স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে মারধরের পর পুলিশে সোপর্দ
Published: 7th, February 2025 GMT
কুমিল্লায় পরীক্ষার হল থেকে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মাসুমকে বের করে নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে মারধর করে পুলিশে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা।
শুক্রবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শাখায় এলএলবি পরীক্ষা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। আটক মাসুম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক ছিলেন। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
আটকের বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম।
কলেজ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে এলএলবি পরীক্ষা শুরু হয়। মাসুম যথারীতি পরীক্ষায় লেখা শুরু করেন। প্রায় ৩০ মিনিট পরীক্ষা দেওয়ার পর কিছু বহিরাগত শিক্ষার্থী হঠাৎ পরীক্ষার কক্ষে ঢুকে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা কলেজ ক্যাম্পাসেই তাকে ব্যাপক মারধর করে। কলেজ থেকে থানায় খবর দেওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শরীরে পোশাক বিহীন মাসুমকে গাড়িতে উঠানোর সময় ছাত্র জনতা তার ওপর আবারও হামলা চালায়। এ সময় ওসি মহিনুল ইসলামসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। পরে তাকে গাড়িতে তুলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রতন আলী বলেন, ‘পরীক্ষা শুরু পর কয়েকজন ছাত্র তাকে বাইরে নিয়ে যায়। তিনি ছাত্রলীগ ছিলেন নাকি অন্য কিছু তা জানি না। তিনি একজন পরীক্ষার্থী এটাই পরিচয়। আমি পরীক্ষার ডিউটিতে ছিলাম। পরিস্থিতি এমন ছিল যে আমাদের কিছুই করার ছিল না। পরে আমরা থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করায় পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মাসুম সরাসরি ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে হামলায় মদদ দিয়েছেন। তাই পরীক্ষা দিতে আসার খবর পেয়ে তাকে মারধর করে পুলিশে দেওয়া হয়।
মাসুমের স্ত্রী রিজোয়ানা করিম মুঠোফোনে সমকালকে বলেন, খবর পেয়ে থানায় এসে তার (স্বামী) নিকট থেকে জানতে পেরেছি পরীক্ষার হল থেকেই তাকে জোরপূর্বক বের করে এনে অনেক মারধর করে আহত করা হয়েছে। শুনেছি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কারা ঘটনায় জড়িত এ বিষয়ে এখনও কিছু জানি না।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, খবর পেয়ে আমরা যখন ঘটনাস্থলে যাই তখন বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা অনেকটা মারমুখী ছিল। তাকে উদ্ধারের পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে থানায় নিয়ে আসি। তার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মিছিলে হামলার অভিযোগে কোতোয়ালি ও সদর দক্ষিণ মডেল একাধিক মামলা আছে। এসব মামলার নথি দেখে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব চ ছ স বকল গ আটক ম রধর পর ক ষ র
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া বালুর মাঠ এলাকায় ছুরিকাঘাতে অপূর্ব নামের এক ছাত্রদল কর্মী নিহত হয়েছেন। তিনি পঞ্চবটির বিসিক শিল্পনগরীর টি-শার্ট গার্মেন্টসের শ্রমিক ছিলেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত ছাত্রদলের মিছিল শেষে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছাত্রদল কর্মীরা সম্রাট নামের একজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা নিহত ও হামলাকারী দুইজনকেই ছাত্রদল কর্মী বললেও, স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, হামলাকারী বিএনপির কেউ না। তাদের কর্মসূচি বানচাল করতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মোহাম্মদ ইয়ামিন জানান, ধর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্রদলের মিছিলের কর্মসূচি শেষ করে তারা চাষাড়াস্থ শহীদ মিনারের পেছন দিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি দেখতে পান, পপুলারের পেছন দিকে নিহত অপূর্ব ও হামলাকারী সম্রাটের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চলছে। এক পর্যায়ে দুইজনের মধ্যে হাতাহাতি লেগে যায়। এসময় তিনি অপূর্বকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখেন। পরে তার বুকে ছুরিবিদ্ধ দেখতে পান।
তিনি জানান, হামলার পরে সম্রাট পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাকে ধরে গণপিটুনি দেয়। তাকে ছাড়িয়ে নিতে তার ভাই আসলে তাকেও গণপিটুনি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে সম্রাটকে উদ্ধার করে। এসময় অপূর্বকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ও সম্রাটকে পুলিশ নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক অপূর্বকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা মাসদাইর জামালের গ্যারেজ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ খোকন ও নিহতের স্ত্রী সাথী আক্তার জানান, নিহত যুবক বিসিকের টি-শার্ট গার্মেন্টসের শ্রমিক। তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবচেয়ে ছোট ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার জাবুটিয়া গ্রামে। কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা তারা বুঝতে পারছেন না।
হাসপাতালে সম্রাট হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জানান, যারা হামলা করেছিল তারা চলে গেছে। তিনি শহীদ মিনারের পাশের বেইলি টাওয়ারের একটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারী।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু জানান, সারাদেশে ধর্ষণের বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবাদে ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতে ছাত্রদলের মিছিলে নিহত অপূর্ব এসেছিল। যে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে তিনি বিএনপির কেউ না। আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের কর্মসূচি বাতিল করতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।