পরিবারের অভিযোগ ভুয়া সমন্বয়কদের সঙ্গে বিরোধে মিনহাজের মৃত্যু
Published: 7th, February 2025 GMT
তিন ভাই আর এক বোনের মধ্যে মিনহাজ ছিল সবার ছোট আর আদরের। তার ভালোবাসাও ছিল একটু বেশি। ১০ মাস হলো বিয়ে হয়েছে। ঘরে আসছে নতুন সদস্য। পরিবারে সবার মনে আনন্দ! এরই মাঝে মিনহাজের ভগ্নিপতি বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। আনন্দ বেড়েছে দ্বিগুণ। মিনহাজের বাবা-মা ছিলেন গ্রামের বাড়িতে। মিনহাজেরও যাওয়ার কথা ছিল সেখানে। মায়ের জন্য কি ওষুধ লাগবে ফোন দিয়ে জেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু ওষুধ নিয়ে তিনি আর মায়ের কাছে যেতে পারেননি। বাড়ি যাওয়ার আগেই সামান্য বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে খুন হন মিনহাজ।
গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে দনিয়া কলেজের সামনে ছুরিকাঘাত করে নির্মমভাবে খুন করা হয় মিনহাজকে। মিনহাজ ডিপ্লোমা-ইন-টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। জড়িত ছিল ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে।
খুনের ঘটনায় বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন বাদী হয়ে ‘কিং মাহফুজ’সহ ৯ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরো ১০-১২ জনকে আসামি করে যাত্রাবাড়ি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করছে যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশ। ইতোমধ্যে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ি থানার সাব-ইন্সপেক্টর আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘দনিয়া কলেজে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মিনহাজের সঙ্গে আসামিদের তর্কবিতর্ক হয়। এছাড়া দনিয়া কলেজের সামনের ফুডকোট নিয়ে ঝামেলা চলছিল। এক পক্ষ বলছিল- তুলে দিকে, আরেক পক্ষ বলেছে থাকুক। এসব নিয়েই মিনহাজকে ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয়।’’
‘‘এই হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এখনো পাওয়া যায়নি।’’ বলেন আশরাফুজ্জামান।
মিনহাজের বাবা হাফেজ ক্বারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমার অনেক আদরের সন্তান। ছেলেটাকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছিলাম। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’’
মা নার্গিস বেগমও ছেলে হত্যার বিচার চান। দোষীদের ফাঁসি চান তিনি।
স্ত্রী মিষ্টি হাওলাদার বলেন, ‘‘ঘটনাটা ছিল আধিপত্য বিস্তার করার জন্য। আর পুরো পরিকল্পিত। তারা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল মিনহাজকে খুন করবে।’’
মামলার বাদী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘‘একটা মানুষকে মারতে এতোটা ছুরির আঘাত করতে হয়? ২৮টা আঘাত! এতো ক্ষোভ ছিল ওর ওপর? কি কারণে এতো ক্ষোভ?’’
‘‘যারা ওকে খুন করেছে তারা মাদক ব্যবসায়ী। তাদের গ্রেপ্তার না করলে অন্যদেরও তারা খুন করবে। আরও মায়ের বুক খালি হবে। এভাবে মৃত্যু কামনা করি না। তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। অনাগত সন্তানের মুখটা দেখে যেতে পারলো না।’’
ফুফাতো ভাই হাসিবুর রহমান বলেন, ‘‘মিনহাজ ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। হামলারও শিকার হয়। সুস্থ হয়ে আবার রাজনীতিতে ফেরে। ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিল, নেতৃত্ব দিয়েছিল। ৫ তারিখের পর আমরা যেরকম বাংলাদেশ চাচ্ছিলাম, দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, বৈষম্যমুক্ত, সিন্ডিকেট মুক্ত বাজার। মিনহাজ এর জন্য কাজ করেছে। কিন্তু দেখা গেলো চাঁদা তোলার দৃশ্য। দনিয়া কলেজের সামনে মেয়েদের ইভটিজিং করা হতো। কলেজের সাথে সমন্বয় করে মিনহাজ ও তার বন্ধুরা সুন্দরভাবে কাজ করছিল। দনিয়া ও এর আশেপাশের এলাকা দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত করার জন্য। এই ব্যাপারটাই ওর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।’’
‘‘যারা ওখনকার সন্ত্রাস, চাঁদাবাজের নেতৃত্বে আছে এবং আসাদুজ্জামান হৃদয়ের ব্যাপারেও আমরা জানতে পেরেছি। তাদের ছত্রছায়ায় চোরাই মাহফুজ ওরফে কিং মাহফুজ অনেক দিন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তাদের বাধা দেয়ার কারণে মিনহাজকে খুন করা হয়।’’
