Samakal:
2025-02-07@08:59:43 GMT

বেনারসি

Published: 7th, February 2025 GMT

বেনারসি

মিরপুরে বসবাসরত বিহারিদের ঠিকানা ‘মুসলিম ক্যাম্প’। এই ক্যাম্পে শত শত ঘরবাড়ি আছে কিন্তু ওগুলোর আলাদা নাম নেই। এর পরেও অনেকের ঘর আছে। কেউ কেউ তো ঘর ভাড়াও দেয়। পারভেজের ঘর নেই, শৈশবে বাবা মারা গেছেন, কৈশোরে মাকে হারাতে হয়েছে।

এক চাচা ছিলেন, তিনিও পরিবারসহ পাকিস্তানে চলে গেছেন। খালা আর খালুর কাছে বড় হয়েছে মোহাম্মদ পারভেজ। আব্দুল খালেক পারভেজকে বেনারসি বুনন শিখিয়ে দিয়েছেন। ষোলো বছর বয়সেই কারিগর হিসেবে পারভেজের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। মহাজন আলাদা কদর শুরু করেন। একদিন ঘোষণা করেন তাঁর কারখানার সেরা কারিগর পারভেজ।

এরপর আব্দুল খালেক পারভেজকে আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকতে বলেন। এবং কেন তিনি এ কথা বললেন– সেই প্রশ্ন করতে নিষেধ করে দিলেন। কারখানায় আব্দুল খালেক একেবারে চুপচাপ থাকেন, তাকে চুপচাপ দেখতে ভালো লাগে না পারভেজের। সে ভাবে ভাড়া বাসায় চলে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই করে। বেনারসি বুনতে গেলে তার যেন কী হয়, নিজের মনে বুনে চলে। তাকে নিয়ে কে কী ভাবছে, সেসব ভাবার সময় পায় না। পারভেজ যখন মনোযোগ দিয়ে শাড়ি বোনে, আব্দুল খালেক দূর থেকে কখনও কখনও স্নেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। আবার কখনও হেরে যাওয়া শাসকের মতো ভেতরে ভেতরে পারভেজের পরাজয় কামনা করেন। পারভেজ তার কাজ শেখার স্মৃতি মনে করে খালেকের দিকে অবনমিত দৃষ্টিতে তাকায়। আবার নিজের ওস্তাদকে হারিয়ে দেওয়ার সন্তুষ্টিতেও ভোগে। সন্তুষ্টিবোধ করলেই তার টানির সুতায় গেরো লেগে যায় কিংবা ছিঁড়ে যায়। পারভেজ বুঝতে পারে সন্তুষ্টিতে ভোগা তার জন্য পাপ। সে আরও মনোযোগ দিয়ে শাড়ি বুনতে চায়। এই মনোভাব তাকে একা করে দেয়। এরপর থেকে তার সামনে-পেছনে কোনো প্রতিযোগী নেই। সে কেবলই তার কাজটি করে যাবার জন্য বদ্ধপরিকর। 

উনসত্তরে জন্ম পারভেজের। চৌদ্দ বছর বয়সে বেনারসি বুনন শিখেছে। বিশ বছর বয়সে দক্ষ কারিগর হয়ে ওঠে। পারভেজ বিশ্বাস করে বেনারসি হাত, পা, চোখ, আর হৃদয় দিয়ে বুনতে হয়। একটু নির্জনতা লাগে। প্রার্থনার ঘরে যেমন প্রত্যেককে আলাদা আলাদা নির্জনতা ছুঁয়ে থাকে, তাঁতঘরেও তাই। রাতে ঘরে ফিরলে একা হয়ে যায় পারভেজ। একা ঘরে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারে না। দিনে শাড়ি বুনতে বুনতে সব কথা যেন সে শাড়িকেই শোনাতে চায়। একবার লাল বেনারসির জমিনে আড়া নকশা ফুটিয়ে তোলার সময় তার বুকের ভেতরে নকশার ফুলগুলো দোলা দিতে থাকে, সুগন্ধ ছড়ায়। আড়া নকশার শাড়ি বুনতে তার বেশি ভালো লাগে। জমিনে অনেক জায়গা ফাঁকা থাকে। ফুলগুলো যেন শ্বাস নিতে পারে, দুলে থাকার জায়গা পায়। পারভেজের প্রিয় ঋতু বর্ষা। এক বর্ষার ভেজা বাতাসে দিনের আলোয় শাড়ি বুনতে বুনতে পারভেজের মন হারিয়ে যেতে থাকে। লাল জমিনে সোনালি জরির পাড়ওয়ালা শাড়ি। পারভেজের মনে হয়, তাঁতের সামনে কোনো মেয়ে এই শাড়ির জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। রাতে একা ঘরে ফিরে তার মনে হয় কেউ বেনারসি পরে ঘরে হেঁটে বেড়াচ্ছে, তার এক চুড়ির আঘাতে আরেক চুড়ি বেজে চলেছে।

