রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিশিষ্টজনের নিন্দা
Published: 7th, February 2025 GMT
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবন ভাঙচুরের ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ভবনটি ভাঙার নিন্দা জানিয়েছেন অনেকেই। তারা বলছেন, ভবন ভেঙে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রতিবাদ হয় না। আবার অনেকের মতে, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড এই ঘটনার জন্য দায়ী।
অভ্যুত্থানের ছয় মাস উপলক্ষে ছাত্র সমাজের উদ্দেশে গত বুধবার রাতে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা জানায় নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এর পরপরই এ নিয়ে দেখা যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া।
শেখ হাসিনা ভাষণ দিলে ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নানা পেজ থেকে। তবে ভাষণের আগেই সেখানে ভাঙচুর শুরু হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাড়ি সুধা সদনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি, কার্যালয় ও স্থাপনায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবের ম্যুরাল এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ফলক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেছেন, এই ভাঙচুরে ছাত্রদলের কোনো কর্মসূচি ছিল না। গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার একটি অংশ এ কাজে জড়িত।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুরের জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উস্কানিকে দায়ী করেছেন। বুধবার রাত পৌনে ১২টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, সার্বিক পরিস্থিতির জন্য পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উস্কানি মূলত দায়ী। মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে অন্তরে ধারণ করেন না। এটি তাঁর ঘৃণিত স্বভাব। আরেকটি স্ট্যাটাসে দেশবাসীকে কোনো ধরনের উস্কানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আধিপত্যবাদ মোকাবিলা করছি। লীগ বা হাসিনা সে অর্থে কিছুই না, বরং আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের সম্প্রসারণ। এ আধিপত্যবাদ মোকাবিলায় প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে দূরদর্শী পদ্ধতি নেওয়া। কারণ এ লড়াই মাত্র শুরু হলো। অন্তত এক দশক পরে এ লড়াইয়ের একটা মীমাংসা হয়তো হবে। অথচ সে জন্য আমাদের প্রস্তুতি সামান্যই।
তিনি লেখেন, ভাঙার পর গড়ার সুযোগ এসেছে; কিন্তু অনন্ত ভাঙা প্রকল্প আমাদের জন্য ভালো ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবহ নয়। মূর্তি না ভেঙে আমাদের উচিত শত্রুদের শক্তির বিপরীতে পাল্টা চিন্তা, শক্তি ও নেতৃত্ব গড়ে তোলা।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসে বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাড়ি, চিহ্ন, প্রতীক ভেঙে রাগ দেখানো যায়। ফ্যাসিবাদ যায় না, ফ্যাসিবাদের পুনরুৎপাদন হয়।
গুম কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, আমি স্তম্ভিত, এটা কোনোভাবেই সমর্থন করার সুযোগ নেই। কোনো সুপ্ত গোষ্ঠী মনোবাসনা পূরণের চেষ্টা করছে কিনা– সেটা ভেবে দেখা দরকার। এটা ভালো কিছু বয়ে আনবে না। এই দিন দিন নয়, আরও দিন আছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানান স্থাপনায় চলা ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটির সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনাগুলো আইনের শাসন, আইনের সমান আশ্রয় লাভ ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের পরিপন্থি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব এক বিবৃতিতে বলেন, ৩২ নম্বর বাড়িটি একদিকে যেমন ছিল স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের পর এটা ছিল একনায়কতান্ত্রিক শাসন ও বাকশালের নিদর্শন। তিনি বলেন, ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো স্থাপনা ভেঙে দেওয়া বা গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেয়ে আরও বেশি প্রয়োজন হচ্ছে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ও সমাজশক্তির ঐক্যের ভিত্তিতে বিকল্প রাজনৈতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, শেখ হাসিনা নিজেই পুরো ঘটনা উস্কে দিয়েছেন। জুলাই হত্যা এবং ১৫ বছরের দুঃশাসন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার মধ্যে কোনো অনুতাপ নেই।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, আওয়ামী লীগের রিকনসিলিয়েশনের কথা উঠলেও দলটির নেতাকর্মীরা জুলাই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে অনুতপ্ত নয়, বরং দিল্লিতে বসে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। ৭২ থেকে ৭৫– এই বাড়িকে কেন্দ্র করে যে কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল, সেই কাঠামোর মধ্য দিয়েই জনগণকে শোষণ করা এবং বিপুল মানুষকে হত্যা করার ঘটনাও ঘটেছে। তিনি বলেন, যে কোনো ধরনের ফ্যাসিস্ট কাঠামো, ফ্যাসিস্ট উপাদান বাংলাদেশের মানুষ ভেঙে ফেলবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসানাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেন, ‘হাসিনা আপনি ভিন্ন একটি প্রজন্মের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
গণঅধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, পতনের পরও শেখ হাসিনা উস্কানিমূলক কথা বলে যাচ্ছেন– এটা যেমন ঠিক, আবার দেশের ভেতরেও নানা ধরনের গ্রুপ তৈরি হয়েছে, যারা দেশে অস্থিরতা জিইয়ে রাখতে চায়। তাদেরও নানা ধরনের ইন্ধন আছে।
তিনি বলেন, সরকারের উপদেষ্টাদের কারও কারও ফেসবুকের লেখায় মনে হয়েছে, ৩২ নম্বরে ভাঙচুরে তাদের সমর্থন রয়েছে। সরকার যদি এই ধরনের কর্মকাণ্ডে সমর্থন দেয়, তাহলে তো নৈরাজ্য তৈরি হবেই।
বাম গণতান্ত্রিক জোট গতকাল এক সভায় বঙ্গবন্ধুর বাড়িসহ নানা জায়গায় ভাঙচুর ও বুলডোজার ব্যবহারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে। নেতারা বলেন, এসব বিষয়ে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা পরিস্থিতি আরও সংকটপূর্ণ করে তুলেছে। দেশে সরকার থাকা অবস্থায় এ ধরনের ঘটনা মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ নমন ড র জন ত ক র ঘটন য় র সদস য ধ নমন ড র র ঘটন ফ সব ক র জন য আওয় ম সরক র ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
পাঁচ দিনেও জ্ঞান ফেরেনি সেই শিশুর, কাটেনি শঙ্কা
