অভিযানে বন্ধ, চলে গেলেই চালু হয় অবৈধ ইটভাটা
Published: 7th, February 2025 GMT
উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে বন্ধ করে দেওয়ার পরদিনই কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চালু হয়েছে ছয়টি অবৈধ ইটভাটা। মঙ্গলবার উপজেলার চরসাদিপুর ইউনিয়নের শ্রীকোল এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়েছিল।
এ সময় ভাটাগুলোকে নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি ব্যবহারসহ নানা অভিযোগে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভবিষ্যতে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভাটা পরিচালনা না করার বিষয়ে মুচলেকাও দেন মালিকরা। বুধবার সরেজমিন ওই এলাকার কেআরবি, এনএসবি, এমএমবিসহ বিভিন্ন ভাটায় ইট পোড়াতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুকনো পদ্মা নদীর প্রায় চার কিলোমিটার চর ইজিবাইকে পাড়ি দিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চরসাদিপুরের শ্রীকোল এলাকার কেআরবি, এনএসবি, এমএমসি, ভিআইপি, পদ্মা ও এমডিবি ব্রিকসে অভিযান চালায় প্রশাসন। ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি কেআরবি, এনএসবি, এমএমসি, ভিআইপি ও পদ্মা ব্রিকসকে ৭০ হাজার করে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা; এমডিবি ব্রিকসকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রাম চিমনিও ভেঙে দেওয়া হয়।
বুধবার সকালে সরেজমিন ওই ভাটাগুলোতে কাজ চলতে দেখা গেছে। এমনকি নিষিদ্ধ ঘোষিত ড্রাম চিমনিতে কাঠ পোড়ানোর দৃশ্যও চোখে পড়ে। সবগুলো ভাটার চারপাশে কৃষিজমি। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, প্রতিবছর উচ্ছেদের নামে নাটক করে প্রশাসন। নামমাত্র জরিমানা করে মালিকদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়। অথচ পরদিন আবারও চালু হয় ভাটা; পোড়ানো হয় কাঠ। এ কারণে প্রতি বছরই অবৈধ ভাটার সংখ্যা বাড়ছে।
চিমনি দিয়ে ভাটা করতে অন্তত ৪০ লাখ টাকা খরচ হয় বলে জানিয়েছেন শ্রীকোল এলাকার কেআরবি ভাটার মালিক আছাই মণ্ডল। তিনি বলেন, জরিমানা-মুচলেকা দিয়েই পাঁচ বছর ধরে ভাটা পরিচালনা করে আসছেন। মঙ্গলবার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ও মুচলেকা দিয়েছেন। এভাবেই অন্যরাও ভাটা পরিচালনা করে আসছেন। আগামী বছরও এভাবেই ভাটা পরিচালনা করবেন বলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন তিনি।
পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে ২২ বর্গমাইল আয়তনের চরসাদিপুর ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বাস। আইন অমান্য করে এ ইউনিয়নের ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ৩৩টি ইটভাটা। এর মধ্যে অন্তত ১৯টিতে রয়েছে টিনের তৈরি ড্রাম চিমনি। এ ইউনিয়ন ঘেঁষে কুষ্টিয়া সদর ও পাবনা সদর ইউনিয়নের অংশেও আরও অন্তত সাতটি অবৈধ ভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় দেদার পোড়ানো হচ্ছে নদী ও ফসলি জমির মাটি; আশপাশের এলাকার গাছের কাঠ। ইট বহনে ব্যবহৃত ট্রাকের কারণে গ্রামীণ সড়ক ভেঙে পড়ছে; দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় প্রশাসনও সহজে সেখানে অভিযানে যেতে চায় না।
২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের ৬০ সদস্যের দল চরসাদিপুর ইউনিয়নে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানে যায়। সেদিন ওই ইউনিয়নের ভোমরার মোড় এলাকায় তাদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখেন ভাটার মালিক ও শ্রমিকরা। পরে ভাটা মালিকরা ‘আগামী বছর থেকে অবৈধভাবে ভাটা চালাবেন না’ মর্মে মুচলেকা দেন। সেটি নিয়েই কোনোমতে এলাকা ছাড়ে প্রশাসনের দলটি। এ ঘটনায় ১১ ডিসেম্বর ইটভাটার ১০ মালিকের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া পরিবেশ আদালতে ১০টি মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
চরসাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.
অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযানের তথ্য জানিয়ে ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবারও নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। এ সময় ছয় ভাটা মালিককে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আগামীতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ইউএনও আরও বলেন, ৪ ডিসেম্বরের ঘটনায় আদালতে মামলা চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড র ম চ মন এল ক র ক আরব
এছাড়াও পড়ুন:
ইউএনও’র কর্মচারীকে মারধর, যশোরে যুবদলের আহ্বায়ককে বহিষ্কার
ওএমএসের ডিলার নিয়োগকে কেন্দ্র করে যশোরের মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অ্যাকাউন্ট্যান্ট ক্লার্ক শাহীন আলমকে মারধর করায় দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন অভিযুক্ত উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোতাহারুল ইসলাম।
শুক্রবার (৭ মার্চ) কেন্দ্রীয় যুবদলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে এ বহিষ্কারাদেশ পাঠানো হয়েছে।
যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইঞা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “পেশীশক্তি প্রদর্শনপূর্বক প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর সাথে অসদাচারণের মাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোতাহারুল ইসলামকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, “বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দের কোন অপকর্মের দায় সংগঠন নেবে না। তার সাথে যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতিমধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন।”
উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোতাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করে ভুক্তভোগী শাহীন আলম জানান, বুধবার (৫ মার্চ) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ইউএনও কার্যালয়সংলগ্ন শহীদ মিনারের সামনে তাকে মারধর করা হয়। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ চত্বরে শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। মানববন্ধনে ইউএনও নিশাত তামান্না, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়াজ মাখদুমসহ উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী অংশ নেন।
মনিরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘‘শাহীন আলমকে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলা পরিষদে কর্মরত সবাই একত্রিত হয়ে মানববন্ধন করেছি। আমরা সরকারি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য হয়রানিমুক্ত সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ দাবি করছি।”
এদিকে, শাহীন আলমকে মারধরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মণিরামপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রিপন সরদারকেও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মণিরামপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কামরুল গাজী ও সদস্যসচিব মাসুদ গাজী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
ঢাকা/রিটন/এস