শের লেখার ক্ষেত্রে রুমি আর গালিবের কিছু ভূমিকা থাকতে পারে
Published: 7th, February 2025 GMT
নাহিদ ধ্রুব: আপনার সর্বশেষ প্রকাশিত ম্যাক্সিমের বই গন্দমফুল বের হয়েছিল ২০১৯ সালে। এরপর দীর্ঘ বিরতি, বিশেষ কোনো কারণ আছে?
ইমতিয়াজ মাহমুদ: শেরগুচ্ছ নামে এবার আমার যে কাব্যগ্রন্থ বের হচ্ছে, এটা আসলে ২০২২ সালে বেরোনোর কথা ছিল। এ বইয়ের অধিকাংশ লেখাই তার আগের। কিন্তু ব্যক্তিগত নানা জটিলতায় তখন বইটা আর বের করা হয়নি।
ধ্রুব: বাংলা কবিতার ইতিহাসে সাধারণত ‘শের’ লেখার খুব বেশি প্রচলন নেই। সেটা ভাষাগত কারণেই হোক বা অন্য কোনো কারণে। হঠাৎ ‘শের’ লেখায় মনোযোগী হলেন কেন?
ইমতিয়াজ: বাংলা ভাষায় শের লেখার প্রচলন কম। কিন্তু একেবারে যে নেই, তা নয়। শের বা কাপলেট বা দ্বিপদী, যা–ই বলেন, বাংলা ভাষায় বহুকাল ধরেই লেখা হচ্ছে। অধিকাংশ কবিরই একটা–দুটো কাপলেট পাওয়া যাবে। তবে নিঃসন্দেহে অন্য অনেক ফর্মের চেয়ে বাংলা ভাষায় এই ফর্মে উল্লেখযোগ্য কাজ অনেক কম হয়েছে। আর অতীতে তুলনামূলক কম কাজ হওয়ার জন্যই মূলত এটার প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
ধ্রুব: এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে জালালউদ্দিন রুমি কিংবা মির্জা গালিবের কবিতার পঙ্ক্তি বা শের বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আপনার শেরগুচ্ছ–এর পেছনে কি এসব কবিতার কোনো ভূমিকা আছে?
ইমতিয়াজ: ২০১৩ সালে আমার চার লাইনের কবিতা বা কোয়াটরেনের একটা বই বেরিয়েছিল। যার পাণ্ডুলিপি তৈরি হয়েছিল তারও কয়েক বছর আগে। সে সময় আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছিলাম না। এটা যে কবিতা প্রকাশের একটা মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে, তা–ও জানতাম না। ফলে বলা যায়, আমি কোয়াটরেন যে কারণে লিখেছি, গদ্যকবিতা যে কারণে লিখেছি, কাপলেটও সেই একই কারণে বা অকারণে লিখেছি। এখানে কোনো মাধ্যমের কোনো ভূমিকা নেই। তবে রুমি আর গালিবের কবিতার কিছু ভূমিকা থাকতে পারে। যদিও কাপলেটের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় নির্মলেন্দু গুণের লেখার মধ্য দিয়ে। কিন্তু কাপলেটের প্রতি আমার প্রথম আগ্রহ তৈরি হয়েছিল জয় গোস্বামীর ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা পড়ার পর। ওই বইয়ে একটা কাপলেট ছিল, ‘নাম লিখেছি একটি তৃণে, আমার মায়ের মৃত্যুদিনে’। বইয়ে অন্য অনেক অসামান্য কবিতা থাকার পরও এই লাইন দুটো আমার মাথায় গেঁথে গিয়েছিল। পরে প্রথম আলোর ‘ছুটির দিনে’র একটা সংখ্যায় আনিসুল হকের কিছু কাপলেট পড়েছিলাম। ভালো লেগেছিল। হাসান হাফিজের বইয়েও বেশ কিছু। শ্রীজাতের কফির নামটি আইরিশ–এ–ও চমৎকার কয়েকটা কাপলেট ছিল। সৈয়দ তারিক, রোমেন রায়হান আর শামীম রেজার তো কাপলেটের বই-ই আছে। তো আমার কাপলেট লিখতে চাওয়ার পেছনে তাঁদের সবার লেখারই কমবেশি ভূমিকা থাকতে পারে, কিন্তু কোনো মাধ্যমের বা নির্দিষ্ট কোনো এক–দুজন কবির একক ভূমিকা আছে বলে মনে হয় না।
ধ্রুব: এ সময়ের জনপ্রিয় কবি আপনি। এই জনপ্রিয়তার পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকা আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে শের বা কাপলেট কি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে?