যশোরের মুকুল ঘটক একদিন পারভেজকে বলেন, শোনো আর কতদিন একা থাকবা। আমাদের জাতের একটা মেয়ে হাতে আছে, দেখতে একটু কালো কিন্তু তাকে বিয়ে করলে তুমি একটা ঘর পাবা। 

ততক্ষণে মেঘের ছায়ায় পারভেজের হাতে বোনা বেনারসি ঘন, গভীর লাল হয়ে উঠেছে। পারভেজ মুকুল ঘটকের দিকে একবার তাকিয়ে বলে, বাঙালি বিয়ে করব না।

–মোহাজের শুনতে ভালো লাগে?

অভ্যাস হয়ে গেছে।

–পছন্দের কোনো মেয়ে আছে নাকি?

মুকুলের কথা শেষ হতে না হতেই বানা আর মাকু রেখে পারভেজ পাটরা থেকে উঠে টানার গিঁটলাগা সুতা ছাড়াতে শুরু করে। লাল সুতা জড়ানো বানা আর সোনালি জরি জড়ানো মাকু দেখে মনে হতে লাগল ওগুলো একটু বিশ্রাম পেয়েছে। মুকুল ঘটক মনোযোগ দিয়ে পারভেজের সুতা ছাড়ানো দেখেন। তারপর বলেন, তোমার ধৈর্য আছে।
এবার পারভেজ জানতে চায় মেয়ের নাম কী?

–রেশমা। একটু কালো। কিন্তু জানো তো মেঘের ছায়ায় কালো মেয়েদের খুব ভালো দেখায়। এই তোমার শাড়ির মতো। দেখতেছ না, এই মেঘের ছায়ায় শাড়িটা কত সুন্দর হয়ে উঠেছে।

পারভেজ হাসে। শাড়িটা তার কাছে তখন আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। নিজের হাতে বোনা শাড়ি চোখের সামনে এমন প্রাণ পেয়ে গেল যে পারভেজের মনে হতে থাকে– এই এখন কেউ এই শাড়ি শরীরে জড়িয়ে বসে থাকবে তার পাশে। কিন্তু তার স্বপ্নে কোনো বাঙালি মেয়ে নেই। বিহারি বিয়ের একটা রীতি আছে। বিয়ের সাত দিন আগে মেয়ের গায়ে হলুদ দেওয়া হয়। একবার হলুদ ছোঁয়ানোর পরেই মেয়ে চলে যায় পর্দার আড়ালে। কবুল বলার পর তাকে অন্যরা দেখতে পারে। ভাবতেই ভালো লাগে পারভেজের। ছেলেদের ক্ষেত্রেও নিয়মনীতি আছে। ছেলেদের বিয়ের তিন দিন আগে গায়ে হলুদ দেওয়া হয়। এরপর তাকেও ঘরে থাকতে হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন হলুদ দিয়ে গোসলের পর বিয়ে করতে যায়। পারভেজও স্বপ্ন দেখে মুসলিম ক্যাম্পের চেনা-জানা পরিবারের লোকেরা আসবে, গায়েহলুদের অনুষ্ঠান হবে। সবাই গিয়ে নতুন বউকে ঘরে এনে দেবে। যশোরে বিয়ে হলে ঢাকা থেকে সেখানে লোক নেওয়া তার পক্ষে তো সম্ভব নয়। যেতে হবে একা, ফিরতে হবে অন্য জাতের এক মেয়েকে নিয়ে। বাঙালি মেয়ে এই ক্যাম্পের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে না। 