‘‘কিং মাহফুজ আওয়ামী, ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় চলতো। ৫ তারিখের পর সে ভোল পাল্টে ফেলে। সারজিস আলম ভাই একবার দনিয়া কলেজ আসেন। তখন আশিকুজ্জামার হৃদয় নামে একজন নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করে। তার বিরুদ্ধে মিনহাজ আওয়াজ তোলে। বলে, ৫ তারিখের আগ পর্যন্ত আপনার কোনো অ্যাক্টিভিটিস দেখিনি। আপনি কিভাবে সমন্বয়ক হন? এ কারণে কিং মাহফুজের সঙ্গে তার ঝামেলা হয়। কিং মাহফুজ সমন্বয়কদের আশেপাশে ঘুরে ভালো ইমেজ তৈরি করার চেষ্টা করছিল। এ কাজে বাধা দেওয়ার কারণে মিনহাজের সঙ্গে তার ঝামেলা শুরু হয়।’’ বলেন হাসিবুর রহমান।
চাচা এনামুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘‘মাহফুজ চাঁদাবাজি করতো। ছিনতাইকারীর লিডার। ভুয়া সমন্বয়ক আশিকুজ্জামান হৃদয়ের সহায়তায় সে বাজারে চাঁদাবাজি করতো। এর প্রতিবাদ করায় মিনহাজকে খুন করা হয়েছে।’’
‘‘৩৫ বছর ধরে মিনহাজের বাবা রাজনীতি করে। মামলা, জেল খেটেছেন। আজ রাষ্ট্র তাকে ছেলের লাশ উপহার দিয়েছে। স্বাধীন দেশে ভাতিজার লাশ উপহার পেয়েছি।’’ বলেন এনামুল হক।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২৬ জানুয়ারি দনিয়া কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে মিনহাজের সঙ্গে আসামিদের তর্কবিতর্ক ও বিরোধের সৃষ্টি হয়। ২৮ জানুয়ারি বিকেল ৪ টার দিকে মিনহাজ তার বন্ধু আহাদের সাথে দনিয়া কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে কলেজের ১ নম্বর গেটের সামনে এজাহারনামী আসামিরা মিনহাজকে কুপিয়ে জখম করে। আহাদকেও তারা মারধর করে। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ৮টার দিকে মিনহাজকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন মাহফুজ সরকার, জাহিদুল ভূঁইয়া শাওন, সাব্বির সরকার, আশিক, কাওছার মিয়া, শাহ আলম এবং সোহান মিয়া।
তারা//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কল জ র স র স মন খ ন কর র র জন র জন ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
‘এক টাকা কমে হবে না, বলা যাবে না কাউকে’, ঘুষ দাবির অডিও ভাইরাল
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক সহকারী শিক্ষকের কাছে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষক মো. বেনজির ইসলাম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ওই শিক্ষক উপজেলার ৯৩ নম্বর উত্তর পূর্ব বানিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত।
ছড়িয়ে পড়া অডিওতে শিক্ষক বেনজির ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম। কেমন আছেন? আগামী রোববার আপনার সঙ্গে একটু দেখা করতে চাইছিলাম।’ এর উত্তরে শিক্ষা কর্মকর্তা হেনায়ারা বেগম বলেন, ‘রোববার না সোমবার আসেন।’ এ সময় ওই শিক্ষক বলেন, ‘আমি তো আসলে কিভাবে এইটা ম্যানেজ করব, আপনি যদি বলে দিতেন। কয় টাকা আর বেতন পাই। কয় টাকা হলে আপনার হয়? আমি তো সৎভাবে জীবনযাপন করি।’ এ সময় শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘১০ টাকা (১০ হাজার), আর ১ টাকাও কম হলেও হবে না। আর কাউকে বলা যাবে না।’ জবাবে বেনজির বলেন, ‘৪-৫ হাজার হলে হয় না? এই টাকা আমার জোগাড় করতে হবে।’ শিক্ষা কর্মকর্তা তখন বলেন, ‘কম হলে হবে না। আর কাউকে এই কথা বলা যাবে না।’ এ সময় তিনি ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে টাকা দেওয়া কথা বলেন। সেই সঙ্গে কাউকে বিষয়টি না জানানোর শর্ত দেন।
সহকারী শিক্ষক বেনজির ইসলামের ভাষ্য, তিনি ছুটিতে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষা কর্মকর্তা অনৈতিকভাবে ওই টাকা ঘুষ হিসেবে দাবি করেছিলেন। টাকা না দিলে তাঁর ক্ষতি করার হুমকি দেন। পরে শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশ অনুযায়ী বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা দেন।
৯৩ নম্বর উত্তর পূর্ব বানিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জামিল হোসেন বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। তবে আমার স্কুলের সহকারী শিক্ষক বেনজির ইসলামের বেশ কিছু অনিয়ম করেছেন। এ জন্য আমি তাঁর বিরুদ্ধে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার, টিও স্যার ও ডিপিও স্যারের কাছে লিখিত আবেদন করেছি।’
অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মোসা. হেনায়ারা বেগমের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তিনি দাবি করেন, অভিযোগটি মিথ্যা।
পিরোজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তাফা কামাল বলেন, নাজিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছেন। সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।