২০২৫ বিপিএলের শুরুতে টিকিট নিয়ে বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটলেও সময়ের সঙ্গে তা কমে এসেছে। অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা চালু থাকায় এবার দর্শকরা সহজেই টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছেন। তবে আজ ফাইনালের আগে যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেজন্য বিশেষ বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।  

বিসিবির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ফাইনালের সব টিকিট ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। তাই স্টেডিয়ামের আশপাশে বা জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্স সংলগ্ন টিকিট বুথে টিকিটের খোঁজ করেও কোনো লাভ হবে না। দর্শকদের অপ্রয়োজনে সেখানে ভিড় না করার অনুরোধ জানিয়েছে বোর্ড।  

বিপিএলের টিকিট বিক্রি থেকে এবার ১২ কোটি টাকার বেশি আয় হতে পারে বলে আশা করেছিলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। প্লে-অফের আগ পর্যন্ত আয় ছিল ১০ কোটি টাকা, আর ফাইনালের সব টিকিট বিক্রি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।  

বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হবে ফরচুন বরিশাল ও চিটাগং কিংসের ফাইনাল। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে বরিশাল নামবে শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্যে, আর চিটাগং কিংস চাইবে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিততে। এর আগে ২০১৩ বিপিএলে রানার্সআপ হয়েছিল চিটাগং কিংস, যেখানে তারা হেরেছিল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের বিপক্ষে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব প এল ব প এল

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের গাজা ‘খালি’ করার পরিকল্পনায় লাভবান কে

মূর্খতাকে অনেক সময় সহজেই প্রতিভা বলে ভুল হয়। কখনো কখনো সহানুভূতির ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকে অনুভূতিশূন্য নির্বুদ্ধিতা। ডোনাল্ড ট্রাম্প হাজির হয়েছেন গাজাকে পুরোপুরি খালি করে ফেলে ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষকে জোর করে একটি কল্পিত ‘ভালো, সুন্দর, উর্বর ভূমিতে’ পুনর্বাসনের ধারণা নিয়ে। তাঁর এই পরিকল্পনা শুধু বোকা লোকেরাই বিশ্বাস করবে। এটি কোনো বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নয়। এ হচ্ছে ট্রাম্পের সীমাহীন আত্মম্ভরিতার প্রকাশ।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের অসংলগ্ন কথাবার্তাকে যুগান্তকারী চিন্তাভাবনা বলে প্রশংসা করেছেন। তা আদতে কোনো পরিকল্পনাই নয়। এ বরং মদের আসরে বড় গলায় বলা প্রলাপের মতো। অথচ কথাগুলো ভয়ানকভাবে বিপজ্জনক। ট্রাম্পের কথিত সহানুভূতির আড়ালে মৌলবাদী উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে। তাঁর কথার আসল মানে হলো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নকে একেবারে ধ্বংস করে দেওয়া।

এ কারণেই কট্টরপন্থী ইহুদি জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় উগ্রবাদীরা উল্লাস করছে। এ কারণেই জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আজ কঠোর ভাষায় ‘জাতিগত নির্মূলের’ বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। এ কারণেই ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, যদি এমন কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়, তবে তা মধ্যপ্রাচ্যের আগুনে ঘি ঢালার শামিল হবে।

ট্রাম্পের মূল কথাটি ধরুন। তাঁর দাবি, গাজা এক ধ্বংসস্তূপ, যেখানে মানুষের বসবাস অসম্ভব। তাঁর ভাষায়, ‘গাজা মানুষের থাকার যোগ্য জায়গা নয়। যারা সেখানে ফিরে যেতে চায়, তারা আসলে বিকল্পের অভাবে বাধ্য হয়ে তা চায়।’ কিন্তু গাজাকে এমন ধ্বংসস্তূপে পরিণত করল কে? গত ১৫ মাসের অবিরাম হত্যাযজ্ঞে যেখানে অন্তত ৪৭ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। সেই ধ্বংসের জন্য দায়ী কে? দায়ী ট্রাম্পের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি—ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই নেতানিয়াহুই হাজার হাজার শিশু হত্যার মূল হোতা।

গাজাকে ‘পরিষ্কার’ করার এই পরিকল্পনায় কে লাভবান হবে? নিশ্চিতভাবেই আরব প্রতিবেশী দেশ মিসর ও জর্ডান নয়। যদি ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে বিতাড়িত করা হয়, তাহলে তাদের দেশে প্রায় ২০ লাখ শরণার্থী ঢুকে পড়বে। সৌদি আরবও ট্রাম্পের এই পরিকল্পনায় কোনো আগ্রহ দেখায়নি। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, সৌদি আরব তাঁর সঙ্গে আছে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সৌদিরা পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের নিশ্চয়তা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক স্বাভাবিক করা হবে না।