মুকুল ঘটক অবশ্য তাচ্ছিল্য করে বলেন, আরে মিয়া তোমরা হইলে কচুরিপানা। আর কচুরিপানার ধর্ম হইলো পানির স্রোত যেদিকে যাবে, সেদিকে চলে যাওয়া। সুযোগ পাইছ কাজে লাগাও। তাছাড়া এই ক্যাম্পে তুমিই একা নও, আরও দুই-একজন যশোরের মেয়ে বিয়ে করছে। পারভেজ মুকুল ঘটকের দিকে তাকায়। –তাকাইয়ে থাইকো না। যা বলছি ভেবেচিন্তে বলছি। তোমার ভালোর জন্য বলছি। যশোরে নিজের একখান কারখানাও গড়ে তুলতে পারবা।

পারভেজের পূর্বপুরুষ ভারতের গৌরবপুর থেকে এই বাংলা ভূখণ্ডে এসেছে। সে পূর্বপুরুষদের এই চলে আসাকে দুর্ভাগ্য মনে করে। আর মনে করে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা তাদের ভাগ্যের নকশা পাল্টে দিয়েছে। কিন্তু পূর্বপুরুষদের কচুরিপানা হিসেবে ভাবতে পারে না। মুকুল ঘটকের কথা মনে করে বেনারসিটার প্রতি রাগ, ক্ষোভ জন্ম হয় তার। পারভেজের ইচ্ছা করে শাড়িটা ছিঁড়ে ফেলতে। কিন্তু শাড়িটা ছিঁড়লে তাকে শাড়ির মূল্য শোধ করতে হবে, কিনলেও শোধ করতে হবে। রাতে বৃষ্টি হয়। তাঁতের গাতায় পানি উঠে গেল কিনা, দুশ্চিন্তা হয় পারভেজের। পরদিন সকালে গিয়ে দেখে গাতা সামান্য ভিজে গেছে। তবে পা ডুবিয়ে বসতে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু শাড়িটার প্রতি তার ক্ষোভ যায় না। মাকু চালিয়ে চালিয়ে পাড়ের বুটি ফুটিয়ে তুলছিল। হঠাৎ মনে হয় হাতের ভেতর শাড়িটা নড়েনড়ে উঠছে। স্বপ্ন পারভেজকে তাড়া করে বেড়ায়। কোনো বিহারি সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করে ঘরে আনবে সে। পারভেজ বিশ্বাস করে বৃষ্টি এক ধরনের আড়াল তৈরি করতে পারে। কোনো এক বৃষ্টিঝরা রাতে বউকে সে কাওয়ালি শোনাবে। বউ প্রতিদিন ভোরে আজান দেওয়ার সময় জেগে যাবে। নামাজ পড়ে, কোরআন পড়বে। তাজিয়ার বিষাদের মতো সেই সুর পারভেজের বুকে বিঁধে যাবে।

মুকুল ঘটক তো পারভেজকে বাধ্য করছে না। তারপরেও তার মনে হয় এই সুযোগ তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এই টান প্রবল স্রোতের মতো। পারভেজ হাত্তা টেনে টেনে শাড়ি ঠুকে চলে। পাটরায় তার কোমর দোল খায়। পারভেজ পা চালায়। হাত্তা টান দিলে পাঁচ গুল্লি যেন নেচে ওঠে। শাড়িটা বোনা শেষ হলে মহাজন নিতে আসেন। তার হাতে দেওয়ার পরে শাড়িটার জন্য মায়া হয়। সাত-পাঁচ না ভেবে পারভেজ জানায়, শাড়িটা সে কিনতে চায়।

মহাজন জানায়, শাড়ির দাম তিন হাজার টাকা। মজুরি হিসেবে পারভেজের পাওনা সাতশ টাকা। তারপরেও মজুরি থেকে কাটিয়ে দিয়ে শাড়িটা পারভেজ নিতে চায়। মহাজন শাড়িটা দেন। তার কারখানায় পারভেজ হলো সেরা কারিগর, তার অনুরোধ ফেলতে পারেন না। কিন্তু তাকে একটি তথ্য গোপন করার ভার দেওয়া হয়। শাড়িটা যে বাকিতে পাচ্ছে, এই কথা কাউকে যেন না বলে। শাড়িটা এনে ঘরে রাখে পারভেজ। শাড়িতে হাত বুলিয়ে দেখে। রাতে কুপির আলোয় শাড়িটা ছড়িয়ে দিলে তার মনে হয় শাড়ির লতা, পাতা, ফুল এক-একদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। যে শাড়ির প্রতিটি সুতা, নকশার প্রতিটি বিন্দু পারভেজের আঙুলের মিহি স্পর্শ পেয়েছে, সেই শাড়িটা এমন দিশেহারা করে দেবে ভাবতে পারেনি পারভেজ। তার জ্বর আসে। কাজে যেতে পারে না। মুকুল ঘটক আবার আসেন। পারভেজের খোঁজ নিতে গেলে সে বলে, আপনি আমাকে যশোরে নিয়ে চলেন।