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুর জ্ঞান পাঁচ দিনেও ফেরেনি। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) কর্তৃপক্ষ।
সিএমএইচের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বুকে প্রচণ্ড চাপ দেওয়ায় শিশুটির ফুসফুসের বিভিন্ন জায়গায় বাতাস জমে গেছে। রোববার দুপুরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অতিরিক্ত বাতাস বের করে বুকে টিউব বসানো হয়েছে। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে তার মস্তিষ্কেও ক্ষতি হয়েছে।
শিশুটির মা ফোনে সমকালকে জানান, হাসপাতালে মেয়ের শয্যাপাশে আছেন তিনি। কোনো নড়াচড়া নেই। সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
গতকাল রোববার সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শিশুটিকে দেখতে সিএমএইচে যান। খোঁজখবর নিয়ে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি। দোষীরা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন উপদেষ্টা।
জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ
ধর্ষণে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে গতকাল মাগুরা আদালত চত্বরের সামনে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করেন। ফলে নিরাপত্তা শঙ্কায় আসামিদের আদালতে হাজির এবং রিমান্ড আবেদন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব হোসেন।
ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখ, বোনের স্বামী, ভাশুর ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে জেলা আদালত চত্বরের সামনে অবস্থান নেন মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটকে অবস্থান নেন। তারা আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে মূল ফটকে তারা বিক্ষোভ করেন। যৌথ বাহিনীর আশ্বাসে বেলা ৩টার দিকে সেখান থেকে সরে ভায়নার মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এখানে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে কর্মসূচি।
আন্দোলনকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নৃশংস এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান। এর ব্যত্যয় হলে আইন উপদেষ্টা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
শিশুটির ছবি-ভিডিও অপসারণে হাইকোর্টের নির্দেশ
হাইকোর্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম, অনলাইন পোর্টালসহ যেসব জায়গায় শিশুটির ছবি ও ভিডিও ছড়িয়েছে, তা অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। যেসব মাধ্যমে শিশুটির ছবি প্রকাশ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও তিন দিনের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসি, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ১৩ মার্চের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এসব নির্দেশনা দেন। আদেশে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ এবং ১৮০ দিনের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই আদেশে ভুক্তভোগী শিশু ও তার ১৪ বছর বয়সী বড় বোনের স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিশ্চিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আট বছরের শিশুটি গত বুধবার (৫ মার্চ) বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও তার অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। শিশুটিকে আরও উন্নত চিকিৎসার শনিবার বিকেলে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) স্থানান্তর করা হয়।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম সমকালকে জানান, শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মা বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার ৪ আসামি আগেই হেফাজতে ছিলেন। মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গত শনিবার (৮ মার্চ) দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে শিশুটির মা উল্লেখ করেন, বড় মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা হিটু শেখ শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি হিটুর স্ত্রী ও আরেক ছেলেও জানতেন। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারা শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, চার মাস আগে বড় মেয়ের সঙ্গে সজিবের বিয়ে হয়। এর পর থেকে বড় মেয়েকে তার শ্বশুর অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি ওই পরিবারের সবাই জানলেও প্রতিবাদ করেননি।
মামলায় বলা হয়েছে, বুধবার রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে শিশুটি ঘুমায়। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই। মেঝেতে পড়ে আছে। তখন সে বড় বোনকে জানায়, গোপনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। বিষয়টি হালকাভাবে নেন তিনি। পরদিন সকাল ৬টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে একই কথা জানান। তখন তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলে শিশুটি জানায়, রাতে দুলাভাই দরজা খুলে দিয়েছিল। তখন তার বাবা (হিটু শেখ) তার মুখ চেপে ধরে অন্য কক্ষে নিয়ে যায়। এ সময় চিৎকার করার চেষ্টা করলে গলা চেপে ধরা হয়েছিল। পরে তাকে বোনের কক্ষে ফেলে রেখে যায় হিটু শেখ। বোন বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার মাকে জানাতে গেলে সজীব ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করেন। ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেন। পরে দুই বোনকে দুই কক্ষে আটকে রাখা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে সজিবের মা মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে শিশুটিকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান তিনি।
মেয়েটির বড় বোন সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার ২০ দিন আগে সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ ছিল না। তিনি ঘরে আলো জ্বালিয়ে টয়লেটে যান। সেখান থেকে ফিরে দেখেন ঘরে আলো বন্ধ। এ সময় হঠাৎ একজন পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে। উচ্চতা ও অন্যান্য বিষয় দেখে তিনি বুঝতে পারেন, জড়িয়ে ধরা ব্যক্তি তার শ্বশুর হিটু শেখ। বিষয়টি স্বামী সজিবকে তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। পরে বাবার বাড়ি চলে যান। আর স্বামীর বাড়ি ফিরতে চাইছিলেন না। বাবা-মা বুঝিয়ে ছোট বোনকে সঙ্গে করে পাঠিয়ে দেন শ্বশুর বাড়ি।