‘বাবার কোনো জায়গাজমি ছিল না। তিনি মারা যান ২০০৫ সালে। তখন আমার বয়স ২০। মেজ ভাই অখিলের ১৬ ও ছোট ভাই কালুর সবে ১৩। অসহায় অবস্থায় পরিবারের হাল ধরেন মা। আমাদের নিয়ে অন্যের জমিতে কাজ করেছেন। নিজেও কাজ করেছেন অন্যের বাড়ি বাড়ি ঘুরে। মুড়ি ভেজে বিক্রি করেছেন। বহু কষ্টে বড় করেছেন আমাদের। যখন সবাই বড় হলাম, বৃদ্ধ মাকে একটু শান্তিতে রাখব, তখনই নিরুদ্দেশ হন তিনি।’

একদমে কথাগুলো বললেন নিখিল বৈরাগী। তিনি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রয়াত নিত্যানন্দ বৈরাগীর ছেলে। নিখিলদের মা মমতা বৈরাগী ২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি সকালে বাড়ি থেকে সবার অলক্ষ্যে বেরিয়ে যান। সেই থেকে তাঁর অপেক্ষায় দিন কাটছে পরিবারের সদস্যদের। 

উপজেলার বাকাল গ্রামের বাসিন্দা এ পরিবারটি। মমতা বৈরাগী তিন ছেলে, পুত্রবধূ নাতি-নাতনি নিয়ে কষ্টেসৃষ্টে থাকলেও পরিবারে সুখ ছিল। নিখিল এখন ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাঁর অন্য দুই ভাই অখিল বৈরাগী ও কালু বৈরাগী পেশায় কাঠমিস্ত্রি।

পরিবারের সদস্যরা জানান, মমতার বাড়ি পাশের ডুমুরিয়া গ্রামে। ১৯৯৫ সালে তাঁর বাবা নিরঞ্জন বালার মরদেহ পাওয়া যায় বাকাল-কোদালধোয়া সড়কের পাশে। এর ১০ বছর পর স্বামী নিত্যানন্দ বৈরাগী হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই দুই শোক বুকে চেপে কিশোর-তরুণ তিন ছেলেকে নিয়ে জীবনের লড়াই শুরু করেন মমতা। তবে মাঝেমধ্যেই মানসিক ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ দেখা দেয়। প্রায়ই তিনি কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাবার বাড়ি বাকাল ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামে চলে যেতেন। কখনও চলে যেতেন বোনের বাড়ি রত্নপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামে। দু-একদিন থেকে বাড়ি ফিরে আসতেন। 

তাঁর মেজ ছেলে অখিল বৈরাগীর স্ত্রী ঝুনু রানী বলেন, ‘দিনটি ছিল শুক্রবার। শাশুড়িকে সকালের খাবার দিয়ে আমি সংসারের কাজে যাই। তিনি খাবার খেয়ে পান মুখে দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের সড়ক ধরে দক্ষিণ দিকে যান। আমরা সারাদিন তাঁর অপেক্ষায় থাকলেও তিনি আজ অবধি ফিরে আসেননি। বউ হয়ে এ বাড়িতে আসার পর তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন।’ 

মমতা হারিয়ে যাওয়ার সময় অখিলের ছেলে তন্ময় বৈরাগী ছিলেন ১০ বছর বয়সী। এখন তিনি আগৈলঝাড়ার সরকারি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র। তন্ময় বলেন, ‘ঠাকুরমাকে হারিয়ে নাতি হিসেবে তাঁর আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। তাঁর কথা প্রায় ভুলতে বসেছি।’

নিখোঁজ হওয়ার পর মমতার ছেলেরা আগৈলঝাড়া, পাশের উপজেলা গৌরনদী, উজিরপুর, কালকিনি, ডাসার, কোটালীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করেন। মায়ের ছবিসহ পোস্টারিং করেন। এমনকি ঢাকা, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে ভারতেও খোঁজ করেছেন। 

মমতার দেবর গৌরাঙ্গ বৈরাগী বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমাদের বাড়িতে এক লোক গরু কিনতে এসেছিলেন। তিনি বৌদিকে (মমতা) কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটা স্ট্যান্ডে দেখেছেন বলে জানান।  আমরা দ্রুত সেখানে যাই। এক পাগলের পলিথিনের কিছু পোটলা পাই, বৌদিকে পাইনি।’

মমতার জা রেখা ঘটক বলেন, ‘আমরা এখনও তাঁর অপেক্ষায় আছি; আজীবন থাকব। তিনি যদি বেঁচে নাও থাকেন, তবুও ১২ বছরের আগে কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করা যাবে না। তাঁর  অপেক্ষায় এক যুগ থাকব। এর মধ্যে ফিরে না এলে ধরে নেব তিনি বেঁচে নেই। তখন সনাতন ধর্মীয় ঋতি-নীতি অনুযায়ী শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করব।’

বাকাল ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিনয় বৈরাগী বলেন, ‘মমতা বৈরাগী নিখোঁজ হওয়ার পর আমিও তাঁর ছেলেদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে গিয়েছি। কিন্তু এখনও খোঁজ মেলেনি।’

আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুশংকর মল্লিক বলেন, মমতা বৈরাগী নিখোঁজের ঘটনায় সাত বছর আগে জিডি হয়েছিল। তখন আগৈলঝাড়া থানা ডথেকে দেশের সব থানায় অবগত করা হয়। কিন্তু কোনো তথ্য আসেনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর শ ল কর ছ ন পর ব র মমত র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পরীক্ষার্থী এবার

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হচ্ছে। প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা। ১১ শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৩০ হাজার ৪৫টি স্কুল ও মাদ্রাসার ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় বসবে। এ বছর দেশের ৩ হাজার ৭১৫ কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। চলবে ১৩ মে পর্যন্ত।

সাধারণ ৯ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে ৭ লাখ ১ হাজার ৯৫৩ জন ছাত্র এবং ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৭৮ ছাত্রী। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী এ বছর ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন ছাত্র এবং ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ ছাত্রী। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ এবং ৩৪ হাজার ৯২৮ জন ছাত্রী।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় ১ লাখ। সংখ্যায় তা ৯৫ হাজার ২২২ জন। শুধু তাই নয়, বিগত পাঁচ বছরে এবারই সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। জানা গেছে, ২০২৪ সালে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। ২০২৩ সালে ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন, ২০২২ সালে ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ এবং ২০২১ সালে ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম-বেশি হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কোনো বছরই রেজিস্ট্রেশন করা সব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসে না। এটাকে ঝরে পড়াও বলা যায় না। সাধারণত কমপক্ষে তিন বছরের মধ্যে শিক্ষাজীবনে ফিরে না এলে তাকে ঝরে পড়া বলে। দারিদ্র্যের কারণে অনেকে এক বছর পরীক্ষা দিতে না পারলে পরের বছর অংশ নেয়।

রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মাদ ফেরদাউস সমকালকে বলেন, নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা সব শিক্ষার্থীই বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেবে, এমনটা কখনও হয় না। দুই বছরে দারিদ্র্য, বাল্যবিয়ে, অসুস্থতা অথবা টেস্ট পরীক্ষায় ভালো করতে না পারা অনেক পরীক্ষার্থীই শেষ পর্যন্ত বোর্ড পরীক্ষায় বসে না। তারা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে পরে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম বা বেশি বছরভেদে হতেই পারে, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের কেউ কেউ মনে করেন, এখনও শিক্ষার্থী ঝরে পড়া বন্ধ হয়নি। উপবৃত্তি চালু করায় একসময় শিক্ষার্থী বেড়ে ছিল। উপবৃত্তির পরিমাণটা এখন এমন যে, তা দিয়ে আর অভিভাবক-শিক্ষার্থীকে স্কুলমুখী করা যাচ্ছে না। আর করোনার পর থেকে অনেক শিক্ষার্থী সাধারণ ধারার পড়াশোনা ছেড়েছে। একই সঙ্গে ইবতেদায়ি তথা আলিয়া ধারার মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী কম ভর্তি হচ্ছে। অনেকে হাফেজি পড়ছে, কওমি ঘরানার মাদ্রাসায় ভর্তি হচ্ছে। ফলে সাধারণ ধারার পড়ালেখায় শিক্ষার্থী কমছে।

এবার প্রশ্ন ফাঁসমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকাল হওয়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ২০০ গজের মধ্যে শুধু পরীক্ষার তিন ঘণ্টা ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। তবে কেন্দ্রভেদে এ দূরত্ব কমবেশি হতে পারে।’

কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ

ঢাকা মহানগরী এলাকায় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