যুক্তরাষ্ট্র মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো। পানামা খাল দিয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি জাহাজগুলোকে আর মাশুল দিতে হবে না বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দাবির পর এমন অভিযোগ করা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তাঁর দপ্তরের এমন দাবি থেকে সরে এলেও তিনি বলেছেন, মার্কিন জাহাজের কাছ থেকে মাশুল নেওয়াটা ‘অযৌক্তিক’। কারণ, চুক্তি অনুযায়ী, খালটি আক্রমণের মুখে পড়লে তা থেকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।

আরও পড়ুনঅভিষেক ভাষণে পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প২১ জানুয়ারি ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবারই পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছেন। জোর করে এটি দখলে নেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি তিনি। আজ শুক্রবার মুলিনোর সঙ্গে ট্রাম্পের আলোচনা হওয়ার কথা।

৫১ মাইলের (৮২ কিলোমিটার) জলপথটি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ তৈরি করেছে। পানামা খাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সব জাহাজকে মাশুল দিতে হয়। জাহাজের আকার ও ধরনের ভিত্তিতে মাশুল নির্ধারণ করা হয়। তবে পানিপথটিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো অগ্রাধিকার পায়।

গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর লিখেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জাহাজগুলো এখন কোনো ধরনের মাশুল দেওয়া ছাড়াই পানামা খালে চলাচল করতে পারবে। এতে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের লাখ লাখ ডলার বেঁচে যাবে।’

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এমন বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুলিনো। বলেছেন, মিথ্যা ও অসাধুতার ওপর ভর করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে নন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করার জন্য ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পানামার রাষ্ট্রদূতকে ‘দৃঢ় পদক্ষেপ’ নিতে বলেছেন মুলিনো।

মুলিনো আরও বলেছেন, নৌবাহিনীর জাহাজসহ মার্কিন সরকারি জাহাজগুলোকে পানামা খাল দিয়ে চলাচলের জন্য প্রতিবছর ৬০ থেকে ৭০ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হয়। মুলিনো মনে করেন, এটা এমন নয় যে খালের মাশুল দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ভেঙে দিচ্ছে।

পানামা খাল কর্তৃপক্ষ (এসিপি) এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা পানিপথটির মাশুল–সংক্রান্ত নিয়মে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনেনি। আলোচনার জন্য পানামার দরজা খোলা আছে বলেও উল্লেখ করেছে তারা।

রুবিও ও মুলিনোর বৈঠকের পর পানামা ঘোষণা দিয়েছে, তারা ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ নামে পরিচিত চীনের অবকাঠামো নির্মাণ কর্মসূচির সদস্যপদ আর নবায়ন করবে না।

রুবিও এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। এটিকে ‘একটি দুর্দান্ত পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে পানামা।

ট্রাম্প আশঙ্কা জানিয়েছেন, সংকটপূর্ণ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খালটি বন্ধ করে দিতে পারে চীন। তবে পানামা ও চীন দৃঢ়ভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

বুধবার চীনের পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেছেন, পানামার সঙ্গে তাঁদের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ফলপ্রসূ হচ্ছে। দেশটিকে ‘বহিরাগত হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রুবিও গত রোববার মুলিনোর পাশাপাশি খালের প্রশাসক রিকাউর্তে ভাসকেজ মোরালেসের সঙ্গে দেখা করেন। খালটির ওপর চীনের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানামার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেওয়া প্রথম ভাষণে ট্রাম্পও একই কথা বলেছিলেন। ট্রাম্প বলেছিলেন, খালটিকে চীন পরিচালনা করছে এবং তিনি এটির নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফিরিয়ে নিতে চান।

মুলিনো অভিযোগগুলো অস্বীকার ও ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বলেছেন, এ বাণিজ্যপথটির নিয়ন্ত্রণ পানামার হাতে আছে ও থাকবে।

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র পানামা খাল খনন করে। তবে বছরের পর বছর বিক্ষোভ চলার পর ১৯৭৭ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার পানামার সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। চুক্তির আওতায় ধীরে ধীরে জলপথটির নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। আর ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে বলে আসছেন, পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের সিদ্ধান্তটি যুক্তরাষ্ট্রের বড় ভুল ছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র ক ন পরর ষ ট র পদক ষ প বল ছ ন র জন য র এমন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, পরীক্ষা ১২ এপ্রিল

কৃষি গুচ্ছভুক্ত নয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আগামী শনিবার (১২ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হবে।

এ বছর গুচ্ছ পদ্ধতির নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। এ উপলক্ষে সব কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল ১১টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) রেজিস্ট্রার অফিসের সভা কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব ও বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মো. হেলাল উদ্দীন।

তিনি বলেন, “এ বছর নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র ও ১৩টি উপকেন্দ্রে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা একযোগে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার্থীদের কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে বলা হবে। বিশেষ করে ঢাকায় একই দিনে ‘মার্চ টু গাজা’ কর্মসূচির কারণে সড়কে যানজটের সম্ভাবনা থাকায় সময় নিয়ে বের হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্র পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না।”

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাকৃবি ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “এ বছর গুচ্ছ পদ্ধতিতে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৮৬৩টি। এর বিপরীতে ৯৪ হাজার ২০ জন ছাত্র-ছাত্রী আবেদন করেছে। আবেদনকারীদের মধ্যে ৪৬ হাজার ৯৩২ জন ছাত্র এবং ৪৭ হাজার ৮৮ জন ছাত্রী রয়েছে।”

তিনি বলেন, “প্রতিটি আসনের জন্য প্রতিযোগিতা করছে ২৫ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। আগামী শনিবার (১২ এপ্রিল) নয়টি কেন্দ্রে ও ১৩টি উপকেন্দ্রে বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও সম্ভাব্য আগামী ১৫ এপ্রিল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাকৃবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম এবং শিক্ষা বিষয়ক শাখার এডিশনাল রেজিস্ট্রার মো. সারওয়ার জাহান।

বাকৃবি কেন্দ্রে নিরাপত্তার বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা জোরদারে ভর্তি পরীক্ষার দিন বেলা ১২টার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এছাড়াও পরীক্ষার আগেরদিন রাত থেকে সবগুলো স্থানে বিশেষ করে নদের পাড় এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। সন্ধ্যা ৭টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নদে কোনো নৌকা চলাচল করতে দেওয়া হবে না।”

প্রশ্নফাঁস বা পরীক্ষায় অসাধু উপায় অবলম্বনের বিষয়ে তিনি বলেন, “প্রশ্নফাঁস যাতে কোনোভাবেই না হয়, সে বিষয়ে সর্বদা নজর রাখা হচ্ছে। প্রশ্নপত্র প্রতিটি কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে কতদূর এবং কোথায় প্রশ্নপত্র যাচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়াও সর্বদা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশের আগে তাদের পুরোপুরিভাবে তল্লাশী করা হবে, যাতে কোনো ডিভাইস বা পরীক্ষায় অসাধু উপায় অবলম্বনের জন্য কোনো উপকরণ তাদের কাছে না থাকে।”

কৃষি গুচ্ছের অওতাভূক্ত নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