Samakal:
2025-03-10@10:36:30 GMT

বেনারসি

Published: 7th, February 2025 GMT

বেনারসি

মিরপুরে বসবাসরত বিহারিদের ঠিকানা ‘মুসলিম ক্যাম্প’। এই ক্যাম্পে শত শত ঘরবাড়ি আছে কিন্তু ওগুলোর আলাদা নাম নেই। এর পরেও অনেকের ঘর আছে। কেউ কেউ তো ঘর ভাড়াও দেয়। পারভেজের ঘর নেই, শৈশবে বাবা মারা গেছেন, কৈশোরে মাকে হারাতে হয়েছে।

এক চাচা ছিলেন, তিনিও পরিবারসহ পাকিস্তানে চলে গেছেন। খালা আর খালুর কাছে বড় হয়েছে মোহাম্মদ পারভেজ। আব্দুল খালেক পারভেজকে বেনারসি বুনন শিখিয়ে দিয়েছেন। ষোলো বছর বয়সেই কারিগর হিসেবে পারভেজের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। মহাজন আলাদা কদর শুরু করেন। একদিন ঘোষণা করেন তাঁর কারখানার সেরা কারিগর পারভেজ।

এরপর আব্দুল খালেক পারভেজকে আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকতে বলেন। এবং কেন তিনি এ কথা বললেন– সেই প্রশ্ন করতে নিষেধ করে দিলেন। কারখানায় আব্দুল খালেক একেবারে চুপচাপ থাকেন, তাকে চুপচাপ দেখতে ভালো লাগে না পারভেজের। সে ভাবে ভাড়া বাসায় চলে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই করে। বেনারসি বুনতে গেলে তার যেন কী হয়, নিজের মনে বুনে চলে। তাকে নিয়ে কে কী ভাবছে, সেসব ভাবার সময় পায় না। পারভেজ যখন মনোযোগ দিয়ে শাড়ি বোনে, আব্দুল খালেক দূর থেকে কখনও কখনও স্নেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। আবার কখনও হেরে যাওয়া শাসকের মতো ভেতরে ভেতরে পারভেজের পরাজয় কামনা করেন। পারভেজ তার কাজ শেখার স্মৃতি মনে করে খালেকের দিকে অবনমিত দৃষ্টিতে তাকায়। আবার নিজের ওস্তাদকে হারিয়ে দেওয়ার সন্তুষ্টিতেও ভোগে। সন্তুষ্টিবোধ করলেই তার টানির সুতায় গেরো লেগে যায় কিংবা ছিঁড়ে যায়। পারভেজ বুঝতে পারে সন্তুষ্টিতে ভোগা তার জন্য পাপ। সে আরও মনোযোগ দিয়ে শাড়ি বুনতে চায়। এই মনোভাব তাকে একা করে দেয়। এরপর থেকে তার সামনে-পেছনে কোনো প্রতিযোগী নেই। সে কেবলই তার কাজটি করে যাবার জন্য বদ্ধপরিকর। 

উনসত্তরে জন্ম পারভেজের। চৌদ্দ বছর বয়সে বেনারসি বুনন শিখেছে। বিশ বছর বয়সে দক্ষ কারিগর হয়ে ওঠে। পারভেজ বিশ্বাস করে বেনারসি হাত, পা, চোখ, আর হৃদয় দিয়ে বুনতে হয়। একটু নির্জনতা লাগে। প্রার্থনার ঘরে যেমন প্রত্যেককে আলাদা আলাদা নির্জনতা ছুঁয়ে থাকে, তাঁতঘরেও তাই। রাতে ঘরে ফিরলে একা হয়ে যায় পারভেজ। একা ঘরে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারে না। দিনে শাড়ি বুনতে বুনতে সব কথা যেন সে শাড়িকেই শোনাতে চায়। একবার লাল বেনারসির জমিনে আড়া নকশা ফুটিয়ে তোলার সময় তার বুকের ভেতরে নকশার ফুলগুলো দোলা দিতে থাকে, সুগন্ধ ছড়ায়। আড়া নকশার শাড়ি বুনতে তার বেশি ভালো লাগে। জমিনে অনেক জায়গা ফাঁকা থাকে। ফুলগুলো যেন শ্বাস নিতে পারে, দুলে থাকার জায়গা পায়। পারভেজের প্রিয় ঋতু বর্ষা। এক বর্ষার ভেজা বাতাসে দিনের আলোয় শাড়ি বুনতে বুনতে পারভেজের মন হারিয়ে যেতে থাকে। লাল জমিনে সোনালি জরির পাড়ওয়ালা শাড়ি। পারভেজের মনে হয়, তাঁতের সামনে কোনো মেয়ে এই শাড়ির জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। রাতে একা ঘরে ফিরে তার মনে হয় কেউ বেনারসি পরে ঘরে হেঁটে বেড়াচ্ছে, তার এক চুড়ির আঘাতে আরেক চুড়ি বেজে চলেছে।

