বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবন ভাঙচুরের ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ভবনটি ভাঙার নিন্দা জানিয়েছেন অনেকেই। তারা বলছেন, ভবন ভেঙে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রতিবাদ হয় না। আবার অনেকের মতে, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড এই ঘটনার জন্য দায়ী। 

অভ্যুত্থানের ছয় মাস উপলক্ষে ছাত্র সমাজের উদ্দেশে গত বুধবার রাতে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা জানায় নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এর পরপরই এ নিয়ে দেখা যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া।

শেখ হাসিনা ভাষণ দিলে ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নানা পেজ থেকে। তবে ভাষণের আগেই সেখানে ভাঙচুর শুরু হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাড়ি সুধা সদনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি, কার্যালয় ও স্থাপনায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবের ম্যুরাল এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ফলক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.

) হাফিজ উদ্দিন আহমদ গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছেন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় কারা জড়িত– সেই তথ্য বিএনপির কাছে নেই। তিনি বলেন, এগুলো গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য আগামী দিনে গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সে জন্য কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে পারেন। 

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেছেন, এই ভাঙচুরে ছাত্রদলের কোনো কর্মসূচি ছিল না। গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার একটি অংশ এ কাজে জড়িত।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুরের জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উস্কানিকে দায়ী করেছেন। বুধবার রাত পৌনে ১২টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, সার্বিক পরিস্থিতির জন্য পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উস্কানি মূলত দায়ী। মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে অন্তরে ধারণ করেন না। এটি তাঁর ঘৃণিত স্বভাব। আরেকটি স্ট্যাটাসে দেশবাসীকে কোনো ধরনের উস্কানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।

উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আধিপত্যবাদ মোকাবিলা করছি। লীগ বা হাসিনা সে অর্থে কিছুই না, বরং আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের সম্প্রসারণ। এ আধিপত্যবাদ মোকাবিলায় প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে দূরদর্শী পদ্ধতি নেওয়া। কারণ এ লড়াই মাত্র শুরু হলো। অন্তত এক দশক পরে এ লড়াইয়ের একটা মীমাংসা হয়তো হবে। অথচ সে জন্য আমাদের প্রস্তুতি সামান্যই। 

তিনি লেখেন, ভাঙার পর গড়ার সুযোগ এসেছে; কিন্তু অনন্ত ভাঙা প্রকল্প আমাদের জন্য ভালো ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবহ নয়। মূর্তি না ভেঙে আমাদের উচিত শত্রুদের শক্তির বিপরীতে পাল্টা চিন্তা, শক্তি ও নেতৃত্ব গড়ে তোলা। 

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসে বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাড়ি, চিহ্ন, প্রতীক ভেঙে রাগ দেখানো যায়। ফ্যাসিবাদ যায় না, ফ্যাসিবাদের পুনরুৎপাদন হয়।

গুম কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, আমি স্তম্ভিত, এটা কোনোভাবেই সমর্থন করার সুযোগ নেই। কোনো সুপ্ত গোষ্ঠী মনোবাসনা পূরণের চেষ্টা করছে কিনা– সেটা ভেবে দেখা দরকার। এটা ভালো কিছু বয়ে আনবে না। এই দিন দিন নয়, আরও দিন আছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানান স্থাপনায় চলা ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটির সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনাগুলো আইনের শাসন, আইনের সমান আশ্রয় লাভ ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের পরিপন্থি।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব এক বিবৃতিতে বলেন, ৩২ নম্বর বাড়িটি একদিকে যেমন ছিল স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের পর এটা ছিল একনায়কতান্ত্রিক শাসন ও বাকশালের নিদর্শন। তিনি বলেন, ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো স্থাপনা ভেঙে দেওয়া বা গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেয়ে আরও বেশি প্রয়োজন হচ্ছে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ও সমাজশক্তির ঐক্যের ভিত্তিতে বিকল্প রাজনৈতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা। 

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, শেখ হাসিনা নিজেই পুরো ঘটনা উস্কে দিয়েছেন। জুলাই হত্যা এবং ১৫ বছরের দুঃশাসন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার মধ্যে কোনো অনুতাপ নেই। 

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, আওয়ামী লীগের রিকনসিলিয়েশনের কথা উঠলেও দলটির নেতাকর্মীরা জুলাই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে অনুতপ্ত নয়, বরং দিল্লিতে বসে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। ৭২ থেকে ৭৫– এই বাড়িকে কেন্দ্র করে যে কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল, সেই কাঠামোর মধ্য দিয়েই জনগণকে শোষণ করা এবং বিপুল মানুষকে হত্যা করার ঘটনাও ঘটেছে। তিনি বলেন, যে কোনো ধরনের ফ্যাসিস্ট কাঠামো, ফ্যাসিস্ট উপাদান বাংলাদেশের মানুষ ভেঙে ফেলবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসানাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেন, ‌‌‌‌‌‌‌‌‘হাসিনা আপনি ভিন্ন একটি প্রজন্মের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন।

গণঅধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, পতনের পরও শেখ হাসিনা উস্কানিমূলক কথা বলে যাচ্ছেন– এটা যেমন ঠিক, আবার দেশের ভেতরেও নানা ধরনের গ্রুপ তৈরি হয়েছে, যারা দেশে অস্থিরতা জিইয়ে রাখতে চায়। তাদেরও নানা ধরনের ইন্ধন আছে। 

তিনি বলেন, সরকারের উপদেষ্টাদের কারও কারও ফেসবুকের লেখায় মনে হয়েছে, ৩২ নম্বরে ভাঙচুরে তাদের সমর্থন রয়েছে। সরকার যদি এই ধরনের কর্মকাণ্ডে সমর্থন দেয়, তাহলে তো নৈরাজ্য তৈরি হবেই। 

বাম গণতান্ত্রিক জোট গতকাল এক সভায় বঙ্গবন্ধুর বাড়িসহ নানা জায়গায় ভাঙচুর ও বুলডোজার ব্যবহারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে। নেতারা বলেন, এসব বিষয়ে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা পরিস্থিতি আরও সংকটপূর্ণ করে তুলেছে। দেশে সরকার থাকা অবস্থায় এ ধরনের ঘটনা মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ নমন ড র জন ত ক র ঘটন য় র সদস য ধ নমন ড র র ঘটন ফ সব ক র জন য আওয় ম সরক র ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

ফের ফিফার নিষেধাজ্ঞায় পাকিস্তান ফুটবল

পাকিস্তানের ফুটবলে আবারও নেমে এলো নিষেধাজ্ঞার ছায়া। সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশনের (পিএফএফ) ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ফিফা।  

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফিফার বিধি মেনে সংশোধিত সংবিধান গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে পিএফএফ। তাই তাদের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  

এ নিয়ে ২০১৭ সালের পর তৃতীয়বারের মতো নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়লো পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশন। তবে ফিফা জানিয়েছে, সংবিধান সংশোধনের শর্ত পূরণ করলেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।  

এ বিষয়ে পিএফএফ নরমালাইজেশন কমিটির চেয়ারম্যান হারুন মালিক বলেন, 'বিশ্ব ফুটবল সংস্থা ও পাকিস্তান ফুটবলের নবনির্বাচিত কংগ্রেসের মধ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এর কারণেই নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হলো পাকিস্তান ফুটবলকে।'

সম্পর্কিত নিবন্ধ