এক বছরে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো
Published: 7th, February 2025 GMT
২০২৪ সালের জন্য শেয়ারধারীদের ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি বা বিএটিবিসি। এই লভ্যাংশের অর্ধেক অর্থাৎ ৮১০ কোটি টাকা অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ৮১০ কোটি টাকা আগামী ২৫ মার্চ বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম শেষে বিতরণ করা হবে।
কোম্পানিটি গত বছরের জন্য সব মিলিয়ে ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তাতে শেয়ারপ্রতি ৩০ টাকা করে লভ্যাংশ পাবেন শেয়ারধারীরা। যার মধ্যে ১৫০ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১৫ টাকা অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। আর বাকি ১৫০ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১৫ টাকা চূড়ান্ত লভ্যাংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে ঘোষিত এই লভ্যাংশের খবর শেয়ারধারীদের জানানো হয়। এর আগে গত বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।
কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর কোম্পানিটি ৪৩ হাজার ২৩২ কোটি টাকার সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্য বিক্রি করেছে। আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে কোম্পানিটির এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ২ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা বা ৭ শতাংশের বেশি।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় বছরে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৯ সালেও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর বিক্রি করা বিড়ি–সিগারেটসহ তামাকজাতীয় পণ্যের বছরে ব্যবসা ছিল ২৩ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। গত বছর শেষে তা বেড়ে ৪৩ হাজার ২৩২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ধারাবাহিকভাবেই কোম্পানিটির বিক্রি বাড়ছে। বিএটিবিসির বিড়ি–সিগারেটসহ তামাকজাতীয় পণ্যের বিক্রি ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়। এরপর গত বছর তা আরও প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।
বিক্রি বাড়লেও কোম্পানিটির গত বছরের মুনাফা তার আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কমেছে। গত বছর সব ধরনের খরচ ও সরকারের রাজস্ব প্রদানের পর কোম্পানিটি ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা ৩৭ কোটি টাকা বা ২ শতাংশ কমেছে।
মুনাফা কমলেও শেয়ারধারীদের ২০২৩ সালের চেয়ে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা বেশি লভ্যাংশ বিতরণ করছে কোম্পানিটি। ২০২৩ সালে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের মধ্যে ৫৪০ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করেছিল। গত বছর তা বেড়ে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। কোম্পানিটি গত বছর যে মুনাফা করেছে, তার প্রায় ৯৩ শতাংশ শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৭৭ সালে। দেশের শেয়ারবাজারে এটি ৪৭ বছরের পুরোনো কোম্পানি। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরের কোম্পানিটির শেয়ারধারণ–সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, এটির শেয়ারের প্রায় ৭৩ শতাংশই রয়েছে বিদেশি উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। বাকি ২৭ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে সরকারের হাতে রয়েছে ৯ শতাংশ, বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ, এ দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ ও ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ৮ শতাংশ শেয়ার।
শেয়ারধারণের এই তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জন্য কোম্পানিটির পক্ষ থেকে ঘোষিত লভ্যাংশের মধ্যে বিদেশি উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা পাবেন ১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। সরকার পাবে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা, বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৭৩ কোটি টাকা, এ দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৮৯ কোটি টাকা এবং ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১৩১ কোটি টাকা।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এটি ব্লু-চিপস কোম্পানি হিসেবে ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত। ধারাবাহিকভাবে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। তবে বাজারে এটির শেয়ারের দাম সেই তুলনায় কম। ২০২০ সালের পর গত বছরের জন্য কোম্পানিটির সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তা সত্ত্বেও গতকাল শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সোয়া ৩ টাকা বা প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।
গত এক বছরের ঢাকার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৬৯ টাকা বা সাড়ে ৩২ শতাংশ কমেছে। গত বছরের ৩ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৫১৯ টাকা। গতকাল দিন শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ টাকায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র ট শ আম র ক ন ট ব য ক গত বছর র ২০২৩ স ল এক বছর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
জেনিথ ইসলামী লাইফের সব সূচকেই প্রবৃদ্ধি
সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছর ২০২৪ সালে সবগুলো সূচকেই প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে চতুর্থ প্রজন্মের বীমা কোম্পানি জেনিথ ইসলামী লাইফ। কোম্পানিটির প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম তথা নতুন ব্যবসা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ। একইসঙ্গে বেড়েছে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড, বিনিয়োগ এবং সম্পদের পরিমাণ।
বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র কাছে দাখিল করা কোম্পানিটির ২০২৪ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিক ও হিসাব সমাপনী প্রতিবেদন পর্যালোচনায় উঠে এসেছে এই চিত্র। জেনিথ ইসলামী লাইফ দেশের বীমা খাতে ব্যবসা শুরু করে ২০১৩ সালে।
বীমা কোম্পানিটি বলছে, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা আকৃষ্ট করেছে গ্রাহকদের। স্বাস্থ্য বীমাসহ কোম্পানিটির সময়োপযোগী নতুন নতুন বীমা পলিসিও উঠে এসেছে গ্রাহকদের পছন্দের তালিকায়। একইসঙ্গে বীমা দাবি পরিশোধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করায় উত্তোরত্তর প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে জেনিথ ইসলামী লাইফের মোট প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে ১৮.৫১ শতাংশ। সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছরে কোম্পানিটি মোট প্রিমিয়াম আয় করে ৩৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যা ২০২৩ সালে ছিল ২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে ২০২৪ সালে কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
২০২৪ সালে জেনিথ ইসলামী লাইফের প্রথম বর্ষ বা নতুন প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে ১২.৪৮ শতাংশ। সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছরে কোম্পানিটি প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় করে ১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। যা ২০২৩ সালে ছিলো ১২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। অর্থাৎ নতুন প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
জেনিথ ইসলামী লাইফ ২০২৪ সালে নবায়ন প্রিমিয়াম আয় করে মোট ১৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। যা আগের বছর ২০২৩ সালে ছিল ১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে গেলো বছর কোম্পানিটির নবায়ন প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে ৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বা ২৬.৮০ শতাংশ। এছাড়াও কোম্পানিটি সর্বশেষ হিসাব অনুসারে গ্রুপ বীমায় প্রিমিয়াম আয় করে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। যা ২০২৩ সালে ছিল ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
অপর দিকে মোট প্রিমিয়াম আয়ের ওপর মোট ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের হারও কমেছে জেনিথ ইসলামী লাইফের। ২০২৪ সালে কোম্পানিটি মোট প্রিমিয়াম আয়ের ৫৮.৯৮ শতাংশ খরচ করেছে। যা আগের বছর ২০২৩ সালে ছিল ৫৯.০৬ শতাংশ। অর্থাৎ ০.০৮ শতাংশ খরচ কমেছে।
২০২৪ সালে জেনিথ ইসলামী লাইফের মোট ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয়েছে ১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। যেখানে কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়াম আয় ৩৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
লাইফ ফান্ড বেড়েছে ৫১.১০ শতাংশ:
সর্বশেষ হিসাব অনুসারে ২০২৪ সালে জেনিথ ইসলামী লাইফের লাইফ ফান্ড বেড়েছে ৫১.১০ শতাংশ। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড ছিল ১৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০২৪ সালে ৯ কোটি ৮ লাখ টাকা বেড়ে কোম্পানিটির মোট লাইফ ফান্ড হয়েছে ২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
বীমা দাবি পরিশোধ বেড়েছে ২৮.৩৯ শতাংশ:
সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছর ২০২৪ সালে জেনিথ ইসলামী লাইফ বীমা দাবি পরিশোধ করেছে ৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। যা ২০২৩ সালে ছিল ৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এই হিসাবে ২০২৪ সালে কোম্পানিটির বীমা দাবি পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বা ২৮.৩৯ শতাংশ।
বিনিয়োগ বেড়েছে ১৩.৪৮ শতাংশ:
জেনিথ ইসলামী লাইফের মোট বিনিয়োগ বেড়েছে ৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা, ১৩.৪৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগ ছিলো ৩২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাড়িয়েছে ৩৭ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬২১ টাকা।
সম্পদ বেড়েছে ১৪.৭৫ শতাংশ:
হিসাব সমাপনী প্রতিবেদনে অনুসারে ২০২৪ সালে জেনিথ ইসলামী লাইফের মোট সম্পদ বেড়েছে ১৪.৭৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির মোট সম্পদ ছিল ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ২০২৪ সালে ৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা বেড়ে মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এসব বিষয়ে কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী এস এম নুরুজ্জামান বলেন, আমাদের সেবায় আস্থা রেখে দেশের ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় বীমা চুক্তি করেছে। তিনি বলেন, বীমা দাবি পরিশোধসহ গ্রাহকসেবাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমাদের কোন বীমা দাবি বকেয়া নেই। কোম্পানির সকল গ্রাহকের বীমা দাবি পরিশোধের আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে জেনিথ ইসলামী লাইফের।
এস এম নুরুজ্জামান আরো বলেন, বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সেরা অবস্থানে রয়েছে জেনিথ ইসলামী লাইফ। বিশ্বের সব থেকে আপডেট টেকনোলজি ইআরপি সফটওয়্যার থাকায় মাঠ পর্যায়ে গ্রাহকদের প্রতারিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে নিমিষেই গ্রাহক তার সকল তথ্য দেখতে পারেন।