হিমাগার ভাড়া বৃদ্ধিতে বিপদে কৃষক, দামে ভুগবেন ভোক্তা
Published: 7th, February 2025 GMT
রাজশাহীর তানোরে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে প্রতি কেজির ভাড়া ৪ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন হিমাগার মালিকরা। এতে এখন থেকে ৪ টাকার স্থলে ৮ টাকা গুনতে হবে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। নানান কারণ সামনে এনে সারাদেশে অভিন্ন ভাড়া নির্ধারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। যদিও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় ভাড়া কমিয়ে ৫ টাকা ৭৫ পয়সা করার মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এখনও এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
এ ভাড়া নির্ধারণ হলেও খাবার ও বীজ আলুর দাম বৃদ্ধির শঙ্কা করছেন ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বিদ্যুতের দাম না বাড়লেও সংরক্ষণের ভাড়া বাড়ানোকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে তানোর ও মোহনপুর উপজেলায় দফায় দফায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এর পর প্রশাসনের মধ্যস্ততায় ভাড়া ২ টাকা ২৫ পয়সা কমানোর মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
হিমাগারের ভাড়া যত বাড়বে, ব্যবসায়ীরা তত বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে মনে করেন উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের মুনজুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, এর প্রভাব ভোক্তার ওপর পড়বে। তারা খেয়ালখুশি মতো ভাড়া বাড়িয়েই যাচ্ছেন। তানোর আলু চাষি সমিতির সহসভাপতি লিমন আহমেদ বলেন, হিমাগারের ভাড়া বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই। দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে যদি তাদের সঙ্গে মালিকরা একমত না হন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দাবি আদায় করবেন।
দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, যন্ত্রাংশ, বিদ্যুৎ, ডিজেল, লুব্রিকেন্টের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিচ্ছে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের রাজশাহী জেলা শাখার প্রতিনিধি এম ওহিদুর রশিদ বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধির কারণে হিমাগারের জন্য অভিন্ন ভাড়া নির্ধারণ জরুরি। অসম প্রতিযোগিতার ফলে অনেক মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, চলতি বছর আলু সংরক্ষণে হিমাগারের ভাড়া হঠাৎ ৪ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের সম্মতিতে জেলা পর্যায়ের সভায় ৪ টাকার পরিবর্তে ৫ টাকা ৭৫ পয়সা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। হিমাগার থেকে বের হওয়ার সময় ওজন করে টাকা নেওয়া হবে। আলু চাষিরা এ সুবিধা পাবেন বলে জানান ইউএনও খায়রুল ইসলাম।
জানা গেছে, এবার তানোর উপজেলার সাত ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টরে। ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩৫০ টন আলু উৎপাদনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে অন্তত ৩৮ শতাংশ জেলার সাতটি হিমাগারে সংরক্ষণ হবে। ১ লাখ ১০ হাজার ৩৭৫ টনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে।
হিমাগারের তথ্য অনুযায়ী, আগামী মার্চ মাসে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা আলু সংরক্ষণ শুরু করবেন। জুন মাসের পর মজুত থেকে বিক্রি শুরু হবে। এ প্রক্রিয়া চলবে বছরজুড়ে। সংরক্ষণ করার ওপর নির্ভর করে মৌসুমের শেষে দাম কেমন হবে। গত মৌসুমে হিমাগারে প্রতি কেজির ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ টাকা। এবার বাড়িয়ে ৮ টাকা করা হয়েছে। এতে মৌসুম শেষে দাম বাড়ার শঙ্কা ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের।
ভাড়া বাড়লে এর চাপ ভোক্তা পর্যায়ে পড়বে বলে জানান উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ। তিনি বলেন, সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াবেন। বিদ্যুতের দাম বাড়েনি, অন্য কোনো সমস্যা নেই। তার পরও ভাড়া বাড়ানোয় পুরো চাপ পড়বে ভোক্তার ওপর। হিমাগার মালিকরা যদি প্রকৃত কৃষকদের জন্য ভাড়ার ব্যাপারে কিছু ছাড়ের ব্যবস্থা করেন এবং বীজ আলু রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন, তবে পরবর্তী মৌসুমে সংকট থাকবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের একাধিক নেতার ভাষ্য, তারা সব হিমাগারে অভিন্ন ভাড়া নির্ধারণ করতে চান। কোনো মালিক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন। কিছু হিমাগারে অসম প্রতিযোগিতার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ধরনের প্রতিযোগিতা দূর করতে নতুন ভাড়া কার্যকর করা হবে। হাইকোর্টের নির্দেশনা মতো আলুর বস্তা ৭০-৮৫ কেজির পরিবর্তে ৫০ কেজি করতে কৃষক ও হিমাগার মালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি অনৈতিক উল্লেখ করে বিএডিসি বীজ ও সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন মুন্সী বলেন, মালিকদের এ সিদ্ধান্তে কৃষক আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে দাম কম পাচ্ছেন। ভাড়া বৃদ্ধি হবে তাদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। কৃষক হিসেবে তিনি প্রায় ৪৫ লাখ টাকা লোকসান করেছেন। এতে তাঁর মতো অনেকে আবাদে উৎসাহ হারাবেন। ধানের মতো আলুর দাম নির্ধারণ ও হিমাগারের ভাড়া কমানো প্রয়োজন।
