লিবিয়ায় ২৯ অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার
Published: 7th, February 2025 GMT
লিবিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিমের দুটি এলাকা থেকে অন্তত ২৯ জন অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিরাপত্তাবিষয়ক একটি অধিদপ্তর ও লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্ট গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে।
লিবিয়ার আলওয়াহাত জেলার নিরাপত্তা অধিদপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশটির দ্বিতীয় বৃহৎ শহর বেনগাজি থেকে প্রায় ৪৪১ কিলোমিটার দূরে জিখারা অঞ্চলের একটি খামারে গণকবরে ১৯ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। চোরাচালানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের ফেসবুকে পোস্ট করা কিছু ছবিতে দেখা গেছে, পুলিশ কর্মকর্তা এবং জালু শহরের রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীরা মরদেহগুলো কালো প্লাস্টিক ব্যাগে রাখছেন।
গতকাল সন্ধ্যায় পৃথক এক ফেসবুক পোস্টে লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, দেশটির রাজধানী ত্রিপোলি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে জাওইয়া শহরের দিলা বন্দর থেকে আরও ১০টি মরদেহ উদ্ধার করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। অভিবাসীদের একটি নৌকা ডুবে যাওয়ার পর ওই দিন সকালে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।
রেড ক্রিসেন্টের ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে, স্বেচ্ছাসেবীরা পোতাশ্রয়ে মরদেহগুলোকে সাদা ব্যাগে রাখছেন। আর একজন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিটি ব্যাগের ওপর নম্বর বসাচ্ছেন।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, জালুতে পাবলিক প্রসিকিউশন অফিসের উপস্থিতিতে অধিদপ্তর জিখারা এলাকায় চোরাচালান এবং অবৈধ অভিবাসনের কারণে মৃত্যু হওয়া ১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। তাঁরা একটি পরিচিত চোরাচালান নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
আলওয়াহাত নিরাপত্তা অধিদপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, খামারের মোট তিনটি কবরে মরদেহগুলো পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি কবর থেকে একটি, আরেকটি কবর থেকে চারটি এবং অন্যটি থেকে ১৪টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, ‘প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মরদেহগুলো ফরেনসিক চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
সংঘাত ও দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্তি পেতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যেতে অভিবাসীদের জন্য একটি ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়েছে লিবিয়া।
গত জানুয়ারির শেষে আলওয়াহাত অপরাধ তদন্ত বিভাগ জানিয়েছে, তারা সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের ২৬৩ জন অভিবাসীকে মুক্ত করেছে। তাঁরা অত্যন্ত খারাপ মানবিক ও স্বাস্থ্যগত অবস্থায় একটি চোরাচালান দলের হাতে আটক ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
দলিত কংগ্রেস নেতার স্পর্শে ‘অপবিত্র’ মন্দির, গঙ্গাজল ছিটিয়ে ‘পবিত্র’ করলেন বিজেপি নেতা
ভারতের রাজস্থানে নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতা জ্ঞানদেব আহুজা। আলওয়ার এলাকার একটি রামমন্দির তিনি পবিত্র করলেন গঙ্গাজল ছিটিয়ে। কেননা, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী নেতা টিকারাম জুলি ওই মন্দিরে ঢুকেছিলেন। বিগ্রহ স্পর্শ করেছিলেন।
টিকারাম জুলি কংগ্রেসের দলিত নেতা। দলিত হওয়া সত্ত্বেও গত রোববার রামনবমী উপলক্ষে তিনি আলওয়ারের রামমন্দিরের অভিষেক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। স্পর্শ করেছিলেন বিগ্রহকে। ফলে বিগ্রহসহ গোটা মন্দির ‘অপবিত্র’ হয়ে যায়। অপবিত্র মন্দিরকে পবিত্র করতেই জ্ঞানদেব আহুজা মন্দিরে ও বিগ্রহে গঙ্গাজল ছিটিয়েছেন।
বিজেপির এই সাবেক বিধায়ক নিজেই বড় মুখ করে এই কথা জানিয়েছেন। টিকারামের মন্দিরে যাওয়ার খবর শুনে জ্ঞানদেব বলেন, ‘দলিত নেতা টিকারামের লজ্জিত হওয়া দরকার। তিনি হিন্দুত্ব বিরোধীই শুধু নন, সনাতন বিরোধীও। তাঁর অপবিত্র ছোঁয়ায় কলুষিত হয়েছে পবিত্র মন্দির ও বিগ্রহ। মন্দিরে গঙ্গাজল ছিটিয়ে আমি তা পবিত্র করব।’
কথা রেখেছেন আলওয়ারের রামগড় কেন্দ্রের এই সাবেক বিজেপি বিধায়ক। গত সোমবার তিনি সদলে ওই মন্দিরে যান। গঙ্গাজল ছিটিয়ে ‘পবিত্র’ করেন মন্দির ও বিগ্রহ। কংগ্রেস নেতা টিকারামকে তিনি ‘পাপী’ বলে সম্বোধন করেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এই খবরে বলা হয়েছে, বিজেপি নেতা জ্ঞানদেব আহুজা কংগ্রেসের দলিত নেতা টিকারামের নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করতে চাননি। তাঁর কথায়, ওই পাপীর নাম নিলে আমার মুখ অপবিত্র হবে। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবে পাই না, এই ধরনের অপবিত্রদের কেন মন্দিরে আহ্বান জানানো হয়।’
রাজ্যে এ নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক কাজিয়া।
কংগ্রেস নেতা টিকারাম জুলি গণমাধ্যমে বলেন, ‘দলিতদের বিষয়ে বিজেপির মনোভাব কেমন, আহুজার এই আচরণই তার প্রমাণ। ওই দল দলিতদের এখনো অস্পৃশ্য মনে করে। তাই মন্দিরে গঙ্গাজল ছিটায়। এই আচরণ ব্যক্তিগতভাবে আমার বিরুদ্ধে আক্রমণই শুধু নয়, অস্পৃশ্যতার মতো সামাজিক ব্যাধিও ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ মারাত্মক অপরাধ।’
টিকারাম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি মদন রাঠোরকে এ ঘটনার জবাবদিহি করতে হবে। জানাতে হবে, বিজেপি এই দলিতবিরোধী মনোভাব অনুমোদন করে কি না।
বিজেপি নেতার ওই আচরণের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার গোটা রাজ্যে কংগ্রেস প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে।
রাজ্যের সাবেক কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোবিন্দ সিং দোতাসরাসহ দলীয় নেতারা প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। গেহলট বলেন, ব্রাহ্মণ্যবাদী বিজেপি যে দলগতভাবে দলিতবিরোধী, আহুজার এই আচরণই তার প্রমাণ। সেই কারণে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এখনো নীরব। আহুজার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা তাই নেওয়া হয়নি।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি দোতাসরা বলেন, বিজেপির হৃদয়ে যে দলিতদের প্রতি ঘৃণা ছাড়া আর কিছু নেই, এই ঘটনা ও তাদের নেতৃত্বের নীরবতা তার প্রমাণ। শুধু দলিতদেরই নয়, বিজেপি ঘৃণা করে কৃষকদের, নারীদের, শ্রমিকদেরও। বোঝা যায় না, তাদের মনে কেন এত ঘৃণা জমা রয়েছে।
এই ঘটনার নিন্দা না করলেও বিজেপি দলগতভাবে তাদের এ ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছে। দলের মুখপাত্র লক্ষ্মীকান্ত ভরদ্বাজ গণমাধ্যমকে বলেন, আহুজা যা করেছেন, তার দায় তাঁর। দল এ জন্য দায়ী নয়। বিজেপি অস্পৃশ্যতায় বিশ্বাস করে না।