মুকুল ঘটক বলেন, যে মেয়ের কথা বলেছিলেন সেই মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারবেন– এমন নিশ্চয়তা নেই। তবে তার হাতে একাধিক মেয়ে আছে। তিনি একটা বিহিত করবেনই। মুকুল ঘটক তখনও বলেন না যে, রেশমা তারই ছোট মেয়ে। বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়েটাকে নিজের বাড়িতে রাখতে চান। পারভেজের দুধে ধোয়া মুখ আর শাড়ি বোনার নিখুঁত দক্ষতা দেখে অনেক আগেই মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলেন এই ছেলের সাথে ছোট মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ঘরজামাই হিসেবে রাখবেন। তাঁত কিনে দেবেন। কিন্তু স্বপ্ন পেয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে তাকে একবার মূল্যহীন ভাবতে পারে। অনেক সময় মানুষ স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি চলে এলে সম্ভাব্য বিকল্প চিন্তা শুরু করে। কিছু সময়ের জন্য হলেও করে। পারভেজের অনাপত্তি পাওয়ার পরেই মুকুল ঘটকের একবারের জন্য মনে হয় মেয়েকে পারভেজের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু তার ‘না’-তে এবার আপত্তি জানায় পারভেজ।

–কী বলেন?

হুম।

–রেশমাকেই বিয়ে করব।

তুমি তো তাকে দেখলেই না।

দেখছি। কোথায় কখন দেখছি তা আপনাকে বলতে পারব না। শরীরে জ্বর আসছে। একটা নামও এইভাবে শরীরে প্রবেশ করে আমার ধ্যান নষ্ট করে দিয়েছে। আমি তাকে চাই।

এরপর মুকুল ঘটককে সে বেনারসিটা দেখায়।

সকালে চলো। 

–রাতে যাওয়া যায় না?

কেন?

–মহাজন টাকা পান। যাওয়া দেখলে তো যাইতে দেবেন না।

সেই রাতে পারভেজকে নিয়ে রওনা দেন মুকুল ঘটক। পারভেজ যাওয়ার আগে খালাকে একবার বলে যায় তাকে যেন না খোঁজেন। আব্দুল খালেক সে কথা শোনেন কিন্তু তিনি আর কোনো কিছু জানার আগ্রহ দেখান না। পথে যেতে যেতে মুকুল ঘটক পারভেজকে বলেন, রেশমা আমার মেয়ে।

–কী বলছেন? তাহলে আমার সঙ্গে কেন বিয়ে দিতে চান। 

তোমাকে দেখার পর থেকে বড় আপন আপন লাগে। ভোরে যশোরে পৌঁছায় পারভেজ। ভোরের আলোয় রেশমাকে দেখার পর তার মনে হয় বেনারসির জমিনে ফুটে ওঠা বুটির মতো।

মুকুল বলেন, আমার মেয়েকে বিয়ে করতে পারবা কিনা জানাও।

–সে কী চায়, সে কথাও তো জানা দরকার।

তুমি কি চাও কনের গায়েহলুদ সাত দিন ধরে হোক।

–চাই।

দেখা করতে পারবা না কিন্তু।

–অপেক্ষা করব। এই অপেক্ষা করতে ভালো লাগবে আমার। মাত্র সাত দিনই তো।

মুকুল ঘটক আর কোনো কথা বলেন না। দুপুরে মসজিদে জোহরের নামাজ পড়তে যান। সমাজের সব লোককে রাতে তার বাড়িতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন। বাড়িতে ক্ষীর রান্না হবে। নারকেল কাটার দায়িত্ব দেওয়া হয় রেশমাকে। ক্ষীর রান্না করে কলাপাতা কেটে ঢেকে রাখা হয়। হঠাৎ মুকুল ঘটক পারভেজকে এসে জানান, একটা সমস্যা হয়ে গেছে। বড় সমস্যা। পারভেজের বুকের ভেতর ধক্ করে ওঠে। কী হয়েছে?

