মির্জা আজম ও অভিনেত্রী শাওনের বাবার বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
Published: 7th, February 2025 GMT
জামালপুর শহরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক বস্ত্র পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের বাড়িতে ভেকু দিয়ে ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় শহরের বকুলতলা এলাকায় দুই তলা এই বাড়িতে ভেকু দিয়ে এই ভাঙচুর চালানো হয়। পরে অগ্নিসংযোগও করা হয়।
অন্যদিকে বিকেলে জামালপুরের নরুন্দি এলাকায় অভিনেত্রী মেহের আফরোজা শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
অগ্নিসংযোগকারীরা জানান, মির্জা আজমের এ বাড়ি বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সরকারি অর্থ লুট ও চাকরি বাণিজ্যের আখড়া ছিল। এখান থেকে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার আহবায়ক মীর ইসহাক হাসান ইখলাস বলেন, “শেখ হাসিনা গতকাল ভারতের মদদে সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। এতে সাধারণ জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। আমরা জামালপুরের পরিবেশ শান্ত রাখতে আগুন নেভাতে সহায়তা করি ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেই।”
এ বিষয়ে জানতে সদর থানার ওসি আবু ফয়সল মো.
ঢাকা/শোভন/টিপু
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ভবিষ্যৎ কী
বিশ্ব অর্থনীতিতে বয়ে যাচ্ছে ‘শুল্কঝড়’। বিশ্ব বাণিজ্যে চলছে উত্তেজনার ঘূর্ণি। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চমাত্রার শুল্ক আরোপে তৈরি হয়েছে এ পরিস্থিতি। যদিও চীন ছাড়া বাকি দেশগুলোর জন্য বাড়তি এ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘রিসিপ্রোকাল’ বা ‘পাল্টা’ শুল্ক নিয়ে এখনও তোলপাড় চলছে বিশ্বজুড়ে।
এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের একতরফা শুল্ক আরোপের ঘটনায় তৈরি হয় ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ পরিস্থিতি। আরও বিভিন্ন দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রচলিত রীতিনীতি বা নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে শুল্ক বাড়ানোসহ নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। গত এক দশক ধরে প্রায়ই এমনটা দেখা গেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) যেন হয়ে গেছে এক ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’। মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য আলোচনা ও দরকষাকষির পর সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুসারে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন হয়। শেষ পর্যন্ত মানে না অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলো। এ অবস্থায় ‘নড়বড়ে’ এই ডব্লিউটিওর ভবিষ্যৎ আসলে কোন পথে, সেটা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
ডব্লিউটিও প্রতিষ্ঠার ইতিহাস : বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯৪৪ সালে। তখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বিশ্বের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে ব্রেটন উডস চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়। সেগুলো হচ্ছে– আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংক তথা বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা। ১৯৪৬ সালে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও শুল্কবিষয়ক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা গঠন করার প্রস্তাব অনুমোদন হয়। তবে অস্থায়ীভাবে চুক্তিরূপে আবির্ভাব ঘটে ‘জেনারেল এগ্রিম্যান্ট অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড’ বা গ্যাটের। গ্যাটের অধীনে চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোর পারস্পরিক বাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয়ে মোট আটটি পর্বে আলোচনা হয়। সর্বশেষ আলোচনা হয় উরুগুয়েতে। এতে শতাধিক দেশ অংশ নেয়। মূল আলোচনার বিষয় ছিল শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কমানো। সাত বছর ধরে চলা উরুগুয়ে রাউন্ডের আলোচনা শেষে ১৯৯৪ সালে সদস্য দেশগুলো স্বাক্ষর করে মারাকেশ চুক্তি। মূলত গ্যাট ১৯৯৪ একটি পূর্ণাঙ্গ ও ব্যাপকভিত্তিক বাণিজ্য চুক্তির পথ প্রশস্ত করে, যা থেকে হয় ১৯৯৫ সালে ডব্লিউটিও নামে পরিপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থার উৎপত্তি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কার্যপ্রণালি মূলত ‘রুলস বেইজড’ বা নীতিভিত্তিক। সদস্য দেশগুলোর আলোচনার ভিত্তিতে সম্মত চুক্তিই মূলত ডব্লিউটিও নীতিমালা। এ সংস্থার উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হচ্ছে বাণিজ্য চুক্তির ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য আলোচনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি, বাণিজ্য সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তি, কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বজায় রাখা ইত্যাদি।
