‘জামানত ছাড়া ৫৮ হাজার কোটি ঋণ দিলে দুর্নীতি তো হবেই’
Published: 7th, February 2025 GMT
জামানত ছাড়া ৫৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিলে দুর্নীতি হবেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিব।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুদকের মামলায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের রিমান্ড শুনানির এক পর্যায়ে তিনি এ কথা বলেন।
বিচারক বলেন, ‘‘দুর্নীতির মামলায় সাজার পরিমাণ বাড়ানো দরকার। সাজা কম হওয়ায় দুর্নীতি বেড়েছে। জামানত ছাড়া একজন ব্যক্তিকে ৫৮ হাজার কোটি ঋণ দিলে দুর্নীতি তো হবেই।’’
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ‘‘আমরাও দুর্নীতির সাজা চাই। যারা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের সাজা হোক। তবে আলমগীর কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না।’’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে থেকে এদিন তাকে আদালতে হাজির করা হয়। তার উপস্থিতিতে ১২টা ৩৪ মিনিটে শুনানি শুরু হয়।
এ সময় দুদক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড ও জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। দুদক চাইলে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন বলে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে গত বুধবার এ মামলায় গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে দুদক। তবে আদালত এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার শুনানি হবে বলে জানান। একইসঙ্গে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের নামে মোট ৭২ কোটি ৮৫ লাখ ৩ হাজার ৫২৮ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে যার বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় ৫৩ কোটি ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭ টাকা। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে গত ১৬ বছরে রেলের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা/মামুন//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘জয় বাংলা ব্রিগেড তৈরি করে দেশ অস্থিতিশীলের চেষ্টা করছেন তুরিন আফ
‘শেখ হাসিনা তাদের রেখে পালিয়ে গেছে। এখন জয় বাংলা ব্রিগেড তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল ও সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করছে তুরিন আফরোজরা। হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছে।’
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে রিমান্ড শুনানিকালে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে আব্দুল জব্বার নামের এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় আজ রিমান্ড শুনানি হয়।
সোমবার (৭ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক সুমন মিয়া।
বেলা ১টার দিকে তুরিন আফরোজকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানিকালে তাকে এজলাসে তোলা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘তুরিন আফরোজ আলোচিত, বিতর্কিত মানুষ। ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে হাসিনার পক্ষে মিডিয়াতে তুমুল বক্তব্য দিতেন। হাসিনাকে সমর্থন করে বিরোধীদের আন্দোলন-সংগ্রামের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতেন। ফ্যাসিজম রক্ষা করতে সহযোগিতা করতেন। সুপ্রিম কোর্টে যেসব আইনজীবী একটি কলোনি তৈরিতে সহায়তা ও আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করত, তাদের এক জন তুরিন আফরোজ। তার এ ধরনের বক্তব্য রাখার এবং সহযোগিতার দুটি উদ্দেশ্য ছিল—এক. হাসিনার আনুকূল্য লাভ করে বড় পদ পাওয়া। আরেকটি হলো—পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে মা-ভাইকে বঞ্চিত করে দখলে রাখা।’
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, ‘প্রথমটা অর্জন করেছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হয়েছিল। পুরস্কারস্বরূপ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান তুরিন আফরোজ। নিয়োগ পাওয়ার পর তারা আসামিদের বিরুদ্ধে বক্তব্য ও তাদের নিয়ে কটূক্তি করেন। পরে আবার আসামিদের পক্ষে গিয়ে বড় ধরনের আর্থিক সুবিধা নেওয়ারও অভিযোগ আছে। ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে প্রসিকিউটর পদ থেকে অব্যাহতি পান। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে মা-ভাইকে বঞ্চিত করে এককভাবে দখলে নেন।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিতর্কিত ভূমিকা পালন করায় নীলফামারীর জলঢাকাতেও তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। মামলা হলেই কিন্তু সব আসামিকে ধরা হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন জায়গায় মিছিল, মিটিং হয়েছে। হাসিনা তাদের ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে। তারা জয় বাংলা ব্রিগেড তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল ও সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করছে। যারা বিদেশে পালিয়ে গেছে এবং দেশে যারা অবস্থান করছে, তারা এসব করছে। হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছে। তুরিন আফরোজ এর সাথে সম্পৃক্ত। তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়। বিভিন্ন সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাচেষ্টা মামলার সাথেও সম্পৃক্ত। তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থণা করছি।’
তুরিন আফরোজের পক্ষে শুনানি করতে কয়েকজন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হন। তবে তুরিন আফরোজ জানান, তার আইনজীবী আছে। তখন বিচারক জানতে চান, কে আপনার আইনজীবী? তুরিন আফরোজ বলেন, ‘সাইফুল করিম।’ তবে তাকে খুঁজে পাননি তুরিন আফরোজ।
পরে আদালতে বক্তব্য রাখেন তুরিন আফরোজ। এরপর আদালত তার চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
ঢাকা/মামুন/রফিক