–রেশমার হাতের একটা আঙুল কেটে পড়ে গেছে। এর মাধ্যমে বিয়ের ফাঁড়া কেটে গেল। আশা করছি আর কোনো সমস্যা হবে না।

আপনি আজকেই বিয়ের আয়োজন করেন।

একটু  কাঁচা হলুদ পাটায় বেটে নিলেন আজমেরী বেগম। মেয়ের কপালে দিয়ে দিলেন। তারপর রেশমাকে গোসল করিয়ে দিলেন। আজমেরী বেগম নিজ হাতে রেশমার শরীরে জড়িয়ে দিলেন পারভেজের হাতে বোনা বেনারসি। সন্ধ্যা আর বেনারসির মায়ায় রেশমার মুখে জেগে উঠল শাপলার মায়া। যেন নতুন জলে ও শিশিরে গোসল করেছে সে। পাকানো সুতার সলতেয় আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। কাপড় আর কেরোসিন পোড়া গন্ধ ছড়িয়ে বরণের ডালায় মাটির ঢাকনা, একটাতে ধান আর দূর্বা ঘাস, অন্যটাতে সলতে জ্বলছে। আলোয় থিরথির করছে কেরোসিন। পারভেজকে কেউ হলুদ দিল না। বিয়ে হলো। রেশমার মুখ দেখার আগে তার কেটে পড়া আঙুল খুঁজছিল পারভেজ। কিন্তু পেল না। পারভেজ দেখল নরম হাতের লম্বা লম্বা আঙুল সবই ভালো আছে। ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখল আঙুলের কর। এই কর গুনে পার হয়ে যেতে চাইল রাতের জলসা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হল দ দ র জন য ত র এক ত র মন জ র মন ত রপর সমস য একব র

এছাড়াও পড়ুন:

হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে জয়পুরহাটের সেই মাঠে খেললেন নারী ফুটবলাররা

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সেই মাঠে নারী ফুটবল দলের খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বনাম জয়পুরহাট নারী ফুটবল দলের মধ্যে খেলা হয়। তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে নারীদের এ ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।

জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আকতার চৌধুরী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটবল ম্যাচের উদ্বোধন করেন। এ সময় জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব, বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান (চন্দন), জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি এস এম রাশেদুল আলম সবুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিসি আফরোজা আকতার চৌধুরী বলেন, ভুল–বোঝাবুঝির কারণে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। দুই পক্ষই তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। যাঁরা ঘটনা ঘটিয়েছিলেন, তাঁরা দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। আসলে তাঁদের খেলায় বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল না।

এর আগে নারীদের ফুটবল ম্যাচ দেখতে দুপুর থেকেই মাঠে আসতে শুরু করেন দর্শকেরা। বিকেল চারটার মধ্যে পুরো মাঠ দর্শকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। খেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরাও কাজ করেছেন। সেনাবাহিনীরও একটি দল ছিল। নারী ফুটবলাররা যখন মাঠে নামেন, তখন দর্শকেরা করতালি দিয়ে তাঁদের স্বাগত জানান। খেলায় স্বাগতিক জয়পুরহাট নারী ফুটবল দল এক গোলে জয়ী হয়। পরে বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেন প্রধান অতিথি। লতা পারভিন ম্যাচটি পরিচালনা করেন। সহায়তা করেন স্বপ্না ও রহিমা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় টি স্টার ক্লাবের উদ্যোগে তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রায় দেড় মাস আগে ছেলেদের আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচ মাটিতে বসে দেখার জন্য ৩০ টাকা ও চেয়ারে বসে দেখার জন্য ৭০ টাকা মূল্যের টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়। টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে পার্বতীপুর ও জয়পুরহাট ফুটবল দল।

ফাইনাল ম্যাচের আগে গত ২৯ জানুয়ারি জয়পুরহাট ও রংপুর নারী ফুটবল দলের মধ্যে একটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের ঘোষণা দেন আয়োজকেরা। খেলার আগের দিন মঙ্গলবার বিকেলে একদল ব্যক্তি মিছিল নিয়ে এসে খেলার মাঠের বেড়া ভাঙচুর করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে ভাঙচুরের দৃশ্য প্রচার করা হয়। ওই ঘটনার পর আয়োজকেরা নারীদের প্রীতি ম্যাচটি বাতিল করেন।

