সুনামগঞ্জে আজ থেকে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী ‘শাহ আবদুল করিম লোক উৎসব’
Published: 7th, February 2025 GMT
বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের ১০৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় দুই দিনের ‘লোক উৎসব’ শুরু হওয়ার কথা আছে। আজ শুক্রবার বিকেল থেকে তাঁর জন্মস্থান উপজেলার উজানধল গ্রামের মাঠে এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া।
আজ বিকেল চারটার দিকে শাহ আবদুল করিম লোক উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত থাকবেন দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সনজীব সরকার ও মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স মেজর জেনারেল (অব.
উৎসবের আয়োজক শাহ আবদুল করিম পরিষদের সভাপতি ও তাঁর ছেলে বাউল শাহ নূর জালাল বলেন, এবারও উৎসবে বাউল করিমের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করবেন বিশিষ্টজনেরা। পাশাপাশি শাহ আবদুল করিমের শিষ্য, অনুরাগী ও স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে তাঁর গান গাইবেন দেশের জনপ্রিয় শিল্পীরা।
শাহ আবদুল করিমের সৃষ্টি জুড়ে মানুষ, সাম্য ও প্রেমের জয়গান আছে জানিয়ে নূর জালাল বলেন, কালনী নদীর তীরে বসেই মনের গভীর থেকে উঠে আসা মাটির সুরে সাদাসিধে কথা আর উপমা বসিয়ে তিনি তৈরি করেছেন অসংখ্য কালজয়ী গান। এই মরমি শিল্পীকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতেই এ উৎসবের আয়োজন।
বাংলা লোকগানের এই বাউল সাধকের স্মরণে ২০০৬ সাল থেকে উজানধল গ্রামে উৎসবটি আয়োজিত হয়ে আসছে। উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ভক্ত-সাধকদের পাশাপাশি সংগীতপ্রেমীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠে গ্রামটি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আধুনিক’ পাহাড়ি গান-নৃত্য যাঁদের দিয়ে শুরু
নানা উৎসবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় শিহরণ জাগায় মারমা শিল্পীদের পাখানৃত্য। বিশেষ করে মারমাদের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে ‘ত্নহ তাখা হ্নাসই পোয়ে, অপ্য পিরে সাংগ্রাইংলে, ঙেনি রাকমা জা ফ্রইতে, ম্রারে ফুরে তোয়ি নিংরে (বছর ঘুরে সাংগ্রাইং এসেছে/ আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে/ উষ্ণ-শীতল আবেশ নিয়ে/ আমার প্রিয়তমের শীতল অনুভূতি জাগাব পাখা দিয়ে) গানের সঙ্গে পাখানৃত্য প্রতিবছরই দর্শকদের মাতিয়ে আসছে। হৃদয়কাড়া এই নৃত্য-গান দুটিরই স্রষ্টা হিসেবে রয়েছে ‘মারমা শিল্পীগোষ্ঠী। কেবল পাখানৃত্য নয়, মারমাদের ময়ূরনৃত্য, থালানৃত্য, মাছ ধরা নৃত্য, ছাতানৃত্য—সবকিছুরই রূপকার এই সংগঠন। নিজেদের সৃষ্টি করা অসংখ্য পাহাড়ি গানেও শ্রোতাদের আবেগে-উচ্ছ্বাসে মাতিয়ে রাখে সংগঠনটি। বলা যায়, পাহাড়িদের সাংস্কৃতিক চর্চায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে সংগঠনটি।
বান্দরবানে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মারমা শিল্পীগোষ্ঠী’। যাত্রা শুরু ১৯৯৬ সালে। এই সংগঠনের শিল্পীরা নিজেদের সৃষ্টিশীলতায় ঝিমিয়ে পড়া মারমা সংস্কৃতির যেমন প্রাণ সঞ্চার করেছেন, তেমনি ত্রিপুরা, ম্রো, খুমি, খেয়াংসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকেও জাগিয়ে তুলেছেন। বর্তমান সময়ে মারমাদের জনপ্রিয় অসংখ্য নৃত্য-গান মারমা শিল্পীগোষ্ঠীর সৃষ্টি। পুরোনোকে ধারণ করে এসব গান-নৃত্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সমাদৃত হয়ে আসছে।
সাত-আটজন তরুণ-তরুণী পাহাড়ি সংস্কৃতিচর্চা ও বিকাশের জন্য সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। গতানুগতিকতার বাইরে পাহাড়ের শিল্প-সংস্কৃতির নতুন পথরেখা সন্ধান ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য। প্রাচীন সংস্কৃতির সঙ্গে সমকালকে মিলিয়ে নৃত্য-গানের রূপান্তর করেছেন। এ পর্যন্ত শিল্পীদের একক ও দলীয় গানের বহু অ্যালবাম বেরিয়েছে। নাটক ও নৃত্যও হয়েছে বহু।
মারমা শিল্পীগোষ্ঠীর গানের অ্যালবামের মধ্যে সবচেয়ে সাড়া জাগিয়েছে ‘টং অঙোয়ে’ (পাহাড়ের বাষ্প); নাটকের মধ্যে ওয়াকুসে বা তুলা ব্যবসায়ী। গান, নৃত্য ও নাটক ছাড়াও ২০০১ সালে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক–পরিচ্ছদ, গয়না ও ভাষা তুলে ধরার জন্য মিস্টার ও মিস মারমা প্রতিযোগিতা আয়োজন শুরু করা হয় সংগঠনের উদ্যোগে। সাংগ্রাইং উৎসবে এই আয়োজন তরুণ-তরুণীদের নিজেদের সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে সচেতন করে। তবে কয়েক বছর করার পর এর আর ধারাবাহিকতা রাখা যায়নি। মারমা ছাড়াও ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, খেয়াং, খুমিসহ অন্য জাতিগোষ্ঠীগুলোর সংস্কৃতিচর্চা এবং বিকাশেও মারমা শিল্পীগোষ্ঠী কাজ করছে। ম্রো আধুনিক গানের প্রথম অ্যালবাম মারমা শিল্পীগোষ্ঠী থেকে বের করা হয়েছে।
ময়ূর নৃত্য পরিবেশন করছেন মারমা শিল্পীরা