যশোরের মুকুল ঘটক একদিন পারভেজকে বলেন, শোনো আর কতদিন একা থাকবা। আমাদের জাতের একটা মেয়ে হাতে আছে, দেখতে একটু কালো কিন্তু তাকে বিয়ে করলে তুমি একটা ঘর পাবা। 

ততক্ষণে মেঘের ছায়ায় পারভেজের হাতে বোনা বেনারসি ঘন, গভীর লাল হয়ে উঠেছে। পারভেজ মুকুল ঘটকের দিকে একবার তাকিয়ে বলে, বাঙালি বিয়ে করব না।

–মোহাজের শুনতে ভালো লাগে?

অভ্যাস হয়ে গেছে।

–পছন্দের কোনো মেয়ে আছে নাকি?

মুকুলের কথা শেষ হতে না হতেই বানা আর মাকু রেখে পারভেজ পাটরা থেকে উঠে টানার গিঁটলাগা সুতা ছাড়াতে শুরু করে। লাল সুতা জড়ানো বানা আর সোনালি জরি জড়ানো মাকু দেখে মনে হতে লাগল ওগুলো একটু বিশ্রাম পেয়েছে। মুকুল ঘটক মনোযোগ দিয়ে পারভেজের সুতা ছাড়ানো দেখেন। তারপর বলেন, তোমার ধৈর্য আছে।
এবার পারভেজ জানতে চায় মেয়ের নাম কী?

–রেশমা। একটু কালো। কিন্তু জানো তো মেঘের ছায়ায় কালো মেয়েদের খুব ভালো দেখায়। এই তোমার শাড়ির মতো। দেখতেছ না, এই মেঘের ছায়ায় শাড়িটা কত সুন্দর হয়ে উঠেছে।

পারভেজ হাসে। শাড়িটা তার কাছে তখন আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। নিজের হাতে বোনা শাড়ি চোখের সামনে এমন প্রাণ পেয়ে গেল যে পারভেজের মনে হতে থাকে– এই এখন কেউ এই শাড়ি শরীরে জড়িয়ে বসে থাকবে তার পাশে। কিন্তু তার স্বপ্নে কোনো বাঙালি মেয়ে নেই। বিহারি বিয়ের একটা রীতি আছে। বিয়ের সাত দিন আগে মেয়ের গায়ে হলুদ দেওয়া হয়। একবার হলুদ ছোঁয়ানোর পরেই মেয়ে চলে যায় পর্দার আড়ালে। কবুল বলার পর তাকে অন্যরা দেখতে পারে। ভাবতেই ভালো লাগে পারভেজের। ছেলেদের ক্ষেত্রেও নিয়মনীতি আছে। ছেলেদের বিয়ের তিন দিন আগে গায়ে হলুদ দেওয়া হয়। এরপর তাকেও ঘরে থাকতে হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন হলুদ দিয়ে গোসলের পর বিয়ে করতে যায়। পারভেজও স্বপ্ন দেখে মুসলিম ক্যাম্পের চেনা-জানা পরিবারের লোকেরা আসবে, গায়েহলুদের অনুষ্ঠান হবে। সবাই গিয়ে নতুন বউকে ঘরে এনে দেবে। যশোরে বিয়ে হলে ঢাকা থেকে সেখানে লোক নেওয়া তার পক্ষে তো সম্ভব নয়। যেতে হবে একা, ফিরতে হবে অন্য জাতের এক মেয়েকে নিয়ে। বাঙালি মেয়ে এই ক্যাম্পের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে না। 

মুকুল ঘটক অবশ্য তাচ্ছিল্য করে বলেন, আরে মিয়া তোমরা হইলে কচুরিপানা। আর কচুরিপানার ধর্ম হইলো পানির স্রোত যেদিকে যাবে, সেদিকে চলে যাওয়া। সুযোগ পাইছ কাজে লাগাও। তাছাড়া এই ক্যাম্পে তুমিই একা নও, আরও দুই-একজন যশোরের মেয়ে বিয়ে করছে। পারভেজ মুকুল ঘটকের দিকে তাকায়। –তাকাইয়ে থাইকো না। যা বলছি ভেবেচিন্তে বলছি। তোমার ভালোর জন্য বলছি। যশোরে নিজের একখান কারখানাও গড়ে তুলতে পারবা।