ট্রাম্পের এই প্রস্তাব আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের রেজল্যুশন দ্বারা স্বীকৃত ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের মৌলিক অধিকার সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করে। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের দীর্ঘদিনের দ্বিরাষ্ট্র নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত।

ট্রাম্পের এই ফন্দি উভয় পক্ষের উগ্রপন্থীদের আরও উসকে দেবে। ট্রাম্প কি সত্যিই মনে করেন যে গাজার বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা হামাস বিনা প্রতিরোধে ছেড়ে দেবে? গাজার জনগণকে স্থায়ীভাবে বিতাড়নের যেকোনো চেষ্টা ইসরায়েলের শত্রুদের জন্য নতুন সংগ্রামের ইস্যু হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে এটি কট্টর ইহুদি রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোকেও আরও সাহসী করে তুলবে। এরা গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।

ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁর নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে গাজায় দীর্ঘ মেয়াদে বিপুলসংখ্যক মার্কিন সেনা মোতায়েন করতে হবে। আরব দেশগুলো, ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্য সবাই এককাট্টা হয়ে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এরা কেউই গাজা দখলে সহায়তা করবে না। কিন্তু যদি মার্কিন সেনারা সেখানে প্রবেশ করেন, তাহলে তাঁরা অবধারিতভাবে ইসলামি জঙ্গিদের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। গাজা তখন ট্রাম্পের জন্য আরেকটি ইরাক হয়ে উঠবে।

এই বিপর্যয় ইরানের নেতৃত্বাধীন ‘প্রতিরোধ জোটের’ জন্য এক আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেবে। লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইরাক ও ইয়েমেনের বিভিন্ন মিলিশিয়া হামাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী ও পশ্চিমাবিরোধী লড়াই শুরু করতে পারে। এমনকি সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণহীন মরুভূমিতে নতুন করে সংগঠিত হওয়া ইসলামিক স্টেটও নিশ্চুপ থাকবে না। এই বিশৃঙ্খলা রাশিয়ার জন্যও উপকারী হবে। কারণ, তা পশ্চিমা বিশ্বের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে দেবে। বিশ্বরাজনীতিতে তৈরি হবে আরও বিশৃঙ্খলা।

নেতানিয়াহু প্রতিনিয়ত হোয়াইট হাউসকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য ইরান হুমকি। সুযোগ পেলে তিনি ইরানে হামলা চালাতে  চাইবেন। ট্রাম্প কোন দিক বেছে নেন, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ট্রাম্পের এই হস্তক্ষেপ নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থী জোটসঙ্গীরা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে এবং গাজা ও পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপন করতে চায়। অথচ যুক্তরাষ্ট্র চায় যুদ্ধবিরতি এবং জীবিত সব বন্দীর মুক্তি। কিন্তু এখন, ট্রাম্পের কাছ থেকে নেতানিয়াহু এই চাপ থেকে মুক্তির পথ পেয়ে গেছেন। তিনি যদি যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দেন, তাহলে তাঁর বিরোধীদের পক্ষে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানো আরও কঠিন হবে। আর নেতানিয়াহু সম্ভবত তা–ই করতে যাচ্ছেন।

হামাসও এখন যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে এগোতে না চাওয়ার নতুন কারণ খুঁজে পেয়েছে। প্রতিটি বন্দী বিনিময়ের পর তারা বারবার নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার বার্তা দিচ্ছে। লেবাননেও যুদ্ধবিরতি অত্যন্ত নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। একটি বোমা বিস্ফোরণ, একটি গুপ্তহত্যা বা একটি বিমান হামলাই নতুন যুদ্ধের সূচনা করতে পারে।

ট্রাম্পের এই বাস্তবতাবিবর্জিত, অন্যায় ও অবৈধ গাজা পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলছে। বরাবরের মতো তাঁর এই আত্মম্ভরিতাপূর্ণ উন্মাদনা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করছে।

ধূর্ত রাজনীতিবিদেরা ফন্দিফিকির, তথ্যবিকৃতি ও বাস্তবতা অবজ্ঞা করে ন্যায্য সমাধান এড়িয়ে চলতে চায়। ট্রাম্প হচ্ছেন তার এক ক্ল্যাসিক উদাহরণ। অথচ এই সংকটের একমাত্র প্রকৃত সমাধান খুবই স্পষ্ট—ফিলিস্তিনের ভূমিতে একটি সার্বভৌম, স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যা ইসরায়েলের পাশে শান্তিপূর্ণভাবে টিকে থাকবে।

কিন্তু এই ধূর্ত রাজনীতিবিদেরা সেটি কখনোই করতে চায় না।

সাইমন টিসডাল অবজারভার-এর আন্তর্জাতিক বিষয়ের ধারাভাষ্যকার

গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ জাভেদ হুসেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