এ ঘটনায় প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলা প্রশাসন এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দুটি কমিটিই তদন্ত করেছে। এরপর একটি তদন্ত কমিটির গণশুনানিতে ভাঙচুরে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অনুতপ্ত হয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। এরপর তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে আজ ওই মাঠে নারীদের ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।

হাকিমপুরে নারীদের স্থগিত খেলাটি কাল অনুষ্ঠিত হবে

এদিকে দিনাজপুরের হাকিমপুরে বিক্ষোভ ও বাধার মুখে স্থগিত হওয়া নারী ফুটবল দলের প্রীতি ম্যাচটি কাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। বেলা তিনটায় উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের বাওনা গ্রামের অস্থায়ী মাঠে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন খেলার আয়োজক সংগঠন বাওনা ছাত্রকল্যাণ সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল।

খেলা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, কাল বিকেলে দিনাজপুর জেলা নারী ফুটবল একাডেমির সঙ্গে রংপুর বিভাগীয় নারী ফুটবল দলের মধ্যে ওই প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে আজ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ ডিসেম্বর পুরুষদের ১৬টি দলের অংশগ্রহণে বাওনা মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে বাওনা ছাত্রকল্যাণ সমবায় সমিতি। ওই দিন টুর্নামেন্টের প্রথম ও কোয়ার্টার পর্যায়ের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। টুর্নামেন্টের মধ্যে এক দিনের জন্য নারীদের একটি প্রীতি ম্যাচের আয়োজনের ঘোষণা দেয় আয়োজক কমিটি। ২৮ জানুয়ারি বিকেলে ওই খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নারীদের খেলা বন্ধের দাবিতে তৌহিদী জনতার ব্যানারে স্থানীয় একটি পক্ষ বিক্ষোভ মিছিল করে। ২৮ জানুয়ারি দুপুরে তারা নারীদের খেলা বন্ধ করতে মাঠে গেলে আয়োজক কমিটির সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ২০ থেকে ২৫ জন আহত হন। এরপর নারীদের খেলাটি স্থগিত করেন আয়োজকেরা।

এ ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এক প্রেস উইং থেকে দিনাজপুর ও জয়পুরহাট জেলা প্রশাসনকে স্থগিত ফুটবল ম্যাচ আবার চালু করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই বাওনা গ্রামের মাঠে স্থগিত হওয়া খেলাটি আবার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় আয়োজক কমিটি।

বাওনা ছাত্রকল্যাণ সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এখনো আতঙ্কে আছেন। খেলা নিয়ে তৌহিদী জনতার পক্ষের কেউ আর কিছু বলেননি। কাল বেলা তিনটায় বাওনা মাঠে আগের নারী দলের খেলাটি হবে। মাঠে দর্শকদের একটি সুন্দর খেলা উপহার দেওয়ার জন্য আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় প্রথম আলোকে বলেন, আয়োজকদের একজন বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। বিষয়টি তাঁরা পর্যবেক্ষণ করছেন। খেলাকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছে না প্রশাসন। এরপরও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঠে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হবে।

হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুজন মিঞা বলেন, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, স্থগিত খেলাটি কাল অনুষ্ঠিত হবে। কাল ওই এলাকায় পুলিশের টহল থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে কমিউনিটি সেন্টারে আগুন, মালিকের দাবি নাশকতা
  • শিবচরে ভ্যানচালকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
  • ভ্যালেন্সিয়াকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে সেমিতে বার্সেলোনা
  • মাহির এই সময়
  • ফেরেট ম্যালওয়্যার ছড়াচ্ছে হ্যাকাররা, নিরাপদ থাকবেন যেভাবে
  • যারা তাড়াহুড়ো করে কাজ করতে চায় তাদের এড়িয়ে চলি: মাহি
  • বিপদের সময় বলতে হবে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
  • দৌড়াতে পারবেন না, তবু আলিসের ওপর ভরসা ছিল চিটাগংয়ের
  • হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে জয়পুরহাটের সেই মাঠে খেললেন নারী ফুটবলাররা