দীর্ঘ সময় লাইমলাইটে ছিলেন না ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। আড়ালে গিয়ে বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। কেবল তাই নয়, এক সন্তানের জননী তিনি। কয়েক দিন আগে পপির বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ করেছেন তার মা ও বোন। এরপর থেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এই নায়িকা।

গতকাল পপি একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। ৩৯ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের এই ভিডিও ক্লিপে মা-বোনের অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন। পাশাপাশি রঙিন দুনিয়াকে বিদায় জানানোর যেমন ইঙ্গিত দেন, তেমনি ধর্মীয় রীতি মেনে জীবন কাটানোর স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।

‘কুলি’খ্যাত নায়িকা পপি বলেন, “আমি পপি, দীর্ঘ ২৮ বছর সুনামের সঙ্গে চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে ক্যামেরার সামনে কথা বলছি একজন ব্যর্থ মানুষ হিসেবে। ব্যর্থ মানুষ বলছি এই কারণে যে, সবার মন জয় করতে পারলেও দীর্ঘ ২৮ বছর যাদের জন্য কাজ করেছি, এই হাতে যাদের লালন-পালন করেছি তাদের কাছে আমি অযোগ্য একজন মানুষ। তাদের মনমতো চলতে পারিনি। সে জন্যই বলেছি, আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। মানুষ তো সব সময় সবার কাছে ভালো হতে পারে না। আমি যখন ইনকাম করেছি, দুহাতে দিতে পেরেছি তখন আমার পরিবারের কাছে অনেক প্রিয় একজন মানুষ ছিলাম। এখন তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দিতে পারি না। তাই তাদের কাছে গলার কাঁটা, শত্রু এবং অপছন্দের মানুষ।”

আরো পড়ুন:

আমি বোধহয় অদৃশ্য গণ্ডি ভাঙতে পেরেছি: ইধিকা

ছ্যাঁকা খাওয়া পাবলিকদের কাছে এটা বাস্তব ঘটনা মনে হবে: বাপ্পারাজ

পরিবারের মিথ্যা অভিযোগে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন পপি। এ অভিনেত্রী বলেন, “কয়েক দিন যাবৎ দেখলাম আমার পরিবার কতটা নিচে নামতে পারে। কত হিংস্র ব্যবহার করতে পারে। কত নোংরা শব্দ ব্যবহার করতে পারে। মিডিয়ার কাছ থেকে সবসময় আমি সহযোগিতা পেয়েছি। পরিবারের কয়েকটা মানুষের মিথ্যা কিছু কথাবার্তা, মিথ্যা অভিনয়, নাটক, মিথ্যা অভিযোগ বলার সাথে সাথে যে মানুষগুলো আমাকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করার কথা তারাই মানুষের কথা অনুযায়ী, আমাকে ভুলভাবে, বাজেভাবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে উপস্থাপন করেছেন। এর থেকে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না। যাদের জন্য কাজ করেছি আজ তারা আমার না। এ জন্যই আল্লাহ বলেন, কেয়ামতের মাঠে কেউ কাউকে চিনবে না।”

পপি তার মা-বোনের অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “আমার মা-বোন যে অভিযোগ করছে, শক্তভাবে সেসবের প্রতিবাদ করছি। এর পুরোটাই বানোয়াট। তাদের স্বার্থ উদ্ধার হয়নি বলে সত্য একটা জিনিসকে অসত্য বলে প্রমাণিত করার চেষ্টা করছে। আমি একজন শিল্পী। আমি কি ভূমিদস্যু? যাদেরকে এই দুই হাতে ছোটবেলা থেকে লালন-পালন করেছি, জীবনের যে সময়টা উপভোগ করার সেই সময়টা তাদের জন্য ব্যয় করেছি। এটা আমার দায়িত্ব না। তারপরও ভাই-বোনকে নিজের সন্তান হিসেবে লালন-পালন করেছি। নিজের ভবিষ্যৎ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা অনেক কিছুই বাদ দিয়েছি। শুধু আমার ভাই-বোনকে মানুষ করার জন্য। কিন্তু এখন এসে দেখলাম মানুষ হয়নি। হিংস্র পশুরও কৃতজ্ঞতা থাকে, এদের মধ্যে সেই কৃতজ্ঞতাও নেই।”