পারভেজের পূর্বপুরুষ ভারতের গৌরবপুর থেকে এই বাংলা ভূখণ্ডে এসেছে। সে পূর্বপুরুষদের এই চলে আসাকে দুর্ভাগ্য মনে করে। আর মনে করে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা তাদের ভাগ্যের নকশা পাল্টে দিয়েছে। কিন্তু পূর্বপুরুষদের কচুরিপানা হিসেবে ভাবতে পারে না। মুকুল ঘটকের কথা মনে করে বেনারসিটার প্রতি রাগ, ক্ষোভ জন্ম হয় তার। পারভেজের ইচ্ছা করে শাড়িটা ছিঁড়ে ফেলতে। কিন্তু শাড়িটা ছিঁড়লে তাকে শাড়ির মূল্য শোধ করতে হবে, কিনলেও শোধ করতে হবে। রাতে বৃষ্টি হয়। তাঁতের গাতায় পানি উঠে গেল কিনা, দুশ্চিন্তা হয় পারভেজের। পরদিন সকালে গিয়ে দেখে গাতা সামান্য ভিজে গেছে। তবে পা ডুবিয়ে বসতে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু শাড়িটার প্রতি তার ক্ষোভ যায় না। মাকু চালিয়ে চালিয়ে পাড়ের বুটি ফুটিয়ে তুলছিল। হঠাৎ মনে হয় হাতের ভেতর শাড়িটা নড়েনড়ে উঠছে। স্বপ্ন পারভেজকে তাড়া করে বেড়ায়। কোনো বিহারি সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করে ঘরে আনবে সে। পারভেজ বিশ্বাস করে বৃষ্টি এক ধরনের আড়াল তৈরি করতে পারে। কোনো এক বৃষ্টিঝরা রাতে বউকে সে কাওয়ালি শোনাবে। বউ প্রতিদিন ভোরে আজান দেওয়ার সময় জেগে যাবে। নামাজ পড়ে, কোরআন পড়বে। তাজিয়ার বিষাদের মতো সেই সুর পারভেজের বুকে বিঁধে যাবে।

মুকুল ঘটক তো পারভেজকে বাধ্য করছে না। তারপরেও তার মনে হয় এই সুযোগ তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এই টান প্রবল স্রোতের মতো। পারভেজ হাত্তা টেনে টেনে শাড়ি ঠুকে চলে। পাটরায় তার কোমর দোল খায়। পারভেজ পা চালায়। হাত্তা টান দিলে পাঁচ গুল্লি যেন নেচে ওঠে। শাড়িটা বোনা শেষ হলে মহাজন নিতে আসেন। তার হাতে দেওয়ার পরে শাড়িটার জন্য মায়া হয়। সাত-পাঁচ না ভেবে পারভেজ জানায়, শাড়িটা সে কিনতে চায়।

মহাজন জানায়, শাড়ির দাম তিন হাজার টাকা। মজুরি হিসেবে পারভেজের পাওনা সাতশ টাকা। তারপরেও মজুরি থেকে কাটিয়ে দিয়ে শাড়িটা পারভেজ নিতে চায়। মহাজন শাড়িটা দেন। তার কারখানায় পারভেজ হলো সেরা কারিগর, তার অনুরোধ ফেলতে পারেন না। কিন্তু তাকে একটি তথ্য গোপন করার ভার দেওয়া হয়। শাড়িটা যে বাকিতে পাচ্ছে, এই কথা কাউকে যেন না বলে। শাড়িটা এনে ঘরে রাখে পারভেজ। শাড়িতে হাত বুলিয়ে দেখে। রাতে কুপির আলোয় শাড়িটা ছড়িয়ে দিলে তার মনে হয় শাড়ির লতা, পাতা, ফুল এক-একদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। যে শাড়ির প্রতিটি সুতা, নকশার প্রতিটি বিন্দু পারভেজের আঙুলের মিহি স্পর্শ পেয়েছে, সেই শাড়িটা এমন দিশেহারা করে দেবে ভাবতে পারেনি পারভেজ। তার জ্বর আসে। কাজে যেতে পারে না। মুকুল ঘটক আবার আসেন। পারভেজের খোঁজ নিতে গেলে সে বলে, আপনি আমাকে যশোরে নিয়ে চলেন।