সাম্প্রতিক বাস্তবতা : ডব্লিউটিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একটি ন্যায্য ও নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা গঠনের লক্ষ্যে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ অনেক দেশ নিজেদের স্বার্থে একতরফা শুল্ক আরোপ করছে, যা ডব্লিউটিও নীতিমালার পরিপন্থি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল সব সদস্য দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক বিরোধ মীমাংসা, শুল্ক ও অন্যান্য বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা কমিয়ে একটি উন্মুক্ত ও ন্যায্য বাজার নিশ্চিত করা। বিগত এক দশকে এ সংস্থার ‘ডিসপিউট সেটেলমেন্ট বডি’ কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ডব্লিউটিওর নিষ্ক্রিয়তা ও সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে অনেক দেশ আঞ্চলিক বা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির দিকে ঝুঁকছে। বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে ডব্লিউটিও যেন একটি ‘কাগুজে বাঘ’ হয়ে পড়েছে। দিন দিন কার্যকারিতা হারাচ্ছে সংস্থাটির। বিশ্বব্যাংক ও ওইসিডির এক যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য কাঠামো অকার্যকর হয়ে পড়লে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি প্রতিবছর ১ থেকে ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমে যেতে পারে।
ভবিষ্যৎ কোন পথে : বিশেষজ্ঞদের মতে, ডব্লিউটিও যদি দ্রুত তার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার না আনে, তবে এটি ধীরে ধীরে প্রাসঙ্গিকতা হারাবে। এর পরিবর্তে শক্তিধর দেশগুলোর শাসনাধীন একটি ‘পাওয়ার বেইজড ট্রেড অর্ডার’ গড়ে উঠবে, যেখানে দুর্বল দেশগুলো বাণিজ্যিকভাবে আরও পেছনে পড়বে। অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, বৈশ্বিক সংকট যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা বা অতিমারি ইত্যাদি মোকাবিলায় সমন্বিত বাণিজ্য কাঠামোর প্রয়োজন হবে, যা আবার ডব্লিউটিওর মতো একটি নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা সামনে আনবে।
জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সমকালকে বলেন, বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানদের বেরিয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা আমরা দেখছি। নতুন ট্যারিফ আরোপের মাধ্যমে তারা এটাই প্রকাশ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থাকে বিবেচনায় নিচ্ছে না। এর আগেও কয়েকটি বহুপক্ষীয় সংস্থা থেকে তাদের বের হয়ে যেতে দেখা গেছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক বাণিজ্য কাঠামো গড়ে তুলতে চাচ্ছে তারা। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বাণিজ্যকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে। এর মাধ্যমে ডব্লিউটিওর নীতি, মূল্যবোধ ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। ডব্লিউটিওতে সব দেশের মাধ্যমে বাণিজ্য আলোচনা হয়। বাণিজ্য বিরোধগুলো নিষ্পত্তি হয়। সেই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় ডব্লিউটিওর উচিত নিজেদের অবস্থানটি জানান দেওয়া। জোরালোভাবে বলা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিষয়টি ঠিকভাবে চলছে না। বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে বিশ্ব বাণিজ্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু শক্তভাবে তারা তা বলতে পারছে না। বাণিজ্য উন্নয়ন, বিরোধ নিষ্পত্তি, বাণিজ্য ব্যবধান কমানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে ডব্লিউটিওর ভূমিকা যেন ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশ ডব্লিউটিওর কারণে ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে। তাদের সবার এখন উচিত জোরালোভাবে এ বিষয়ে কথা বলা।
ডব্লিউটিওর মতো বৈশ্বিক সংস্থাগুলো দুর্বল হওয়ার পেছনে বড় কারণ মূল বা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোর ভূমিকা। তারা ঠিকভাবে সবকিছু পরিপালন করছে না। এতে বৈশ্বিক বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় অন্য দেশগুলো সবাই মিলে বলতে হবে ডব্লিউটিওর কার্যকারিতা দরকার। তারা এক হয়ে কাজ করলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে সংকট দেখা দিয়েছে, সেখান থেকে হয়তো নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর বা নতুনভাবে সাজানোর একটা সুযোগ তৈরি হবে।