ফিলিস্তিনিদের গাজা উপত্যকা ত্যাগ করা নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ
Published: 7th, February 2025 GMT
গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের ‘স্বেচ্ছায়’ অন্য দেশে চলে যাওয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে ইসরায়েলের সেনাদের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ।
ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকচ করে দেওয়ার ঘটনার মধ্যে কাৎজ গতকাল বৃহস্পতিবার এ নির্দেশ দিলেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার ট্রাম্প গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাঠিয়ে উপত্যকাটি যুক্তরাষ্ট্রের দখলে নেওয়ার ও এটি ‘সাগর সৈকতের’ অবকাশযাপন কেন্দ্রে পরিণত করার বিস্ময়কর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণায় মধ্যপ্রাচ্য ও এর বাইরে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল গাজা উপত্যকাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ বলেন, ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে যাওয়া নিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে তাঁর দেশের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ইসরায়েলি বাহিনীর নজিরবিহীন তাণ্ডবে ১৫ মাসে উপত্যকাটির প্রায় পুরোটা বিধ্বস্ত হয়েছে।
কাৎজ বলেন, ‘গাজা থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার বিষয়টি কার্যকর করার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে আইডিএফকে (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) আমি নির্দেশ দিয়েছি। তাঁদের গ্রহণে রাজি, এমন যেকোনো দেশে তাঁরা (গাজার বাসিন্দারা) চলে যেতে পারেন।’
গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজা দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করলে ফিলিস্তিনিরা ছাড়াও তাঁর পশ্চিমা সমালোচকেরা এর তীব্র প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা জানান। তাঁদের পাশাপাশি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা বলছে, এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হবে জাতিগত নির্মূলের শামিল ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
অথচ তাঁর এ পরিকল্পনাকে ‘সবাই পছন্দ’ করেন বলে জোর দাবি করেছেন ট্রাম্প। তবে কীভাবে ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে গাজা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করেননি তিনি।
গাজা থেকে সেখানকার বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার বিষয়টি কার্যকর করার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে আইডিএফকে (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) আমি নির্দেশ দিয়েছি। তাঁদের গ্রহণে রাজি, এমন যেকোনো দেশে তাঁরা (গাজার বাসিন্দারা) চলে যেতে পারেন।ইসরায়েল কাৎজ, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীঅবশ্য তুমুল সমালোচনার মুখে ট্রাম্প প্রশাসন দৃশ্যত আগের অবস্থান থেকে কিছুটা নমনীয় হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, গাজার অধিবাসীদের যেকোনো ধরনের অপসারণ হবে সাময়িক।
এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনাকে আবারও জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। নিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল গাজা উপত্যকাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘(গাজায়) যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনার দরকার হবে না! অঞ্চলটিতে স্থিতিশীলতাই প্রাধান্য পাবে!!!’
একই দিন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘কয়েক বছরের মধ্যে উত্থাপিত প্রথম কোনো সত্যিকারের ধারণা’ বলে আখ্যায়িত করেন।’ এটি গ্রহণ করার মতো খুবই ভালো একটি ধারণা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ওই ভিডিও বার্তায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নেতানিয়াহু এ-ও বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ‘ইসরায়েলের ভবিষ্যতের জন্য এক বড় মোড় ঘোরানোর ঘটনা।’
ট্রাম্পের বক্তব্যকে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য বলে নিন্দা জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম। তিনি বলেন, ‘গাজাকে ওয়াশিংটনের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ট্রাম্পের মন্তব্য এই ভূখণ্ডকে জবরদখল করার ইচ্ছা ঘোষণার শামিল।’ গাজা উপত্যকা এখানকার জনগণের এবং তাঁরা এটি ছেড়ে যাবেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুনজামাতা কুশনারের এক বছর আগের স্বপ্নই কি বাস্তবায়ন করতে চলেছেন ট্রাম্প২ ঘণ্টা আগে‘আমরা আমাদের মাতৃভূমি আঁকড়ে থাকব’ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘অসাধারণ’ আখ্যা দিয়ে গত বুধবার নেতানিয়াহু ফক্স নিউজকে বলেন, ‘এটি আসলেই এগিয়ে নেওয়া উচিত.
অন্যদিকে কাৎজ বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা গাজার বাসিন্দাদের জন্য বিরাট সুযোগ তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া অসামরিক, হুমকিমুক্ত গাজা পুনর্গঠন কর্মসূচির অগ্রগতির পথও সুগম করতে পারে এটি।
আরও পড়ুনগাজা নিয়ে ট্রাম্পের সুরে কথা বললেন ইসরায়েলের মন্ত্রী১৪ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনগাজা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে নিজের দলেই বিভক্তি১২ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নেতারা যা-ই বলুন, গাজার ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা তাঁদের ভূমি ছেড়ে না যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তাঁরা মনে করেন, গাজা থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হবে আরেকটি ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় সাত লাখ ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ছেড়ে চলে যান বা জোর করে তাঁদের বাস্তুচ্যুত করা হয়।
গাজার ৪১ বছর বয়সী বাসিন্দা আহমেদ হালাসা বলেন, ‘তাঁরা যা ইচ্ছা, করতে পারেন। কিন্তু আমরা আমাদের মাতৃভূমি আঁকড়ে থাকব।’
আরও পড়ুনগাজার দখল নিতে চান ট্রাম্প, কী পরিকল্পনা করছেন তিনি০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র মন ত র র জন য গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমানো নিয়ে দরকষাকষি
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের শেষ তিন মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আহরণ করতে হবে। একই সঙ্গে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সংস্থাটির অতিরিক্ত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ দুই লক্ষ্যমাত্রার কোনোটিই অর্জন সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা কমানোর অনুরোধ জানিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে সংস্থাটির চেয়ারম্যানসহ কাস্টমস, আয়কর ও ভ্যাট অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এসব বৈঠকে কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফের শর্তের কথা মাথায় রেখে কিছু ক্ষেত্রে করহার বাড়ানো, কর অব্যাহতি তুলে দেওয়াসহ নীতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে আশা করা হচ্ছে, রাজস্ব আহরণ বেশ বাড়বে। তবে যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তা সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তবসম্মত নয়। তাই এ লক্ষ্যমাত্রা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার অনুরোধ করেন তারা। এ বিষয়ে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বেশ ইতিবাচক বলেও বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বৈঠকের বিষয়ে এনবিআরের কর্মকর্তারা সমকালকে বলেন, গত জুন শেষে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এটি চলতি অর্থবছর শেষে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। এর জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের মার্চ মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের পরবর্তী তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার বাকি রাজস্ব আদায় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তারা আরও বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। এসব বাড়তি রাজস্ব কীভাবে আদায় হবে তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি অসম্ভব। তাই লক্ষ্যমাত্রা কমানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, দেশের রাজস্ব খাত সংস্কারে উদ্যোগী মনোভাবের কথাও তাদের জানানো হয়েছে। আইএমএফ প্রতিনিধি দল বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে। সামনে আরও বৈঠক হবে। আশা করা হচ্ছে, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনবে আইএমএফ।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে বাংলাদেশ কতটা শর্ত পূরণ করেছে, তা পর্যালোচনায় ঢাকা সফর করছে প্রতিনিধি দলটি। এ দুই কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কর রাজস্বের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার চেয়ে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফ গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি গত রোববার থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। মিশনটি আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে।