চলতি বছরের শেষের দিকে জাতীয় সংসদের নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাপানের ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে (এনএইচকে) দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ড.

মুহাম্মদ ইউনূস। 

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জানান, তিনি নিশ্চিত করতে চান, বাংলাদেশ তার নিজ পায়ে দাঁড়াবে এবং আরও শক্তিশালী হবে। এছাড়া যারা নির্বাচনে নির্বাচিত হবে, তারা কাজ করার জন্য শক্তিশালী ভিত্তি পাবে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘যখন আমরা ক্ষমতায় এসেছিলাম, ওই সময়ের পরিস্থিতি বললে, আমি মনে করি, আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। কারণ এটি ছিল একটি বিধ্বস্ত সমাজ-অর্থনীতি-রাজনৈতিক ব্যবস্থা। বিচারিক ব্যবস্থাও ছিল অনেক নাজুক।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের সবচেয়ে দ্রুত সময় হতে পারে, এ বছরের শেষ দিক। যখন নির্বাচন হবে, যারা নির্বাচিত হবে, তারা কাজ করার জন্য শক্তিশালী একটি ভিত্তি পাবে।’

সাক্ষাৎকারে তরুণ প্রজন্মকে নিয়েও কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘তরুণরা তাদের সৃজনশীলতার শক্তি প্রদর্শন ও পুরো বিশ্বের সঙ্গে এটি ভাগ করতে চায়। আমাদের মাথায় এই লক্ষ্যটি আছে, দেখা যাক আমরা কীভাবে এগোই।’

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী জাপানের প্রতিও সাক্ষাৎকারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের অবস্থা ছিল ধ্বসংপ্রাপ্ত, যেন আরেকটি গাজা

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ এবং সেসময় দেশের পরিস্থিতি কেমন ছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘শেখ হাসিনা যে ক্ষতি করেছেন, তা বিশাল। এটি একটি সম্পূর্ণ ধ্বসংপ্রাপ্ত দেশ ছিল, যেন আরেকটি গাজা। তবে এখানে ভবন নয়, পুরো প্রতিষ্ঠান, নীতি, মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধ্বংস করা হয়েছে।’’

সাক্ষাৎকারটি সোমবার (১০ মার্চ) প্রকাশিত হয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ান বলছে, শেখ হাসিনার পতন এবং তার স্বৈরাচারী কাঠামো ধসে পড়ার পর ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব নেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আরো পড়ুন:

চার মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সেবা ডিজিটাইজড করার নির্দেশ দিল সরকার

পতিত স্বৈরাচার নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে: প্রধান উপদেষ্টা

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, শিক্ষার্থীদের অনুরোধেই তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে রাজি হন। তিনি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন পুরো বাংলাদেশ ছিল রক্তে রঞ্জিত। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করে গেছেন। এটি ছিল সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত একটি দেশ, আরেকটি গাজার মতো। তবে গাজার মতো সেখানে ভবন ধ্বংস করা হয়নি বরং পুরো প্রতিষ্ঠান, নীতি, মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধসে পড়েছিল।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা ব্যাপক নৃশংসতা ঘটান। তবে বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হয়ে বিক্ষুদ্ধ জনতার প্রতিশোধের ভয়ে হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই আছেন।

শেখ হাসিনার শাসনামল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, হাসিনার শাসনামলে কোনো সরকার ছিল না, ছিল দস্যুদের একটি পরিবার। সরকারপ্রধানের যে কোনো আদেশই তখন সম্পন্ন করা হতো। বিষয়টা এরকম যে, কেউ সমস্যা তৈরি করছে? আমরা তাদের উধাও করে দেব।

এ ছাড়াও নির্বাচন করতে চান? আমরা নিশ্চিত করব, আপনি যেন সব আসনে জয়ী হন। আপনি টাকা চান? এই যে ব্যাংক থেকে এক মিলিয়ন ডলার ঋণ, যা আপনাকে কখনোই ফেরত দিতে হবে না।

ভারতে হাসিনার আশ্রয় নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ভারত তাকে আশ্রয় দিলে তা সহ্য করা হবে, কিন্তু ‘তিনি আমাদের করা সবকিছু বাতিল করার চেষ্টা করতে ভারতকে তার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া, বিপজ্জনক। এটি দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তোলে’।

গার্ডিয়ান বলছে, বাংলাদেশে হাসিনার শাসনামল ছিল স্বৈরাচার, সহিংসতা এবং দুর্নীতির অভিযোগে ভরপুর। জুলাই ও আগস্ট মাসে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এর সমাপ্তি ঘটে। জাতিসংঘের মতে, ওই সময় বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়।

ঢাকা/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