রাজশাহীর তানোরে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে প্রতি কেজির ভাড়া ৪ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন হিমাগার মালিকরা। এতে এখন থেকে ৪ টাকার স্থলে ৮ টাকা গুনতে হবে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। নানান কারণ সামনে এনে সারাদেশে অভিন্ন ভাড়া নির্ধারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। যদিও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় ভাড়া কমিয়ে ৫ টাকা ৭৫ পয়সা করার মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এখনও এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

এ ভাড়া নির্ধারণ হলেও খাবার ও বীজ আলুর দাম বৃদ্ধির শঙ্কা করছেন ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বিদ্যুতের দাম না বাড়লেও সংরক্ষণের ভাড়া বাড়ানোকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে তানোর ও মোহনপুর উপজেলায় দফায় দফায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এর পর প্রশাসনের মধ্যস্ততায় ভাড়া ২ টাকা ২৫ পয়সা কমানোর মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

হিমাগারের ভাড়া যত বাড়বে, ব্যবসায়ীরা তত বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে মনে করেন উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের মুনজুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, এর প্রভাব ভোক্তার ওপর পড়বে। তারা খেয়ালখুশি মতো ভাড়া বাড়িয়েই যাচ্ছেন। তানোর আলু চাষি সমিতির সহসভাপতি লিমন আহমেদ বলেন, হিমাগারের ভাড়া বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই। দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে যদি তাদের সঙ্গে মালিকরা একমত না হন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দাবি আদায় করবেন।

দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, যন্ত্রাংশ, বিদ্যুৎ, ডিজেল, লুব্রিকেন্টের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিচ্ছে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের রাজশাহী জেলা শাখার প্রতিনিধি এম ওহিদুর রশিদ বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধির কারণে হিমাগারের জন্য অভিন্ন ভাড়া নির্ধারণ জরুরি। অসম প্রতিযোগিতার ফলে অনেক মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, চলতি বছর আলু সংরক্ষণে হিমাগারের ভাড়া হঠাৎ ৪ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের সম্মতিতে জেলা পর্যায়ের সভায় ৪ টাকার পরিবর্তে ৫ টাকা ৭৫ পয়সা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। হিমাগার থেকে বের হওয়ার সময় ওজন করে টাকা নেওয়া হবে। আলু চাষিরা এ সুবিধা পাবেন বলে জানান ইউএনও খায়রুল ইসলাম। 

জানা গেছে, এবার তানোর উপজেলার সাত ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টরে। ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩৫০ টন আলু উৎপাদনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে অন্তত ৩৮ শতাংশ জেলার সাতটি হিমাগারে সংরক্ষণ হবে। ১ লাখ ১০ হাজার ৩৭৫ টনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে।

হিমাগারের তথ্য অনুযায়ী, আগামী মার্চ মাসে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা আলু সংরক্ষণ শুরু করবেন। জুন মাসের পর মজুত থেকে বিক্রি শুরু হবে। এ প্রক্রিয়া চলবে বছরজুড়ে। সংরক্ষণ করার ওপর নির্ভর করে মৌসুমের শেষে দাম কেমন হবে। গত মৌসুমে হিমাগারে প্রতি কেজির ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ টাকা। এবার বাড়িয়ে ৮ টাকা করা হয়েছে। এতে মৌসুম শেষে দাম বাড়ার শঙ্কা ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের।

ভাড়া বাড়লে এর চাপ ভোক্তা পর্যায়ে পড়বে বলে জানান উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ। তিনি বলেন, সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াবেন। বিদ্যুতের দাম বাড়েনি, অন্য কোনো সমস্যা নেই। তার পরও ভাড়া বাড়ানোয় পুরো চাপ পড়বে ভোক্তার ওপর। হিমাগার মালিকরা যদি প্রকৃত কৃষকদের জন্য ভাড়ার ব্যাপারে কিছু ছাড়ের ব্যবস্থা করেন এবং বীজ আলু রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন, তবে পরবর্তী মৌসুমে সংকট থাকবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের একাধিক নেতার ভাষ্য, তারা সব হিমাগারে অভিন্ন ভাড়া নির্ধারণ করতে চান। কোনো মালিক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন। কিছু হিমাগারে অসম প্রতিযোগিতার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ধরনের প্রতিযোগিতা দূর করতে নতুন ভাড়া কার্যকর করা হবে। হাইকোর্টের নির্দেশনা মতো আলুর বস্তা ৭০-৮৫ কেজির পরিবর্তে ৫০ কেজি করতে কৃষক ও হিমাগার মালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি অনৈতিক উল্লেখ করে বিএডিসি বীজ ও সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন মুন্সী বলেন, মালিকদের এ সিদ্ধান্তে কৃষক আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে দাম কম পাচ্ছেন। ভাড়া বৃদ্ধি হবে তাদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। কৃষক হিসেবে তিনি প্রায় ৪৫ লাখ টাকা লোকসান করেছেন। এতে তাঁর মতো অনেকে আবাদে উৎসাহ হারাবেন। ধানের মতো আলুর দাম নির্ধারণ ও হিমাগারের ভাড়া কমানো প্রয়োজন।

ইউএনও খায়রুল ইসলাম বলেন, তানোর অন্যতম আলু উৎপাদন এলাকা। আলু চাষি ও ব্যবসায়ীদের সমস্যার যৌক্তিক সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ের সভায় বর্ধিত ভাড়ার বিষয়ে কিছুটা সমাধান হয়েছে বলে তিনি মৌখিকভাবে শুনেছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

অভিনেত্রী মেহের আফরোজ ও সাবাকে ডিবি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে

ফাইল ছবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