কালাইয়ের ১১টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কে বিক্ষোভ করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বৃহস্পতিবার শত শত শিক্ষার্থী, আলুচাষি ও জনতা এ কর্মসূচি পালন করেন। তারা বাড়তি ভাড়া বাতিল করার দাবি জানান।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এমনিতে আলুর দাম কম, তার ওপর হিমাগারের ভাড়া অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে কৃষকদের সংকটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রান্তিক চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়বেন, যার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে।

আগের ভাড়া বহালে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ইউএনওর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। ইউএনও শামীমা আক্তার জাহান স্মারকলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কৃষকরা বলছেন, এ বছর আলু উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। মৌসুমের শুরুতে বাড়তি দামে বীজ, সার, কীটনাশক কিনে আবাদ করতে গিয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। এমনিতেই তারা লোকসানে পড়েছেন। তার ওপর হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধি করায় আলু সংরক্ষণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর এক বস্তা আলু সংরক্ষণের ভাড়া ছিল ২৮০ টাকা, যা এ বছর বেড়ে হয়েছে ৫২০ টাকা। অস্বাভাবিক ভাড়া বৃদ্ধি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে, যাতে তারা কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হন। পরে হিমাগার মালিকরা মজুত করে জুন মাসের পর সিন্ডিকেট করে উচ্চমূল্যে বিক্রি করবেন।

বিক্ষোভ চলাকালে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। হিমাগার মালিকদের স্বেচ্ছাচারী ও মনগড়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান তারা। আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি দ্রুত ভাড়া কমানো না হয়, তাহলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

জয়পুরহাটে ১৯টি হিমাগারের মধ্যে কালাইয়ে রয়েছে ১১টি। আলুচাষি আব্দুল হান্নান বলেন, ১১টি হিমাগারে প্রায় দেড় লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়। ৬৫ কেজির এক বস্তা আলু থেকে এ মৌসুমে ২৪০ টাকা বেশি নিলে, হিমাগার মালিকরা এক টনে ৩ হাজার ৭২০ টাকা লুটে নেবে। দেড় লাখ টনে কত টাকা হয়? এ টাকা কৃষকের পকেট থেকেই নেওয়া হবে। এ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া জরুরি।

আরেক আলুচাষি ফজলুল করিমের ভাষ্য, হিমাগার মালিকদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কৃষকরা আলু সংরক্ষণ করতে না পারলে তারা কম দামে কিনে নেবেন। পরে বেশি দামে বিক্রি করবেন। এটা হতে দেওয়া যাবে না। কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না।

দেশের কৃষকরা সংকটে রয়েছেন উল্লেখ করে কালাই উপজেলার সমন্বয়ক নেওয়াজ মোরশেদ বলেন, অমানবিক ভাড়া বৃদ্ধি তাদের আরও বিপদে ফেলছে। তাদের ওপর জুলুম চালানো হচ্ছে। হিমাগার মালিকরা নিজেদের স্বার্থে কৃষকদের সর্বস্ব লুটতে চাইছেন, কিন্তু তা হতে দেওয়া যাবে না।

জেলা সমন্বয়ক এহসান আহমেদ নাহিদ বলেন, ভাড়া বৃদ্ধি সরাসরি কৃষকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। যদি অবিলম্বে এ ঘোষণা প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে বড় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। প্রয়োজনে পুরো জেলা অচল করে দেওয়া হবে বলে জানান।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

১২৩ ফুট উঁচুতে থাকা শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ১২৩ ফুট উচ্চতার দেশের বৃহত্তম শেখ মুজিব টাওয়ারের মুর‌্যালটি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা উপজেলার শমশেরনগরের সরকারি শেখ মুজিব মেমোরিয়াল কলেজের ম্যুরালটি ভাঙচুর চালায়। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর করা ম্যুরালের অংশগুলোতে আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার কাষ্ঠভাঙ্গা ইউনিয়নের শমশেরনগর গ্রামে ২০২১ সালের দিকে কলেজসংলগ্ন স্থানে দেশের মধ্যে বৃহত্তম ১২৩ ফুট উচ্চতার শেখ মুজিবের নামে একটি টাওয়ার তৈরি করা হয়। এর নাম দেওয়া হয় ‘দ্য স্ট্যাচু অব স্পিচ অ্যান্ড ফ্রিডম’। ওই গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ডা. রাশেদ শমসের এটি তৈরি করেছিলেন। এর ১২৩ ফুট উপরে শেখ মুজিবের ম্যুরালটি স্থাপন করেন। ওই চত্বরেই টাওয়ারের বিভিন্ন পাশে আরও ২০টি ছোট ভাস্কর্য ছিল।

প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা মিছিল সহকারে ওই স্থানে যায়। তারা টাওয়ারটিতে উঠে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ও বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর চালায়। শেষে ওই ভাঙচুর করা ম্যুরালের কিছু অংশ বারবাজার শহরে এনে সড়কের উপরে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঝিনাইদহ জেলা কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক হোসাইন আহমেদ বলেন,  খুনি শেখ হাসিনার পরিবারের কোনো মুরাল স্থাপনা এ দেশে থাকবে না। সেইসঙ্গে বাংলার জমিনে কোনো ফ্যাসিবাদের চিহ্নও থাকবে না। এজন্য তারা শেখ মুজিবের ওই ম্যুরালগুলো ভেঙে পুড়িয়ে দিয়েছে। এ সময় তাদের সঙ্গে শত শত ছাত্র-জনতা অংশ নেয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