ইউএনও খায়রুল ইসলাম বলেন, তানোর অন্যতম আলু উৎপাদন এলাকা। আলু চাষি ও ব্যবসায়ীদের সমস্যার যৌক্তিক সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ের সভায় বর্ধিত ভাড়ার বিষয়ে কিছুটা সমাধান হয়েছে বলে তিনি মৌখিকভাবে শুনেছেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্র দিনে ২০০ কোটি ডলার আয় করছে—ট্রাম্পের এ দাবি কি সত্য
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে শুল্কের খড়্গ চাপানোর পেছনে যুক্তি হিসেবে বারবারই যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ‘অন্যায্য বাণিজ্যের’ শিকার হচ্ছে, সেই দাবি করছেন।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশে বিদেশি পণ্য প্রবেশের ওপর শুল্ক বা আমদানি কর ধার্য করেন। এর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের পণ্যে আরোপ করেছেন সর্বোচ্চ ১২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। প্রতিশোধ হিসেবে চীনও মার্কিন পণ্যে ধার্য করেছে বড় অঙ্কের শুল্ক।
শুল্ক নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করা দাবিগুলোর কিছু প্রমাণিত নয় বা এমনকি সেসব মিথ্যা। বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে বিবিসি ভেরিফাই।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারাও সম্প্রতি দাবি করেছেন, বছরে এখন থেকে শুল্ক আয় ৭০০ বিলিয়ন (৭০ হাজার কোটি) ডলারে দাঁড়াতে পারে। এ থেকে দিনে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি এ পরিসংখ্যান কীভাবে দাঁড় করালেন, সেটি পরিষ্কার নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক থেকে দেশটির আয় তাঁর দেওয়া এ পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক কম হতে পারে।যুক্তরাষ্ট্র কি দৈনিক ২ বিলিয়ন ডলার আয় করছেপ্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে তাঁর নতুন শুল্ক ঘোষণার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বলেছেন, ‘আমরা শুল্ক দিয়ে প্রচুর আয় করছি—দিনে (২ বিলিয়ন) ২০০ কোটি ডলার।’
ট্রাম্পের এ বক্তব্যকে সমর্থন করে, এমন কোনো প্রকাশিত তথ্য বিবিসি ভেরিফাই খুঁজে পায়নি। যদিও শুল্ক থেকে পাওয়া কত অর্থ ফেডারেল সরকারে পাঠানো হয়, তা নিয়ে প্রতিদিন বিবৃতি দেয় মার্কিন অর্থ বিভাগ।
৭ এপ্রিল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক আয় সর্বোচ্চ ২১৫ মিলিয়ন (২১ কোটি ৫০ লাখ) ডলার। এটি ট্রাম্পের দাবি করা অঙ্কের চেয়ে অনেক কম।
অবশ্য ট্রাম্পের ওই দাবি শুল্ক থেকে বছরের সামনের দিনগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের অনুমেয় আয়ের ভিত্তিতে হতে পারে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র দৈনিক ৯ বিলিয়ন (৯০০ কোটি) ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। কিছু বিশ্লেষক হিসাব কষে দেখেছেন, গত ২ এপ্রিল পর্যন্ত ট্রাম্পের আরোপ করা গড় শুল্কহার ছিল ২২ শতাংশ। সে হিসাবে আমদানি করা পণ্য থেকে দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আয় হতে পারে ২ বিলিয়ন (তবে নতুন শুল্ক ঘোষণায় দেশটিতে পণ্য আমদানি কমতে পারে)। এখানে যে আয়ের কথা বলা হয়েছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির পরিমাণ আগের মতোই ধরা হয়েছে।
ট্রাম্পের ওই দাবির ভিত্তি ৬ এপ্রিল তাঁর বাণিজ্য উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেও হতে পারে।
আরও পড়ুনপাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করলেন ট্রাম্প, এ সময় এই শুল্ক থাকছে ১০ শতাংশ১৬ ঘণ্টা আগেবাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারাও দাবি করেছিলেন, বছরে এখন থেকে শুল্ক আয় ৭০০ বিলিয়ন (৭০ হাজার কোটি) ডলারে দাঁড়াতে পারে। এ থেকে যুক্তরাষ্ট্র দিনে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা এ পরিসংখ্যান কীভাবে দাঁড় করালেন, সেটি পরিষ্কার নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আয় তাঁর দেওয়া এ পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক কম হতে পারে।
ট্রাম্পের দাবির পক্ষে হোয়াইট হাউসের বক্তব্য জানতে চেয়েছে বিবিসি ভেরিফাই।
আপনারা জানেন, আমরা তাদের (ইইউ) কাছ থেকে লাখ লাখ গাড়ি নিই। তারা কোনো গাড়ি নেয় না। তারা আমাদের কৃষিপণ্যও নেয় না। তারা কিছুই নেয় না।ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টচীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কি ১ লাখ কোটি ডলারএকটি দেশ যখন অন্য দেশের কাছে থেকে রপ্তানির তুলনায় পণ্য আমদানি বেশি করে, তখন বাণিজ্যঘাটতি দেখা দেয়। ট্রাম্পের দাবি, চীনের সঙ্গে তার এ ঘাটতির পরিমাণ বিশাল।
৭ এপ্রিল ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের ১ লাখ কোটি ডলারের বাণিজ্যঘাটতি।’
রপ্তানি বাণিজ্যে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে, ঠিক। তবে ট্রাম্প যেমনটা দাবি করেছেন, তেমনটা নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন