দিনাজপুরে ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা’ গান বাজিয়ে ভাঙা হলো ইকবালুর রহিমের বাড়ি
Published: 7th, February 2025 GMT
‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা’ গানের সুরের তালেতালে ভবনের দেয়ালে পড়ছে এক্সকাভেটরের আঘাত। দুমড়েমুচড়ে ভেঙে পড়ছে প্রাচীর, ভবনের খুঁটি ও দেয়াল। উৎসুক জনতা নির্বিকার দাঁড়িয়ে দেখছেন। এ দৃশ্য দিনাজপুর সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিমের বাড়ির প্রাচীর ভাঙার।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে শহরের হাসপাতাল মোড় এলাকায় ইকবালুর রহিমের বাড়ি ভাঙা হয়। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে শহরের বাসুনিয়াপট্টি এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগ ও শহর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও একইভাবে এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ সময় দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে দেখা গেছে। ভবন ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই ইট, লোহার গ্রিল, দরজা-জানালা, প্রাচীরের ওপরে সুরক্ষা তারকাঁটা যে যাঁর মতো ভ্যানে তুলে নিয়ে যান।
এর আগে ৪ আগস্ট বিকেলে ইকবালুর রহিমের বাসায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। পরদিন অর্থাৎ সরকার পতনের দিন বিকেলে আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। দলীয় দুটি কার্যালয় পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকলেও মাস দুয়েক আগে ইকবালুর রহিমের বাড়ির জায়গায় তারকাঁটাসহ সুউচ্চ প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই প্রাচীরটি গুঁড়িয়ে দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইটসহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে যায় লোকজন।
দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা অন্তু খান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে ফ্যাসিবাদের আস্তানা মুছে ফেলার কাজটি করেছি। আমাদের ছাত্র প্রতিনিধি একরামুল হক আবির, বাদশা আল কাউসার, মিজান মিরাজ, ফয়সালসহ অসংখ্য ছাত্রনেতা উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘নট আ গুড ফ্রেন্ড বাট চ্যাম্পিয়ন মেট’
আলোর বিচ্ছুরণ ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তখন কেবল ‘চাক দে ইন্ডিয়া’ গান চলছে। টিভির পর্দায় যতটুকু দেখা ও বোঝা যায় ততটুকুই অবলম্বন।
এমনিতেই দুবাই রাতের নগরী। সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজসিক দুবাইয়ের সৌন্দর্য ফুটে উঠে। উচুঁ উচুঁ দালানে কেবল আলোর ঝলকানি। এমন নগরীতেই ভারতের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা উদযাপন আনন্দ বাড়িয়ে দেয় দ্বিগুন। আতশবাজি পোড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রাতের আকাশ হয়ে উঠে আরো ঝলমলে। ওই আলোয় ২২ গজে মেন ইন ব্লু জার্সিতে দুজনকে ‘গারবা ডান্স’ করতে দেখা আশ্চর্যজনক ঘটনা।
নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জেতার পর রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির ভাগ্যে একটি করে স্ট্যাম্প জুটে। ওই দুই স্ট্যাম্প নিয়ে দুই কিংবদন্তির ‘গারবা ডান্স’ চলে কিছুক্ষণ। নবরাত্রি উপলক্ষ্যে ভারতে গারবা ডান্স বেশ প্রসিদ্ধ। অতি প্রিয় দুজন মানুষের সঙ্গে দুই লাঠি হাতে চলে এই ডান্স।
ভাববেন না, রোহিত-বিরাটের বেশ মাখামাখি সম্পর্ক বা তারা দুজন দুজনের অতি প্রিয়। কিন্তু মিশন সাকসেসফুল হওয়ার পর দুজনের গারবা ডান্স মনে করিয়ে দেয় প্লুটোর সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘‘বন্ধুদের মধ্যে সবকিছুতেই একতা থাকে।’’ বিরাট ও রোহিতের বন্ধুত্ব তেমনই। মাঠের ভেতরে তাদের সবকিছুতে একতা। মাঠের বাইরে সম্পর্কটা কেবল সম্মানের। এর এক চুল বেশি-ও নয়। কমও নয়।
তাই-তো টানা দুই আইসিসি ইভেন্ট জয়ের পর তারা বলতে পারেন, ‘‘নট আ গুড ফ্রেন্ড বাট চ্যাম্পিয়ন মেট।’’
মাহেন্দ্র সিং ধোনি দায়িত্ব ছাড়ার পর পরম্পরা ধরে রেখে বিসিসিআই সহ অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে ভারতের দায়িত্ব দেয়। বিশ্ব ক্রিকেটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বিরাটের প্রাপ্তির খাতাও টইটুম্বুর। কিন্তু আইসিসি ইভেন্টে শিরোপা ছোঁয়া হয় না তার। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, ২০১৯ বিশ্বকাপ। শূন্য হাতে অধিনায়ক বিরাটকে বিদায় নিতে হয়েছিল। হেরেছিলেন আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালও।
তার থেকে অধিনায়কত্ব ছিনিয়ে নিয়ে রোহিতকে অধিনায়ক করেছিলেন ভারতের মহারাজ খ্যাত সৌরভ গাঙ্গুলি। ‘দাদা’ তখন বিসিসিআইয়ের সভাপতি। রোহিতকে অধিনায়ক করার পেছনে গাঙ্গুলির কারণ ছিল দুইটি। এক, রোহিতের শিরোপা ভাগ্য যা আইপিএলে দেখা গেছে অনেকবার। দ্বিতীয়ত, বিরাটকে আরো নির্ভার করে দেওয়া।
তাতে সুফল মিলেছে। ২০২৪ সালে ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতে রোহিতের নেতৃত্বে। এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ২০২৩ সালে ঘরের মাঠে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া বাধা টপকাতে পারেনি। নয়তো টানা তিন বছর ভারতের শোকেসে উঠত তিন শিরোপা।
তাদের দুজনের সম্পর্ক নিয়ে ফিসফাস আজকের না। বেশির ভাগের মত, ভারতীয় অধিনায়কের সঙ্গে রোহিতের সম্পর্কটা বিরোধপূর্ণ। এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার কথা বলতে হয়েছে ভারতের সাবেক ক্রিকেট দলের কোচ রবি শাস্ত্রীকে।
তবে সেসবকে পাশ কাটিয়ে মাঠের সবুজ ঘাসে, ২২ গজের উইকেটে তাদের বোঝপড়া দেখে বোঝার উপায় আছে মাঠের বাইরে সম্পর্কটা নিবিড় নয়। সেটা জরুরী নাকি সেটাও বিরাট প্রশ্নের। যে ধারাবাহিকতায় ভারতীয় ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে এবং সাফল্য পাচ্ছে তাতে একটি বিষয় তো স্পষ্ট, ব্যাট-বলের মজবুত রসায়নের বাইরে কিছুর প্রয়োজন নেই। সেটাই করে যাচ্ছে রোহিত ও বিরাট।
ভারতীয় গণমাধ্যম তাদের জুটির নাম দিয়েছে ‘রোকো’। রোহিতের ‘রো’, কোহলির ‘কো।’ মিলিয়ে রোকো। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতা হয়েছে ‘রোকো’ জুটির। সামনে কী হবে তা সময় বলে দেবে। আপতত, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের আনন্দে ভারতবর্ষ ডুবে থাকবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ঢাকা/ইয়াসিন