মুকুল ঘটক বলেন, যে মেয়ের কথা বলেছিলেন সেই মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারবেন– এমন নিশ্চয়তা নেই। তবে তার হাতে একাধিক মেয়ে আছে। তিনি একটা বিহিত করবেনই। মুকুল ঘটক তখনও বলেন না যে, রেশমা তারই ছোট মেয়ে। বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়েটাকে নিজের বাড়িতে রাখতে চান। পারভেজের দুধে ধোয়া মুখ আর শাড়ি বোনার নিখুঁত দক্ষতা দেখে অনেক আগেই মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলেন এই ছেলের সাথে ছোট মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ঘরজামাই হিসেবে রাখবেন। তাঁত কিনে দেবেন। কিন্তু স্বপ্ন পেয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে তাকে একবার মূল্যহীন ভাবতে পারে। অনেক সময় মানুষ স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি চলে এলে সম্ভাব্য বিকল্প চিন্তা শুরু করে। কিছু সময়ের জন্য হলেও করে। পারভেজের অনাপত্তি পাওয়ার পরেই মুকুল ঘটকের একবারের জন্য মনে হয় মেয়েকে পারভেজের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু তার ‘না’-তে এবার আপত্তি জানায় পারভেজ।

–কী বলেন?

হুম।

–রেশমাকেই বিয়ে করব।

তুমি তো তাকে দেখলেই না।

দেখছি। কোথায় কখন দেখছি তা আপনাকে বলতে পারব না। শরীরে জ্বর আসছে। একটা নামও এইভাবে শরীরে প্রবেশ করে আমার ধ্যান নষ্ট করে দিয়েছে। আমি তাকে চাই।

এরপর মুকুল ঘটককে সে বেনারসিটা দেখায়।

সকালে চলো। 

–রাতে যাওয়া যায় না?

কেন?

–মহাজন টাকা পান। যাওয়া দেখলে তো যাইতে দেবেন না।

সেই রাতে পারভেজকে নিয়ে রওনা দেন মুকুল ঘটক। পারভেজ যাওয়ার আগে খালাকে একবার বলে যায় তাকে যেন না খোঁজেন। আব্দুল খালেক সে কথা শোনেন কিন্তু তিনি আর কোনো কিছু জানার আগ্রহ দেখান না। পথে যেতে যেতে মুকুল ঘটক পারভেজকে বলেন, রেশমা আমার মেয়ে।

–কী বলছেন? তাহলে আমার সঙ্গে কেন বিয়ে দিতে চান। 

তোমাকে দেখার পর থেকে বড় আপন আপন লাগে। ভোরে যশোরে পৌঁছায় পারভেজ। ভোরের আলোয় রেশমাকে দেখার পর তার মনে হয় বেনারসির জমিনে ফুটে ওঠা বুটির মতো।

মুকুল বলেন, আমার মেয়েকে বিয়ে করতে পারবা কিনা জানাও।

–সে কী চায়, সে কথাও তো জানা দরকার।

তুমি কি চাও কনের গায়েহলুদ সাত দিন ধরে হোক।

–চাই।

দেখা করতে পারবা না কিন্তু।

–অপেক্ষা করব। এই অপেক্ষা করতে ভালো লাগবে আমার। মাত্র সাত দিনই তো।

মুকুল ঘটক আর কোনো কথা বলেন না। দুপুরে মসজিদে জোহরের নামাজ পড়তে যান। সমাজের সব লোককে রাতে তার বাড়িতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন। বাড়িতে ক্ষীর রান্না হবে। নারকেল কাটার দায়িত্ব দেওয়া হয় রেশমাকে। ক্ষীর রান্না করে কলাপাতা কেটে ঢেকে রাখা হয়। হঠাৎ মুকুল ঘটক পারভেজকে এসে জানান, একটা সমস্যা হয়ে গেছে। বড় সমস্যা। পারভেজের বুকের ভেতর ধক্ করে ওঠে। কী হয়েছে?

–রেশমার হাতের একটা আঙুল কেটে পড়ে গেছে। এর মাধ্যমে বিয়ের ফাঁড়া কেটে গেল। আশা করছি আর কোনো সমস্যা হবে না।

আপনি আজকেই বিয়ের আয়োজন করেন।

একটু  কাঁচা হলুদ পাটায় বেটে নিলেন আজমেরী বেগম। মেয়ের কপালে দিয়ে দিলেন। তারপর রেশমাকে গোসল করিয়ে দিলেন। আজমেরী বেগম নিজ হাতে রেশমার শরীরে জড়িয়ে দিলেন পারভেজের হাতে বোনা বেনারসি। সন্ধ্যা আর বেনারসির মায়ায় রেশমার মুখে জেগে উঠল শাপলার মায়া। যেন নতুন জলে ও শিশিরে গোসল করেছে সে। পাকানো সুতার সলতেয় আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। কাপড় আর কেরোসিন পোড়া গন্ধ ছড়িয়ে বরণের ডালায় মাটির ঢাকনা, একটাতে ধান আর দূর্বা ঘাস, অন্যটাতে সলতে জ্বলছে। আলোয় থিরথির করছে কেরোসিন। পারভেজকে কেউ হলুদ দিল না। বিয়ে হলো। রেশমার মুখ দেখার আগে তার কেটে পড়া আঙুল খুঁজছিল পারভেজ। কিন্তু পেল না। পারভেজ দেখল নরম হাতের লম্বা লম্বা আঙুল সবই ভালো আছে। ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখল আঙুলের কর। এই কর গুনে পার হয়ে যেতে চাইল রাতের জলসা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হল দ দ র জন য ত র এক ত র মন জ র মন ত রপর সমস য একব র

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীকে মারধর, দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ

বাস ও তিন চাকার যানের (মাহিন্দ্রা) চালকদের দ্বন্দ্ব নিরসনকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। এর প্রতিবাদে বরিশাল–কুয়াকাটা ও বরিশাল–ভোলা মহাসড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে দক্ষিণের জেলাগুলোর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আজ শনিবার এ ঘটনা ঘটে।

শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচির কারণে ব্যস্ত দুই মহাসড়কের দুই প্রান্তে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও চালকেরা। পরে বেলা সোয়া একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে বিচারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। এরপর বেলা দেড়টার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল–কুয়াকাটা–ভোলা মহাসড়কের মোড়ে বাসের চালক ও তিন চাকার যানের চালকদের মধ্যে মহাসড়কে চলাচল নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। এর জেরে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা, উত্তেজনা ও একপর্যায়ে একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিল আজাদ, রবিউল ইসলাম ও তরিকুল ইসলাম বিষয়টি সমাধান করতে গেলে তাঁদের ওপর চড়াও হন তিন চাকার যানের চালক ও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। এ সময় তাঁদের তিনজনকে মারধর করা হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, তিন চাকার যানের চালক ও স্থানীয় পাঁচ থেকে সাতজন মারধরের ঘটনায় জড়িত। তিনজনকে মারধরের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ১১টার দিকে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুই প্রান্তে আটকা পড়ে অসংখ্য যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন। বরিশাল নগরের সিঅ্যান্ডবি সড়কেও তীব্র যানজট দেখা যায়।

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্পিতা হাসান দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল সাতটায় ঢাকা থেকে বাসে উঠেছি বরগুনায় গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য। এখানে এসে বেলা ১১টায় আটকা পড়েছি। একে তো পবিত্র রমজান মাস, তার ওপরে প্রচণ্ড গরম। কী যে দুর্বিষহ অবস্থা আমাদের, তা বোঝাতে পারব না।’

এদিকে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। খবর পেয়ে ছুটে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সোনিয়া খান ও বন্দর থানা-পুলিশ। এ সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর বেলা সোয়া একটার দিকে প্রশাসনের আশ্বাসে সাময়িকভাবে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তানজিল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, বাস ও তিন চাকার যানের চালকদের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। তাঁরা সেখানে যান, যাতে মহাসড়কে তাঁরা ঝামেলা না করেন। তখন এক সহপাঠীকে মারধর করেন তিন চাকার যানের চালকেরা। পরে আরও দুজন এগিয়ে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, মারধরের ঘটনাটি দুঃখজনক। তাঁরা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানও করা হবে।

প্রক্টর সোনিয়া খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে শুনেই আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত শুনি। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’ তিনি বলেন, তাঁরা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। বিচারের আশ্বাস দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়: মাঠে বিরাট-আনুশকার আনন্দঘন মুহূর্ত
  • চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চ্যাম্পিয়ন ভারত
  • টাঙ্গাইলে সালিশে ধর্ষণের মূল্য দেড় লাখ টাকা!
  • হিযবুত তাহরীরের ৫ জন কারাগারে
  • দুই শ হলো না নাঈমের
  • চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভ্রমণ: নিউ জিল‌্যান্ড ৭,১৫০ কিলোমিটার, ভারত ০
  • শ্রীপুরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ, অভিযুক্ত তরুণ আটক
  • চারুতা সংগীত একাডেমির সুরেলা সন্ধ্যা
  • চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হবে আরেফিন সিদ্দিককে
  • বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীকে মারধর, দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