লাইট ট্র্যাকার অ্যাপ ফ্লাইটরাডার টোয়েন্টিফোরের তথ্য অনুযায়ী, সেসনা ২০৮-বি গ্র্যান্ড ক্যারাভান উড়োজাহাজটিকে সবশেষ বিকেল ৩টা ১৬ মিনিটে (স্থানীয় সময়) নর্টন সাউন্ডের ওপর দেখা গিয়েছিল।

কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, উড়োজাহাজটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২ মাইল দূরে থাকার সময় নিখোঁজ হয়।

নর্টন সাউন্ড হেলথ করপোরেশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দিতে প্রস্তুত রয়েছে। যাত্রীদের স্বজনদের জন্য ‘ফ্যামেলি সেন্টার’ খুলেছে নর্টন সাউন্ড আঞ্চলিক হাসপাতাল, যাতে সেখান থেকে তারা নিখোঁজদের খোঁজ-খবর নিতে পারে।

ফ্লাইট ট্র্যাকারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোস্ট গার্ডের এইচসি-১৩০ উড়োজাহাজকে যেখানে উড়তে দেখা গেছে, তার কাছেই নিখোঁজ উড়োহাজটির সবশেষ অবস্থান ছিল। 

সাম্প্রতিক দুটি দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করছেন যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে একটি দুর্ঘটনা ঘটে ওয়াশিংটন ডিসির কাছে; মাঝ আকাশে একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার ও একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের সংঘর্ষে ৬৭ জন মারা যান। অপর দুর্ঘটনাটি ঘটে ফিলাডেলফিয়ায়, একটি মেডেভ্যাক জেট বিধ্বস্ত হয়ে সেই যাত্রায় সাতজন প্রাণ হারান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আল স ক

এছাড়াও পড়ুন:

বিপ্লবের স্মৃতিজড়িত ‘পাইকতু পর্বত’ এখন গ্লোবাল জিওপার্ক

উত্তর কোরিয়ার পাইকতু পর্বতকে গ্লোবাল জিওপার্ক হিসেবে মনোনীত করেছে ইউনেস্কো। পর্বতটিকে পবিত্র পর্বত বলা হয়। এই পর্বতের সামরিক চেকপয়েন্ট ও এবড়োখেবড়ো ময়লা রাস্তা পেরিয়ে উঁচুতে উঠে গেলে চোখে পড়ে আগ্নেয়গিরি থেকে সৃষ্ট একটি গভীর হ্রদ। 

পর্বতটির অবস্থান উত্তর কোরিয়া ও চীনের সীমান্তে। এই পর্বতেই কোরিয়ান উপদ্বীপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, প্রথমবারের মতো পাইকতু পর্বত গ্লোবাল জিওপার্কের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ড গত ফেব্রুয়ারিতে পর্বতটির প্রকৃতিকে চিত্তাকর্ষক ও এলাকাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যভুক্ত হিসেবে মনোনীত করে। তাদের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আগ্নেয়গিরি, হিমবাহের ক্ষয় এবং পাথুরে সমভূমি পাইকতুকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করেছে।   

জিওপার্কের তাৎপর্য বুঝতে হলে আপনাকে পাইকতুর ‘চোন’ হ্রদের ধারে দাঁড়াতে হবে। লেকটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭ হাজার ২০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। হাজার বছরের বেশি আগে এক বিশাল অগ্ন্যুৎপাতের ফলে লেকটি জন্মলাভ করে। লেকের ধারে দাঁড়ালে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে বাতাসের শির শির আমেজ। 

পর্বতটিকে বলা হয়, ‘কোরিয়ান বিপ্লবের আত্মা’। পর্বতটির মেঘে ঢাকা ঢাল নিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে নানা গল্প। যদি আপনি কখনও নিজে পর্বতের চূড়ায় স্থির হন, হ্রদের দিকে তাকিয়ে থাকেন এবং হিম বাতাসে শ্বাস নেন, তাহলে বুঝতে পারবেন কেন পর্বতটি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার ‘আত্মা’ ধারণ করে।

কাহিনি প্রচলিত আছে, পর্বতটি ছিল প্রথম কোরিয়ান রাজ্যের পৌরাণিক প্রতিষ্ঠাতা ডাঙ্গুনের জন্মস্থান। উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুং (কিম জং উনের দাদা) ১৯৪০-এর দশকে স্বাধীনতার জন্য জাপানি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় পাহাড়টিকে আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। সুংকে ‘পাইকতুর কিংবদন্তি নায়ক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিম রাজবংশ তাদের পারিবারিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের জন্য এই পর্বতটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। এই পর্বতের নামে রকেট, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দেশটির নানা প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয়েছে। 

ইউনেস্কোর মতে, বর্তমানে ৪৯টি দেশে ২০০টিরও বেশি জিওপার্ক রয়েছে। জিওপার্কের স্থানগুলোর কিছু অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকে। জিওপার্কের জন্য বিশেষ ভৌগোলিক অঞ্চলের স্বীকৃতি বা আঞ্চলিক ভূতাত্ত্বিক তাৎপর্যপূর্ণ স্থানকে অগ্রাধিকারভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতির কারণে পাইকতু পর্বতকে একটি ভূপর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে পিয়ংইয়ং।   

পাইকতুর আশপাশের জীবনযাত্রা গ্রামীণ ও বিচ্ছিন্ন। ২০১৭ সালে যখন সিএনএনের প্রতিবেদক পাইকতু পর্বত পরিদর্শনে যান, তখন ক্যামেরা দেখে শিশুরা ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। হয়তো তারা কোনো বিদেশিকে কখনও দেখেনি। কাইকতুর নিকটতম শহর সামজিওন। এখানে সুংয়ের স্মৃতিস্তম্ভগুলো শোভা পাচ্ছে। ভবনগুলোতে জাপানিদের সঙ্গে যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন এখনও লক্ষ্য করা যায়। 

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর পাইকতু এখন আর সাধারণ কোনো স্থান নয়। এটি এখন থেকে বিশ্বব্যাপী ‘বিশেষ ভূতাত্ত্বিক মর্যাদা’ লাভ করল। সিএনএন।   


 
 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিপ্লবের স্মৃতিজড়িত ‘পাইকতু পর্বত’ এখন গ্লোবাল জিওপার্ক