ইমতিয়াজ: আমি নিশ্চিত নই। গালিব, কবির বা রুমিরা তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আবিষ্কারের শত শত বছর আগে থেকেই জনপ্রিয় ছিলেন। কবিতা—তা যে ফর্মেরই হোক, শের, গজল, গীতিকবিতা বা সনেট শেষ পর্যন্ত মানুষের মুখে মুখেই ছড়ায়। অন্য যেকোনো মাধ্যমকে আমার সেকেন্ডারি মনে হয়।
ধ্রুব: আপনি সম্ভবত একবার বলেছিলেন, ভালো কবিতা মানেই স্মরণীয় পঙ্ক্তি অর্থাৎ যে লাইন মস্তিষ্কে চিরস্থায়ী জায়গা করে নেয়, সে কবিতাই ভালো কবিতা। কবিতার ফর্মের জায়গা থেকে চিন্তা করলে, এই সূত্রে শের কতটা সফল ফর্ম?
ইমতিয়াজ: স্মরণীয় পঙ্ক্তিই কবিতা—এটা আমার কথা নয়, রবার্ট ফ্রস্টের। তাঁর মতো আমারও মনে হয়, ভালো কবিতা মানেই স্মরণীয় কবিতা। কিন্তু স্মরণীয় হলেই সেটা ভালো কবিতা হবে কি না, বা শের হলেই সেটা স্মরণীয় হবে কি না, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। ভিন্ন কারণে অনেক সাধারণ লাইনও শতাব্দীর পর শতাব্দী টিকে থাকে। আর সফলতা/বিফলতার ক্ষেত্রে বলা যায়, সফল কবিরা যে ফর্মে কবিতা লেখেন, সেই ফর্মই সফল। এখন গালিব বা মীর তকী মীরের মতো গ্রেট কবিরা যে ফর্মে লিখে গেছেন, সেই ফর্মের তো আর নিজ থেকে বিফল হওয়ার সুযোগ নেই। তবে যেকোনো বিফল কবিরই যেকোনো ফর্মে বিফল কবিতা লেখার সুযোগ আছে।
ধ্রুব: কবে থেকে শের নিয়ে বই করার পরিকল্পনা করেছেন?
ইমতিয়াজ: ম্যাক্সিমের বই বের হওয়ার পর থেকে।
ধ্রুব: পারফেকশনের জন্যই কি এত সময় লাগল?
ইমতিয়াজ: না, ঠিক পারফেকশনের জন্য নয়। বইটাকে পাঠযোগ্য করার জন্য। অধিকাংশ কবিতার বই-ই আমি পড়তে পারি না। অথবা পড়া শুরু করলেও আর শেষ করতে পারি না। বিরক্তি তৈরি হয়। তাই নিজের বই করার ক্ষেত্রে সব সময় ভাবি, এই ভোগান্তি আমার বইয়ের ক্ষেত্রে না হোক। অন্তত আমার বই যেন আমি পড়া শুরু করলে শেষ করতে পারি।
ধ্রুব: আপনার শেরগুলোর অনুবাদও বইয়ে আছে। এই অনুবাদ করানোর কারণ কী?
ইমতিয়াজ: এক পৃষ্ঠায় একটার বেশি কাপলেট আমি রাখতে চাইনি। এক পৃষ্ঠায় ভিন্ন দুটি কবিতা ঝামেলাজনক। পড়ার সময় এটা আমাকে বিরক্ত করে। এখন কবিতার ক্ষেত্রে এক পৃষ্ঠায় একটা কবিতা রাখলেও ফাঁকা জায়গা বেশি থাকে না। কিন্তু কাপলেটের ক্ষেত্রে শূন্যস্থান বেশি হয়ে যায়। শূন্যস্থান যাতে কম থাকে, সেই জন্য অনুবাদ দেওয়া। অনুবাদের পেছনে নোবেল–বুকারের নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণের কোনো পরিকল্পনা বা মতলব আমার কাজ করেনি।
ধ্রুব: বইমেলায় কবে নাগাদ বইটি পাওয়া যাবে?
ইমতিয়াজ: খুব সম্ভবত দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে।
কবিতা
শেরগুচ্ছ
ইমতিয়াজ মাহমুদ
প্রকাশক: দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স মরণ য় ইমত য় জ ম র বই র জন য জনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে জুয়েল জামির মৎস খামারে পোনা মাছ অবমুক্ত
উৎসব মুখর পরিবেশে বন্দরে জুয়েল জামির মৎস খামার ও হাঁস হেচারীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় বন্দর থানার ১৯নং ওয়ার্ডের মদনগঞ্জ শান্তিনগর এলাকায় এ মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়।
মাছের পোনা অবমুক্ত কালে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের নেত্রী এ্যাড: মুন্নী সরদার, সমাজ সেবক মোঃ কামাল হোসেন, মো: ইব্রাহিম, মোঃ আলমগীর, কামাল হোসেন, সোহেল চৌধুরী, শান্তিনগর এলাকার সমাজ সেবক মো: আব্দুল করিম ও জুয়েল, মানিকসহ স্থানীয় এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ। ওই সময় মৎস খামারি জুয়েল ও জামির হোসেন উল্লেখিত মৎস খামারটি দেখাশনা করে রাখার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।