মা-বোন অভিযোগ করলেও তাদের প্রতি পপির কোনো অভিযোগ নেই। এ অভিনেত্রীর ভাষায়, “কাদের নামে অভিযোগ করব? অভিযোগ করে বাইরের মানুষের নামে। যেহেতু আমার ভাই-বোন, বাবা-মাকে অনেক ভালোবাসি, তাই তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। তাদের দ্বারা আমার জীবনে অনেক কিছু ফেস করেছি। নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়েছি। আমি যে আয় করেছি, তারা সব নিয়ে নিয়েছে। আমার সাথে বেঈমানি করেছে। আমার টাকা দিয়ে কেনা সম্পত্তি আমার নামে ছিল না। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শূন্য ছিল। আমার দেহটা ছাড়া কোনো কিছুই আমার ছিল না। সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আমিও তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলাম।

পরিবারের সদস্যরা পপিকে শারীরিকভাবে নির্যাতনও করেছেন। এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একটা পর্যায়ে এসে মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য অবলম্বন লাগে। একটা সময় যখন জানতে পারলাম আমার পরিবার আমাকে ঠকিয়েছে, তারপরও চুপ ছিলাম। তাদের দ্বারা অনেক নির্যাতিত হয়েছি। আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। আমার টাকা চুরি করেছে। আমাকে খুন করতে খুনি ভাড়া করেছে। আমার আপন মা, ভাই ও বোন জড়িত ছিল।”

বাবা-মায়ের ভালোবাসা যেমন পাননি, তেমনি পপির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তারা। এ দাবি করে পপি বলেন, “পৃথিবীতে সব মা-ই মা না। খারাপ মা-ও আছে। দুর্ভাগ্যবশত আমার মা হয়তো আমাকে সেই পরিমাণ ভালোবাসতে পারেনি। আমার পরিবারের কাছে সব সময় সোনার ডিম পাড়া একটা হাঁস ছিলাম। দুধ দেওয়া একটি গরু ছিলাম। টাকা ছাপানোর মেশিন ছিলাম। সন্তান হিসেবে কখনো ভালোবাসাটা পাইনি। তারপরও এখন কোনো অভিযোগ নেই। একটা মানুষ যখন মেশিন নিয়ে পরিণত হয় তখন তার মূল্য মেশিন হিসেবে থাকে। মানুষ হিসেবে থাকে না। আমার বাবা-মা আমার সাথে অনেক বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমার সব টাকা-পয়সা বোনের অ্যাকাউন্টে ছিল। তারপরও কিছু বলিনি। ২০০৭ সালের ঘটনা বলছি। তখন জানতে পারলাম কোনো কিছুই আমার নেই। তখন সিনেমার মুরব্বি মিলে সব কিছু ঠিকঠাক করে দিয়েছিলেন।”

মায়ের কিছু ভিডিও ক্লিপ সবাইকে দেখানোর কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন পপি। তার ভাষায়, “আপনাদের আমি কিছু ভিডিও ক্লিপ দেব, সেগুলো আপনারা দেখে বিচার করবেন এটা কি কোনো মা? এটা কি কোনো বোন? আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই, আমি কাদের জন্য করেছি, কেন করেছি? এসব প্রশ্ন নিজেকে নিজে করতে করতে এখন আর কোনো হিসাব মেলাতে পারি না।”

কাঁদতে কাঁদতে পপি বলেন, “আমি সব কিছু থেকে দূরে চলে গেছি। মানুষ কত দিনই বাঁচবে! যে কয়দিন বাঁচি, সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই। একটু ভালো থাকতে চাই। একটু ভালো খেতে চাই, আল্লাহ-খোদার নাম নিতে চাই। পরিবারের কারণে কাজ করতে গিয়ে মানুষের যতটা গালি খেয়েছি, যতটা পাপ কামিয়েছি— সবকিছু মুছে সুন্দরভাবে মরতে চাই। এটা যদি আমার জন্য অপরাধ হয়ে থাকে, তবে আমি অপরাধী।”

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র পর ব র র ক দ র জন য কর ছ ন ক জ কর ন কর ছ

এছাড়াও পড়ুন:

আমার কোমরে সেই দাগটা ১০ বছর ছিল: শিল্পা

১৯৯৩ সালের ১২ নভেম্বর মুক্তি পায় আলোচিত হিন্দি সিনেমা ‘বাজিগর’। সিনেমাটির প্রধান তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেন— শাহরুখ খান, শিল্পা শেঠি ও কাজল। সিনেমাটির একটি দৃশ্যে, বাড়ির ওপর থেকে শিল্পাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন শাহরুখ। এই দৃশ্যটিও এখন অন্তর্জালে ভাইরাল। কারণ এ দৃশ্যের শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা একটি চলচ্চিত্র উৎসবে শেয়ার করেছেন শিল্পা।

চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের শুরুর ঘটনা বর্ণনা করে শিল্পা শেঠি বলেন, “সেই সময়ে চলচ্চিত্র সম্পর্কে কোনো জ্ঞান ছিল না। জানতাম না কীভাবে অভিনয় করতে হয়। আমি শুটিং সেটে একজন ছাত্রীর মতো ছিলাম। প্রথমদিকে তো খুব নার্ভাস থাকতাম। আমি দক্ষিণ ভারতের, তাই সেটে কখনো হিন্দিতে কথা পর্যন্ত বলতে পারিনি।”

হিন্দি ভাষা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছিল। সেই স্মৃতিচারণ করে শিল্পা শেঠি বলেন, “আমি যখন ‘আগ’ সিনেমা করি, তখন কাদের ভাইকে উর্দু শিখিয়ে দিতে বলতাম। আমি শুরু থেকেই শিখছিলাম। সংলাপ বলার সময়ে আমি খুবই নার্ভাস অনুভব করতাম। তারপরও সবকিছু ঠিক ছিল কারণ আমি প্রকাশ করতে পারি। আমি কী বলতে চাইছি, মানুষ তা বুঝতে পারতেন।”     

আরো পড়ুন:

নায়ক শাহরুখ, তবু অভিনয়ের প্রস্তাব ফেরান কাজল

আমি একজন ব্লাডি স্টার: শাহরুখ

‘বাজিগর’ সিনেমার সেই দৃশ্যের শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে শিল্পা শেঠি বলেন, “আকবর ভাই সিনেমাটির অ্যাকশন ডিরেক্টর ছিলেন। আমরা সেই দৃশ্যটি প্রায় পাঁচবার শুট করেছি। আমার কোমরে প্রায় ৮-১০ বছর ওই দাগটা ছিল। কারণ আমাকে এমন একটা বেল্ট পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যার দাগ শরীর থেকে যায়নি।”

দৃশ্যটির শুটিং করতে গিয়ে পনেরোবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন শিল্পা। তার ভাষায়, “সেই সময় ভিএফএক্সের তেমন অপশন ছিল না। তাই নিজেকেই সবকিছু করতে হয়েছিল। আমি পড়ে যাচ্ছি এবং বাড়িটি কাঁপছে এটা দেখানোর জন্য এ ধরনের শুট করা হয়। কিন্তু নির্মাতারা ভেবেছিলেন দৃশ্যটি আরো ভালোভাবে শুট করা যেতে পারে। তাই দৃশ্যটির জন্য আমি প্রায় ১৫ বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছি।”

শিল্পা মনে করেন, নব্বই দশকে কেবল ভালোবাসা দিয়ে সিনেমা নির্মিত হতো। তার মতে— “শুটিং শেষ করে প্রযোজনাটি দেখে মনে হয়, শটটি হিন্দি সিনেমার একটি আইকনিক মুহূর্ত। কারণ আপনি কোনো নায়ককে একজন নিষ্পাপ নায়িকাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলতে দেখেননি। শাহরুখ খান ছিলেন অসাধারণ। নব্বইয়ের দশকে সিনেমাগুলো নির্মিত হতো নিছক ভালোবাসা দিয়ে, অর্থ দিয়ে নয়।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অভিষেকের অপেক্ষায় ডেবিড
  • দুই ট্রাকের সংঘর্ষে এক চালক নিহত
  • যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার
  • একজন গেরিলা নেতার ‘জুয়াখেলা’
  • মায়ের মৃত্যুর তিন দিন পর কিশোরীকে ধর্ষণ, বাবা গ্রেপ্তার
  • ধর্ষণের বিরুদ্ধে অভিনয় শিল্পীর প্রতিবাদ
  • রোজার দিনে কড়া রোদে দীর্ঘ অপেক্ষা
  • ‘ধর্ষককে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করুন’
  • রূপগঞ্জে প্রবাসীদের গাড়ীতে ডাকাতি: ২ পুলিশসহ গ্রেপ্তার ৫
  • আমার কোমরে সেই দাগটা ১০ বছর ছিল: শিল্পা