Samakal:
2025-04-11@17:10:40 GMT

লিবিয়ায় যা ঘটেছিল তাদের ভাগ্যে

Published: 7th, February 2025 GMT

লিবিয়ায় যা ঘটেছিল তাদের ভাগ্যে

সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার জন্য দালালকে টাকা দিয়েছিলেন গোপালগঞ্জের সাত্তার খন্দকার, আরাফসান আশিক ও রফিকুল শেখ। কিন্তু ইতালি যাওয়া হয়নি তাদের। গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান তারা। এর আগে তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।

স্বজনরা জানান, ডিসেম্বর মাঝামাঝি সময়ে ইতালির উদ্দেশে পাড়ি জমান সাত্তার, আশিক ও রফিকুল। প্রথমে ঢাকা থেকে দুবাই যান তারা। সেখানে কয়েক দিন থেকে সৌদি ও মিসর হয়ে লিবিয়া পৌঁছান। কথা ছিল লিবিয়ার ত্রিপোলি থেকে তাদের সরাসরি ইতালি পাঠানো হবে। কিন্তু দালাল কথা রাখেনি। আজদাবিয়া শহরের বন্দিশালায় জিম্মি করে আদায় করা হয় লাখ লাখ টাকা। পড়ে ইতালির উদ্দেশে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তুলে দেওয়া হয় তাদের। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে সলিল সমাধি হয় তিন তরুণ ও কিশোরের। তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। 

রাঘদী ইউনিয়ন চর প্রসন্নদী গ্রামে সাত্তারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তান আব্দুল্লা আল সাইদ (৪) ও হালিমাকে (৮) সান্ত্বনা দিচ্ছে এলাকাবাসী। পাশেই বাকরুদ্ধ স্ত্রী লাবনী বেগম। থেকে থেকে বিলাপ করছেন ভাই আবুল খায়ের খন্দকার। স্বজনের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে পরিবেশ। 

স্বজনরা জানান, মোল্লাদী গ্রামের শহীদ শেখের সঙ্গে সাত্তারের ১৬ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার চুক্তি হয়। প্রথমে ৫ লাখ  টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা ইতালি পৌঁছানোর পরে পরিশোধের কথা ছিল। গত বছরের ১৭ নভেম্বর ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন সাত্তার। ২১ ডিসেম্বর লিবিয়া পৌঁছান। সেখানে বন্দিশালায় জিম্মি করে ২৬ লাখ টাকা আদায় করে দালাল চক্র। ভিটেমাটি বিক্রি ও চড়া সুদে ঋণ নিয়ে শহীদ শেখকে সেই টাকা দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার তারা নিশ্চিত হন, সাত্তার আর নেই। 

সাত্তারের বড় ভাই আবুল খায়ের খন্দকার বলেন, ২৮ জানুয়ারি ফেসবুকে জানতে পারি ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির কথা। দালাল শহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানায়, সাত্তার ইতালি পৌঁছেছে। ২৮ জানুয়ারি লিবিয়ার একটি পেজের মাধ্যমে দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আইয়ুব শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি উপকূলের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। ওই কর্মকর্তা নিহতদের ছবি মেসেঞ্জারের পাঠিয়ে দিলে সাত্তারকে শনাক্ত করি। 

সাত্তার খন্দকারের মতো হতভাগ্য একই গ্রামের মেহেদী হাসানের ছেলে আরাফসান আশিক। তিন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। ২০২৪ সালে ঢাকার ধামরাইর জালশাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। আশিকের স্বপ্ন ছিল ইউরোপে গিয়ে অনেক টাকা আয় করবেন। বোনকে ধুমধাম করে বিয়ে দেবেন। স্বপ্ন পূরণে শ্রীচাদপুর গ্রামের বাবু হাওলাদারকে ১৭ লাখ টাকা দিয়ে ইতালি যাওয়ার চুক্তি করেন। ধারদেনা করে বাবা ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা দালালকে দিয়েছেন। 

আশিকের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, উঠানে হেলান দিয়ে বসে আছেন হতবিহ্বল বাবা মেহেদী হাসান। কাঁদতে কাঁদতে চোখে পানি শুকিয়ে গেছে তাঁর। ছেলের মৃত্যুর কথা শোনার পর থেকে বাকরুদ্ধ মা খাদিজা বেগম। 

বাবা মেহেদী হাসান বলেন, দালাল বাবু বলেছিল ছেলেকে নিরাপদে ইতালি পৌঁছে দেবে। সে বেইমানি করেছে। এ ঝুঁকি জানলে ছেলেকে পাঠাতাম না। এখন অন্তত সরকার লাশ ফেরত আর দালাদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুক। 

নৌ দুর্ঘটনার শিকার আরেক তরুণ রফিকুল শেখ মোল্লাদী গ্রামের আব্দুল মজিদ শেখের ছেলে। আট মাসের মধ্যে তাঁর বাবা, মা ও ভাই মারা গেছেন। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরও একটি শোক পরিবারটিকে তছনছ করে দিয়েছে। 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রফিকের বড় ভাই ফিরোজ শেখ বলেন, বাবা, মা ও ভাই কেউ নেই। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব। আপন বলতে কেউ রইল না। আমি দালাল বাবুর দৃষ্টান্তমূক শাস্তি চাই। 

এসব বিষয়ে কথা বলতে দালাল শহীদ শেখ ও বাবু হাওলাদারের বাড়ি গেলে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। 

জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ষষ্ঠী পদ রায় বলেন, সৈকতে ভেসে আসা মরদেহগুলো অর্ধগলিত ছিল। সেখানেই তাদের সমাহিত করা হয়েছে বলে জেনেছি। অবয়ব দেখে ধারণা করা হয়েছিল, লাশগুলো বাংলাদেশিদের। বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়েছিল। তাদের ওই এলাকা পরিদর্শন করতে দেওয়া হয়নি। এসব কারণে দেশে মরদেহ আনতে পারার সম্ভাবনা খুবই কম।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ প লগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে চিকিৎসায় অবহেলা, রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার মুঞ্জু হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেজলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসক-নার্স না থাকায় অক্সিজেনের অভাবে বেনু বেগম (৭০) নামে অপারেশন করা ওই নারীর মৃত্যু হয়। 

বুধবার (৯ এপ্রিল) সকাল সাতটার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মারা যাওয়া বেনু বেগমের বাড়ি মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার সুজানগর মিতালী ক্লাব এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মৃত মতিনের কন্যা এবং মৃত বশির আহম্মেদের স্ত্রী।

বেনু বেগমের স্বজনরা জানান, পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেলে গত ৬ এপ্রিল তাকে মঞ্জু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার পায়ের হাড়ের অপারেশন করেন ডা. হাবিবুল হাসান। কিন্তু অপারেশন পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা তাকে কোন পর্যবেক্ষণ কক্ষে না রেখে সরাসরি ওয়ার্ডে দেওয়া হয়। বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বেনু বেগমের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এসময় তার জরুরি অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাসপাতালে কোন চিকিৎসক বা নার্স ছিলেন না। অক্সিজেন সিলিন্ডারও ছিল না। রোগীর স্বজনরা দায়িত্বশীল কাউকেই পাননি। একসময় ছটফট করতে করতে রোগী বেনু বেগম মারা যান। 

এদিকে অবহেলায় বেনু বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল ঘেরাও করে ভাঙচুর করার জন্য তৎপর হন। এসময় হাসপাতালের পরিচালক মিঠুন কুমারসহ অন্যান্য স্টাফরা পালিয়ে যান। পরে সেখানে ছুটে যান পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এরপর বিএনপি নেতারা ক্লিনিক মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমঝোতা করে দেন।

নিহত বেনু বেগমের ছেলে সনি বলেন, “অপারেশনের পর আমার মা সুস্থ ছিলেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ার পর চিকিৎসক এবং নার্স ছিলেন না। সময়মত সঠিক চিকিৎসা পেলে আমার মা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তেন না। চিকিৎসা অবহেলায় আামার মায়ের মৃত্যু হয়েছে।”

চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক মিঠুন কুমার বলেন, “রোগীর স্বজনরা যেসব অভিযোগ করছেন, সেগুলো সঠিক না। আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারপরেও রোগী মারা গেছেন। মৃত্যুর উপরে কারও হাত নেই।”

এ ব্যাপারে রাজশাহীর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুবা খাতুন বলেন, “এ বিষয়ে আমি জানি না। যদি রোগীর স্বজনেরা সিভিল সার্জন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন তবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। চিকিৎসা অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হলে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।”

মহানগরীর রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, “আমি ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশের একটি টিম পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। তবে রোগীর স্বজনেরা এখনো কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/কেয়া/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টাকায় মেলে ভালো জায়গা, না দিলে হারিয়ে যায়
  • টাকায় মিলে ভালো জায়গা, না দিলে হারিয়ে যায়
  • গোপালগঞ্জে পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু
  • রাজশাহীতে চিকিৎসায় অবহেলা, রোগী মৃত্যুর অভিযোগ